পর্ব-৭ [ছাদবাগানে লাল শাক- লালে রাঙা মুগ্ধতা!]
১৭ জানুয়ারি ২০১৮ ১৩:৫৭
ছাদবাগানে কি কি শষ্য চাষাবাদ করা হবে, তা নির্ভর করে কতটুকু জায়গা আপনি চাষাবাদের কাজে লাগাতে পারবেন, তার উপর। আবার শুধু মাত্র ঋতু ভিত্তিক শষ্য চাষাবাদ করেন যারা, তাদের চাষের পদ্ধতি আমার ছাদবাগান থেকে একদম অন্যরকম। কারণ আমার এখানে রকমারী ফুল ফলের সাথে শুধু যতটুকু জায়গা খালি পাই, তাতেই শাক সবজি চাষ করে থাকি।
তাই আমার লেখায় বীজ থেকে শষ্য ফলানোর সবকিছুর সহজ উপায়গুলো পেয়ে থাকবেন, ছোট আকারে চাষাবাদের জন্য। তবে একই উপায়ে যদি আপনি বড় জায়গা পেয়ে যান ছাদে, তাহলে সব ধরণের শাক সবজি চাষ করতে পারবেন চোখ বন্ধ করে। অর্থাৎ আমার সহজ উপায়গুলো ভর করে হয়ে যেতে পারবেন বিশাল বড় চাষী।
গতবারের কলামে ছাদবাগানে সরিষা শাক সম্পর্কে লিখেছিলাম। আজ লাল শাক চাষাবাদের সবচেয়ে সহজ উপায় জানাবো। লাল শাক এমন একটি শষ্য যা আপনার ড্রাম বা টবে লাগানো অন্যান্য গাছের বাড়তি মাটিতেই চাষ করা যায়। আগেও বলেছি, যে কোন শাক চাষে আমি কাওরান বাজার থেকে কেনা একশো টাকা দামের গামলা ব্যবহার করে থাকি। এতে করে আলাদা করে সব ধরণের শাক চাষাবাদ করা যায়। সব শাকের মাঝে লক্ষী শাক হল এই লাল শাক। চাষাবাদে সবচেয়ে কম জ্বালাতন করে আর সবচেয়ে আরামদায়ক চাষের শস্য এই লাল শাক।
আপনার যদি জায়গা বেশী থাকে, তাহলে মালামাল রপ্তানী করা হয় এমন শক্ত আর মাঝারী আকারের কার্টন সংগ্রহ করে ফেলতে পারেন। এসব কার্টনও কাওরান বাজারে সস্তায় পাবেন। অথবা চেনা কারো গার্মেন্টসের ব্যবসা থাকলে,তার কাছ থেকেও পেয়ে যেতে পারেন। এ ছাড়াও লাগবে জল থেকে কার্টনকে বাঁচাবার জন্য রিকশাতে যে পলিথিন ব্যবহার করা হয়, সেটার কয়েক গজ। বাড়িতে শিশুদের অব্যবহৃত ওয়ালক্লথ বা খাবার টেবিলের প্লাস্টিক কভার থাকলে তো আর বাড়তি খরচের ঝামেলাই থাকলনা। নেট লাগবে, না থাকলে পাতলা পুরানো শাড়ি হলেই হবে। এরপর শুধু ঝরঝরে মাটির দরকার হবে আর ভালো নার্সারী থেকে লাল শাকের বীজ।
কার্টন ভেঙ্গে ভেতরটা নীচের দিকে নামিয়ে দিতে হবে আগে। তার উপর পলিথিন বা ওয়ালক্লথ বিছিয়ে দিতে হবে সমান করে। এমন ভাবে বিছাতে হবে যেন কার্টনের কাগজগুলো ঢেকে যায়। না হলে জল দিলে কার্টনের প্রতিটা কোণের কাগজ ভিজে আপনার শাকের বেড ভেঙ্গে যেতে পারে। সেই পলিথিনের উপর মাটি ছড়িয়ে দিতে হবে। তিন থেকে চার ইঞ্চি মাটি হলেই লাল শাকের জন্য উপযুক্ত বেড তৈরী হয়ে যাবে। কার্টন ছাড়াও অনেকে ফেলে দেয়া ড্রয়ার, ককশিট বক্স, প্লাস্টিকের ফ্রুটস বক্সও ব্যবহার করে থাকেন এই ধরণের বেড তৈরিতে। বেডের মাটিগুলোতে হাত ভরে ভরে আঁজলা করে জল ছিটিয়ে দিয়ে আগের দিন রেখে দিলেই হবে। পরের দিন লাল শাকের বীজ হালকা হালকা করে ছিটাতে হবে। কখনই মুঠো ভর্তি বীজ এক জায়গায় ছড়াবেন না। লাল শাকের বীজ ভিজিয়ে রাখতে হয় না বলে যে কোন সময় চাষ করা যায়। আমি এখনও এই পদ্ধতিতে চাষ করিনি তাই ছবি দিতে পারলাম না।
বেড হোক কি ড্রাম বা টব, যেখানেই লাল শাক বুনে থাকুন না কেন, এদের চারা দুই বা তিন ইঞ্চি লম্বা না হওয়া পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হয়। নেট বা পাতলা শাড়ি ছিড়ে ঢেকে দিলেই আর সমস্যা থাকবে না। তা নাহলে চড়ুই পাখি দুই পাতা উঠতে না উঠতেই, সব চারা খেয়ে চলে যাবে। এই শাকে জল লাগে খুবই সামান্য। বীজ থেকে চারা বের হতে তিন দিন লাগে। দুই সপ্তাহের মাঝে লাল শাক তুলে আনা যায়। একটু বেশী বড় করে তুলতে চাইলে বেড থেকে মাঝারী শাকগুলো তুলে ফেলতে হবে। যেন বড় হবার জন্য বাদবাকিরা যথেষ্ট জায়গা পায়। পোকামাকড় থেকে শাক রক্ষা করার জন্য আমার প্রিয় কীটনাশক, ছাইকে ব্যবহার করে থাকি আমি। সপ্তাহে একদিন ছাই ছিটিয়ে দিলে আর কোন ভয় থাকে না।
লাল শাকের বীজ থাকলে আপনি যে কোন জায়গা খালি থাকলেই ছিটিয়ে দিতে পারেন। বীজ ভালো হলে শাক বড় হতে সময় লাগে না। তবে যে কোন বীজই ভালো করে মুখ বন্ধ বোয়াম বা এয়ার টাইট ব্যাগে রাখলেই চিন্তা হাওয়া হয়ে যাবে। প্যাকেট খোলার পর কখনই আর যে কোন বীজ খোলা বাতাসে রাখায় যায় না। আর কিছু না থাকলে রাবার ব্যান্ড দিয়ে প্যাকেটের মুখ বেঁধে ঘরে রেখে দিবেন, ছাদে বা বারান্দায় নয়।
এ বছরে আমি লাল শাক বড় গাছগুলোর ড্রামে থাকা চারধারের অবশিষ্ট মাটিতে চাষ করেছি। বড় বড় গাছগুলোর গোড়া বাদ রেখে বীজ ছিটিয়ে দিয়েছিলাম। প্রায় প্রতিটা ড্রামেই লাল শাক উঁকি দিচ্ছে তাই। লাল শাক দিয়ে লাল লাল করে ভাত মেখে খাওয়ার জন্য চলুন এবার আপনার ছাদ বাগানে বীজ ছড়িয়ে দিয়ে আসি। গুঁটি গুঁটি করে লাল দুটো পাতা বের হবে। আর আমার মতন আপনিও তার রঙে মুগ্ধ হয়ে মনে মনে বলবেন জানি, ‘চাষী পরিবার, সুখী পরিবার’।
সারাবাংলা/আরএফ
নগর চাষীর কলাম (পর্ব-১)