Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঐতিহাসিক লালকুঠিতে একটি বিকেল


২৩ জুন ২০১৯ ১১:২৫

পুরান ঢাকার প্রতিটি অলিতেগলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইতিহাসের নানা অধ্যায়। এখানে প্রতিটি ভবনের সাথে মিশে আছে একটি করে ইতিহাসের গল্প। তেমনই একটি ভবন হলো বুড়িগঙ্গার পাড়ে অবস্থিত লালকুঠি বা নর্থব্রুক হল।

শুক্রবার সকাল থেকেই মনটা খুব ছটফট করছে কাছে পিঠে কোথাও ঘুরতে যেতে। এমন কোন জায়গা যেখানে গেলে পুরনো দিনের গন্ধের সাথে মিলবে মানসিক প্রশান্তি। ফেসবুকে ভ্রমণসংক্রান্ত কয়েকটি গ্রুপ ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখলাম এমনই একটি জায়গা নর্থব্রুক হল। এর সাথে মিশে আসে চমকপ্রদ ইতিহাস। ঠিকানাও খুঁজে পেলাম এসব গ্রুপেই।

বিজ্ঞাপন

বিকেল ৫ টায় শুরু হলো যাত্রা। শিল্পকলা একাডেমি থেকে রিকশা নেবো তখনই দেখা এক বন্ধুপ্রতিম বড় ভাইয়ের সাথে । ভাইকে বলতেই রাজী হয়ে গেলো আমার ভ্রমণসঙ্গী হতে। ৮০ টাকায় রিকশা ঠিক করলাম সদর ঘাট লঞ্চ টার্মিনালের লালকুঠি ঘাটে যাওয়ার জন্য। সবে বৃষ্টি শেষে ঝকমকে রোদে ভেসে যাওয়া এক বিকেল।

রিকশা এক একটা বাঁক নেয় আর সেই রোদ কখনো পিঠে আবার কখনো এসে পড়ছে মুখে। দারুণ এক অনুভুতি। রিকশাওয়ালা মামার বেলের শব্দ শুনতে শুনতে আর প্যাডেলের ধাক্কায় পৌঁছে গেলাম লাল কুঠি ঘাটে। লঞ্চ টার্মিনালে মানুষের ভীড় আর লঞ্চের জোরালো হর্ণে কিছুটা অস্বস্তি হচ্ছিলো। লাল কুঠি ঘাট থেকে পেছনে তাকালেই দেখা যায় লাল রঙের লালকুঠি দালান। পেছনের গলি দিয়ে ঢুকে কিছুটা হাঁটলেই চোখে পড়বে লালকুঠির প্রবেশদ্বার।

মোঘল নির্মাণশৈলীতে নির্মিত এই দালানের নকশার আভিজাত্য চোখে পড়ার মতো। লাল রঙের দেওয়ালের কারণে সবাই ডাকে লালকুঠি। কোন টিকিট বা অনুমতি ছাড়াই যাওয়া যায় এই লালকুঠিতে। লাল রঙের এই দালানের দিকে তাকালেই মনে হয় এই দালানের প্রতিটা ইটে যেন লেগে আছে এক একজন বিখ্যাত মানুষের ছোঁয়া। নর্থব্রুক হলের দুপাশে দুটি করে মোট চারটি মিনার আছে। এসব মিনার থেকে খসে পড়ছে প্লাস্টার। সব মিলিয়ে পুরো দালানটারই জীর্ণ দশা। ভেতরে ঢুকে মনটাই খারাপ হয়ে গেলো এসব দেখে।

বিজ্ঞাপন

ভাবছিলাম যে মিলনায়তনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে, একসময় যে মঞ্চে হয়েছে সংস্কৃতিচর্চা, সেই মঞ্চের আজ বেহাল দশা। এখানে সেখানে ভাঙা চেয়ারে জমেছে ধুলো। মঞ্চের পর্দা ছেঁড়া, মঞ্চটাও ভেঙে পড়বে যখন তখন। মূল ভবনের সামনের দিকে গেলে দেখা যায় সেখানে ভবনের সামনে  রাখা কিছু ভ্যানগাড়ি। ভবনের গ্রিলে শুকাতে দেওয়া হয়েছে ভেজা কাপড়।

কুঠির সামনের পরিবেশও খুব অপরিষ্কার। যে কোন দর্শনার্থীরই মন খারাপ হয়ে যাবে এসব দেখলে। এখানে একটা লাইব্রেরী আছে যেখানে প্রায় দশহাজারের বেশি বই আছে। সেই লাইব্রেরীও আজ আর কেউ ব্যবহার করে না। এখানে এখন ঢুকতে দেওয়া হয়না কাউকেই

১৮৭৪ সালে ভারতের গভর্ণর জর্জ ব্যরিং নর্থব্রুকের বাংলাদেশ সফরকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং তাকে সম্মান জানাতে এই নর্থব্রুক হল নির্মাণ করা হয়। পরে, ১৯২৬ সালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ঢাকা পৌরসভা থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় এখানে। তাছাড়া এই হলের মঞ্চে চলতো সংস্কৃতিচর্চা।

বাংলার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়জুড়ে থাকা নর্থব্রুক হল বা লালকুঠি আজ ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে। এমন ঐতিহাসিক স্থাপনা পড়ে আছে অযত্নে-অবহেলায়। বাংলাদেশের পত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর যদি এসব স্থাপনাকে সংস্কার করতো, এসব ইতিহাস রয়ে যেত আরও কয়েকশো বছর। আশা করি কর্তৃপক্ষ দ্রুতই নজর দেবে এসব ঐতিহাসিক স্থাপনার সংস্কারে।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে প্রায়। কিছুটা হতাশা নিয়ে লাল কুঠি থেকে বের হয়ে এলাম আমরা। তারপর রিকশা নিয়ে নর্থব্রুক রোড ধরে ফিরে আসলাম। সন্ধ্যার নীল আকাশ আর মাত্র জ্বলে ওঠা ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ফিরে আসলাম পুরান ঢাকা থেকে।

সারাবাংলা/আরএফ

নর্থব্রুক হল লাল কুঠি