দিনে ঘুমানো কাজের গতি বাড়ায় যেভাবে
১৮ নভেম্বর ২০২২ ১১:০০
দিনের বেলা অনেকেই অল্প সময়ের জন্য ঘুমাতে পছন্দ করেন। একে বলা হয় পাওয়ার ন্যাপ (power nap)। কর্মব্যস্ত দিনের মধ্যে সামান্য সময়ের এই ঘুম আমাদের মস্তিষ্ককে নতুন করে কাজের শক্তি জোগায়। এটি আমাদের উৎপাদনশীলতা বাড়ায়।
অনেকেরই দিনের পর দিন পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। ঠিকমত বিশ্রাম না নেওয়ার ফলে কাজ করতে অসুবিধা হয় তখন দেখা যায় কাপের পর কাপ চা কিংবা কফি পান করতে হয়। কিন্তু যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তাদের জন্য ক্যাফেইন একদমই উপকারী নয়। বরং দিনের বেলা অল্প সময়ের জন্য ঘুমিয়ে নেওয়া ভালো। আসুন দেখে নেই দিনের বেলা ঘুম
দিনের বেলা কেন ঘুমাবেন
পাওয়ার ন্যাপ আমাদের শরীরে অনেকটা মোবাইল বা কম্পিউটার রিবুটের মত কাজ করে। কিছুক্ষনের জন্য ঘুমিয়ে নিলে ক্লান্তি ও অবসন্ন ভাব কেটে যায় ও নতুন করে কাজের শক্তি পাওয়া যায়।
এই বিষয়ের উপর বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে একদমই না ঘুমানোর চেয়ে অল্প সময়ের ঘুম বা পাওয়ার ন্যাপ বেশ উপকারী। এটি মানুষের কগনিটিভ দক্ষতা ও সতর্কতা বাড়ায়।
এছাড়াও পাওয়ার ন্যাপের আরও কিছু উপকারিতা আছে। যেমন, শেখার ক্ষমতা ও স্মরণশক্তি বাড়ায়, মানসিক চাপ দূর করে, মুড ভালো রাখে, সৃষ্টিশীলতা বাড়ায়, কর্মদক্ষতা বাড়ায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
পাওয়ার ন্যাপ সবসময় ভালো নয়
তবে সব পাওয়ার ন্যাপের ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায় না, কখনো কখনো অল্প সময়ের ঘুম থেকে জাগার পর আরও বেশি বিশৃঙ্খল, কুটিল ও ক্লান্ত লাগে। এর জন্য ঘুমের চক্র বা স্লিপ সাইকেল সম্পর্কে জানা বেশ জরুরী।
আসুন দেখে নেই ঘুমের চক্র কীভাবে কাজ করে। স্লিপ সাইকেল বা ঘুমের চক্র চার ভাগে বিভক্ত। একটি পর্যায়ে আমরা হালকা বিশ্রামের পর্যায়ে থাকি যখন আমাদের মস্তিষ্ক ঘুম ও জাগরণের মধ্যে থাকে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আমরা বাস্তবতা থেকে দূরে সরতে থাকি ও তখন সত্যিকারের ঘুম পায়। এসময় শ্বাসপ্রশ্বাস ঘন হয়ে ওঠে এবং আমাদের শরীর ছেড়ে দেয়।
তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায় হল সত্যিকারের ঘুম যখন আমাদের শরীর ও মস্তিষ্ক পরিপূর্ণ বিশ্রাম নেয়। এসময় আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাস একদমই ধীরগতির হয়ে যায়, পেশী শিথিল হয় এবং আমাদের চোখ দ্রুত ঘুরতে থাকে। সাধারণত ঘুমানোর দেড় ঘন্টা পর আমাদের চোখের মনি দ্রুতবেগে ঘুরতে থাকে।
পাওয়ার ন্যাপের পর আপনি কেমন বোধ করছেন তা নির্ভর করে ঘুমের কোন পর্যায়ে জাগছেন তার উপর। ঘুমের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে জেগে গেলে সেই ন্যাপ আপনার জন্য ভালো। যদি তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ের গভীর ঘুমে প্রবেশ করেন তাহলে ঘুম থেকে জাগলে খারাপ লাগবে।
কারণ ঘুমের তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছালে আমাদের মস্তিষ্ক একদমই জেগে উঠতে চায় না। তাই সবকিছু বিরক্ত লাগতে শুরু করে। তাই পাওয়ার ন্যাপের জন্য বিশ থেকে চল্লিশ মিনিট হল সঠিক সময়। অবশ্য এটি নির্ভর করে আপনার বিশ্রাম নিতে কত সময় লাগে তার উপর।
কিছু পরামর্শ
চল্লিশের মিনিটের উপর ঘুমালে তা কোন উপকারে লাগবে না। তখন আপনাকে টানা নব্বই মিনিট বা দেড় ঘন্টা ঘুমিয়ে নিতে হবে। দেড় ঘন্টায় আমাদের ঘুমের চক্র পূরণ হয় তাই এর পর ঘুম ভাঙলে আমাদের মস্তিষ্ক উল্টাপাল্টা আচরণ করবে না।
আবার পাওয়ার ন্যাপ নেওয়ার সময় যেন বিকেল তিনটা পার না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখুন। কারণ বিকেল তিনটার পর ঘুমালে আপনার রাতের ঘুমের বারোটা বেজে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
বিশ মিনিটের পাওয়ার ন্যাপের জন্য কফি খেয়ে ঘুম দিতে পারেন। কারণ ক্যাফেইন আমাদের শরীরে বিশ মিনিট পর কার্যকারীতা শুরু করে। তাই কফি পান করেই ঘুম দিন যাতে বিশ মিনিট পরে ঘুম ভেঙে যায়। এছাড়াও ঘড়িতে এলার্ম দিয়ে রাখতে পারেন বা পরিচিত কাউকে বিশ মিনিট পর ডেকে দিতে বলে রাখতে পারেন।
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি