Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ক্রিসমাসে কোন রঙে সাজাই ঘর


২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৮:৩৬

জিঙ্গেল বেলের সুরে সুরে ক্রিসমাস আসে আনন্দের উপলক্ষ নিয়ে। বাংলাদেশে এটি বড়দিন হিসেবে পালিত হয়। বড়দিনে শুধু খাওয়াদাওয়াই নয়, ঘর সাজানোতেও চাই ক্রিসমাসের আবহ। আসুন দেখে নেই কোন রঙগুলো প্রাধান্য পায় ক্রিসমাসের সজ্জায়। একইসঙ্গে জেনে নেই তাদের ইতিহাস।

বিশ্বজুড়ে ক্রিসমাসের রঙিন আনন্দ আয়োজনের বেশিরভাগ রঙই পশ্চিম বা উত্তর ইউরোপের প্রথা ও ঐতিহ্যের অনুসরণে হয়ে থাকে। সাধারণত বড়দিনের সময় থাকে তীব্র ঠান্ডা। অর্ধেক পৃথিবী ঢাকা থাকে সাদা বরফের চাদরে। তীব্র শীত আর সাদার মিশেলে কিছুটা মনমরা ভাব। তাই ক্রিসমাস আয়োজনে উৎসবের রঙ যোগ করে গাঢ় লাল আর সবুজ। সঙ্গে যোগ হয় সোনালি, সাদা আর নীল।

বিজ্ঞাপন

সবুজ
আগেই বলা হয়েছে ক্রিসমাস আয়োজনের অনুপ্রেরণা আসে ইউরোপীয় ঐতিহ্য থেকে। হাজার বছর ধরেই ক্রিসমাসের দিন ঘর সাজাতে হলি, আইভি এবং মিসেল টো’র মত সবুজ লতা। শীতের শেষে বসন্তের সজীবতার কথা স্মরণ করায় সবুজের উজ্জ্বীবতা।

শীতকালীন উৎসবে সবুজের আধিক্য দেখা গেছে প্রাচীনকালেও। অতীতে রোমের অধিবাসীরা জানুয়ারি মাসে নিজেদের মধ্যে চিরসবুজ গাছের ডাল বিনিময় করত সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে। এমনকি প্রাচীন আমলে মিশরীয়রা মধ্য-শীতের উৎসব পালনের সময় পামগাছের ডাল দিয়ে ঘর সাজাত।

লাল
মধ্যযুগে ইউরোপের নানা দেশে অনেকসময় ক্রিসমাসের ছুটির সময় স্বর্গবিষয়ক নাটক মঞ্চস্থ হত। সেসব নাটকে স্বর্গের উদ্যান ‘ইডেনে’র ‘স্বর্গীয় গাছ’ হিসেবে পাইন গাছ ব্যবহৃত হত। এই গাছে ঝুলানো থাকত আপেল। নাটকে এই লাল রঙের আপেলকেই জ্ঞানবৃক্ষের ফল হিসেবে দেখানো হত।

আবার হলিবেরির রঙও লাল। ক্রুশবিদ্ধ হয়ে যীশু খ্রিষ্টের মৃত্যুর সময় তার শরীর থেকে যে রক্ত ঝরে, হলিবেরি সেই লাল রক্তকে রিপ্রেজেন্ট করে। আবার খ্রিস্টীয় ধর্মগুরুদের রোব বা গাউনের রঙও লাল। বলা হয় সেইন্ট নিকোলাসের পোশাকের রঙ লাল যা এখন শান্তাক্লজের ইউনিফর্ম হিসেবে পরা হয়।

বিজ্ঞাপন

সোনালি
সূর্যের সোনালি রোদ একইসঙ্গে শীতের তীব্রতা দূর করে, দীর্ঘ অন্ধকার রাতের শেষে এনে দেয় উজ্জ্বল দিন। আবার আগুনও সোনালি রঙের যা উষ্ণতা আর উজ্জ্বলতার প্রতীক। আবার শিশু যীশু খ্রিস্টকে দেখতে আসা জ্ঞানী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন সোনা উপহার দিয়েছিলেন। সেই জ্ঞানী ব্যক্তিরা যে তারা অনুসরণ করে যীশু খ্রিষ্টের কাছে পৌঁছেছিলেন, সেই তারা সাধারণত সোনালি রঙের হয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে অবশ্য এই তারাটি রূপালি রঙেরও হয়ে থাকে।

সাদা
পশ্চিমা বিশ্বে সাদা হচ্ছে পবিত্রতা এবং শান্তির প্রতীক। একইসঙ্গে বরফও সাদা। স্বর্গীয় নাটক মঞ্চস্থ করার সময় স্বর্গীয় উদ্যানকে অনেকসময় সাদা রঙের কাগজের ওয়েফার দিয়ে সাজানো হত। এই ওয়েফার সেই রুটির টুকরোর প্রতীক যা যীশু খ্রিস্ট ক্রিশ্চিয়ান কমিউনিয়নের সময় গ্রহণ করেছিলেন। আবার ক্রিসমাসের সময় অনেক চার্চের বেদীই সাদা কাপড়ে মোড়া হয়।

নীল
মাতা মেরীর সঙ্গে নীল রঙ জড়িত। মধ্যযুগে সোনালির চেয়ে নীল রঙ বেশি ব্যয়বহুল। তাই শুধুমাত্র বিশাল ধনী অথবা রাজকীয় পরিবারই নীল রঙ করত। অনেকসময় মাতা মেরীর মূর্তিকে নীল পোশাকে সাজানো হত, তার গুরুত্ব বোঝাতে।

নীল একইসঙ্গে আকাশ এবং স্বর্গের প্রতীক।

বেগুনি
যীশু খিস্টের আবির্ভাবের দৃশ্যায়নের সময় নীল অথবা বেগুনি রঙের ব্যবহার দেখা যায় অনেক চার্চে। তাই ক্রিসমাস উদযাপনে লাল, সবুজ, সোনালি ও নীলের পাশাপাশি বেগুনি রঙের ব্যবহারও দেখা যায়।

ক্রিসমাসের ঘর সাজানোর জন্য তাই এই রঙগুলোর প্রাধান্য পায় ঘুরে-ফিরে।

ক্রিসমাস ট্রি
বড়দিনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ক্রিসমাস ট্রি। সাধারণত ঘরে ঘরে প্লাস্টিকের তৈরি কৃত্রিম ক্রিসমাস ট্রি ব্যবহৃত হয়। অনেকেই আবার তাজা ক্রিসমাস ট্রি বা পাইন গাছ রাখেন। এই গাছটি সাজাতে মরিচ বাতি, স্টার, রঙিন বল, কাগজের ফুল, জরির কাগজ ও যীশু ও মাতা মেরীর মূর্তির রেপ্লিকা ও অর্নামেন্টস ব্যবহৃত হয়। এসব অর্নামেন্টে লাল, সোনালি, সাদা, রূপালি, নীল এবং বেগুনি রঙের প্রাধান্য থাকে লক্ষণীয়। ক্রিসমাস ট্রির আশেপাশে রঙিন মোজাও ঝোলান অনেকে। ধরা হয় শান্তা ক্লজ গভীর রাতে এসে এই মোজার মধ্যে উপহার রেখে যাবেন।

অন্যান্য সজ্জা
ক্রিসমাস ট্রি ছাড়াও ঘরের অন্যান্য সজ্জাতেও আনা যায় ক্রিসমাসের আবহ। লাল বা সবুজ কুশন, পর্দা, বিছানার চাদর, ফুলদানি, ফুল ইত্যাদিতে লাল-সাদা-সবুজের পাশাপাশি সোনালি ও নীলের ব্যবহার এনে দেবে রঙিন আর উৎসবমুখর আহব।

ক্রিসমাস ক্রিসমাস ট্রি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর