কফির এত গুণ
১৯ আগস্ট ২০১৮ ১৩:৪৩
লাইফস্টাইল ডেস্ক।।
পানীয় হিসেবে কফির ব্যবহার শুরু ৮৫০ খ্রিষ্টাব্দের পর। নবম শতকের আগে কফি গাছ থাকলেও সে গাছের পাকা ফলটি গুঁড়ো করে গরম পানিতে গুলিয়ে খাওয়ার কথা কেউ ভাবেনি। ইথিওপিয়া থেকেই আরব বণিকেরা ৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে কফি বীজ নিয়ে আসে আরবে। আরবরা নাকি বিদেশে বীজ রপ্তানি করতে চায় নি। তবুও সেখান থেকেই কফি বিশ্বের অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৪৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তুরস্কের রাজধানীতে স্থাপিত হয় পৃথিবীর বৃহত্তম কফিশপ।
১৫৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ডাচ শব্দ Coffie থেকে ইংরেজি শব্দ Coffee শব্দটি এসেছে।
১৬৬৮ সালের দিকে আমেরিকায় প্রথম কফি ব্যবহারের কথা জানা যায়। অবশ্য সেখানে কফি চাষ শুরু হয় ১৭২০ সালে। ভারতবর্ষে কফির প্রচলন আরও পরে শুরু হয়। ১৮৪০ সালে ভারতবর্ষে বাবা ভূধন গিরি সর্বপ্রথম কফির চাষবাস শুরু করেন। ভারতের কর্ণাটকে কফির চাষ শুরু হলেও পরবর্তীতে তামিল নাড়ুসহ বেশ কিছু প্রদেশে শুরু হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকায় কফি চাষের চেষ্টা চলছে।
শরীরে প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে কাজ করে কফি। একটি গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, নিয়মিত কফি খেলে নানা ধরনের রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আসুন জেনে নেই, কফির উপকারিতাগুলো-
শক্তি যোগায়
শারীরিক অবসাদ দূর করার জন্য মোক্ষম পানীয় কফি। শরীর মন চাঙ্গা করতে এক কাপ গরম কফির বিকল্প নাই। কফিতে থাকা উপাদানের নাম ক্যাফেইন। ক্যাফেইন শরীরে উদ্যম ও উৎসাহ তৈরি করে। তাই খেলাধুলা কিংবা কঠিন কাজ করার আগে কফি খেলে উপকার পাবেন।
ওজন কমে
ওজন কমাতে নির্ভর করতে পারেন কফির ওপর। কফি ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে এবং কর্মক্ষমতা বাড়ায়। সকালে জিম শুরু করার আগে এক কাপ ব্ল্যাক কফি খেলে শরীরের ক্যালরি ক্ষয় হয়। ফলে ওজন কমে।
কর্মক্ষমতা বাড়ে
কফি কর্মক্ষমতা বাড়ায়। ক্যাফেইন রক্তের এপিনেফ্রিন বাড়িয়ে তোলে। ফলে কাজে উদ্যম বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে
কফি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় ২৩ থেকে ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত। জটিল এই রোগের ঝুঁকির হাত থেকে বাঁচতে কফি খান নিয়মিত।
যকৃত সুরক্ষায়
শরীরের কাজ পরিচালনায় যকৃতের ভূমিকা অপরিসীম। যারা দৈনিক চার কাপের বেশি ব্ল্যাক কফি পান করেন তাদের যকৃতের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি ৮০ ভাগ কমে যায়। কফি রক্তে যকৃতের ক্ষতিকর এনজাইম কমাতে সাহায্য করে।
হতাশা কমিয়ে প্রশান্তি আনে
মানসিক চাপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন অনেকেই। কি করবেন বুঝতে পারেন না। তখন এক কাপ কফি মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি দেবে। ফলে চাপের কারণে যেসব রোগ দানা বাঁধে শরীরে সেগুলো প্রতিরোধে সাহায্য করে কফি।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
স্কিনক্যান্সারের প্রতিরোধক হিসেবেও বেশ কার্যকরী কফি। ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণাপত্রে সম্প্রতি বেরিয়েছে প্রতিদিন কফি পান করলে সেটা শরীরে ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা তৈরিতে বাধা দেয়। ফলে ত্বক রক্ষা পায় ক্যান্সারের হাত থেকে।
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়
নিয়মিত ব্ল্যাক কফি পান করলে অস্থায়ীভাবে রক্তচাপ বাড়লেও আবার ঠিক হয়ে যায়। দৈনিক দুই কাপ ব্ল্যাক কফি পান করলে স্ট্রোকসহ হৃদযন্ত্রের অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
অকালমৃত্য রোধে
অকালমৃত্যু রোধেও বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে কফি। তাই তো গবেষণায় দেখা যায় যারা নিয়মিত কফি পান করেন তাদের অকালে মৃত্যুর হার খানিকটা হলেও কম।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
কফিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনাকে সতেজ রাখবে। কফিতে ভিটামিন বি২, বি৫, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। ফলে কফি ক্লান্তি দূর করে কাজে মনোযোগ দিতে সহায়তা করে।
বিখ্যাত বৃটিশ লেখক জর্জ অরওয়েল একবার বলেছিলেন, ব্রিটিশদের সভ্যতার অন্যতম অবলম্বন হল চা। কিন্তু বর্তমানে ব্রিটিশদের খাবারের তালিকার চায়ের স্থান দখল করে নিচ্ছে নানা ধরনের কফি। শুধু ব্রিটেনেই নয়, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কফি এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়।
সারাবাংলা/টিসি/ এসএস