বিয়ে জীবনে অন্যতম বড় আবেগঘন ঘটনা — আনন্দ, দায়িত্ব, নতুন সম্পর্ক, আত্মীয়-স্বজনের চাপ, আর হঠাৎই ‘যখন ঘুমের সময়ও মনে পড়ে কাজের কথা…’ এই সব মিলিয়ে কিছু মানুষের রক্তচাপ একটু ‘উচ্চ’ হতে পারে!
কিন্তু সোজা করে বললে – বিয়ে নিজেই সরাসরি উচ্চ রক্তচাপের কারণ নয়। বরং সম্পর্কের মধ্যে থাকা উত্তেজনা, মানসিক চাপ, অস্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল ইত্যাদি মিলিয়ে রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়তে পারে। জেনে নেওয়া যাক।
বিবাহিত জীবন ও উচ্চ রক্তচাপ: গবেষণা কি বলছে?
গবেষণা জানাচ্ছে, মধ্যবয়স্ক দম্পতির কোনও একজনের যদি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থেকে থাকে, তা হলে অন্য সঙ্গীরও রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি থাকে। আমেরিকান হার্ট এ্যাসোসিয়েশনের মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণা নিবন্ধটি।
সমীক্ষায় চীন, ইংল্যাান্ড, ভারত এবং আমেরিকা— এই চার দেশের মোট ৩০ হাজার দম্পতির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয় এবং প্রত্যেকের রোগের ইতিহাস সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখা গিয়েছে, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত পুরুষের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার বছর কয়েক পরে অনেক মহিলার এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। তথ্য বলছে, এর প্রকোপ উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল ইংল্যান্ডে। সে দেশে প্রায় ৪৭ শতাংশ দম্পতি উচ্চ রক্তচাপের শিকার। তারপরেই ছিল আমেরিকার স্থান। তৃতীয় স্থানে চীন, চতুর্থ ভারত।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে বিবাহিত নারীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে তুলনায় অবিবাহিতদের সাথে — যদিও এই সম্পর্ক সবসময়ই সহজ-সরল নয় এবং অন্যান্য জীবনযাত্রার কারণে প্রভাবিত হয়।
একই গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের ক্ষেত্রে এমন স্পষ্ট সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, বিয়ে মানেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘প্রেশার বাড়বে’— এমনটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।
অন্যদিকে হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিংয়ের মত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, সুখী বিবাহিত জীবন অনেক ক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমিয়ে হৃদরোগ ও রক্তচাপ-সম্পর্কিত ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
সুতরাং: বিয়ে = প্রেশার না; কিন্তু কিছু পরিস্থিতি/চারণাঙ্ক মিললে সম্পর্কের চাপ বাড়তে পারে, যা রক্তচাপকে প্রভাবিত করতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ কী ও এর আসল কারণগুলো
যদিও ‘বিয়ে’ খুব সহজে উচ্চ রক্তচাপের কারণ হিসেবে ধরা যায় না, আসল জীববিজ্ঞান বলে:
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন তখন বুঝে নেওয়া হয় যখন রক্তচাপ ১৩০/৮০ mmHg বা তার বেশি থাকে।
আর এর জন্য সাধারণ ঝুঁকি ও কারণগুলো হল:
বংশগততা ও বয়স — বাড়তি বয়সে ঝুঁকি বাড়ে; পরিবারে যদি পূর্বে কেউ থাকে, ঝুঁকি বেশি।
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা – অপর্যাপ্ত ব্যায়াম, বেশি লবণযুক্ত খাবার, বেশি ওজন।
মানসিক চাপ ও ঘুমের সমস্যা – দীর্ঘমেয়াদে রক্তচাপ বাড়াতে পারে (চিকিৎসাবিজ্ঞানেও চাপের ভূমিকা স্বীকৃত) ।
অর্থাৎ ‘ঝামেলা/চাপ’ যদি বিবাহিত জীবনে দীর্ঘ সময় ধরে রয়ে যায়, তা রক্তচাপ বাড়াতে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে পারে, কিন্তু এটিকে সরাসরি বিয়ের সাথে মিলিয়ে ‘কারণ’ বলা ঠিক নয়।
বিবাহিত জীবনেও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়
খোলামেলা কথা বলুন — দিন শেষে দিনের ভুল বোঝাবুঝি/চাপ নিয়ে একে অপরের সাথে কথা বললে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায়।
নিয়মিত ব্যায়াম — মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রোজ ৩০ মিনিট হাঁটা/হালকা ব্যায়াম অনেক সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্য — কম লবণ, বেশি ফল-শাক, পর্যাপ্ত পানীয় — এগুলো উচ্চ রক্তচাপ কমানোর অন্যতম সহজ উপায়।
পর্যাপ্ত ঘুম — ঘুম কম হলে স্ট্রেস হরমোন বাড়ে, যা রক্তচাপ বাড়াতে প্রভাব ফেলে।
শেষ কথা
বিয়ে মানেই রক্তচাপ বাড়বে — এমন কোনো নিয়ম নেই। জীবনে হালকা হাসি-হাশির সাথে একটু সচেতনতা রাখলেই ভালো জীবন ও ভালো স্বাস্থ্য সবার জন্য সম্ভব।