অলস কুঁড়ে নগরচাষী যারা, তাদেরও বাগান ফুলে ফুলে ভরা !
১২ জুলাই ২০১৮ ১৩:২০
ছাদবাগানের যারা চাষাবাদ করেন তাদের মাঝে দুই রকমের চাষী খুঁজে পেয়েছি আমি। একদল অত্যন্ত কষ্ট করেন, সারা বছর অতি উদ্যমে চাষাবাদ চালিয়ে যান, অত্যন্ত কর্মঠ চাষী তারা। আরেকদিকে একদল সারা বছর ছাদবাগান ভর্তি ফুল, ফল আর সবুজ চান কিন্তু কষ্ট করতে চান না একদম। দরকার হলে মাসে মাসে সবুজ তুলে আনেন নার্সারি থেকে, হয়তো সময় দেয়া হয় না বলে তারা ফুল বা ফলের ফলন কম দেয়। তারপরও তারা তাদেরকে ভালোবাসেন, আলসে চাষী বলে যাকে আর কি।
ফুল, ফল আর সবুজ ভালোবাসেন কিন্তু আপনি আলসে চাষী। আজ আপনার জন্য কিছু গাছের খবর দিবো, যেগুলোতে সারা বছর ফুল ফুটতে থাকে এবং সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে তাদের পিছনে সময়ও কম দিতে হয়। একটা কথা মনে রাখতে হবে শুধু, আলসে হলেও গাছ বা ফুল চিনবার জন্য তাদেরকে মনে রাখতে হবে কিন্তু। শুধু নাম দিয়ে অনেক সময় গাছ, বিশেষ করে ফুলের গাছ পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। তবে সাথে ছবি থাকলে প্রিয় ফুল বা ফল খুঁজে পেতে সমস্যা হবার কথা নয়।
সবচেয়ে সহজ ফুলের গাছ হচ্ছে নয়নতারা, সদাসোহাগী বা ম্যাদাগাস্কার পেরিউইংকল। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত না কখনও মানা নেই তার ফুল ফুটবার ভান্ডারের। নয়নতারা বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। তবে বেগুনী রঙা ফুলটা সারা বছর ফোটে বেশী। একবার কষ্ট করে শুধু নার্সারি থেকে বাড়ি নিয়ে আসলেই হলো। ছোট বা বড় যে কোন টবে এবং যে কোন মাটিতে তাদের বাসস্থানের জায়গা একটা করে দিলেই, তারা খুশি। এমনকি নয়নতারা ফুলগাছে প্রতিদিন জল দেবারও দরকার হয় না। একদিন পর জল, বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। দু’বছরের মাঝে আসল গাছ তো বড় হবেই হবে আর অন্যদিকে অন্য কোন টব বা ফেলে রাখা মাটিতে অনায়াসে নয়নতারার চারা থেকে ফুল ফুটে থাকা দেখতে দেখতে আপনার অভ্যাস হয়ে যাবে।
এরপরের সহজ ফুল গাছের নাম হচ্ছে কাঁটামুকুট, কন্টমুকুট বা ইউফোরবিয়া। কাঁটামুকুট বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে এবং এরা ক্যাকটাস ঘরানার গাছ। ডাল ভেঙে সোজা মাটিতে বুনে দিলেই তারা বেঁচে ওঠে। তখন একদিন পর পর জল দিতে হয়, নতুন পাতা না ছাড়া পর্যন্ত। আর নার্সারি থেকে আনলে তেমন কোন ঝামেলা হয় না। একবার গাছ নতুন পাতা ছাড়তে শুরু করলে, সপ্তাহে একদিন জল দিলেই হয়। ছাদের সরাসরি রোদে প্রচুর ফুল দেয় তারা, বারান্দায় কম রোদে ততটা ফুল আসে না। বড় বা ছোট যে কোন টবে এরা সাচ্ছ্যন্দে বসবাস করতে পারে। অতি বৃষ্টি কাঁটামুকুটের শত্রু। বর্ষাকালে তাদের বৃষ্টি থেকে দূরে রাখলে আর কোন সমস্যা হবার কথা নয়। গাছ অনেক বড় হয়ে আসলে দু’বছর পর একবার টবে এবং মাটি বদলিয়ে দিলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে তাদের।
এরপর আরেক সহজ ফুলগাছের নাম টগর বা পিনহুইল ফ্লাওয়ার। টগর চিরসবুজ গাছ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের ঝোঁপে জঙ্গলে প্রচুর দেখা যায় এই ফুল গাছদের। শীতকালে একটু কম, একটা দুটো ফুল ফুঁটে কিন্তু বছরের আর বাদবাকী সময় ঝাকড়া সবুজ পাতার মাঝে সাদা সাদা ফুল দিয়ে ভরা থাকে। নার্সারীগুলোতে বিভিন্ন আকারের টগরের চারা পাওয়া যায়, যদিও টগরের রঙ সবসময়ই সাদা হয়ে থাকে। ছাদবাগানে টগরের বাসস্থান যদি বড় ড্রামে হয়, তাহলে চার পাঁচ বছরের মাঝে বেশ বড় ঝাকড়া হয়ে ওঠে। শীতকালে প্রতিদিন জল আর বছরের বাদবাকী সময় টগরে সপ্তায় তিনদিন জল দিলেই হয়। বছরে একবার টব বা ড্রামের গোঁড়া থেকেআঁধ হাত মাটি বদলিয়ে দিতে পারলে ফুলের অভাব হয় না কখনও।
আরেকটি সহজ ফুল গাছের নাম হচ্ছে কাঁটা মেহেদি, নীলকাঁটা, বেড়ামেন্দি, দুরন্ত বা স্কাই ফ্লাওয়ার। বাংলাদেশের গ্রামের বাড়িগুলোতে বেড়া দেয়ার জন্য এই ফুলগাছ ব্যবহার করা হয় সবচেয়ে বেশি। বেড়ামেন্দি শহরে এসে নাম নিয়েছে কাঁটা মেহেদি। শুধুমাত্র ডাল ভেঙে মাটিতে বুনে দিলেই এই গাছ ছড়িয়ে যায়। সারা বছর নীলচে বেগুনী ফুলের দেখা পাওয়া যায় কাঁটা মেহেদির। সবুজ পাতার মাঝে ঝুলে ঝুলে থোকা ধরে ফুটে থাকে এই ফুল। ছাদবাগানে ড্রামে কাঁটা মেহেদির বাসস্থান হলে বছর দুয়েকের মাঝেই ছড়িয়ে ঝোপ ঝোপ হয়ে যায় এই গাছ। তবে কাঁটা মেহেদিতে প্রতিদিন জল দেয়া লাগে। নাহলে নিস্তেজ হয়ে ফুল ঝরে যায় খুব সহজেই।
কলাম পড়বার পর জানি আলসে চাষীরা নতুন উদ্যমে এসব ফুলগাছ সংগ্রহে নেমে যাবেন। আলসে চাষী হয়েছেন তো কি হয়েছে! এবার থেকে আপনার ছাদবাগানে তো সারা বছরই বিভিন্ন ফুল ফুটতে দেখা যাবে। সে কারণেই আমি সবসময় বলে থাকি, চাষী পরিবার সুখী পরিবার।
সারাবাংলা/এসএস