Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফেলনা সবজি থেকে প্রাকৃতিক সার ও গাছের চারা


২৩ মার্চ ২০১৯ ১৭:৩৭

পর্ব – ৩৭ ।। 

ফেলনা সবজি জমিয়ে সার বানানোর উপকারিতা অনেক। এগুলোতে গাছপালা সুজলা-সুফলা হয় একেবারে নিশ্চিত। আবার সেখান থেকে বিভিন্ন সবজির চারাও পাওয়া যায় একদম বিনামূল্যে এবং অহরহ। এ পর্যন্ত ফেলনা সবজি থেকে ভুট্টা, মরিচ, মিষ্টিআলু, বেগুন, টমেটো, পেপে, মিষ্টিকুমড়া এবং সবচেয়ে আশ্চর্যজনকভাবে একটি দেশি পেয়ারার চারা পেয়েছি আমি। এই পেয়ারা গাছ থেকে গত চার বছর বেশ ভালোই পেয়ারা সংগ্রহ করতে পেরেছি।

বিজ্ঞাপন

ফেলনা, ফেলে দেয়া সামগ্রী। ঠিক তেমনই আমাদের রোজকার খাবারের জন্য বাজার থেকে যে সবজি আনা হয় এবং তা কুঁটাবাছার পর সবজির যে উচ্ছিষ্ট পাওয়া যায় তার নাম দিয়েছি ফেলনা সবজি। আজ শোনাবো সেই ফেলনা সবজি থেকে কীভাবে সার আর গাছের চারা বানানো যায় সেই গল্পটা।

ফেলনা সবজি

ছাদবাগানে ভুট্টাগাছে ভুট্টা এবং মটরশুঁটি ফুল

বছর খানেক আগেও ঘর থেকে ছাদবাগানের জন্য ডিমের খোসা ছাড়া আর কিছুই সার হিসেবে ব্যবহারের কথা ঠিকমতো জানতাম না। গত বছর সৌভাগ্যক্রমে অস্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসেল শহরে যাওয়া হয়েছিল। নূপুরজান আর মিল্টন ভাইয়ের সাথে কয়দিন সময় কাটাবো বলে। ওদের ওখানে আমাদের মতন রোজ রোজ ঘরের ময়লা নিতে আসে না কেউ। সপ্তাহে একদিন নির্দিষ্ট সময়ে সিটি কর্পোরেশন থেকে বিশাল গাড়ি করে সব ধরনের আবর্জনা নিয়ে যায়। মজার কান্ড হচ্ছে, সারা সপ্তাহ ধরে ঘর বা বাইরের ময়লা নির্দিষ্ট রঙের বিনে জমাতে হয়। লাল, সবুজ এবং হলুদ রঙের বিনের কাজ একদম আলাদা আলাদা। আর ঘরে একেবারে ছোট্ট একটা বিন বাক্স দেয় সিটি কর্পোরেশন, তাতে ব্যবহারে জন্য সবুজ প্লাস্টিক ব্যাগও দিয়ে যায় তারা। সবজি, মাছ, মাংস এবং রুটির মতন ঘরের সব রকমের উচ্ছিষ্ট খাবার এই বাক্সে রাখতে বলা হয়। সবুজ ব্যাগটিসহ সিটি কর্পোরেশন ফেলনা খাবার থেকে কম্পোজড্ সার তৈরী করার জন্য নিয়ে যায় অন্যান্য আবর্জনার সাথে। শহরের বিভিন্ন পার্কের গাছে দেয়ার জন্য, এই পদ্ধতিতে বানানো সার দিয়ে থাকে তারা। আবার সবুজ ব্যাগটিও রিসাইকেলিং থেকেই তৈরী হয়ে আসে, পরিবেশবান্ধব ব্যাগ হিসেবে।

বিজ্ঞাপন
ফেলনার সার

ফেলনা বালতিতে পাওয়া টমেটোর চারা

ব্যস, এসব দেখে মাথায় বুদ্ধি ঘুরঘুর করতে থাকলো। ঘরে বসে প্রাকৃতিক সার বানানোর বুদ্ধি। দেশে এসে ঘরে সেই সার বানানোর উপায় বের করতে তেমন সময় লাগেনি আমার। একটা বাজারের ব্যাগ আলাদা করে রান্নাঘরের কোণে ঝুলিয়ে রেখে, প্রতিদিনকার উচ্ছিষ্ট সবজি, শাক এবং ডিমের খোসা সেটার ভিতরে জমাতে শুরু করলাম। সেখানে লাউর খোসা, আলুর খোসা, ফুলকপি আর পাতাকপির ডাঁটা, মটরশুটির খোসা, পেয়াজের খোসা অর্থাৎ যা খাওয়া হয় প্রতিদিন এবং দ্রুত পচনশীল সব ধরণের সবজির ফেলনা জমাতাম। এক সপ্তাহ হতে হতেই ব্যাগ ভরে গিয়েছিল। পুরো ব্যাগ ধরে ছাদের একটা বড় বালতিতে ফেলনা সবজি ফেলতে থাকলাম। ডিমের খোসাগুলো একটু ভেঙে দিলে ভালো হয়। নাহলে আস্ত আস্ত খোসা ভাঙতে অনেক সময় লাগে। আর বাদবাকী ফেলনাগুলো আপনা আপনি নিজেদের চাপে পচে সার হতে আরম্ভ করে। পচে ভিজে উঠলে সেই সার একটা হাতা দিয়ে তুলে বিভিন্ন গাছের গোড়ায় দিয়ে একটুখানি মাটির সাথে মিশিয়ে দিলেই হবে। রোজ জল দেয়ার সময় দেখা যায় কয়েকদিনের মাঝেই সেগুলো মাটির সাথে মিশে গেছে।

সবচেয়ে মজার কান্ড হচ্ছে এসব সারের থেকে যখন বিভিন্ন সবজির চারা মাথা উঠিয়ে দেখা দেয়। এবার আমার ছাদবাগানের মটরশুটি চারা সবজির সার থেকেই পাওয়া। তুলে নিয়ে আলাদা করে অন্য টবে বুনে দিয়েছিলাম। মটরশুটি পাওয়ার চেয়েও আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া হচ্ছে, মটরশুটির ফুল দেখা। যা সচরাচর শহরে দেখা মেলা ভার। এছাড়াও ভুট্টার চারা থেকে ভুট্টা চাষ করতে পেরেছি। প্রায় ছয়টা গাছে নিয়মিত ভুট্টা হচ্ছে। আর টমেটো পাওয়ার তো শেষই নেই এই সার থেকে। সার থেকে পাওয়া মোট চারটা টমেটো চারা থেকে এখনও টমেটো পাচ্ছি। পেপে চারা পেয়েছি দুটো। বড় হচ্ছে আলাদা টবে।

ফেলনা সবজি

সারের বালতিতে পেঁপে চারা

ফেলনা, শব্দটির অর্থ পালটে গিয়েছে আমার কাছে। নিজের হাতে চাষাবাদের খুঁটিনাটি শিখতে ভালো লাগে আমার। সবাইকে জানাতেও খুব ভালো লাগে। ছাদবাগানে ভালো চাষাবাদ করতে হলে রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়া লাগে না, তাই জেনেছি। প্রকৃতির খেয়াল, ব্যবহার আর মর্জিকে জানতে হয় সব থেকে আগে। ছাদবাগানে ভালো চাষাবাদের জন্য বিশাল আয়োজন বা খরচ করারাও প্রয়োজন নেই। সাধ্য এবং সুযোগকে সময় দিলেই হয়। একটা বিষয়ই সবচেয়ে জরুরী দরকার তা হচ্ছে, ভালোবাসা। এবার আপনার ঘরেও ফেলনা নিয়ে তৈরী হয়ে যাক ছাদবাগানের প্রাকৃতিক সার। ফেলনাও হয়ে উঠুক ভালোবাসবার আরেকটি শব্দ। সবুজে সবুজে ভরে আসুক সবার ছাদ উঠোন। চাষী পরিবার, সুখী পরিবার।

 

ছবি- লেখক 

সারাবাংলা/আরএফ

ছাদ বাগান নগর চাষী নগর চাষীর কলাম শাওন মাহমুদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর