হাসি— মানব জীবনের এক সহজ অথচ গভীর অনুভূতি। আমরা সাধারণত হাসি যখন কিছু মজার বা আনন্দের ঘটনা ঘটে। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায়, কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ হাসি পেয়ে যায়। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এ হাসি মোটেও অযৌক্তিক নয়— বরং শরীর ও মনের জটিল প্রতিক্রিয়ার এক সহজ প্রকাশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের মস্তিষ্কে যখন ডোপামিন, সেরোটোনিন ও এন্ডরফিন নামের সুখ-হরমোন নিঃসৃত হয়, তখন মানুষ স্বাভাবিকভাবেই প্রশান্তি ও আনন্দ অনুভব করে। এই হরমোনগুলো মেজাজ ভালো রাখে, উদ্বেগ কমায় এবং অনেক সময় কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই হাসি এনে দেয়।
শুধু তাই নয়, হাসি সামাজিক প্রতিক্রিয়াও বটে। একে বলে ‘social mirroring’— মানে, কেউ হাসলে পাশের মানুষও অনায়াসে হাসতে শুরু করে, এমনকি না জেনেই। এটি মানুষের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি করে, মানসিক দূরত্ব কমায়।
মনোবিজ্ঞানীরা আরও বলেন, হাসি সবসময় আনন্দের ফল নয়। অনেক সময় মানুষ চাপ বা বিব্রতকর অবস্থায়ও হেসে ফেলে। এটি একধরনের ‘self-defense mechanism’— মানে, মস্তিষ্ক তখন নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে হাসির মাধ্যমে।
গবেষণায় দেখা গেছে, জোর করে হাসলেও শরীরে আসল হাসির মতোই ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘লাফটার থেরাপি’, যেখানে মানুষ কোনো কৌতুক ছাড়াই একসঙ্গে হাসে, আর তাতেই শরীর-মনের ভারসাম্য ফিরে আসে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, কারণ ছাড়াই হাসা মানেই শরীরের ভেতরে সুখের রাসায়নিক প্রবাহ ঠিকঠাক কাজ করছে। তাই এ হাসিকে অবহেলা নয়, বরং স্বাগত জানানো উচিত। কারণ, হাসি শুধু মন ভালো রাখে না— বরং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং জীবনকে হালকা করে তোলে।