আতঙ্ক ভুলে সহজ থাকুন হোম কোয়ারেনটাইনে
২২ মার্চ ২০২০ ১০:৩০
চারদিকে আতঙ্ক। কোভিড-১৯ নামক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে মুষড়ে পড়েছে পুরো বিশ্ব। ঘন্টায় ঘন্টায় বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।
এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ কোয়ারেনটাইন, আইসোলেশন ও লক ডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। সামাজিক জীব মানুষকে তার স্বভাবের বিপরীতে যেয়ে একা থাকতে হচ্ছে। বিশেষ করে আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে অন্তত এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোভিড-১৯ আক্রান্ত মায়ের থেকে কয়েক মিটার দূরত্বে দাঁড়িয়ে দশ বছরের শিশুকে কাঁদতে দেখি আমরা। দেখি মায়ের অসহায় ভেঙে পড়া। দূর থেকে আলিঙ্গনের বৃথা চেষ্টা। আবার মৃত ব্যক্তিকে নিঃসঙ্গ অবস্থায় সৎকার করতে দেখেও দীর্ঘশ্বাস ফেলছি আমরা। এসব দেখে দেখে বাড়ছে মনের উপর চাপ।
মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতাই বোধ করি বিরুদ্ধ স্রোতের বিপরীতে চলা। একাকী বদ্ধ ঘরে থাকার বিষয়টা মেনে নেওয়া কষ্টকর অনেকের জন্য। কিন্তু তবুও নিজেদের ও অন্যদের নিরাপত্তার জন্য এখন বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে নিতে হচ্ছে আমাদের। এই সময়ে ইতিবাচক মানসিকতা ধরে রাখা মুশকিল। তবুও ইতিবাচকতাই পারে আমাদের দুঃসময় কাটাতে সাহায্য করতে। আসুন দেখে নেই বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ এই দুঃসময়ে কীভাবে ইতিবাচক মানসিকতা ধরে রাখতে পারি আমরা।
আমাদের প্রধান ভয়টাই সামাজিকতা বাদ দিয়ে কীভাবে বাঁচবো আমরা। অথবা প্রাত্যহিক রুটিনের বাইরে যেয়ে কী করবো। সবার আগে এই চিন্তাটি দূর করুন। ছোট ছোট মুহুর্তগুলো উপভোগ করতে চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, ইতিবাচক আবেগ মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখে।
ছোট মুহুর্ত মানে আসলেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মুহুর্ত। নিত্যদিনের কাজের চাপে হয়ত কখনো সকালের এক কাপ চা কিংবা কফির ঘ্রাণটাই নেওয়া হয়নি ভালো করে। অথবা ঘুম ভেঙে কফির কাপের উষ্ণতা কখনো ছুঁয়ে দেখা হয়নি। অনুভব করা হয়নি গোসলের সময় শরীরে ঠান্ডা বা গরম পানির ধারার আরামদায়ক অনুভূতি। কতকাল সকালের মিঠে রোদ, দুপুরের তীব্র আলো, আর বিকেলের ছায়া ঘনিয়ে আসার দৃশ্য দেখা হয়নি মন দিয়ে। এরকম ছোট ছোট ভালো লাগার অনুভূতি আমাদের মস্তিষ্কে সেরাটোনিন নামক ফিল গুড হরমোন নিঃসরণ করে যা আমাদের মানসিক চাপ কমিয়ে মন শান্ত করে। তাই কোয়ারেন্টেইনের এই সময়ে জীবনে যেসব ছোট ছোট মুহূর্ত অনুভব করতে ভুলে গিয়েছি আমরা, সেগুলো অনুভব করতে চেষ্টা করুন।
যান্ত্রিক সময়ের দাবী অনুযায়ী নিজেদের একা করতে করতে আমরা একেকটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হয়েছি যেন। মানুষে মানুষে মানসিক দূরত্ব বেড়েছে অনেক। এই সময়টাকে কাজে লাগান সম্পর্কের সেই দূরত্বগুলো দূর করতে। যেহেতু কাছে ঘেঁষা যাবে না, তাই দূর থেকেই কথা বলুন। যারা দূরে আছেন তাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলুন, খোঁজখবর নিন। ছোট ছোট যত্নের মাধ্যমে দূরত্ব ঘোচাতে চেষ্টা করুন। যদি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত না হন, সেক্ষেত্রে পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে বই পড়া, রান্না করা, বাগান করা, ঘরবাড়ি গোছানো, সিনেমা দেখে সময় কাটাতে পারেন। ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটালে অক্সিটোসিন হরমোনের নির্গমন বাড়ায় যা সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটায় ও আনন্দের অনুভূতি তৈরি করে। অক্সিটোসিন নির্গমনের মাত্রা বেড়ে গেলে তা কর্টিসল নামের স্ট্রেস হরমোন নির্গমন কমায়।
এইধরণের সংকটজনক সময় মানুষের মধ্য থেকে খারাপ ও ভালো দুইই বের করে আনে। একদিকে একদল পাগলের মত খাবারদাবার, স্যানিটাইজার কিংবা মাস্ক কিনছেন আবার যুক্তরাষ্ট্রে এক ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিনামূল্যে টয়লেট পেপার বিলি করছেন। আমরা যারা হোম কোয়ারেন্টিনে বন্দী তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ নিজেদের মধ্য থেকে ভালোটা বের করে আনা। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা অতিরিক্ত সময় কাজ করছেন, অনেকেই গবেষণার জন্য অর্থ দান করছেন। এই ইতিবাচক গল্পগুলোও আমাদের প্রচার করতে হবে।
মনে রাখবেন, প্রতিটি মেঘের আড়ালেই লুকিয়ে থাকে সূর্যের হাসি। তাই যেকোন গুরুতর সময়ে ইতিবাচক থাকুন ও মানসিক স্থিতি বজায় রাখুন। করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ সংক্রমণের এই বিপদজনক সময়ে তাই মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থেকে মুক্ত থাকতে চেষ্টা করুন।