Wednesday 12 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিম: মানবসেবায় একটি বহুবর্ষজীবী ও চিরহরিৎ ঔষধি বৃক্ষ

হাকিম মহাম্মদ আশরাফুল আলম
১২ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:০৭ | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:১২

পর্ব-২

আমার কথা হলো এই যে নিম গাছ, যেটা নিয়ে আমি গবেষণার কথা বলছি, এখন দেখছি সে গাছ আর তেমন নাই। আগে দেখেছি ৫০-৬০ বছর বয়সের কি বিশাল গাছ স্কুলের মাঠে, মাতবর এর বাড়ির সামনে এখন আর দেখা যায় না। ৫০-৬০ বছর বয়সের একটা বিশাল গাছ ১ ঘণ্টায় কেটে ফেলেছি। একবারও ভাবি নাই নিজের এবং ভবিষ্যৎ বংশধর তথা মানবতার কত বড় ক্ষতি করলাম। ভাবুন কত বড় ধ্বংস আপনি আমি ডেকে আনছি। একটা নিম গাছের বিভিন্ন অংশ থেকে যে সমস্ত অ্যালকালয়েডস সনাক্ত করা হয়েছে তা নিম্নে তুলে দেওয়া হলো যেমন নিম্বিন নিমবিলিন, নিববিডিন, নিম্বোস্টেরিন, নিমবেকটেন, বাকায়েনিন, ফ্যাটি এসিড ও উচ্চমাত্রার পানজেন্ট এসেনসিয়াল ওয়েল। এছাড়া ডাঃ সলিমুজ্জামান সিদ্দিক ও আরও অনেকে অনেক উপাদান সনাক্ত করে গেছেন। সেগুলো বর্তমানে গবেষণার দাবী রাখে।

বিজ্ঞাপন

নিম এবং অন্যান্য ভেষজ আদিকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। যুগে যুগে শুধু এর সংস্করণ হয়েছে। নিম থেকে শুধু রোগ নিরাময়ের জন্য ঔষধ বা সাপ্লিমেন্ট আবিষ্কার করলে হবে না। নিম থেকে আরও পরিবেশ বান্ধব পেষ্টিসাইড যেগুলি ফসলাদি তথা ধান, গম, যব, ফল-ফলাদি, শাক-সবজি, আম, কাঠাল, লিচু ইত্যাদিতে পোকা মাকড় দমনে ব্যবহার করে পরিবেশ বান্ধব ও ক্ষতিকর অবস্থার হাত থেকে মানুষ জীবকুলকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা যে শাক-সবজি, ফল-ফলাদি, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি খাচ্ছি তা আমাদের দেহে উপকারের পরিবর্তে অপকার বা ক্ষতিই করছে অধিক। এভাবে চলতে থাকলে এমন একটা সময় আসবে যখন আর হাসপাতালে জায়গা হবে না। কারণ রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে। কলা খেলে সস্তিষ্কের শক্তি বাড়ে, শরীরে পুষ্টির যোগান দেয়। সেই কলা খেয়ে পেট খারাপ হঢ, মাথা টলায়। ভাবুন আমরা কোথায় যাচ্ছি, এক সময় আমরা জাতি হিসেবে পঙ্গু হয়ে যাব না তো? বাজারে ফরমালিন টেস্ট করার জন্য ফরমালিন টেস্ট কিট বানিয়েছেন। ব্যর্থ চেষ্টা। ফরমালিন, কারবাইডের উৎস বন্ধ করতে হবে।

কিভাবে সম্ভব, সম্ভব পরিবেশ বান্ধব পেস্টিসাইড আকিষ্কার। আসুন আমরা নিম, বিষকাঁটালী, তুলসী, নিষিন্দা ইত্যাদি গাছের নির্যাস থেকে পরিবেশ বান্ধব পেস্টিসাইড আবিষ্কার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করি।

আর হ্যাঁ, এটা গবেষণা, আবিষ্কারের দায়িত্ব আমাদের বিজ্ঞানী গবেষকদের। এক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ শিল্প গবেষণা ইনিস্টিটিউট Bcsir বৃহৎ শিল্প গবেষণা প্রতিষ্ঠান। মেধাবী বিজ্ঞানী, গবেষক ও আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরি, সুরম্ম অট্টালিকা।

আমার মনে হয় এই সীমিত সম্পদ নিয়ে আমাদের মেধাবী বিজ্ঞানী গবেষকগণ জাতির কল্যাণে এগিয়ে যেতে পারবে। Bcsir এখন পর্যন্ত যে উদ্ভাবন, আমার মনে হয় যথেষ্ট নয়। এবং প্রশাসনিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি এখনো দুর্বল। আমি সমালোচনা করছিনা বরং উন্নতি ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা দেখে এটুকু বললাম। ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।

আমি বাংলাদেশ শিল্প গবেষণা ইনিস্টিটিউট Bcsir ঢাকায় মাঝে মাঝে যাই। অনেক বিজ্ঞানী গবেষকদের সাথে আমার মতবিনিময় হয়। তাতে অনুমান করেছি আমাদের দেশে মেধা আছে। কিন্তু কোথায় যেন শূন্যতাও আছে আ আমার বোধগম্য হয় না।

আমি রাজশাহী আঞ্চলিক বিসিএসআইআর -এর বিজ্ঞান মেলায় আমন্ত্রিত মেহমান হিসেবে বেশ কয়েকবার উপস্থিত থেকেছি। Bcsir বিজ্ঞানী আঃ জলিল বদরুল ইলাম আরও অনেকের সাথে মত বিনিময় হয়। সেমিনারে বক্তব্য দিয়েছি। রাজশাহী বিসিএসআইআর এতবড় বিশাল জায়গার উপর ছায়া ঘেরা মনোরম পরিবেশ। আমি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থেকেছি। কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করেছি এত বড় বিশাল জায়গা কে ব্যবস্থা করে গেছেন। উনি আমাকে বললেন, মরহুম কামরুজ্জামান সাহেব ব্যবস্থা করে গেছেন। আমি প্রাণ ভরে দোয়া করেছি। দেশ, জাতি ও জনপ্রেমিক মরহুম কামরুজ্জামান সাহেবের জন্য।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-এর পাশে অবস্থিত। বিজ্ঞানী গবেসকগণের সকর সম্ভাবনা এখানে লুকায়িত। হেন আবিষ্কার নাই যা এখান থেকে সম্ভব না। কারণ বিশাল পরিসরে নিজস্ব প্লান্টে গাছপালা, তরু-লতা সংগ্রহ করে নতুন আবিষ্কার উদ্ভাবন সম্ভব। শুধু আন্তরিকতার সাথে পরিকল্পনা নিলেই যথেষ্ট।

লেখক: বিএ.ডি.ইউ.এম.এস (ঢাকা), ট্রাডিশনাল মেডিসিনের গবেষক, আই.টি.এম, ইউনানী ও ন‍্যাচারাল মেডিসিনের চিকিৎসক


আরও পড়ুন _ নিম: মানবসেবায় একটি বহুবর্ষজীবী ও চিরহরিৎ ঔষধি বৃক্ষ, পর্ব-১