Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রকৃতি যখন বাঁচতে শেখায়, ভালবাসতে শেখায়


৮ নভেম্বর ২০১৯ ১০:০০

ছেলেবেলা থেকেই প্রকৃতি আমাকে টানে। বাবা-মায়ের সঙ্গে আমরা ভাই-বোনরাও বাগান করতে সাহায্য করতাম। বিশেষত, আমার দুই ভাই আর আমি বেশি গাছপাগল ছিলাম। ছেলে বেলাটা মফস্বলে কাটানোয় বাবাকে দেখেছি বাসার পাশেই খালি জায়গায় সবজি, ফল আর ফুলের গাছ লাগাতেন। বাবা আমাদের নিয়ে রীতিমতো জমি চাষ করে সব ধরনের সবজি চাষ করতেন। আর মা মূলত শিম, লাউ, শষা, চালকুমড়া এসব চাষাবাদেই বেশি আনন্দ পেতেন।

প্রকৃতি

শাকসবজি ছাড়াও নানারকম ফল ও ফুলের প্রতিও বেশ আকর্ষন ছিলো বাবার। বাড়িতে যে ফলই খাওয়া হত, বাবা এবং মা দুজনেই খুব উৎসাহের সঙ্গে সেগুলোর বীজ বানিয়ে রোপন করতেন। ছেলেবেলা থেকেই বাবা-মায়ের গাছাপালার প্রতি এই ভালোবাসা দেখে দেখেই আমরা ভাই-বোনরাও বাগান করতে উৎসাহী হয়েছি।

প্রকৃতি

মনে পড়ে, নামাজ শেষে ফেরার পথে যে ফুল পেতেন, পাঞ্জাবীর পকেটে তাই নিয়ে আসতেন বাবা। এতো কম ফুলে আমার মন ভরত না। মাঝেমধ্যেই অভিমান করতাম। বাবা তখন বুঝিয়ে বলতো, ‘মা, গাছ থেকে ফুল না ছিঁড়ে নীচে ঝরে পড়া ফুল নিয়ে আসবা সব সময়।’ তিনি বোঝাতেন, ফুল গাছেই সুন্দর। ছিঁড়লে ওরা কষ্ট পাবে। আজ বাবা নেই। সেইসব কথা ভীষণ মনে পড়ে সব সময়।

প্রকৃতি

একসময়, মফস্বল থেকে ঢাকায় চলে আসি। তখন বাসার ছাদই ভরসা। সেখানেই আমি ফুল গাছ লাগাতে শুরু করি। বড় ভাই আর ছোট ভাই খুব সাহায্য করতো। গাছের চারা, সার ইত্যাদি কিনে এনে দিত। স্বল্প পরিসরের সেই বাগান করায় যেন মন ভরত না। বিয়ের পরে আবারও মফস্বলে ফেরা। সেখানে সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখে আমি উচ্ছসিত হই। আবারও বাগান করতে পারবো ভেবে আরও বেশি আনন্দ লাগে আমার। আমার আনন্দ ছুঁয়ে যায় বাবাকেও।

প্রকৃতি

যাই হোক, শুরুর দিকে একটা দুটো করে টবে গাছ লাগাতে শুরু করি। ঢাকায় বেড়াতে এলে, বৃক্ষমেলা থেকে গাছ কিনে নিয়ে যাই। বাড়তে থাকে আমার টবের সংখ্যা। বাসার পেছনে সবজি এবং নানারকম ফলের গাছ আর বাসার সামনে ফুল গাছ। যে জায়গায় ছিলাম সেখানে আশেপাশের ভাবীরাও বাগান করতো। আমরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে গাছের চারা বিনিময় করতাম। আমার বাগানের ফল, ফুল, সবজি ঘিরে ছিলো নানা রকম পাখির মেলা। ভালো লাগায় ভরে যেত মন।

বিজ্ঞাপন

প্রকৃতি

ছেলেবেলা থেকেই জলজ গাছ আর বুনো গাছের প্রতি আমার আগ্রহ। বাসার সামনে ছোট একটা পুকুর বানিয়ে তাতে শাপলা লাগিয়েছিলাম। ছোট্ট সেই পুকুরে লাল আর সাদা শাপলা,পানচুলী, চাঁদমালা ইত্যাদি জলজ উদ্ভিদ আর ফুল দেখে মন ভরে যেত। কিন্তু বেশিদিন আর প্রকৃতির সেই স্বর্গে থাকা হল না আমার।

প্রকৃতি

বাস্তবতার বেড়াজালে আটকে আবারও ফিরে আসতে হল ইট,পাথরের রাজধানীতে। তবে আমার গাছপালার সবাইকে ফেলে আসিনি। যতটুকু পেরেছি, সঙ্গে নিয়ে এসেছি। পানির অভাব, সময়ের অভাব আর আবহাওয়ার প্রতিকূলতার জন্য এদের চেহারা আগের মতো নেই। তবুও যেটুকু আছে আমি তাতেই খুশী। ওরাও আমাকে যথাসাধ্য আনন্দে রাখে যেটুকু সম্ভব ফুল ফুটিয়ে।
প্রকৃতি

আমার সংগ্রহে আছে কয়েক রঙের শাপলা, জলগোলাপ, সোর্ড লিলি, নুখা, হলদে পানা, ক্ষুদি পানা, কয়েক রঙের লিলি, রেইন লিলি, পিচ লিলি, সিলভার কুইন, ডাকুর, নীল ঘন্টা, কয়েক রকম জবা, সাগর লতা, হাড় গোজা, হারজোরা, গ্রাউন্ড অর্কিড, কয়েক রকম বনসাই, অ্যারোমেটিক জুঁই, অনন্তলতা, কাঁটামেহেদি, মেহেদি, নাইটকুইন, অর্কিড, করবী, গোলাপ, দাদমর্দন, বকুল, কাঞ্চন লতা, পারুলসহ আরও কিছু গাছ। সঙ্গে বেশ কয়েক ধরণের পাতাবাহার। জানিনা কতদিন এদের যত্ন নিতে পারবো। তবে চেষ্টা করবো এদের বাঁচিয়ে রাখতে। কারণ, এদের কাছে গেলেই আমি প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারি। ভুলে যাই অনেক দুঃখ ব্যাথা, ভালো হয়ে যায় মন।

প্রকৃতি

একটা আফসোস, আমাদের বাচ্চাদের পারলাম না এসবের প্রতি আগ্রহী করতে। প্রযুক্তির সাহায্যে শিক্ষা দিতে গিয়ে ওরা তাতেই আগ্রহী হয়ে উঠলো। অথচ প্রকৃতি নিয়ে অবসর কাটালে কত ভাল থাকতো ওরা, ফুরফুরে থাকতো ওদের মন। আমরা অভিভাবকরাও থাকতাম নিশ্চিন্ত। কিন্তু আমাদের বাবা-মায়েরা পারলেও আমরা পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে বৃক্ষ প্রেম ছড়িয়ে দিতে পারলাম না। মাঝেমধ্যে মনে হয়, বাচ্চাদের সিলেবাসে বাগান, ফল, ফুল ইত্যাদি নিয়ে একটা অতিরিক্ত বিষয় জুড়ে দেওয়া উচিৎ। তাহলে হয়তো ওরাও আমাদের মত প্রকৃতির কাছে আসা শিখতো। সবুজের মধ্যে বুক ভরে অক্সিজেন নিত, সুস্থ থাকতো, মোবাইল-ট্যাব থেকে দূরে থাকতো।

বিজ্ঞাপন

প্রকৃতি

আমার ছোট বারান্দার অল্প যে কয়টা গাছ, সেখানেই পাখিদের কিচির মিচিরে ভরে ওঠে। পুরো সকালটা থাকে ওদের দখলে। বারান্দা আর ছাদের গাছগুলিই আমাকে প্রতিদিন বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা যোগায়। প্রকৃতির একটু সবুজই আমাকে সবুজ থাকতে সাহায্য করে,পাখিদের সকালের ডাকেই ভাঙে আমার ঘুম। নতুন নতুন স্বপ্ন দেখি গাছের নতুন কুড়ি দেখে, ফুলের নতুন কলি দেখে।

বাগান বিলাস মেইল

 

আরও পড়ুন,

ছোট্ট একটি বাগান, অফুরন্ত মানসিক প্রশান্তির উৎস

গুল্মজীবন

কংক্রিটের জঙ্গলে সবুজের ছোঁয়া

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর