ওজন কমাতে যে খাবারগুলো খাবেন
২৭ আগস্ট ২০২২ ১৭:৪১
অতিরিক্ত ওজন কমাতে মানুষ আজকাল কত কি-ই না করেন। অনেকে অস্বাস্থ্যকর ডায়েট করে শরীরের বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন। কিছু কিছু ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাসের মূল সমস্যাই হচ্ছে কোনটা খাওয়া উচিৎ সেটা না বলে কোনটা খাওয়া উচিৎ না তাই বলে। এটা খাবেন না ওটা খাবেন না শুনতে শুনতে মানুষ অনেক সময় কোন নির্দিষ্ট ডায়েট মেনে চলতে বিরক্ত হয়। তাই ওজন কমানোর সবচেয়ে ভালো একটি উপায় হচ্ছে ডায়েট প্ল্যানে এমন সব খাবার যোগ করা যা আপনার ওজন কমানোর সাথে সাথে দেহের ভিটামিন এবং নিউট্রিশনের ব্যালেন্স ঠিক রাখবে।
আজ জানিয়ে দিচ্ছি কয়েকটি খাবার সম্পর্কে যা নিয়মিত খেলে আপনার শরীরের বিপাক ক্রিয়া গতিশীল হবে এবং ওজন কমতে শুরু করবে। সারাবাংলার পাঠকদের জন্য তথ্যগুলো দিয়েছেন পুষ্টিবিদ ফারজানা হক। ওজন কমাতে খাবারগুলো আপনার খাদ্যতালিকায় যোগ করে ফেলুন আজই।
লেবু
সকালে ঘুম ভেঙে গরম জলে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে বিপাক প্রক্রিয়া ভালো হয় বলে তো জানেনই। সে তো আছেই, এর বাইরে খাবারের আগে বা খাবারের মাঝে কয়েক চামচ লেবুর রস খেলে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এজন্য এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে মধ্যম আকৃতির একটি লেবু চিপে রস বের করে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেয়ে নিন প্রতিদিন। এটি খাওয়ার পর ৩০ মিনিট কিছু খাবেন না।

লেবুর রস খেলে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে
এছাড়া সালাদ বা তরকারির উপর লেবুর রস দিয়ে নিন। এতে খাবারের স্বাদ বাড়ার সাথে সাথে খাবার থেকে আপনার রক্তে মিশে যাওয়া চিনির পরিমান নিয়ন্ত্রণ হবে। এই পানীয় যকৃতের বিষাক্ততা দূর করতে সাহায্য করে। কারণ বিষাক্ততায় ভরপুর যকৃৎ কার্যকরভাবে চর্বির বিপাক করতে পারে না। তাই লেবু পানি বিষাক্ততা দূর করার এনজাইমের পরিমাণকে চমৎকারভাবে বাড়িয়ে দেয়। ফলে যকৃৎ কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। এ ছাড়া এটি দেহের বিপাক ক্রিয়াকেও বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
আদা
শরীরে নানাকারণে মেদ হয়ে থাকে। অতিরিক্ত খাওয়া, বয়সের কারণে, প্রয়োজনীয় হরমোনের উৎপাদন কমে গেলে, ব্যায়াম না করলে ইত্যাদি। আদা এসব সমস্যা প্রতিটিই সমাধান করতে পারে। আদা হজমের জন্য ভালো। এ ছাড়া এটি হচ্ছে থার্মোজেনিক অর্থাৎ এটি দেহের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে কার্যকরভাবে দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে, হজমশক্তি বাড়াতে এবং কর্টিসল হরমোনের উৎপাদন কমাতে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই কাপ আদা চা খান।

আদা হজমের জন্য ভালো
চার কাপ পানি ফুটিয়ে তাতে এক-দুই ইঞ্চি আদা খোসা ছাড়িয়ে স্লাইস করে সেই পানিতে দিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট চুলায় রাখুন। তারপর চুলা থেকে নামিয়ে কিছুটা ঠান্ডা হলে তাতে এক টেবিল চামচ লেবু ও এক টেবিল চামচ খাঁটি মধু ভালো করে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে পান করুন।
দারুচিনি
দারুচিনি আমাদের মিষ্টি খাবার খাওয়ার আগ্রহকে দমন করে। চমৎকার স্বাদের এই মশলাটি রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি ইনসুলিন সংবদনশীলতাকেও নিয়ন্ত্রণ করে। খাবারে সুঘ্রাণ যোগ করতে নয়, এখন মেদ ঝরাতেও ব্যবহার হবে দারুচিনি। প্রাকৃতিক উপাদানের মাঝে ওজন কমাতে দারুচিনি সেরা। এটি কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই আমাদের বিপাকীয় প্রক্রিয়া সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।

দারুচিনি আমাদের মিষ্টি খাবার খাওয়ার আগ্রহকে দমন করে
দারুচিনির চা খাওয়া যেতে পারে। তবে সঠিক নিয়মে এই চা তৈরি না হলে কোন কাজে লাগবে না। প্রথমে ১ লিটার পানি গরম করে নিন, এরপর তাতে ১টি দারুচিনি ৫ মিনিট ধরে সেদ্ধ করে নিন। তবে আপনি চাইলে দারুচিনি গুড়াও (১ চামচ) ব্যবহার করতে পারবেন। সেদ্ধ পানি ঠান্ডা হওয়ার পর তাতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন ৩ বেলা খাবারের আগে এই চা পান করুন। নিয়মিত সেবনে ওজন কমার পাশাপাশি নিজেকে প্রাণবন্ত অনুভব করবেন।
নারকেল
নারকেল আমাদের দেশে ভীষণই জনপ্রিয়। এই ফলটি মানুষ বেশ পছন্দ করেন। বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয় নারকেল।নারকেল দেহের অতিরিক্ত ফ্যাট এবং ক্যালোরি কম করতে সাহায্য করে। শরীরে ফ্যাট জমতে দেয় না। শরীরে অনেক বেশি এনার্জি এনে দেয়। নারকেলে প্রচুর পরিমানে ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে। প্রত্যেক ১০০ গ্রাম নারকেলে মাত্র ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে। তাই আপনি যদি কম কার্বোহাইড্রেটের কোনও খাবার খেতে চান, তাহলে অবশ্যই নারকেল খান।

নারকেল আমাদের দেশে ভীষণই জনপ্রিয়
আরেকটি উপাদান হলো নারকেলের দুধ। স্বাদের কারণে আমরা নারকেল খেয়ে থাকি অথচ নারকেল তেল এবং নারকেলের দুধের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। নারকেল তেল এবং নারকেলের দুধ দুটোতেই আছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা আমাদের অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। খাবারে নারকেলের দুধ তো আমরা ব্যবহার করিই, আজ থেকে না হয় নারকেলের তেল দিয়েও রান্না করে দেখি মাঝেমধ্যে।

গ্রিন টি ওজন কমাতে খুবই সহায়ক একটি পানীয়
গ্রিন টি
গ্রিন টি ওজন কমাতে খুবই সহায়ক একটি পানীয়। এর ক্যাফেইন নয় বরং সবুজ চা-তে থাকা ক্যাটেচিনস নামের একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান হজম এবং চর্বি পোড়ানোর প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করে। ফলে ওজনও কমে। এ ছাড়া এটি ওজন বাড়ানোর জন্য দায়ী এলডিএল কোলোস্টেরল বা ক্ষতিকর কোলোস্টেরল কমাতেও সহায়ক। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গ্রিন-টি এক দিনে ৭০ ক্যালোরি পর্যন্ত ফ্যাট বার্ন করে। তার মানে নিয়মিত গ্রিন টি পানের মাধ্যমে বছরে ৭ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব।

দেহের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজও পাওয়া যায় দইতে
দই
সকালের নাস্তায় অনেকেই দুধ পান করে থাকেন। যারা দুধ পছন্দ করেন না, তারা খেতে পারেন দই। এতে প্রোটিন, ক্যালসিয়ামের মতো উপকারি উপাদান রয়েছে। দেহের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজও পাওয়া যায় দইতে। এতে থাকা ব্যাকটেরিয়া পাচনপ্রক্রিয়ার জন্য উপকারি। তবে মিষ্টি দই না খেয়ে টক দই খেলে উপকার পাবেন বেশি। চাইলে দইয়ের সঙ্গে ফল বা সেদ্ধ সবজি মিশিয়ে সালাদ তৈরি করেও খেতে পারেন।
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
ওজন কমাতে যে খাবারগুলো খাবেন তামান্না সুলতানা লাইফস্টাইল সুস্থ থাকুন