দ্য লাস্ট প্যারাডাইজ অন আর্থ।। ১১তম পর্ব: মাংকি ফরেস্ট
২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১০:০০
মাংকি ফরেস্ট বানরদের একটি প্রাকৃতিক অভায়রণ্য। এখানে বানরদের নিয়ে গবেষণা করা হয়। ভেতরে বেশ কিছু প্রাচীন মন্দির রয়েছে। সেগুলোর স্থাপনাশৈলি চমৎকার। মূলত বালির সব মন্দিরের স্থাপনাশৈলীই চমৎকার বলা যায়।
মাংকি ফরেস্টে যাওয়ার টিকিটের ব্যবস্থা এজেন্ট আগেই করে রেখেছিল। তাই আমরা সরাসরি চলে গেলাম। আমরা ছাড়া দূর-দূরান্ত পর্যন্ত অন্য কোন ট্যুরিস্ট চোখে পড়ল না। হতে পারে সন্ধ্যা হয়ে আসছিল বলে ট্যুরিস্টরা সব চলে গিয়েছে।
যাই হোক, ভেতরে ঢোকার জন্য দুজন মহিলা গাইড লাঠি হাতে নিয়ে আমাদের সঙ্গী হলো। এখানে সব দোকানে নারী গাইড।বানর তাড়ানোর জন্য তাদের সঙ্গে করে নিতেই হবে। এরা যতটা না ফরেস্ট ঘুরিয়ে দেখাতে আন্তরিক, তার চেয়ে বেশি আন্তরিক, তাদের দোকানে নিয়ে যেতে। এটা ওটা দেখিয়ে কতক্ষণে পণ্য বিক্রি করবে সে চেষ্টায় তৎপর থাকে। ট্যুরিস্টদের ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করে। ‘আজ সারাদিন বিক্রি হয়নি! বিক্রি না হলে না খেয়ে থাকবো! বানরদের অভিশাপ লাগবে আমাদের উপর! ব্লা ব্লা…’
আপনি কিছু না কিনলে আপনাকে তারা স্থানীয় ভাষায় বকতে ছাড়বে না। আমরা কিনিনি। তাই তারা আমাদের উপর বেশ অসন্তুষ্ট হয়েছে।
এটি ছিল চরম বিরক্তিকর। তারচেয়ে বেশি বিরক্তিকর ছিল বানরের যন্ত্রণা। একটু পর পর চারপাশ থেকে বানর এসে ঘিরে ধরতে চায়। এটা-ওটা ছিনিয়ে নিতে চায়। সঙ্গে থাকা মহিলা দু’জন লাঠি নিয়ে হুড় হুড় করে তাড়িয়ে দেয় । বুঝতে পারছিলাম না, আমরা আসলে এখানে কি দেখতে এসেছি! মাংকি? না ফরেস্ট? ফরেস্টের সৌন্দর্যের কথা ভুলে সারাক্ষন বানর আতঙ্কে তটস্থ হয়ে আছি!
বানরদের বাদরামি দেখতে এতোদূর এসেছি বলে নিজেদের উপর ভীষণ রাগও লাগছিল। তাই মূল ফরেস্টে আর যাওয়ার ইচ্ছে হলো না। তবে এ বানরদের বনের শতবর্ষী গাছগুলো কিন্তু দেখার মতো। উদ্ভিদবিদের চোখ দিয়ে বারকতক চেনার চেষ্টা করলাম। গাছগুলোর নাম কি বোঝার চেষ্টা করলাম কিন্তু শত চেষ্টাতেও বাদরের অত্যাচারে তার আর পারলাম না। মনে হল, আর গাছ নিয়ে গবেষণা করে লাভ নেই। এখান থেকে পালাতে পারলেই যেন বাঁচি!
বালির খুব পরিচিত একটি ফুল ফ্রাঞ্জিপানি (frangipani)। এই ফুলটি বলতে গেলে বালির জাতীয় ফুলের পর্যায়ে পড়ে। বালির রাস্তাঘাটে, যেখানে সেখানে থোকায় থোকায় ফুটে থাকা এই ফুলের গাছ চোখে পড়বে। গাছটা যেমন সুন্দর ফুলগুলোও তাই। সাদা ফুলের মাঝখানে হলদেটে শেড। চমৎকার ফুলটির ঘ্রাণও প্রাণ জুড়ানো।
এই মাংকি ফরেস্টে এসে এই ফুলের আরেকটি রং দেখলাম। ম্যাজেন্ডা টাইপের। গাইড জানালেন, ম্যাজেন্ডা কালারের ফ্রাংজিপানি কেবল এখানেই আছে। কিন্তু কথাটি সত্য নয়, আমি আরেক জায়গায়ও এই ফুল দেখেছি।
আমাদের দেশেও এই ফুল দেখেছি। তবে নাম জানি না। বনানী ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে বারিধারা ঢোকার রাস্তায় দুটো সাদা ফ্রাংজিপানি গাছ আছে। গাছে ফুলও ধরে আছে। যদি বালিতে যেয়ে এ ফুলের প্রেমে না পড়তাম তাহলে হয়তো বারিধারার রাস্তার পাশে এই ফুল আমার চোখেই পড়তো না!
দ্য লাস্ট প্যারাডাইজ অন আর্থ।। ১০ম পর্ব: তানজুং বেনুয়া
যাই হোক, মন খারাপের অনুভূতি আর চরম বিরক্তি নিয়ে চললাম ফিরতি পথে। আজকের সন্ধ্যা আমাদের শপিংয়ের নামে বরাদ্দ। তাই মন খারাপ ভাব বেশিক্ষণ টিকলো না। মেয়েগুলো খুশিতে হৈহুল্লোড় শুরু করল আর ছেলেগুলো কোন কোন খেলনা কিনবে সে আলোচনা সেরে নিচ্ছে। এদিকে মায়েরা কোনটা বেশি দরকার তা নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে লিস্টও তৈরি করতে পারছে না। আর বাবারা শপিং এর ব্যাপারে জ্ঞানগর্ভ লেকচার দিচ্ছে। যে জিনিস দেশে আরও কম দামে বা সেইম দামে পাওয়া যাবে সেগুলো যেন আমরা না কিনি, বেশি শপিং করলে লাগেজে জায়গা হবে না, ওজন বেশি হয়ে যাবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমরা বান্ধবীদ্বয় মাথা ঝাঁকিয়ে ‘পরামর্শ মতো কাজ করবো ’ ভাব নিয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে লাগলাম। আমাদের পতিরা কেন যে এতো কথা বলে? যেন আমরা কিছুই বুঝি না।
আমরা তো জানি, শপিংয়ে গিয়ে আমরা ট্রলিতে যা নেব, তার অর্ধেকের বেশি নিবে এই পতিমহাশয়দ্বয়! আর এদিকে আমাদের জ্ঞান দেয়। নিজেদের বলে নাকি কে জানে! আর আমরা ভাবি, যা নেওয়ার তা তো নেবোই! যা নেওয়ার না, তা আমরা কখনোই নিব না! এ সহজ সত্য তারা কবে বুঝবে?