সুস্থতার জন্য মৃদু যোগব্যায়াম
৪ মার্চ ২০২০ ১১:০০
পৃথিবীতে নানা ধরনের ইয়োগা বা যোগব্যায়াম আছে। পাওয়ার ইয়োগা অর্থাৎ কিছুটা কসরতের যোগব্যায়াম যেমন আছে, তেমনি জেন্টল ইয়োগা বা মৃদু যোগব্যায়ামও আছে। এই মৃদু যোগবায়্যাম নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না বললেই চলে। এ ধরনের যোগব্যায়াম করলে শরীর ও মন শান্ত হওয়ার পাশাপাশি শরীরের শক্তিবৃদ্ধি করে।
জেন্টল ইয়োগা বা মৃদু যোগব্যায়ামে শরীরের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে না। তাই অবলীলায় করা যায় এই আসনগুলো। যে কেউই এইসব আসন অভ্যাস করতে পারেন, তবে যাদের আগেই কোনো না কোনো শারীরিক আঘাত ছিল, বয়স্ক ব্যক্তি এবং ক্রীড়াবিদদের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েই এ ধরনের আসন অভ্যাস করতে হবে। মৃদু যোগব্যায়ামের আসন অভ্যাস করার পরে মাসাজ নেওয়ার পরের আরামদায়ক অনুভূতি আসতে পারে। তাই প্রতিদিনের দৌড়ঝাঁপের জীবনে মৃদু যোগব্যায়াম অভ্যাস করতে পারেন।
মৃদু যোগব্যায়ামের উপকারিতা
১. মনের সঙ্গে শরীরের সংযোগ ঘটায়:
মৃদু যোগব্যায়ামের আসনগুলো শরীর যেন সইতে পারে, তাই খুব ধীরে ধীরে ব্যায়ামগুলো করতে হয়। অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নড়াচড়া খুব ধীরগতিতে করার কারণে আসনগুলো করার সময় অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রতিক্রিয়া পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। এই আসনগুলো অভ্যাস করতে করতে একসময় আমরা আমাদের শরীর কি বার্তা দিচ্ছে তা বুঝতে সক্ষম হই। ফলে মন এবং শরীরের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ে। এধরনের আসন প্রতিদিন অভ্যাস করলে নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ে। কোন কাজটা করতে পারবেন আর কোনটা পারবেন না, তা বোঝা যায়। নিয়মিত অভ্যাসে একসময় বাড়ে শারীরিক সক্ষমতা। বাড়ে নিজের প্রতি ভালোবাসা।
২. শারীরিক চাপ কমায়:
অনেকসময়ই এমন হয় যে ব্যস্ততার কারণে হাতের কাছে যা পাই তাই খেয়ে নেই আমরা। সেসব খাবার খুব একটা স্বাস্থ্যকরও হয় না অনেকসময়। আমাদের শরীর তখন আবার কখন খাবার পায় না পায় সেই অনিশ্চয়তায় সেসব খাবারের অতিরিক্ত ক্যালরি জমা করে রাখে। একে বলা হয় ফ্লাইট কন্ডিশন। এর ফলে আমাদের শরীরের কর্টিসলগুলো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অতিরিক্ত চর্বি জমা করতে থাকে। এর ফলে একধরনের স্ট্রেস বা চাপ তৈরি হয়।
আবার অনেকসময় এমন হয় যে কোনো কাজের চাপে আপনার দৈনন্দিন রুটিন উল্টেপাল্টে যায়। ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। আমরা কাজে বেশি বেশি ভুল করতে থাকি, ধীরগতির হয়ে যাই। একে বলা হয় শরীরের রিজার্ভেশোন মোড।
জেন্টেল ইয়োগা বা মৃদু যোগব্যায়াম শরীরের এই শার্প মোড এবং রিজার্ভ মোডের মধ্যেকার ফাইট থামাতে সাহায্য করে। আসনগুলো করার সময় শরীর রিল্যাক্সড থাকার কারণে মানসিক ও শারীরিক চাপ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়ে যায়।
পেশীর ওপর চাপ (মাসল টেনশন) কমায়:
এইসব আসন অভ্যাসের সময় ইয়োগা ম্যাট বা কম্বলের সাহায্য নেওয়ার কারণে পেশীর ওপর কোনো ধরনের চাপ পড়েই না বলতে গেলে। ফলে যেকোনো ধরনের ব্যথা এবং শারীরিক আঘাত থেকে সহজে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
সপ্তাহে পাঁচ দিন ৪৫ থেকে ৭৫ মিনিট পর্যন্ত অভ্যাস করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
কেউ যদি মৃদু যোগব্যায়ামের কোনো ক্লাসে যেতে না পারেন, তাতেও সমস্যা নেই। ঘরে বসেই করতে পারেন সহজ কিছু আসন।
বলাসন:
প্রথমেই চার হাত পায়ের ওপর ভর দিয়ে উবু হতে হবে। দুই হাঁটু কিছুটা ছড়িয়ে রাখুন। শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে কোমর পিছন দিকে দিন পায়ের গোড়ালির ওপর ভর দিন।
হাতের আঙুলগুলো সামনে ছড়িয়ে কপাল মেঝেতে ঠেকান ও চোখ বন্ধ করুন। ধীরে ধীরে শ্বাস নিন ও ছাড়ুন।
র্যাগ ডল যোগব্যায়াম:
মাউন্টেন পোজে (উত্যানাসনে) অর্থাৎ শিরদাঁড়া সোজা করে পায়ের পাতার ওপর ভর দিয়ে টানটান হয়ে দাঁড়াতে হবে।
কোমরে হাত রেখে ধীরে ধীরে সামনের দিকে ঝুঁকতে হবে। পা টানটান না রেখে কিছুটা বাকিয়ে শরীরের উপরের অংশে চাপ কমান।
এই অবস্থানে থেকেই আপনার মাথা এবং দুই হাত আড়াআড়ি ভঙ্গীতে দুইদিকে নাড়াতে থাকুন।
প্রসারিত পদত্যানাসন:
মাউন্টেন পোজে (তাড়াসন) দাঁড়িয়ে তারপর পা ছড়াতে হবে যতটুকু সম্ভব। দুই পায়ের বুড়ো আঙুল কিছুটা ঘুরিয়ে ভেতরের দিকে দিন এবং গোঁড়ালি বাইরের দিকে দিন। কোমরে হাত রেখে সামনের দিকে ঝুঁকতে থাকুন যতক্ষণ না পর্যন্ত পিঠ টানটান হয়।
ধীরে ধীরে হাত এবং মাথা মাটিতে ঠেকান। শরীর ছেড়ে দিন। প্রয়োজনে হাতের সাহায্যে পায়ে ভর দিয়ে শরীরের ব্যালান্স ঠিক রাখুন।
সুপ্ত বদ্ধকোনাসন:
এই আসনটি শুরুর আগে পিঠের নীচে একটা পাতলা কোম্বল ভাঁজ করে রাখুন, যাতে পিঠ ও কাঁধে চাপ না লাগে। পিঠ সোজা করে বসুন। প্রয়োজনে একটা পাতলা তোয়ালে ভাঁজ করে তার ওপর বসুন। হাঁটু ভাঁজ করে দুই পায়ের পাতা জোড়া লাগান। কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করে দেখুন আপনার শরীরের কোনো অংশে কোনো চাপ লাগে কি না বা অস্বস্তি লাগে কি না।
পুরোপুরি নির্ভার বোধ করলে তারপর ধীরে ধীরে পিছন দিকে শুয়ে পড়ুন। হাত শরীরের দু’পাশে বা পেটের ওপর রাখুন। চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে মনোযোগ দিন।
সুপ্ত কপতাসন:
হাঁটু ভাঁজ করে চিত হয়ে শুতে হবে। এবার ডান পায়ের গোঁড়ালি বাম পায়ের উরুর ওপর রাখুন। বাম পা টেনে বুকের দিকে আনুন যতটা সম্ভব। বামপায়ের উরুর নিচে হাত দিয়ে সাপোর্ট দিন যাতে কোনোরকম চাপ না লাগে।
মাথা যাতে না ওঠে সেদিকে খেয়াল রাখুন। ৩০ সেকেন্ড করে তিনবার করুন। একইভাবে অন্য পায়ে তিনবার করুন।
আনন্দ বলাসন:
চিত হয়ে শুয়ে ধীরে ধীরে হাঁটু ভাঁজ করে পেটের ওপর আনুন। দুই হাঁটু দুইদিকে ছড়িয়ে দিন ও দুই হাত দিয়ে দুইপায়ের বুড়ো আঙুল বা পা ধরুন।
এবার হাত দিয়ে টেনে দুই হাঁটু বা দুই পা যতখানি সম্ভব দুইদিকে নিতে চেষ্টা করুন।
সেতুবন্ধ সর্বাঙ্গসন:
একটা ইয়োগা ম্যাট বা পাতলা কম্বল ভাঁজ করে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার হাঁটু ভাঁজ করুন ও দুই হাত শরীরের দুইপাশে রাখুন। এবার হাতের ওপর ভর দিয়ে ধীরে ধীরে কোমর ও পিঠ উপর দিকে তুলুন। কাঁধ ও পায়ের পাতার ওপর শরীরের ভর থাকবে।
শরীর সহ্য করতে পারবে না এমন উঁচুতে তোলার দরকার নাই। তিরিশ সেকেন্ড করে তিনবার এই আসন অভ্যাস করুন। তারপর শবাসনে (চিত হয়ে টানটান) শুয়ে শরীরকে শিথিল করার সুযোগ দিন।
শবাসন:
হাত পা ছড়িয়ে চিত হয়ে শুতে হবে। চোখ বন্ধ করে শ্বাস প্রশ্বাসে মনোযোগ দিন। শরীর পুরোপুরি ছেড়ে দিতে হবে যেন কোথাও কোনো অংশে কোনো চাপ না থাকে।
এভাবেই আরাম করুন বেশ কিছুক্ষণ।
আনন্দ বলাসন প্রসারিত পদত্যানাসন বলাসন মৃদু যোগব্যায়াম র্যাগ ডল যোগব্যায়াম শবাসন সুপ্ত কপতাসন সুপ্ত বদ্ধকোনাসন সেতুবন্ধ সর্বাঙ্গসন