Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে ন্যাচারোপ্যাথি- ০৬


১০ অক্টোবর ২০২০ ১৬:১৫

জায়েদা খাতুন, বয়স ৬০, গৃহিণী, ঢাকার বাসিন্দা। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে তার ডান স্তনে ১.৬×১.১ সে.মি. জায়গা জুড়ে একটি lump ধরা পড়ে যা কিনা malignancy বলে নিশ্চিত করা হয় এবং দ্রুত অপারেশন করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। অপারেশন না করে উনি হোমিওপ্যাথি ওষুধ খাওয়া এবং পাশাপাশি রিফ্লেক্সোলজি থেরাপি নেওয়া শুরু করেন। দুইমাস রিফ্লেক্সোলজি থেরাপি নেন এবং দশমাস হোমিওপ্যাথি ওষুধ খান।

৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ আমার একজন পরিচিত জনের মাধ্যমে মিসেস জায়েদা খাতুন এবং তার পরিবারের সাথে পরিচিত হই। জানতে পারি, জায়েদা খাতুনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তার ছেলেমেয়েরা তাকে আবার স্তন ক্যানসারের একজন ডাক্তার দেখান এবং ১ সেপ্টেম্বর ২০২০ এর রিপোর্টে তার lump টি ৩.৬১×৪.৩৮ সে.মি আকারের একটি Carcinoma টিউমার হিসেবে ধরা পড়ে। ডাক্তার তাকে অপারেশন করার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন। কিন্তু উনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা অপারেশন করাতে চাননা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, অপারেশন করার পর কেমোথেরাপি নেওয়ার ধকল উনি সহ্য করতে পারবেন না। জানতে চাইলাম, এটা তারা কীভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন? জানালেন, তাদের পরিচিত কয়েকজন কেমোথেরাপি চলাকালীন মারা গেছেন। সেই থেকে ওনার এই ভীতি! আমি ন্যাচারোপ্যাথী মেডিসিন নিয়ে কাজ করি জেনে উনি আমার কাছে চিকিৎসা নিতে চান।

আমি জায়েদা খাতুনকে বুঝিয়ে বলি যে, breast lump হলো এক ধরনের breast cyst যা একটি পানি ভর্তি থলির মতো ২০১৯ সালের রিপোর্টে যা ধরা পড়েছিলো। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে এটিই এখন একটি বড়সড় টিউমার যা কিনা বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এবং তার বগলের নীচে লিম্ফ গ্রন্থিগুলোও আক্রান্ত হয়েছে। তার আক্রান্ত স্তন এর টিউমারটি এখন ক্ষত তৈরি করেছে, সেখান থেকে রক্ত এবং পুঁজ পড়ছে। তার স্তন ক্যানসার হয়েছে এবং অপারেশন না করলে এটি শরীরের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে।

অক্টোবর মাস জুড়ে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে ক্যানসার সচেতনতা মাস আর আজ অর্থাৎ অক্টোবরের ১০ তারিখ পালিত হয় স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ দিবস। এই উপলক্ষে দেশব্যাপি চলছে স্তন ক্যানসার বিষয়ে প্রতিকার ও প্রতিরোধে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর সহযোগী সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার (IARC)- এর তথ্য অনুসারে প্রতি বছর প্রায় ১৩ লাখ ৮০ হাজার নতুন রোগী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে এবং প্রায় ৪ লাখ ৫৮ হাজার রোগী প্রতি বছর স্তন ক্যানসারের কারণে মারা যাচ্ছে। IARC এর গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের উন্নত এবং উন্নয়নশীল সকল দেশের নারীরাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে স্তন ক্যানসারে। আসুন একটু সহজ করে বুঝে নেই স্তন টিউমার আর স্তন ক্যানসারের বাস্তবতা।

টিউমার (Tumour)
সবার আগে যেটি জানা প্রয়োজন তা হল, স্তনে টিউমার মানেই কিন্তু তা ক্যানসার নয়।  টিউমার দু’ধরনের হয়। Benign tumour আর Carcinoma tumour।

১. Carcinoma Tumour: যখন ব্রেস্টে টিউমার বা Lump ধরা পড়ে দেখবেন রিপোর্টে লেখা থাকে, Carcinoma breast অথবা Ca breast. এর মানে হলো টিউমারটি ক্যানসার টিউমার। এটি ধীরে ধীরে বড় হবে এবং আশেপাশের টিস্যুগুলোকে আক্রান্ত করবে এবং চিকিৎসা নিতে দেরি হলে শরীরের অন্যান্য অংশেও ক্যানসার ছড়িয়ে পড়বে। এতে মৃত্যু ঝুঁকি আছে।

২. Benign Tumour: রিপোর্টে যদি লেখা থাকে Benign Tumour তবে এটা ক্যানসার টিউমার নয়। এটা যে জায়গায় হয় সেখানেই থাকে, আশেপাশের টিস্যুগুলোকে ক্ষতি করে না এবং ছড়িয়েও পড়ে না।

কেন হয় স্তন ক্যানসার
– অতিরিক্ত ওজন এবং মেদ বহুল শরীর।
– ফাস্টফুড, জাংক ফুড, কৌটাজাত খাবার খাওয়ার অভ্যাস।
– শাকসবজি, ফলমূল কম খেলে।
– অতিরিক্ত মিষ্টি এবং চিনিজাতীয় খাবার খেলে।
– শারীরিক পরিশ্রম না করা। দিনের বেশিরভাগ সময় বসে-শুয়ে কাটানো।
– কেমিকেলযুক্ত প্রসাধনির অতিরিক্ত ব্যবহার।
– ভুল মাপের ব্রা পরা এবং দিনরাত সবসময় ব্রা পরে থাকা।
– বাচ্চাকে বুকের দুধ না খাওয়ানো।
– ইস্ট্রোজেন হরমোনের অতিরিক্ত প্রভাব।
– হরমোন থেরাপি (জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল)।
– এলকোহল এবং ধূমপান করা।
– জেনেটিক কারণ যেমন, শরীরে বিআরসি১, বিআরসি২ জিনের মিউটেশনের কারণে ৫ থেকে ১০ শতাংশ স্তন ক্যানসার হয়ে থাকে।

স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে ন্যাচারোপ্যাথি সচেতনতা
– স্তন ক্যানসার প্রতিকার বা নিরাময়ের চেয়ে প্রতিরোধ বেশি জরুরি। কারণ রোগটি হয়ে গেলে যে ভোগান্তি আর কষ্ট সহ্য করতে হয় তা কেবলমাত্র ভুক্তভোগী এবং তার পরিবারের মানুষরাই অনুধাবন করতে পারেন। স্তনেরে স্বাস্থ্য এবং এর যত্ন বিষয়ে সমাজের প্রতিটি স্তরে সহজ ভাষায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারলে এর ঝুঁকি কমবে।
– নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করা। নিজে নিজে কিভাবে এই পরীক্ষা করা যায় তা প্রতিটি পরিবারের নারীদের শেখানোর ব্যবস্থা করলে প্রাথমিক স্তরেই ক্যানসার ধরা পড়তে পারে। ফলে চিকিৎসা সহজ হয় এবং মৃত্যু ঝুঁকি কমানো যায়।
– স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। নিয়মিত শাকসবজি, ফলমূল, শস্যদানা খাওয়া। রান্নায় অলিভ অয়েল বা সরিষার তেল ব্যবহার।
– মাংসের পরিবর্তে মাছ বেশি খাওয়া।
– ভাজাপোড়া তৈলাক্ত খাবার না খাওয়া।
– সপ্তাহে পাঁচদিন ব্যয়াম, ইয়োগা, মেডিটেশন করা।
– ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
– বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো।
– নেশাদ্রব্য না খাওয়া।
– জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণে পুরুষদের উৎসাহিত করা (কনডম)।
– ঢিলেঢালা পোশাক পরা এবং সঠিক মাপের ব্রা পরা।
– ঘরে থাকা অবস্থায় এবং রাতে ঘুমানোর সময় ব্রা না পরা।

আরও পড়ুন, হার্ট এর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ন্যাচারোপ্যাথি- ০৫

স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাস
– তিনমাস পর পর গম গাছের চারার রস পান করা একটানা তিন সপ্তাহ।
– সারারাত ভিজানো কাঠবাদাম (Almond) এবং অঙ্কুরিত গম,মুগ বা ছোলা ইত্যাদি খাওয়া।
– অতিরিক্ত তেলে ভুনা বা কষানো তরকারির পরিবর্তে হালকা মশলার ঝোল তরকারি খাওয়া।
– প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সাত রঙের খাবার রাখা Rainbow Food)।
– প্রতিদিন সালাদ এবং ফল খাওয়া।
– স্তনের জন্য উপকারি খাবার হলো ব্রকোলি, পাতাকপি, বিট, গাজর, কালো আঙুর, নাশপাতি, কমলালেবু, আনারস, লেবু, দারচিনি, মৌরি, কাঁচা হলুদ, রসুন, আদা ও পেঁয়াজ।
এই খাবারগুলোতে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট এবং এন্টি ক্যানসার উপাদান যা স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে খুবই কার্যকর।

যেসব যোগব্যায়াম অভ্যাস করবেন
– অর্ধচক্রাসন এবং পদহস্তাসন
– বীরাসন সিরিজ
– সেতুবন্ধাসন এবং পবনমুক্তাসন
– ভুজঙ্গাসন এবং শলভাসন
– পশ্চিমোত্থাসন
– পদ্মাসন

প্রাণায়াম
-কপালভাতি
– ভ্রামরি
এই ইয়োগা আসন এবং প্রাণায়ামগুলো নিয়মিত করলে স্তনের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

আকুপ্রেসার বা আকুপাংচার পয়েন্ট
– Baihui (Du-20)
– Zusanli (St-36)
– Sanyinjiao (Sp-6)
– Quchi (LI- 11)
– Hegu (LI-4)
– Zulinqi (GB-41)
-Jian Jing (GB-21)
এই পয়েন্টগুলোতে সপ্তাহে ৪-৫ দিন দিনে একবেলা থেরাপি করলে স্তন ক্যনসার, স্তনের সাধারণ টিউমার এবং inflammation প্রতিরোধ করা সম্ভব।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO) স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন স্ক্রিনিং এবং টেস্ট কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ম্যামোগ্রাফি (Mammography, স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং টেস্ট) বেশ ব্যয়বহুল যা সাধারণ এবং প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের জন্য সহজলভ্য নয়। ন্যাচারোপ্যাথি ডায়াগনোসিস ব্যবস্থায় খুব সহজে প্রাথমিক অবস্থায়ই স্তনের সমস্যা নির্ণয় করা যায়। পরবর্তীতে ল্যাব টেস্ট এর মাধ্যমে আকার, আয়তন বুঝে এবং জেনে শুরুতেই সঠিক চিকিৎসা নিলে পরবর্তী কষ্ট আর ভোগান্তি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। সচেতনতা আর স্বাস্থ্যকর জীবন অভ্যাসই ক্যানসার প্রতিরোধের মূল হাতিয়ার।

অনিদ্রায় ভুগছেন? সমাধান ন্যাচারোপ্যাথি

বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথা ও ন্যাচারোপ্যাথি ব্যবস্থাপনা

কোভিড-১৯ পরবর্তী ফ্যাটিগ সারাতে ন্যাচারোপ্যাথি

ন্যাচারোপ্যাথি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা

 

আকুপ্রেসার ক্যানসার সচেতনতা মাস টপ নিউজ ডা. ঐন্দ্রিলা আক্তার ন্যাচারোপ্যাথি ন্যাচারোপ্যাথি ব্যবস্থাপনা প্রাণায়াম যোগব্যায়াম স্তন ক্যানসার স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ দিবস


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০০

সম্পর্কিত খবর