একসময় বন্ধু মানেই ছিল নির্দ্বিধায় আড্ডা, রাত জাগা গল্প আর ছোটখাটো রাগ-অভিমান। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই হঠাৎ টের পান— বন্ধু আছে, তবু কথা কম; পরিচিত মানুষ অনেক, তবু কাছের কেউ নেই। তাহলে কি বয়স সত্যিই বন্ধুত্বের শত্রু হয়ে ওঠে? নাকি জীবনের গতিপথই বন্ধুত্বের মানচিত্র বদলে দেয়?
সময় আর দায়িত্বের চাপে বন্ধুত্ব
যৌবনের শুরুতে সময় যেন অফুরন্ত। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ, সংসার, সন্তান, আর্থিক চাপ— সব মিলিয়ে সময় হয়ে ওঠে সবচেয়ে দামী সম্পদ। বন্ধুদের জন্য আলাদা সময় বের করাই তখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ফলে সম্পর্কগুলো ধীরে ধীরে আলগা হয়ে যায়।
অগ্রাধিকার বদলে যায়
যে মানুষটি একসময় প্রতিদিন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতেন, তিনিই একসময় পরিবার বা ক্যারিয়ারকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করেন। এতে বন্ধুত্ব হারিয়ে যায় না, কিন্তু পেছনের সারিতে চলে যায়। অনেক সময় দু’পক্ষই এই পরিবর্তন মেনে নিতে না পারায় দূরত্ব তৈরি হয়।
ভাবনা ও মূল্যবোধের পার্থক্য
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তাভাবনা বদলায়। কেউ হয়ে ওঠে বাস্তববাদী, কেউ হয়তো এখনো আবেগী। জীবনের লক্ষ্য, রাজনীতি, সমাজ বা ব্যক্তিগত বিশ্বাসে পার্থক্য বাড়লে বন্ধুত্বেও ফাটল ধরে।
কম কথা, বেশি ভুল বোঝাবুঝি
আগে যেটা এক ফোনেই মিটে যেত, এখন সেটাই মাসের পর মাস জমে থাকে। যোগাযোগ কমে গেলে ভুল বোঝাবুঝি সহজেই জায়গা করে নেয়। অনেক সময় অহংকার বা ‘আমি কেনই বা প্রথমে ফোন করব’— এই মানসিকতাও বন্ধুত্বকে দুর্বল করে।
নতুন বন্ধু বানানোর দ্বিধা
বয়স বাড়লে মানুষ হয়ে ওঠে বেশি সতর্ক। নতুন কাউকে বিশ্বাস করতে সময় লাগে। ফলে পুরোনো বন্ধুরা দূরে গেলে সেই শূন্যতা সহজে পূরণ হয় না।
তবু কি বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যায়?
একদমই না। বয়স বাড়লে বন্ধুত্বের রং বদলায়, গভীরতা বাড়ে। এখন বন্ধুরা হয়তো প্রতিদিন কথা বলেন না, কিন্তু বিপদের সময় ঠিকই পাশে দাঁড়ান। কম বন্ধু, কিন্তু বেশি নির্ভরতার সম্পর্ক—এটাই বয়সী বন্ধুত্বের সৌন্দর্য।
শেষ কথা
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধু সমস্যা আসলে জীবনের স্বাভাবিক বাস্তবতা। এটি হারানোর গল্প নয়, বরং রূপান্তরের গল্প। বন্ধুত্ব তখন আর সময়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে না, দাঁড়িয়ে থাকে বোঝাপড়া আর আন্তরিকতার ওপর।
হয়তো বন্ধুর সংখ্যা কমে যায়, কিন্তু যারা থাকেন— তারাই হয়ে ওঠেন জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সঙ্গী।