Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মা হওয়ার পরও স্লিম আর ফিট !


৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৩:০৫

তিথি চক্রবর্তী

গর্ভাবস্থায় ওজন বাড়া এবং মোটা হয়ে যাওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। সন্তান জন্মের পর এই বাড়তি ওজন কমানো কঠিন বলে মনে করেন অনেকেই। কিন্তু সত্যটা হল, একটুখানি সচেতন থাকলেই সন্তান জন্মের পর দ্রুত ও সহজেই ওজন কমিয়ে নিজের আগের আকৃতি ও ওজন ফিরিয়ে এনে ফিট আর সুস্থ থাকা সম্ভব। বলিউড অভিনেত্রী কারিনা কাপুর সন্তান প্রসবের পর দ্রুত ওজন কমিয়ে চমক সৃষ্টি করেন। মাত্র ৯ মাসে ১৮ কেজি ওজন কমিয়ে আগের অবস্থায় ফিরে যান তিনি। ওজন কমানোর জন্য তিনি ক্র্যাশ ডায়েট করেননি। বরং নিয়মিত ব্যায়াম এবং খাদ্যাভ্যাস ঠিক রেখেছিলেন।

বিজ্ঞাপন

শুধু বলিউড অভিনেত্রী কারিনা না, আমাদের দেশেও অনেকে গর্ভাবস্থায় বেড়ে যাওয়া ওজন কমাতে সচেতন থাকেন। নাসরিন জাহান একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। ২ বছর আগে তার প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। সন্তান জন্মের পর ৯ কেজি ওজন বেড়ে যায় তার। ওজন কমাতে ডাক্তারের পরামর্শে সঠিক খাদ্যতালিকা তৈরি করে নেন। এর পাশাপাশি নিয়মিত অ্যারেবিকস করেন সপ্তাহে চার দিন। এতে ৫ মাসে ৬ কেজি ওজন কমে যায় তার। নাসরিন জানান, ওজন কমানোর জন্য দরকার একাগ্রতা। অনেক কাজের ফাঁকেও নিজের জন্য সময় বের করতে হবে।

গর্ভাবস্থায় সন্তানের পুষ্টির জন্য মাকে বেশি খাবার খেতে হয়। তাই এসময় পেটে, কোমরে ও শরীরের নিচের অংশে মেদ জমে যায়। গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকভাবে মায়ের ওজন বেড়ে যায় ১১ থেকে ১৫ কেজি পর্যন্ত। সন্তান জন্মের সময় ৪ থেকে ৬ কেজি ওজন কমে। আর বাড়তি ওজন কমতে প্রসবের পর সাধারণত ৬ মাস লেগে যায়। কিন্তু কোন কারনে যদি ৬ মাস পরও মেদ থাকে এবং আরও ওজন বাড়ে তাহলে অবশ্যই মাকে সচেতন হতে হবে। কারণ বাড়তি ওজনের ফলে পরবর্তীতে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস কিংবা হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

বিজ্ঞাপন

গর্ভাবস্থায় বাড়তি ওজন কমাতে হলে ক্র্যাশ ডায়েট করা যাবে না। এতে মা ও সন্তান দুজনেরই ক্ষতি হবে। বরং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে ও খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখতে হবে।

আসুন জেনে নেই সন্তান জন্মের পর শরীরের ওজন কমাতে কী কী করতে হবে

 

সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান

জন্মের ৬ মাস পর্যন্ত শিশু মায়ের বুকের দুধ খায়। সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ালে মায়ের শরীর থেকে সারাদিনে ২০০ থেকে ৫০০ ক্যালোরি খরচ হয়। শিশু যতবার চায় ততবার তাকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। যা ওজন কমাতে সহায়ক। তবে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ালে মাকে প্রয়োজনের তুলনায় খুব বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেতে হবে- এমন ধারণা ভুল। ডাক্তারের পরামর্শমতো ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে।

 

ব্যায়াম করুন

সন্তানকে বেশি সময় দিতে গিয়ে নিজের কথা ভুলেই যান অনেকে। ব্যায়াম করার সময় পান না। যার কারনে ওজন বেড়ে যায়। ব্যায়াম শুধুমাত্র ওজন কমায় না। মানসিক প্রশান্তি যোগাতেও সাহায্য করে। প্রতিদিন অল্প সময়ের জন্য ব্যায়াম করার অভ্যাস করতে হবে। প্রথমে ২০ মিনিট হাঁটা দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। এরপর প্রতি সপ্তাহে ৫ মিনিট করে হাঁটার সময়টা বাড়ান। নিয়মিত হাঁটার পাশাপাশি সাঁতার ও যোগব্যায়ামও ওজন কমাতে বেশ কার্যকর। স্বাভাবিক প্রসবের অন্তত দেড় মাস পর এবং সিজারিয়ান প্রসবের ২ মাস পর থেকে ব্যায়াম শুরু করতে হবে। ব্যায়াম করার সময় অবশ্যই ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। ব্যায়াম করলেই দ্রুত ওজন কমে যাবে না। অন্তত ২ থেকে ৩ মাস নিয়মিত ব্যায়াম করলে ওজন আস্তে আস্তে কমতে শুরু করবে। ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং কোন ধরনের ব্যায়াম আপনার উপযোগী তা অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে জেনে নেবেন।

খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখুন

সন্তান জন্মের পর চিকিৎসকের দেওয়া ডায়েট চার্ট মেনে খাবার খেতে হবে। প্রতিদিন একই সময়ে খাবার খেতে হবে। সকালের নাস্তা কখনোই বাদ দেয়া যাবে না। বরং সকালে ভারি নাস্তা খেতে হবে। সকালে পেটভরে নাস্তা খেলে সারাদিন ক্ষুধা কম লাগবে। দুপুর ও রাতে তুলনামূলক কম খেতে হবে। দুপুর ও রাতের খাবারে শাকসবজি, মাছ, ডাল, মাংস খেতে হবে। তবে সবকিছুই খেতে হবে ডায়েট চার্ট মেনে। সকালে নাস্তার পর দুপুরের খাওয়ার মাঝে ফল খেতে পারেন। বিকেলে হালকা নাস্তা খেতে হবে।

মাসাজ নিন

বিভিন্ন স্পা ও  ওয়েলনেস সেন্টারে বডি মাসাজ দেয়া হয়। এছাড়া বাসাতেও দক্ষ লোককে দিয়ে মাসাজ করিয়ে নিতে পারেন। মাসাজ শরীরের ব্যাথা দূর করে, রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে, মেটাবলিজম বাড়ায়, ক্লান্তি কাটায় এবং শরীরের আগের আকৃতি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।

পর্যাপ্ত ঘুমান

পর্যাপ্ত ঘুম ওজন কমাতে সহায়তা করে। কম ঘুমালে শরীরে ক্লান্তি থেকে যায়। এই ক্লান্তি কাটাতে অনেকে বেশি খেয়ে ফেলেন। যার কারনে ওজন বেড়ে যায়। সন্তান জন্মের পর মায়েরা ঘুমানোর সময় পান না। তারপরও মাকে খানিকটা সময় বের করে নিতে হবে ঘুমানোর জন্য।

ফাস্ট ফুড মিষ্টি বাদ দিন

ফাস্ট ফুড একেবারেই খাওয়া যাবে না। মিষ্টিজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। আর প্রচুর পানি খেতে হবে। পানি অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। রান্নায় মসলা কম দিতে হবে। সেদ্ধ ও কম তেলে রান্না করা খাবার খেতে হবে।

ক্রাশ ডায়েট করবেন না

পরিমিত না খেয়ে ডায়েট করা যাবে না। এতে শরীরের চর্বির চেয়ে মাংসপেশি ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া সুষম খাবার না খেলে পুষ্টির অভাবে মা ও সন্তানের নানা রোগ দেখা দিতে পারে। এ ধরনের ডায়েটে ওজন সাময়িকভাবে কমলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না।

 

সারাবাংলা/ টিসি/ এসএস

 

 

 

ক্রাশ ডায়েট গর্ভাবস্থা ডায়েট প্রসব ফিট বুকের দুধ ব্যায়াম মা সন্তান জন্ম স্লিম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর