কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ভিটামিন ডি কতটা কার্যকর
২৪ আগস্ট ২০২০ ২১:৫১
ভিটামিন ডি আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে, বিষণ্ণতার লক্ষণ কমায়, কার্যক্ষমতা বাড়ায় ও ওজন হ্রাস তরান্বিত করে। ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে নানারকম স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দেয়। এর অভাবে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়।
শিশুদের ক্ষেত্রে রিকেট, পা ধনুকের মত বেঁকে যাওয়া, মাথার খুলি বড় হয়ে যাওয়া, স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হওয়া, চোয়ালের গঠন ঠিক না হওয়া ও অসময়ে দাঁত পড়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। আর প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে অস্টিওম্যালেসিয়া নামে রোগ হতে পারে। এই রোগে বয়স্কদের হাড় থেকে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস ক্ষয় হয়। অনেকের ক্ষেত্রে কোমর ও মেরুদণ্ডে ব্যাথা হতে পারে বা অনেকের মেরুদন্ড বেঁকে যায়।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য আমরা এখনও যতটা সম্ভব ঘরে থাকছি। বিশেষ করে যারা করোনা আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের জন্য বাধ্যতামূলক আইসোলেশনে থাকার কারণে পর্যাপ্ত সূর্যালোকে যাওয়া হচ্ছে না। এভাবে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আবার করোনাভাইরাস আক্রান্ত হলে প্রচণ্ড অবসাদ দেখা দেয়। অনেকের ক্ষেত্রেই কোভিড-১৯ পরিক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসার পরেও এই অবসাদ কাটে না। এই অবসাদের পেছনে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি থাকার সম্ভাবনা দেখছেন অনেক দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি কতটা কার্যকর তা নিশ্চিত করার মত নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ না হাতে না থাকলেও, করোনা অতিমারিতে ভিটামিন ডি খাওয়ার কিছু স্বাস্থ্যগত সুফল মিলতে পারে। কারণ এটি ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ ভিটামিন ডি গ্রহণ করতে হবে।
ব্রিটেনের জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভিটামিন ডি এর গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে টানা ঘরে থেকে আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। কারণ, আমরা খাবার থেকে খুব সামান্যই ভিটামিন ডি পাই। মূলত সূর্যালোক থেকেই আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হয়। যাদের ত্বক বাদামি বা কালো তারা সূর্যের আলো থেকে খুব একটা ভিটামিন ডি আহরণ করতে পারেননা। কারণ, ত্বকের মেলানিন ভিটামিন ডি শোষণে বাঁধা দেয়। তাই ঘরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন যারা তাদের ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টারি খেতে হবে কিনা এই প্রশ্ন জাগছে অনেকের মনে।
ওষুধ হিসাবে ভিটামিন ডি নিরাপদ। ব্রিটেনে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ পরামর্শ দিচ্ছে যাদের রোদে যাওয়ার সুযোগ নাই, তারা প্রতিদিন ১০ মাইক্রোগ্রাম করে ভিটামিন ডি খাওয়ার কথা ভাবতে পারেন। তবে ইচ্ছামত বা পরিমাণে অনেক বা দীর্ঘমেয়াদে ভিটামিন ডি খেলে তার আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। করোনা অতিমারির আগেই শীতকালে ব্রিটেনের জনগণকে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিলো।
কোন কোন গবেষকের মতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কারও শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাব থাকলে, এই ভাইরাস তার বেশি ক্ষতি করতে পারে। এদিকে ভিটামিন ডি-র প্রদাহ কমানোর ক্ষমতা আছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে কেউ গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাদের ফুসফুস গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে, তখন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধি ব্যবস্থা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ে অধিক সক্রিয় হয়ে ওঠার ফলে ‘সাইটোকিন স্টর্ম’ নামে প্রদাহ দেখা দেয়। এই প্রদাহ শরীরের ভাল কোষগুলোকে ধ্বংস করতে শুরু করে। ভিটামিন ডি-র যেহেতু প্রদাহ কমানোর ক্ষমতা আছে, তাই এক্ষেত্রে ভিটামিন ডি ওই মারাত্মক প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে এ নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য তাদের।
ব্রিটেনের এক গবেষকদল ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ব্যাপারে সতর্ক করে বলছে, ভিটামিন ডি শরীরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তবে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় একে জাদুকরি কিছু মানলে ভুল হবে। কারণ এব্যাপারে এখনও তেমন কোন গবেষণা নাই। কোভিড-১৯ ও সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে গুরুত্ব দেন তারা। বছরজুড়েই কর্মক্ষম থাকা, পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়ামের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
শুধু করোনাভাইরাসই নয়, শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি থাকলে তা আমাদের অন্যান্য ফ্লুয়ের সংক্রমণ থেকেও বাঁচতে সাহায্য করে। তাই সুস্থ থাকার জন্য দিনে কিছুটা সময় রোদে কাটান। কে কতক্ষণ রোদে কাটাবেন সেব্যাপারে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিলেই ভালো। আর সাপ্লিমেন্টারি গ্রহণ করার প্রয়োজন হলে আপনার চিকিৎসকই তা বলবেন, নিজ থেকে খাওয়া উল্টো ক্ষতিকর হবে।