ইদের পরে নয় আগেই ওজন কমান
৪ জুলাই ২০২২ ১৯:৩৫
কোরবানির ইদ একেবারে দরজায়। এই ইদের একটা বিশেষত্ব হলো ইদের পরে ওজন কমানোর সংগ্রামে ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়েন সবাই। কেউ আশানুরূপ ফল পান, কেউ পান না। ইদে মাংস খেয়ে প্রচুর ক্যালরি গ্রহণের পর খাদ্যাভাসের নানা পরিবর্তন এনেও যখন ওজন কমে না, তখন এ নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। ওজন বাড়ার পর সবারই মনে পড়ে, বাড়তি ওজন নানা রোগব্যাধির কারণ।
হুট করে ওজন কমানোর চেষ্টায় অনেকেই খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেন। কিন্তু এ তো শরীর। আপনার সব কথাতেই যে সঙ্গে সঙ্গে সায় দেবে এমনও তো নয়। আপনার মর্জিমাফিক শরীরকে চালানোর চেষ্টা বাদ দিয়ে শরীরে মর্জি বুঝে চললেই হলো। তাই ইদের পরের আপনার ওজন কমানোর সংগ্রামে মনের পাশাপাশি তৈরি করুন শরীরকেও।
এজন্য ইদের আগে থেকেই নিজেকে তৈরির বিষয় আছে। ইদের পরে এতোদিনের অভ্যাসে পরিবর্তন এনে হুট করে কম খেয়ে ওজন কমানোর চেষ্টা শরীরে দীর্ঘমেয়াদিভাবে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই ওজন কমাতে হলে না খেয়ে নয়, বরং পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। আর এই পদক্ষেপ নিতে হবে আগে থেকেই। বেছে নিতে হবে সঠিক জীবনযাপন পদ্ধতি।
পরিমিত খাবার
আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সাধারণত শর্করাজাতীয় খাবার থাকেই। বাড়তি ওজনের জন্য অনেকেই শর্করাকে দায়ী করেন। খাদ্যতালিকা থেকে শর্করা একেবারেই বাদ দেন। কিন্তু পুষ্টিবিদরা বলছেন, শর্করা শক্তির অন্যতম উৎস এবং দেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টিউপাদান। তাই শর্করাজাতীয় খাবার একেবারে বাদ দিলে চলবে না। বরং অল্প বা পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।
পুষ্টি গবেষকরা বলছেন, ভাত, রুটি, আলুসহ যেসব খাদ্য উপাদানে শর্করা থাকে সেগুলো আমরা প্রাতদিনই কিছু না কিছু খাই। এই শর্করাই শরীরের জন্য যথেষ্ট। বাড়তি ওজন কমাতে চাইলে প্রতিদিন কতটুকু শর্করা খাবেন তা অবশ্যই পুষ্টিবিদের কাছে জেনে নিতে হবে। শ্বেতসার ও মিষ্টিজাতীয় খাবারে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট থাকে। ফলে এই জাতীয় খাবারগুলো পরিহার করতে হবে।
তাছাড়া শ্বেতসার ও মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খেলে ক্ষুধার অনুভূতিও অনেকটা কমে যায়। তখন শরীরে জমে থাকা চর্বি ভেঙ্গে শক্তি উৎপন্ন হয়। আর ওজন কমাতে চাইলে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করতে হবে। ক্ষুধা লাগলে কম ক্যালরিযুক্ত খাবার যেমন ফলমূল, ঘরে তৈরি করা ও শুকনো খাবার খেতে হবে। ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয় একেবারেই বাদ দিতে হবে।
আগে জানুন কী খাবেন
প্রোটিন, ফ্যাট ও অল্পমাত্রায় শর্করা আছে এমন সবজি পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে। গরুর মাংস, মুরগি, বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ ও ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আছে। প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন মাছ বা মাংস যেকোন একটি উপাদান বেছে নিতে হবে। তবে প্রোটিন খেতে হবে পরিমাণমতো। চাহিদার চেয়ে বেশি প্রোটিন খেলে ওজন কমানো যায় না। গবেষণা বলছে, প্রোটিনজাতীয় খাবার একেবারে বাদ দিয়ে ডায়েট করা মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত না। তবে প্রতিদিন কতটুকু প্রোটিন খেলে আপনার ওজন কমানোর জন্য সহায়ক তা একজন পুষ্টিবিদের কাছে জেনে নিতে হবে।
ব্রকলি, শসা, বাঁধাকপি, টমেটো, শাক, ফুলকপি, লেটুস- এই সবজিগুলোকে বলা হয় লো-কার্ব। অর্থাৎ এই সবজিগুলোতে শর্করার পরিমাণ খুব কম থাকে। তাই খাদ্যতালিকায় সবজি রাখুন পর্যাপ্ত পরিমাণে। সবজিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেল। এই উপাদানগুলো শরীর সুস্থ রেখে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
অলিভ ওয়েল, নারকেল তেল, অ্যাভোকাডো তেল ও বাটারে ফ্যাট থাকে প্রচুর পরিমাণে। ওজন কমাতে হলে ফ্যাট একেবারেই বাদ দিতে হবে- এমন ধারণা ভুল। দেহে নির্দিষ্ট পরিমাণে ফ্যাট লাগে। ডাক্তারের পরামর্শে ফ্যাটজাতীয় খাবার খেতে হবে।
ব্যায়ামে মনযোগ
ওজন কমানোর জন্য ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই। সপ্তাহে অন্তত ৩ থেকে ৪ দিন জিমে যাওয়া ভালো। তবে ওজন কমানোর জন্য উপযুক্ত ব্যায়াম সম্পর্কে জানতে অবশ্যই প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া প্রতিদিনই নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করে হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো কিংবা সাঁতার কাটার অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার। এতে শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও আসবে।
দেহের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদান না খেয়ে ডায়েট করার ধারণা একেবারেই ভুল। তবে ওজন কমাতে কোন খাবার কতটুকু পরিমাণে দরকার তা পুষ্টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি