রোজার সুস্থতা।।পর্ব ১।। স্বাস্থ্যকর ইফতার
২৫ এপ্রিল ২০২০ ১৪:৫৮
বৈশাখের তীব্র গরমের মধ্যেই শুরু হল মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস, পবিত্র রমজান। সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও পূর্ণ ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালিত হবে রোজা। এসময়ে বৈরি আবহাওয়ার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে বিরাজ করেছে করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এর আতঙ্ক।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এবছরের রোজা অন্যান্য বারের চেয়ে একটু ভিন্ন আমেজে শুরু হল। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য দেশব্যাপি চলছে সাধারণ ছুটি। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া মানা। তাই অন্যান্য বছরের মত রোজা পালন করা সম্ভব হবে না। অনেকের সামর্থ্যেও কুলাবে না। তাই চেষ্টা করুন রোজায় যথাসম্ভব দেশি শাকসবজি ও ফলমূল দিয়ে প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণের।
রোজার মাসজুড়ে সারাবাংলার পাঠকদের জন্য এমনই নানা পুষ্টিবিষয়ক পরামর্শ দেবেন পুষ্টিবিদ আজমেরি রহমান সিন্থীয়া।
এবারের রোজায় সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সতর্কতাও গ্রহণ করতে হবে যেন সুস্থ আর সুন্দরভাবে রোজা পালন করা যায়। চলুন জেনে নেয়া যাক রোজার খাদ্যতালিকায় কী কী রাখবেন যা ক্ষুধা নিবারণের পাশাপাশি শরীরকে দিতে পারে বাড়তি শক্তি।
মনে রাখতে হবে যে, বৈশাখের এই রোজায় প্রায় পনেরো ঘন্টা রোজা রাখার পর ইফতার করতে হবে। সুতরাং, ইফতারিতে একবারে অনেক খাওয়া যাবেনা। কারণ, এই দীর্ঘসময় খালি পেটে থাকার কারণে মেটাবলিজমের গতি কমে যায়। তাই হুট করে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণে লিভার ও কিডনির উপর আলাদা চাপ পড়ে। সেজন্য ইফতারি হতে হবে হালকা, যাতে করে তারাবি পড়ে ক্ষুধা লাগে এবং রাতে আবার অল্প করে খাওয়া যায়।
যেমন হওয়া উচিৎ ইফতার:
- শুরু হবে সালাদ দিয়ে। সালাদ ওজন নিয়ন্ত্রণ ও হজমে সাহায্য করে।
- তারপর আসবে ফলের রস। যেমন- পাঁকা পেপে, তরমুজ, কাঁচা আম, লেবু ইত্যাদি যেকোনো কিছু দিয়ে বানাতে পারেন। ১ জগ পানিতে চিনির পরিমান হবে ১ চা চামচ।
- শরীরকে পানিশূন্য করা যাবে না কোনোভাবেই। যেহেতু দীর্ঘক্ষনের রোজা তাই ঘুমানোর আগ পর্যন্ত ৩০-৪৫ মিনিট পর পর হাফ গ্লাস হলেও পানি খেতে হবে।
- ইফতারিতে ৩টি খেজুর ও এক গ্লাস দুধ হতে পারে আদর্শ ইফতারি। তবে যাদের প্রাণীর দুধ সহ্য হয় না তারা অন্য উদ্ভিজ্জ দুধ যেমন সয়া বা বাদামের দুধ অথবা শুধু পানি খাবেন।
- ভাজাপোড়া যারা পছন্দ করেন, তারা একদম অল্প তেলে ভাজা ২টি ছোট পিয়াজু, ২টি বেগুনি, ২ টি আলুর চপ মুড়ির সঙ্গে খেতে পারেন। একদম খালি পেটে না, তাতে করে গ্যাস্ট্রিক হবে।
- যদি কেউ তেহারি খেতে চান, তবে তার জন্য ১২৫ এমএল এর কাপে ১/১.৫ কাপ তেহারীর সঙ্গে ১পিস মুরগীর বুকের মাংস। সঙ্গে সালাদ আর এক কাপ টক দই সহকারে খাবেন। কারণ, দই হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। দ্রুত খাবার হজম করতেও সাহায্য করে।
- ছোলা, মটরভাজা ইত্যাদি ভুনা না করে সিদ্ধ করে তাতে একটু লবণ দিয়ে সালাদ বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। ছোলার পরিমাণ হবে ১০০ থেকে ১২০ গ্রামের মতো।
- অনেকে হালিম খেতে পছন্দ করেন। একটি মাঝারী বাটির মধ্যে ছোট ১-২ পিস মাংস দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আর ভারী কোনো খাবার গ্রহণ করা যাবেনা।
- খাদ্যতালিকা থেকে কার্বোহাইড্রেট কোনোভাবেই বাদ দেয়া যাবেনা। তাই যারা উপরের কোনো খাবারই খেতে চান না তারা দই চিড়া কলা খেতে পারেন। পরিমাণ হবে ১০০-১২০ গ্রাম চিড়ার সঙ্গে মাঝারি কাপের হাফ কাপ দই আর মাঝারি সাইজের একটি কলা।
- অনেকে ওটস খেতে পছন্দ করেন। তারা ১২০ গ্রামের ১ কাপ ওটস দুধের সঙ্গে মিশিয়ে অথবা ১ পিস মুরগীর মাংস দিয়ে ঝাল করে রান্না খেতে পারবেন।
- ইফতারে দেশি ফল খান। এতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি আর শক্তি।
চলুন সুন্দর কর্মমুখর পৃথিবীর প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে আর কিছুদিন ঘরে থাকি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আইইডিসিআর এর নির্দেশনা মেনে চলি। আর ওপরের নিয়ম মেনে খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলি। তবেই আমরা সুস্থ থাকবো আগামির সুন্দর পৃথিবীতে।