মৌসুমী সর্দি-জ্বর-কাশি ঠেকাতে কী করবেন?
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৩:৪৪
শেষ শরতের মিশ্র আবহাওয়া এখন। একদিকে শরতের ভ্যাপসা গরম আবার মাঝেমধ্যে বৃষ্টি। উষ্ণতা ছড়ানো সকাল, তো বৃষ্টিতে নাকাল দুপুর, শেষ রাতে আবার মৃদু শীতের পরশ। খেয়ালি আবহাওয়ায় মৌসুমী সর্দি-জ্বর-কাশিতে কাবু অনেকেই। দিনের তাপমাত্রা বাড়ছে-কমছে। কিন্তু গভীর রাত কিংবা ভোরে ঠান্ডা বাড়ছে। সাধারণত সন্ধ্যার পর থেকে গরম-গরম ভাব দেখে অনেকেই ঘরে ফ্যান বা এসি চালিয়ে রাখছেন। রাতে ঘুমের ঘোরে তা বন্ধ করছেন না। ফলে গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত তাপমাত্রা আরও কমলে চট করে সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন সব বয়সি। ঘরে-বাইরে অনেকেই খুকখুক করে কাশছেন। কেউবা নাক টানছেন। অনেকে ঠান্ডা পানি কিংবা ফ্রিজে রাখা কোমল পানীয় খেয়েও সর্দিজ্বর ডেকে আনছেন। হাঁচি-কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হয়ে থাকা, সারা শরীরে ব্যথা, মাথা ভার হয়ে থাকা, খাওয়ায় অরুচি, মুখে তিতাভাব ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যাচ্ছে অনেকের শরীরেই।
এদিকে এই আবহাওয়ায় ভাইরাস জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু আর করোনার প্রকোপও। এ সময়ে জ্বর-সর্দি-কাশির তীব্রতা থাকে চার থেকে ১০ দিন। জ্বর সেরে গেলেও শুকনো কাশি, দুর্বলতায় ভোগেন অনেকেই। মৌসুমি সংক্রমণ ও ডেঙ্গু-করোনা সংক্রমণ এই দুই থেকে রেহাই পেতে সুস্থ থাকার দিকে বাড়তি নজর প্রয়োজন। আর এই মৌসুমী সংক্রমণের লক্ষণ, ঠেকানোর উপায় ও সতর্কতাগুলো সারাবাংলার পাঠকদের জানিয়েছেন চিকিৎসক আদনান আহমেদ।
জ্বর মানেই করোনা নয়
জ্বর হলে এ সময় করোনার ভাবনাই ভাবতে হবে প্রথমে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। নিজেকে পর্যবেক্ষণ করুন। কারণ জানার আগ পর্যন্ত ঘরেই থাকুন। পরীক্ষায় করোনা ধরা না পড়লে করোনা নেই বলে নিশ্চিত হওয়া যায় না। আবার জ্বর মানেই করোনা নয়। তাই অবস্থা বুঝে করোনা পরীক্ষা। সাধারণ জ্বর-কাশির সঙ্গে করোনার পার্থক্যও জানা চাই। যদিও করোনা নানা ধরনের উপসর্গ, কখনো মৃদু বা প্রায় উপসর্গ ছাড়াও হতে পারে। তবু সাধারণ কিছু বিষয় জানা থাকা ভালো।
সময়মতো করোনা শনাক্ত না হলে জটিলতা বাড়তে পারে আর চিকিৎসা পেতে অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে। আবার করোনার খুঁটিনাটি জানা না থাকলে মৃদু উপসর্গ নিয়ে রোগী পরিবারের সবাইকে আক্রান্ত করে ফেলতে পারেন। করোনার লক্ষণ হিসেবে জ্বর-কাশি-গলাব্যথাকেই চিহ্নিত করা হয়ে থাকে সাধারণভাবে। শ্বাসকষ্ট একটি গুরুতর লক্ষণ, যা অন্যতম জটিলতার এক সংকেত। শ্বাসকষ্ট মানে যে কেবল শ্বাস নিতে বা ছাড়তে কষ্ট হওয়া, তা নয়। অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠার মানেও কিন্তু শ্বাসকষ্ট। করোনার জটিলতায় বুকে চাপ ধরে থাকা বা ক্রমাগত ব্যথা হওয়াও দেখা দিতে পারে গুরুতর লক্ষণ হিসেবে। এর বাইরেও কিছু লক্ষণ থাকে করোনা রোগীর। ঘ্রাণ কিংবা স্বাদের অনুভূতির পরিবর্তন অন্যতম। শরীরব্যথা, মাথাব্যথা, বমিভাব, বমি, পাতলা পায়খানা হতে পারে। তবে হাঁচি, নাক বন্ধ ফ্লুতে যত দেখা যায়, করোনায় তত নয়। আবার ডেঙ্গু জ্বরে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, শরীরব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরে ফুসকুড়ি হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়। সাধারণ ফ্লুতে জ্বরের সঙ্গে নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া, কাশি, গলাব্যথা, গলার গ্রন্থি ফুলে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়। লক্ষণ করোনার প্রায় কাছাকাছি। তাই সতর্ক থাকতে হবে খুব। কোনো লক্ষণই অবহেলা করা যাবে না।
সুস্থ থাকতে হলে
এ সময়ে দিনের বেলা শীতের পোশাক পরলে গরম লাগে, আবার ভোর ও রাতে হালকা শীত অনুভুত হয়। ফলে অফিসে যাওয়ার সময় যারা শীতের কাপড় পরছেন না, রাতে বাসায় ফেরার পথে তাদের ঠাণ্ডা লাগছে, আক্রান্ত হচ্ছেন সর্দি-কাশিতে। তাই ব্যাগে সবসময় শীতের কাপড় রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ঠাণ্ডা বাতাসে সংস্পর্শে আসলে ঘরে ফিরে আদা, লেবু দিয়ে লাল চা, গরম দুধ, সুপ ইত্যাদি খেলে ভালো লাগবে।
মশার ব্যাপারেও এসময় চাই বাড়তি সতর্কতা।মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে মশার কয়েল, অ্যারোসল, মশারি, ধুপ ইত্যাদি নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে। আর দিনের বেলায় সাবধানতাটা বেশি প্রয়োজন। বিশেষ করে শিশুকে সাবধানে রাখতে হবে। কারণ ডেঙ্গু আর চিকুনগুনিয়া’র জন্য দায়ী এডিস মশা দিনের বেলা কামড়ায়।
ঘরে মৌসুমি জ্বরে আক্রান্ত রোগী থাকলে তাকে ভিন্ন ঘরে রেখে পরিচর্যা করা উচিত। মৌসুমি জ্বর ছোঁয়াচে নয়, তবে রোগীর হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে পারে।
আক্রান্ত হলে করণীয়
জ্বর হলে কুসুম গরম পানিতে শরীর মুছে নিন। কুসুম গরম পানিতে গোসলও করতে পারেন। প্যারাসিটামল সেবন করা যেতে পারে। ঠান্ডা-কাশি হলে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। ঘরে গরম পানি, চা, স্যুপ খেলে আরাম পাবেন গলাব্যথার সমস্যায়।
হাত-পায়ের ব্যথা বা অন্য যেকোনো ব্যথা হলেও প্যারাসিটামল ছাড়া কোনো ব্যথানাশক সেবন করা যাবে না। অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহারও এড়িয়ে চলুন।
মনে রাখবেন, করোনা, ডেঙ্গু, মৌসুমি জ্বর সবই ভাইরাসজনিত রোগ। অ্যান্টিবায়োটিক এসব রোগের চিকিৎসা নয়। তবে ভাইরাসের পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের জন্য কিছু ক্ষেত্রে এসব রোগীকেও অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়, কিন্তু নিজে নিজে অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য নানা ওষুধ সেবনের সিদ্ধান্ত নিলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
এই সময়ে যা খাবেন:
জ্বর হলে মুখের স্বাদ কমে যায়। এ সময় কিছু খাবার আছে যা খেলে মুখে রুচি আসে। আবার জ্বরও ভালো হয়। জ্বরের সময়ে প্রচুর পরিমাণে তরল পান করতে হবে। পানির পাশাপাশি ডাবের পানি, স্যালাইন, ফলের সরবত ইত্যাদি পান করতে হবে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঠাণ্ডা লাগা থেকেই জ্বর হয়। জ্বরের সময় দু’বেলা টমেটো বা গাজরের স্যুপ খেলে অনেকটা আরাম পাওয়া যায়। এটি শরীরের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধেও সহায়তা করে।
ভিটামিন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে হবে। সঙ্গে বিভিন্ন রকম চা, যেমন- তুলসি, আদা, লেবু ও লবঙ্গ, ইত্যাদি চা পান করতে হবে। এটি গলা ব্যথা, খুসখুসে কাশি ও মাথাব্যথার ভেষজ ওষুধ হিসেবে কাজ করব।
জ্বর সারাতে ভিটামিন সি আছে এমন ফল যেমন- আনারস, জাম্বুরা, কমলা, আমড়া, লেবু ইত্যাদি অত্যন্ত উপকারী।
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
তামান্না সুলতানা মৌসুমী সর্দি-জ্বর-কাশি ঠেকাতে কী করবেন? লাইফস্টাইল সুস্থ থাকুন