করোনাকালের বন্ধুত্ব, বেঁচে থাক আত্মিক সম্পর্ক
২ আগস্ট ২০২০ ২১:১৭
‘আমি তোমারই, তোমারই তোমারই নাম গাই, আমারই নাম গাও তুমি… ,’
বন্ধুত্ব মানেই যেন এভাবে সুরে সুরে গেয়ে ওঠা আত্মার ধ্বনি। বন্ধু মানেই একে অন্যের আত্মার কাছাকাছি থাকা—একে অন্যকে ভালবেসে সুন্দর কিছু সময়ের প্রতিশ্রুতি। মানুষের সব সম্পর্কের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর সম্পর্কের নাম বন্ধুত্ব। বাকি সব সম্পর্কে কিছু চাওয়া-পাওয়া থাকলেও বন্ধুত্বে থাকে না কোনো স্বার্থ। এ যেন শুধুই প্রতিশ্রুতি। তবে সেই প্রতিশ্রুতিও অনুচ্চারিত। একে অন্যকে সঙ্গ দেওয়ার, ভালো রাখার না বলা প্রতিশ্রুতি।
নানা যুগে, নানা কালে নানাভাবে উদযাপন হয় বন্ধুত্ব। এভাবেই আসে বিশ্ব বন্ধুত্ব দিবস। যদিও ব্যবসায়িক স্বার্থে এ দিবসের উদ্ভব, কিন্তু সঙ্গপ্রিয় মানুষ ভালোবেসে গ্রহণ করে সেই দিবস। কার্ড কোম্পানি উদ্ভাবিত এই উৎসবে সামিল হতে শুরু করেন বয়স নির্বিশেষে। কার্ড, ফুল ও উপহারে যেমন উদযাপিত হতে থাকে বন্ধুত্ব তেমনি এটি উদযাপিত হতে থাকে সম্পর্কের বন্ধনকে নতুন রূপে আবিষ্কারের মাধ্যম হিসেবে।
প্রতিবছর আগস্টের প্রথম রোববার উদযাপিত হয় বন্ধুত্ব দিবস। আজ তাই বিশ্ব বন্ধুত্ব দিবস। এবার সম্পূর্ণ নতুন প্রেক্ষাপটে এল বন্ধু দিবস যখন বিশ্ববাসী লড়ছে ভয়াবহ এক মহামারির সঙ্গে। এমনই এক ভাইরাস যা মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। কিছুটা দুর্বল স্বাস্থ্যের মানুষের জন্য এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকাই মুশকিল। এর থেকে বাঁচার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দিয়েছে কঠিন এক দাওয়াই। তা আর কিছু না, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার দাওয়াই। ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না, বলা যাবে না কথা! না ঠিক কথা বলায় বারণ নেই তবে কথাও বলতে হবে অন্তত তিন থেকে ছয় ফুট দূরত্ব মেনে। নাহলে যে ভয়ানক ভাইরাসটি লাফ দিয়ে চলে যাবে সামনে থাকা মানুষটির শরীরে। নাক, চোখ, মুখ দিয়ে প্রবেশ করবে ফুসফুসে তারপর সেখানে বসে শুরু হবে ধ্বংসের লীলাখেলা। তাই বাইরে গেলে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে মাস্কের ব্যবহার।
এদিকে বন্ধুত্ব মানেই ধরা, ছোঁয়া, বলা আর কাছাকাছি থাকা। এই করোনাকালে কীভাবে রক্ষা হবে তবে বন্ধুত্ব। অফিস-আদালত, হাট-বাজার আর উৎসবের মতো বন্ধুত্বও তাই ঠাঁই নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কথা তো হচ্ছেই, যখন তখন মেতে ওঠা যাচ্ছে ভিডিও চ্যাটে। বাস্তব জীবনেও যেমন বন্ধুরা একে অন্যকে বিচার করে না কেমনে দেখতে, কেমন লাগছে তার ভিত্তিতে তেমনি বন্ধুদের সঙ্গেও যেন নিতান্ত ঘরোয়াভাবে হাজির হওয়া যায় ভিডিও চ্যাটে। বলা যায় মনের যত কথা, দেখানো যায় সমস্ত দুর্বলতা। বন্ধু যে বিচার করে না কোন মাপকাঠিতে। করনাকালের এই বন্ধুত্বে গলার স্বর শুনে বা ভিডিও কলেই যেন বন্ধু বুঝে যায় অপর বন্ধুর বুকের ব্যথা, চোখের চাহনি বুঝে ধরে ফেলে মনের মধ্যে লুকানো কথা। বাকি সব সম্পর্কে ধাক্কা খেলেও এই একটা সম্পর্কই যেন অটুট আছে দুঃসহ এই সময়ে।
এদিকে করোনাকালে স্থান-কাল-বয়স এবং পেশা নির্বিশেষে মনোবেদনায় ভুগছে মানুষ। স্বাভাবিক জীবনে ছন্দপতন, কর্মহীনতা, ঘরে আটকে পড়া, ওয়ার্ক ফ্রম হোমসহ অতিরিক্ত কাজের বোঝায় হাঁপিয়ে উঠছে মানুষ। এমন সময়ে বন্ধুরাই পারে বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে বন্ধুর দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে। অভাব, অভিযোগ আর মনের ব্যথা প্রকাশের জন্য বন্ধুর চেয়ে বড় মাধ্যম তো আর নেই।
এই করোনাকালের বন্ধু দিবসে আগের মতো ঘুরে-ফিরে উদযাপন না করতে পারলেও আমরা যেন আত্মিক সম্পর্কের বাঁধনকে ভুলে না যাই। বন্ধুর পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা ধারণ করি। একে অন্যকে মায়া আর যত্নের বাঁধনে জড়িয়ে রাখার প্রতিজ্ঞা করি। কোনো বন্ধুকেই যেন মানসিক অসুস্থতা বা মনঃপীড়া না ভোগায় তা নিশ্চিত করি। একজন বন্ধুও যদি ভালো না থাকে বাকি বন্ধুরা মিলে ভার্চুয়ালি তার পাশে থাকি। সাহায্য করি যথাসম্ভব। এভাবেই উদযাপিত হোক, নতুন যুগের নতুনকালের বন্ধুত্ব।
ছবি কৃতজ্ঞতা- শাহানা হুদা রঞ্জনা
আত্মিক সম্পর্ক করোনাকালের বন্ধুত্ব বন্ধুত্ব দিবস বন্ধুত্ব দিবস ২০২০