নিউ জার্সির সানফ্লাওয়ার ফেস্টিভ্যালে ঝটিকা সফর
২৩ জানুয়ারি ২০২০ ১০:১৫
গতবছরের অক্টোবরের এক শনিবার রাতে আমার হাজব্যান্ড বাবু আমাকে জিজ্ঞেস করে, পরদিন সূর্যমুখী ফুল দেখতে যাবো কিনা। শতভাগ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ক’দিন আগে ঘরাঘুরি সংক্রান্ত বিষয়ে তার সাথে কিঞ্চিৎ স্নায়ু যুদ্ধের ফলাফল স্বরূপ ‘মেহ’ টাইপ একটা উত্তর দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে উঠলামও দেরি করে। তারপরে সাপ্তাহিক গণসংযোগ (মানে বাংলাদেশে ফোন করা) সেরে, নাস্তা করে একটু থিতু হয়ে বসতেই মাতাল হাওয়ায় মনটা কেমন উদাসী হয়ে গেল।
দামাল বাতাসে শুকনো পাতা উড়ে যাওয়ার ‘সর-সর’ শব্দ, চিকচিকে সোনালী রোদ-প্রকৃতি জুড়ে যেন হেমন্ত নেমে এসেছে! এমন দিনে ঘরে বসে থাকা যেন পাপ। লম্বা করে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম ‘আজ দিনটা যে কি সুন্দর!’ কম্পিউটার থেকে চোখ না তুলেই জিজ্ঞেস করলেন ‘যেতে চাও সানফ্লাওয়ার ফেস্টিভ্যালে?’ এবার আর দ্বিধা করলাম না। সাময়িক যুদ্ধ বিরতি দিয়ে বললাম, ‘ঠিক আছে এত করে যখন বলছ, রেডি হচ্ছি।’
লাবনী ভাবী যেতে চেয়েছিল, তাই তাকে ফোন করলাম। সে বলল যাওয়া তো যায় কিন্তু ছোটন তো কাজে।’ দিলাম ছোটন ভাইয়াকে কল- ‘এই তুমি ভাবী কে পিক করতে যাচ্ছ কখন আমরা কিন্তু বাসা থেকে এখন বের হচ্ছি।’ আচমকা আক্রমনে সে ‘মানে কি বলতেছ, কোথাও যাবা, কি পিক করব?’ বললাম ‘ভাবী আর পিচ্চিদের পিক করে রওনা দাও, নিউ জার্সি যাব, ফুল দেখতে। সে মিনমিন করে ‘মাইয়া মানুষের বুদ্ধি সারা সকাল কিছু বললনা, এখন অত দূরে কখন যাব কখন আসবো…।’ আমি তাড়াতাড়ি বললাম ঠিক আছে তাহলে ঐ কথাই রইল। সত্যি কথা বলতে ভাইয়াকে তখন যদি বলতাম মাত্র প্ল্যান করেছি তবে সে কিছুতেই রাজী হতনা। এদিকে সে আবার বাবু কে ফোন করে বলল যেন আমারা ওদের বাসায় দুপুরে খেয়ে এক সঙ্গে একটা গাড়ি নিয়ে বের হই।
যা ই হোক, বের হয়েই ধরা। ভাইরে ভাই এই ট্রাফিক তো নীলক্ষেতের কাঁটাবনের সিগনালেও থাকেনা। এক ঘণ্টার জায়গায় প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা ব্যয় করে ওদের বাসায় পৌঁছে কোনরকমে একটু খেয়ে গাড়িতে যখন উঠলাম তখন অলরেডি পৌনে তিনটা। ওদিকে ফার্ম বন্ধ হয় ৬ টায়। তবু যা আছে কপালে ভেবে যাত্রা শুরু করলাম। কিন্তু একটু যেয়েই যে জ্যাম, কোরবানির সময় গাবতলির গরুর হাটের দিকেও অত জ্যাম হয়না।
সেই জ্যাম পার হয়ে যখন যথাস্থানে পৌছালাম তখন ফার্ম বন্ধ হতে বাকি আর মাত্র ৪৫ মিনিট। এত বড় আর এত সুন্দর জায়গা কি আর ৪৫ মিনিতে দেখে মন ভরে? এর মধ্যেই দেখলাম যতখানি সম্ভব। যতদূর চোখ যায় শুধুই ফুল আর ফুল। অদ্ভুত ভালোলাগায় মন ভরে যায় দেখে। বিভিন্ন রঙ আর আকারের সূর্যমুখিরা যেন রঙের উৎসবে সামিল হয়েছে।
কত রকমের যে সূর্যমুখী। ছোট, বড়, মাঝারি, লম্বা আর খাটো গাছে হলুদ, গেরুয়া, মেরুন, হাল্কা সবুজ আর ফ্যাকাসে হলুদ রঙা সূর্যমুখি ফুটে আছে। কাছেই গ্লাডিওলাস, ক্রিসেন্থিমাম, কসমসসহ আরও নানারকম ফুলের সমারোহ। আফসোস! ঐ দিকটাতে সময়ের অভাবে যেতে পারিনি। অল্প সময়ের মধ্যেই যতটুকু সম্ভব মন ভরে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম।
এর মধ্যেই ছোটন ভাইয়া-লাবনী ভাবীর মেয়ে সারিনা বলল, ‘মুনা আন্টি, লেটস রান থ্রু দ্যা সানফ্লাওয়ারস।’ আমিও বললাম ‘লেটস রেস’ দিলাম দুজনে ভোঁ দৌড় গাছের সারির মধ্য দিয়ে। চোখে একটু কম দেখি। কিছুক্ষণ পরেই খোঁজ হল, আমার চশমা কই?! খোঁজ খোঁজ- নাহ কোথাও নেই! তখন ছোটন ভাইয়ার খাটি বরিশাইল্লা ভাষার ডায়লগ ‘ও মুনা তুমি যে কালে জঙ্গলের মধ্যে দাফা দাফি করতে আছিলা, মনে কয় হেই কালেই তোমার চশমা মাডি তে পইররা গ্যাছে।’ আবার ভিত্রে যাইয়া বিছ্রাইয়া দ্যাহ, পায়ের তলায় প্যাডা গাইল্লা না গেলেই হয় এহন! আমি চশমা খুজব কি! হাসতে হাসতে আমার পেট ব্যাথা।
যা-ই হোক, চশমা ছাড়া ‘স্টুডিও ঝাপসা’ র মত কিছু দেখে কিছু না দেখে আবার সেই গাবতলির জ্যাম ঠেলে বাসায় যখন পৌছালাম তখন রাত সাড়ে এগারোটা। শরীরে ক্লান্তি কিন্তু মন ঝরঝরে- চমৎকার একটা জায়গায়, প্রিয় কিছু মানুষের সঙ্গে চমৎকার কিছু সময় কাটিয়ে এলাম।
নিউ জার্সির হল্যান্ড রিজ ফার্ম সানফ্লাওয়ার ফেস্টিভ্যালে প্রায় পঞ্চাশ একর জায়গা জুড়ে সূর্যমুখির পাশাপাশি আরও কিছু ফুল চাষ হয়। বিভিন্ন রকম ফুল দেখার পাশাপাশি কেনাও যায় এখান থেকে। এই ফ্লাওয়ার ফেস্টিভ্যালে সব ফুলের দামই প্রতি ফুল এক টাকা করে ( per stem)।