গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি
২৯ মে ২০২২ ১৪:৫৬
পরিপাকতন্ত্র মানবশরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। অন্ত্রনালি ছাড়াও লিভার, প্যানক্রিয়াস, পিত্তথলি, পিত্তনালি এই তন্ত্রের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শরীরের এই অংশের বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে সাধারণ জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে ওয়ার্ল্ড গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি অর্গানাইজেশন প্রতিবছর ২৯ মেকে ‘বিশ্ব ডাইজেস্টিভ স্বাস্থ্য দিবস’ বা ‘বিশ্ব পরিপাক স্বাস্থ্য দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ২০০৪ সাল থেকে এই দিবসটি সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে। প্রতিবছর কোনো একটি বিশেষ বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে এই দিবস পালিত হয়। ২০২২ সালের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘কলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধ করুন, সঠিক পথে থাকুন’।
অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম না করা এবং কায়িক শ্রমে অনভ্যস্তদের মধ্যে পেটের ব্যাথা, ফোলাভাব, অস্বস্তিবোধ তথা গ্যাস্ট্রিকজনিত সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায়। গ্যাস্ট্রিকের কারণে হজমজনিত সমস্যা, পেট ফেঁপে থাকে যার কারণে পরিপাকক্রিয়ায় সমস্যা দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এসব সমস্যার অন্যতম কারণ হলো বেশি খাওয়া, খুব দ্রুত খাওয়া এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ।
গ্যাস্ট্রিকজনিত সমস্যাগুলো কম-বেশি সবারই হয়। গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণগুলো হল পেটে জ্বালা-পোড়া করা, বদহজম, বমি বমি ভাব, বমি করা, পেটে ক্ষুধা, ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া, খাওয়ার পর উপরের পেট বেশি ভরে গিয়েছে অনুভূতি হওয়া ইত্যাদি। খাবার সময়মতো খাওয়া হয়না, বাইরের ভাজা-পোড়া বেশি খাওয়া, জাঙ্কফুড খাওয়া, পরিমাণ মতো পানি না খাওয়া ইত্যাদি কারণে গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা দেখা দেয়।
খাওয়ার সময় বা তরল কোনো কিছু পান করার সময় আমাদের শরীরে অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন প্রবেশ করে। আবার আমাদের পরিপাকতন্ত্রে খাদ্য হজম হওয়ার সময় হাইড্রোজেন, মিথেন বা কার্বন-ডাই অক্সাইডের মতো গ্যাস নির্গত হয়ে পেটে জমা হয়। আর এগুলোর কারণেই সৃষ্টি হয় গ্যাস্ট্রিকের।
আবার কিছু উচ্চ ফাইবারযুক্ত ও আঁশযুক্ত খাবার এবং শাকসবজি খেলে সেগুলোর সবটা আমাদের পাকস্থলী হজম করতে পারে না। এর কারণেও পেটে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়ে থাকে। কিন্তু এ সমস্যার সমাধান আপনি নিজেই করতে পারেন ঘরেই এবং সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়েই। গ্যাস্ট্রিকের হাত থেকে নিস্তার পেতে জেনে রাখুন কিছু ঘরোয়া উপায়—
পানি
পানি পানের সুফলের কথা সবাই জানেন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই গ্লাস করে পানি পান করবেন, দেখবেন সারাদিন আর গ্যাস্ট্রিকের যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে না।
পানি হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া পানি পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার রাখতেও কাজ করে। এ জন্য নিয়মিত প্রতিদিন অন্তত ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করতে হবে।
আলুর রস
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা রোধ করার অন্যতম ভাল উপায় হল আলুর রস। আলুর অ্যালকালাইন উপাদান গ্যাস্ট্রিক সমস্যার লক্ষণগুলো রোধ করে থাকে।
আরও পড়ুন: গ্যাস্ট্রিক সারবে আয়ুর্বেদিক চায়ে
একটি বা দুটো আলু নিয়ে গ্রেট করে নিন। এর গ্রেট করা আলু থেকে রস বের করে নিন। এরপর আলুর রসের সাথে গরম পানি মিশিয়ে নিন। এই পানীয় দিনে ৩ বার পান করুন। প্রতি বেলায় খাবার ৩০ মিনিট আগে খেয়ে নিন আলুর রস। তবে অন্তত ২ সপ্তাহ পান করুন এই পানীয়।
আদা
আদাতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান আছে যা গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় জ্বালাপোড়া হলে তা রোধ করতে সাহায্য করে। আদা খেলে বমি সমস্যা, বদ হজম, গ্যাস হওয়া কমে যায়।
পেট ফাঁপা ও পেটে গ্যাস হলে আদা কুচি করে লবণ দিয়ে খান, দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্যাসের সমস্যা ভালো হবে। আদার রসের সাথে মধু মিশিয়েও খেতে পারেন। দুপুরে ও রাতে খাওয়ার আগে এটি খেয়ে নিন।
আরও পড়ুন: ধুলোবালির শহরে চুলের যত্ন
আদা কুচি করে পানি দিয়ে ফুটিয়ে নিন। ১০ মিনিট ডেকে রাখুন, এরপর সামান্য মধু মিশিয়ে চায়ের মতো বানিয়ে নিন। এই পানীয়টি দিনে ২/৩ বার পান করুন উপকারিতা পেতে।
আপনি চাইলে আস্ত আদা ধুয়ে কেটে চিবিয়েও খেতে পারেন।
দই
দইয়ে ল্যাকটোব্যাকিলাস, অ্যাসিডোফিলাস ও বিফিডাসের মতো নানা ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। এই সকল উপকারী ব্যাকটেরিয়া দ্রুত খাবার হজমে সাহায্য করে সেই সাথে খারাপ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। তাই দই খেলে হজম ভালো হয়, গ্যাস কমে। এই জন্য খাবারের পর দই খাওয়াটা বেশ কার্যকর। প্রতিদিন ২/৩ চামচ দই খেয়ে নিন।
আরও পড়ুন: থাইরয়েড সমস্যা? এসব খাবার দূরে রাখলে ভালো থাকবেন
দই আমাদের পাকস্থলীকে `এইচ পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া` থেকে রক্ষা করে যা গ্যাস্ট্রিক হওয়ার অনতম কারণ। তাছাড়া দই আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
আপনি চাইলে কলা, দই ও মধু একসাথে পেস্ট করে খেতে পারেন দ্রুত গ্যাস্ট্রিক সমস্যা রোধ করার জন্য।
রসুন
অ্যাসিডিটির সমস্যা হ্রাস করতে রসুনের কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে।
আরও পড়ুন: ক্লান্তিহর ডাবের পানির এই উপকারগুলো জানেন?
এক কোয়া রসুন খেয়ে ফেললেই স্টমাকে অ্যাসিড ক্ষরণের মাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ফলে গ্যাস সংক্রান্ত বিভিন্ন উপসর্গ ধীরে ধীরে কমে যেতে শুরু করে।
পুদিনা পাতা
পুদিনা পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে খেলে পেট ফাঁপা, বমিভাব দূর করতে সাহায্য করে।
পেঁপে
পেঁপেতে রয়েছে পেপেইন নামক এনজাইম যা হজমশক্তি বাড়ায়। তাই নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করলে গ্যাসের সমস্যা কমতে থাকবে।
কলা
যারা বেশি করে লবণ খান, তাদের গ্যাস ও হজমে সমস্যা হতে পারে। কলায় যে পটাশিয়াম থাকে, তাতে শরীরের সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ভারসাম্য বজায় থাকে। কলা হজমে সাহায্য করে। দেহ থেকে দূষিত পদার্থ দূর করে দেয়।
শসা
শসা পেট ঠাণ্ডা রাখতে অনেক বেশি কার্যকরী। এতে রয়েছে ফ্লেভানয়েড ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা পেটে গ্যাসের সমস্যা কমায়।
আনারস
আনারসে রয়েছে ৮৫ শতাংশ পানি এবং ব্রোমেলিন নামক হজমে সাহায্যকারী প্রাকৃতিক এনজাইম যা অত্যন্ত কার্যকরী একটি পাচক রস। এটি পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার রাখে। এছাড়া আনারস ত্বকের জন্যও বেশ উপকারী।
হলুদ
হজম সংক্রান্ত সব ধরনের সমস্যা সমাধানে হলুদ বেশ কার্যকর। এটি চর্বিজাতীয় খাবার হজমে সাহায্য করে।
ডাবের পানি
ডাবের পানি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকটাই দূর করতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে ফাইবার, যা হজমশক্তি বাড়ায় এবং পাশাপাশি অ্যাসিডিটি কমায়। এছাড়াও বুক জ্বালা পোড়া ও পেটে ব্যথা কমাতে ডাবের পানি অত্যন্ত কার্যকরী।
আরও পড়ুন: কালিজিরা, অনন্য এক প্রাকৃতিক মহৌষধ
এই উপায়গুলো নিয়মিত মেনে চললে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। অবশ্যই সেই সাথে খাবারে অনিয়ম ও তৈলাক্ত ভাজা পোড়া জাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি ফিচার লাইফস্টাইল সুস্থ থাকুন