অরিজিনাল না ফেইক- চিনব কী করে?
২৭ নভেম্বর ২০১৭ ১০:৪৭
অনলাইনে যারা পণ্য কেনা বেচা করেন তাদের জন্য এটি একটি সাধারণ প্রশ্ন। এটি কি অরিজিনাল ছবি না ফেইক? শুধু অনলাইনে নয় বাস্তবেও এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। “মেড ইন জিঞ্জিরা” বলে বাংলাদেশের প্রসাধনী জগতে একটি কথা খুবই পরিচিত। দেখতে হুবহু বিদেশী পণ্য মনে হলেও সেটি আসলে তৈরি হয় জিঞ্জিরার কারখানায়। অথচ ট্যাগ লাগানো থাকে “মেড ইন ইউকে”!
আচ্ছা নকল পণ্য কি আসলেই বোঝার উপায় নেই? চলুন আজ ১১টি বিশ্ব বিখ্যাত ব্র্যান্ডের পণ্যের কথা জেনে আসি। কেমন করে বুঝব তারা আসল নাকি নকল?
MAC Products:
নারীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে MAC ব্র্যান্ডের লিপস্টিক। অনেকসময় অন্য কোম্পানির পণ্যকে MAC বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। তাই আসুন জেনে নেই কিভাবে খুঁজে বের করবো আসল ম্যাকের পণ্য। ম্যাকের লিপস্টিক চেনার অন্যতম উপায় হচ্ছে, পণ্যটির বডি চিকচিক করবে। তাছাড়া ম্যাকের এর লোগোটি একটু বাঁকা করে লেখা। তাই আপনি লোগো চিনে থাকলে সহজেই আসল পণ্যটি খুঁজে পাবেন। সর্বপরি, অবশ্যই পণ্যের গায়ে লেখা বর্ণনা পড়েই আপনাকে বুঝতে হবে আপনি ঠকছেন কি না!
UGG BOOTS:
UGG বুট এর রেজিস্টার্ড ট্রেডমার্ক রয়েছে একটি আমেরিকান কোম্পানির। চায়না, ভিয়েতনাম এবং ইউএসএ তে এই বুটগুলো তৈরি হয়। এখন বিক্রেতা যদি ১০০ ভাগ অস্ট্রেলিয়ার পণ্য বলে আপনাকে গছাতে চায় তখন সেটার নকল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাছাড়া এদের পণ্যের গায়ে QR কোড থাকে যেমন বিভিন্ন স্মার্টফোনের সঙ্গে আজকাল এই QR code স্ক্যান করা যায়। পণ্যটি যদি আসল হয় তবে QR code আপনাকে নিয়ে যাবে UGG বুটসের অফিশিয়াল পেইজে।
Michael Kors bags
গোলাপি কিংবা সবুজের ভেতর সোনালি লোগো! এই ধরণের কালার কম্বিনেশন কোন নামী ব্র্যান্ডের ব্যাগে হবে না এটুকু বলাই যায়! আসল মাইকেল কর্স ব্র্যান্ডের ব্যাগের মেটাল অনেক হেভি হবে যেটা আপনি ধরলেই বুঝবেন। Michal Kors এর ব্যাগগুলো তৈরি হয় চায়না, ভিয়েতনাম, তুর্কি এবং ইন্দোনেশিয়াতে। বিক্রেতা গছানোর জন্য আপনাকে যখন ইটালি, ফ্রান্স কিংবা ইউএসএর পণ্য বলবে তখন অবশ্যই বুঝবেন যে আপনি নকল পণ্য কিনতে চলেছেন। ২০০৮ সাল থেকে কোম্পানিটি ১০ ডিজিটের একটি ট্যাগ নাম্বার ব্যবহার করছে তাদের পণ্যের সঙ্গে। তাই চাইলে ডিজিট নাম্বার খেয়াল করেও আপনি কিনতে পারেন আসল মাইকেল কর্সের ব্যাগ।
Pandora Products
Algot Enevoldsen হচ্ছেন প্যান্ডোরা ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা। তার প্রতি সম্মান জানাতে কিছুটা ছোট আকারের গয়না ছাড়া বেশিরভাগ গয়নাতেই ALE স্ট্যান্ডার্ড ট্রেডমার্ক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ALE এর পাশাপাশি এই ব্র্যান্ডের পণ্যগুলোতে ব্যবহৃত ধাতুর নামের আদ্যাক্ষর ব্যবহার করা হয়। যেমন সিলভার হলে S, গোল্ডেন হলে G। এই আদ্যক্ষরগুলো না থাকলে আপনি বুঝবেন আপনার হাতের প্যান্ডোরা পণ্যটি আসলে নকল।
Zippo Lighters
Zippo Lighter এর ক্লিক হবার শব্দ নকল লাইটারের ক্লিক হবার শব্দের চাইতে আলাদা। ব্যবহারকারী মাত্রই তা বুঝবে। তাছাড়া আসল লাইটারের নিচে থাকবে ব্র্যান্ডের লোগো। Zippo লাইটার সবসময় ভালো মানের পলিমার দিয়ে তৈরি। সেক্ষেত্রে নকল লাইটার হালকা এবং নিম্ন মানের মেটাল দিয়ে তৈরি করা হয়।
Timberland boots
যারা Timberland boots এর আসল ম্যানুফেকচারার, তারা ডান বুটে লেদার ট্যাগ ঝুলিয়ে রাখে। অরিজিনাল লেদার ট্যাগে লেখা থাকবে “Guaranteed Waterproof”! প্রথমত, নকল পণ্যে আপনি কোন লেদার ট্যাগ পাবেন না, পাবেন পেপার ট্যাগ। তাছাড়া বুটের বাইরে কোন লোগোও থাকবে না নকল পণ্যের ক্ষেত্রে। মজার ব্যাপার হচ্ছে Timberland আমেরিকান কোম্পানি হলেও এটি তৈরি করা হয় চায়না এবং ডমিনকান রিপাবলিকভুক্ত দেশগুলোতে। তাই Made in USA লেখা বুটটি যে ভুয়া তা বুঝতে কাউকেই বেগ পেতে হয়না!
Beats Headphone
হেডফোন ছাড়া কি চলে বলুন! গান শুনতে হেডফোন, মুভি দেখতে হেডফোন। কিন্তু বিখ্যাত ব্র্যান্ড Beats এর হেডফোন নকল না আসল বুঝবেন কি করে? কিছুই না! আসল হেডফোনে Beats এর প্রিন্টেড স্টিকার থাকবে। নকলটাতে কোন স্টিকার থাকবে না। Beats হেডফোনের ম্যানুয়াল লেখা থাকে পাঁচ ভাষায়- ইংলিশ, জার্মান, ফ্রেঞ্চ, ইতালি আর স্প্যানিশ। এর থেকে বেশি বা কম ভাষা থাকলে সেই পণ্যটি নকল। হেডফোনের তারেও Beats এর নাম স্পষ্ট উল্লেখ করা থাকবে যেটি দেখলেই আপনি বুঝবেন এটি পারফেক্ট Beats এর হেডফোন।
Adidas এর স্নিকার
ঘোরাঘুরি, খেলাধুলাই শুধু নয়, আরামের কথা চিন্তা করে মানুষ এখন প্রতিদিনই স্নিকারস পরছে। Adidas স্নিকারের প্যাকেটে যে সিরিয়াল নাম্বার থাকবে, স্নিকারের ভেতরেও সেই একই সিরিয়াল নাম্বার থাকবে। ডান আর বাম স্নিকারে আলাদা নাম্বার থাকবে। দুজোড়া জুতোতে একই নাম্বার থাকলে পণ্যটি নকল। ব্র্যান্ডের স্নিকারের গায়ে এম্ব্রোস করা থাকবে Adidas এর লোগোটি। শুধুমাত্র আঠা দিয়ে বা প্রিন্ট করে সেটি লেখা থাকলে তবে বুঝে নিতে হবে যে এটি নকল Adidas স্নিকার। আর একটি কথা, Adidas ব্র্যান্ডের অরিজিনাল স্নিকারের পেছনে কোন ব্র্যান্ডের নাম দিয়ে দাগ নেই কিন্তু!
Louis Vuitton bags
Louis Vuitton bags এর আসল ব্যাগগুলো কখনও এমনভাবে সেলাই করা থাকবে না যাতে LV ব্র্যান্ডের নাম দেখা না যায়। আসল ব্যাগের বাইরের রঙের সাথে ভেতরের ছোট পার্স, চেইন, চাবি সব একেবারে ঠিকঠাকভাবে ম্যাচ করবে। এই ব্যাগের লেদার ট্যাগে থাকবে কোম্পানির স্ট্যাম্প। পাঁচটি দেশ কেবলমাত্র এই ব্যাগগুলোর উৎপাদক হতে পারে। তা হোল ফ্লান্স, ইতালি, স্পেন, ইউএসএ এবং জার্মানি। প্রতি ব্যাগে স্পেশাল কোড আছে যাতে দুইটি অক্ষর এবং চারটি সংখ্যা থাকবে। এই অক্ষরগুলোর উৎপাদক কোম্পানির নাম প্রকাশে ব্যবহৃত হয়। এই পাঁচ উৎপাদকের বাইরে অন্য দেশের কোড উল্লেখ থাকলে সেই ব্যাগটি অবশ্যই নকল পণ্য।
iPhone, iPod, and iPad
iPhone, iPod, এবং iPad কেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে সেটের সিরিয়াল নাম্বার Apple এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে মিলিয়ে নেওয়া। সেটের সেটিংস এ গিয়ে এই সিরিয়াল নাম্বারটি আপনি পাবেন। সিমের স্লটের নাম্বারের সাথে এই সিরিয়াল নাম্বার মিলে যাবে। অ্যাপল এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে এই সিরিয়াল নাম্বারটি দিলে আসল অ্যাপল পণ্য সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য সেখান থেকেই পাবেন।
Nike Sneake
আসল Nike Sneakers কখনোই বেশি উজ্জ্বল হয় না। কারণ খাঁটি কাঁচামাল দিয়ে আসল পণ্যটি তৈরি হয়। যদি পণ্য বেশি চকচক করে, তবে বুঝে নিতে হবে সেগুলো নকল। তাছাড়া SKU নাম্বার মিলিয়েও আসল আর নকলের পার্থক্য নির্ধারণ করা যায়। যদি স্নিকারের নাম্বারের সাথে বাক্সের গায়ের নাম্বার মিলে যায় তবে আসল নাইকি স্নিকারস। আর যদি না মিলে তবে তা নকল পণ্য।
তো আজ আমরা জেনে গেলাম আসল আর নকল পণ্য চেনার উপায়। এই বিখ্যাত ১১টি ব্র্যান্ডের কোন পণ্য কিনতে গেলে এখন থেকে অবশ্যই এই বিষয়গুলো পরীক্ষা করে নেবেন।
সূত্র: ব্রাইট সাইড
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৭
Adidas এর স্নিকার and iPad Beats Headphone iPhone iPod Louis Vuitton bags MAC Products Michael Kors bags Nike Sneakers Pandora Products Timberland boots UGG BOOTS Zippo Lighters