হিম হিম শীতেও ত্বক থাকুক সতেজ
৬ জানুয়ারি ২০২০ ১০:০০
শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে। ফলে ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়। কারো কারো ত্বকে অ্যালার্জি, ব্রণ ও কালচেভাব দেখা দিতে পারে। তাই শীতকালে ত্বকের বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
শীতকালে ত্বকের যত্নে প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ত্বক এক্সফলিয়েট করা। অর্থাৎ ত্বকের মরাকোষ দূর করা। মরাকোষ দূর হলে ত্বক হয় ঝলমলে, প্রাণবন্ত। ঘরোয়া উপায়ে ত্বক এক্সফলিয়েট করা যায়। এরপরের ধাপ হলো ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা। সঠিকভাবে ত্বকের যত্ন নেওয়া।
শীতকালে ত্বকের বিশেষ যত্ন নিয়ে কিছু টিপস দিয়েছেন গীতিস বিউটি পার্লারের রূপ বিশেষজ্ঞ সাবাবা বিল্লাহ।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য প্রথমেই দরকার ভালো ময়েশ্চারাইজার নির্বাচন করা। ত্বক যেন আরো তৈলাক্ত না হয়ে যায় সে ব্যাপারেও সচেতন থাকতে হবে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য জেল বেইজড ময়েশ্চারাইচার বেছে নেওয়াই ভালো। শুধু শীতকালে নয়, এই ধরনের ময়েশ্চারাইজার সারাবছর ব্যবহার করা যায়। তৈলাক্ত ত্বকে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার না করাই ভালো। ত্বকের ধরন বুঝে ফাউন্ডেশন নির্বাচন করতে হবে।
মরাকোষ দূর করবেন যেভাবে
ত্বকের মরাকোষ দূর করতে বাজারে কেনা স্ক্র্যাব ব্যবহার করতেই হবে, তা নয়। ঘরোয়া উপায়েও স্ক্র্যাব বানানো যায়। ঘরে বানানো স্ক্র্যাব ত্বকের জন্য খুবই ভালো। অ্যালোভেরার সঙ্গে চিনি মিশিয়ে ঘরেই বানিয়ে ফেলুন স্ক্র্যাব।
মেকআপ ভালোভাবে পরিষ্কার করুন
ত্বকের ধরন যেমনই হোক, দিনশেষে মেকআপ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। তা না হলে ব্রণ ও অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। এরপর ভালো কোন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। তোয়ালা সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
শুষ্ক ত্বকের পরিচর্যা
শুষ্ক ত্বকের পরিচর্যা ভালো হওয়া দরকার। এমন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে যাতে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা যায়। পরিষ্কার ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া অলিভ ওয়েল ও গ্লিসারিনও ব্যবহার করতে পারেন।
সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন
সানস্ক্রিন কেবল গরমের জন্য নয়, এটি শীতকালেও ব্যবহার করা দরকার। শীতকালের রোদও ত্বকে কালচেভাব আনে। ফলে এসময় বাইরে গেলে ব্যবহার করতে হবে সানস্ক্রিন।
ঠোঁটের যত্ন
ঠোঁটে গ্লিসারিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করার পরিবর্তে লিপবাম ব্যবহার করা ভালো। এতে ঠোঁট আর্দ্র থাকে। সপ্তাহে অন্তত ২ দিন ঠোঁটের মরাকোষ দূর করতে হবে। ঠোঁটের স্ক্র্যাবার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে চিনি, মধু ও জলপাইয়ের তেল।
শীতের ৪টি ফেসপ্যাক
শীতকালে ত্বকের যত্নে ফেসপ্যাক অত্যন্ত কার্যকর। সুস্থ ত্বক পেতে এই ৪টি ফেসপ্যাক এই শীতে নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে।
মধু ও গোলাপজল:
উপকরণ
মধু ১ টেবিলচামচ
গোলাপজল ১ টেবিলচামচ
মধু ও গোলাপজল একসঙ্গে মিশিয়ে মুখ ও গলায় লাগাতে হবে। ১০ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মিশ্রণ প্রতিদিন ব্যবহার করলে দারুণ উপকার পাওয়া যাবে। মধু ত্বকের জন্য প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। গোলাপ জল ত্বকের টোনার হিসেবে ভালো।
পেঁপে ও দুধ:
শীতে ত্বকের লাবণ্যতা ধরে রাখতে পেঁপের ফেসপ্যাক অত্যন্ত উপকারি। বলা যায়, শীতকালে ত্বকের জন্য সবচেয়ে উপকারি হলো পেঁপের তৈরি প্যাক। ত্বকের আর্দ্রতা ভেতর থেকে ধরে রাখতে সহায়তা করে পেঁপে। এছাড়া মরাকোষ দূর করতেও সাহায্য করে।
এক টুকরো পাকা পেঁপে চটকে নিয়ে পেষ্ট বানিয়ে নিতে হবে। এর সঙ্গে কাঁচা দুধ মেশাতে হবে। এই প্যাকটি মুখ ও গলায় লাগাতে হবে। প্যাক শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
পেঁপে ত্বক কোমল ও নমনীয় রাখে। এছাড়া ত্বকে ভিটামিন ও পুষ্টির যোগান দেয়। আর দুধ ভিটামিন ই সমৃদ্ধ। ভিটামিন ই ত্বকের জন্য খুবই ভালো। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে ভিটামিন ই। এই প্যাকটি শীতের জন্য খুবই উপকারি।
নারকেল দুধ:
নারকেল দুধ ত্বকের যত্নে অত্যন্ত উপকারি উপাদান। বিশেষ করে এই শীতে ত্বকের যত্নে নারকেল দুধ অত্যন্ত কার্যকর। ত্বক কোমল রাখতে নারকেল দুধ উপকারি। ত্বকে ফুসকুড়ি বা ব্রণ থেকে রেহাই পেতেও ব্যবহার করুন নারকেল দুধের ফেসপ্যাক।
নারকেল দুধ তৈরি করা খুবই সহজ। কোরানো নারকেলে সামান্য পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এবার ছেঁকে নিলে ঘন দুধ পাওয়া যাবে। এই দুধ ত্বকে ব্যবহার করতে হবে।
তুলার বলের সাহায্যে নারকেল দুধ ত্বকে লাগাতে পারেন। শুকিয়ে গেলে ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফলের জন্য এই ফেসপ্যাক প্রতিদিন ব্যবহার করা দরকার।
নারকেল দুধ ভিটামিন ই সমৃদ্ধ। এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে। এই শীতে নারকেল দুধ খুব ভালো ঘরোয়া ফেসপ্যাক।
অ্যাভোকাডো ও অলিভ ওয়েল:
অ্যাভোকাডো ব্লেন্ড করে পেষ্ট বানিয়ে নিতে হবে। এর সঙ্গে অলিভ ওয়েল মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে হবে। এই মিশ্রণ নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক ভেতর থেকে লাবণ্য হবে।
শুধু বাহ্যিকভাবে ত্বকের যত্ন নিলে চলবে না। ত্বকের আসল সৌন্দর্য নির্ভর করে ভেতরের পুষ্টির ওপর। শীতকালে বাজারে প্রচুর শাক-সবজি ও ফলমূল পাওয়া যায়। খাদ্যতালিকায় এগুলো রাখতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। দুঃচিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
মডেল- শামীমা নাসরিন বন্যা