ঢাকার আকাশের দিকে তাকালে এখনো দেখা মেলে কিছু সবুজের ছোঁয়া— ব্যালকনিতে টবের সারি, ছাদে সাজানো ছোট্ট বাগান। কংক্রিটের এই শহরে ছোট্ট সবুজ জায়গাগুলো এখন শুধু শখ নয়, অনেকের কাছে এক ধরনের মানসিক থেরাপি হয়ে উঠেছে।
প্রতিদিন সকালে গাছের পাতায় পানি দেওয়া, শুকনো পাতা পরিষ্কার করা বা নতুন চারা গজানো— এসব কাজ শহুরে জীবনে এক ধরনের প্রশান্তি এনে দেয়। কর্পোরেট কর্মজীবী শাহানা রহমান বললেন, ‘অফিস থেকে ফিরে গাছগুলোতে পানি দেই, কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকি। মনে হয় সারাদিনের ক্লান্তিটা গাছগুলো শুষে নেয়।’
শাহানার মতো অনেকেই এখন ঘরের ছোট্ট জায়গাটাকেও বাগান বানাচ্ছেন। কেউ ফলমূলের গাছ লাগাচ্ছেন, কেউ আবার হারবাল বা ঔষধি গাছ। পুরোনো বোতল, মগ বা বাক্স ব্যবহার করে গাছ লাগানোর ট্রেন্ডও এখন বেশ জনপ্রিয়।
মনো বিজ্ঞানীরা বলছেন, গাছের যত্ন নেওয়া মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। এতে মনোযোগ বাড়ে, স্ট্রেস কমে এবং নিজের প্রতি ইতিবাচক অনুভূতি জন্মায়।
মনোবিজ্ঞানীরা আরও বলেন ‘প্রতিদিন কিছু সময় গাছের সঙ্গে কাটানো মানে প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা। এটা এক ধরনের মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস, যা মানসিক ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে।’
এখন অনেকেই শুধু শখ নয়, বরং ছাদবাগান থেকে জৈব সবজি উৎপাদন করে নিজের পরিবারের চাহিদা মেটাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার ঘরে বসে হাইড্রোপনিক গার্ডেনিং বা স্মার্ট ফার্মিং করে উদ্যোক্তা হিসেবেও এগিয়ে আসছেন।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি নগরবাসীর অন্তত ৩০ শতাংশ মানুষ ছাদবাগান করেন, তাহলে শহরের তাপমাত্রা কিছুটা কমানো সম্ভব। পাশাপাশি এতে বায়ুর মানও উন্নত হয়।
তবে বাগান শুরু করতে বড় জায়গা বা অনেক খরচের দরকার নেই। একটি টব, সামান্য মাটি আর যত্নের মন থাকলেই যথেষ্ট। টমেটো, ধনেপাতা, মানিপ্ল্যান্ট বা লেটুসের মতো গাছ খুব সহজেই ব্যালকনিতে লাগানো যায়।
সবুজ মানে শুধু প্রকৃতি নয়— মানে নিজের সঙ্গে সময় কাটানো, ক্লান্ত শরীর আর মনকে শান্ত করার এক উপায়। শহরের ব্যস্ত মানুষদের জন্য এই ছোট্ট সবুজ কোণাই হয়ে উঠছে একান্ত আশ্রয়।
সবচেয়ে ভালো থেরাপি হলো নিজের হাতে লাগানো গাছের পাশে কিছুক্ষণ নীরব থাকা।