মেধাবিকাশের খাবারগুলো
৮ মে ২০২৩ ১৫:০৬
বলা হয়, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব যা সে মেধার শক্তিতেই অর্জন করেছে। তাই আমরা সবসময়ই মেধা বিকাশের জন্য নানা রকম চেষ্টা করে থাকি। তবে, এক্ষেত্রে কিছু ভুল বরাবরই করে আসি। তার মধ্যে অন্যতম হলো সাপলিমেন্টারি ফুডের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া! মনে রাখতে হবে সাপলিমেন্টারি ফুড/প্রসেসড ফুড কখনই শতভাগ ভালো ফলাফল দিতে পারে না। কিছু না কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েই যায়।
কিন্তু আমাদের মাথায়ই থাকে না প্যাকেটজাত খাদ্য মানেই তাতে কেমিক্যাল রয়েছে। এতে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। পুষ্টিবিদরা জোর দিয়ে বলেছেন মেধা ও বুদ্ধি বিকাশে হলো স্বাস্থ্যকর ডায়েটারি প্যাটার্নে গুরুত্ব দিতে যেখানে প্রচুর ফল, শাকসবজি এবং শস্যজাতীয় খাবার অর্ন্তভুক্ত থাকবে। এ সকল পুষ্টিদায়ক খাবার স্মৃতি এবং বুদ্ধিবিকাশ বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে এবং আলঝেইমার (স্মৃতিহানি) ও ডিমেনশিয়াসহ (স্মৃতি, বুদ্ধি, ব্যক্তিত্ব লোপ) মস্তিষ্কের নানারোগ বালাইের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। তাই সাপলিমেন্টারি নয়, খেতে হবে তাজা খাবার।
চলুন দেখে নেই মেধার বিকাশে ও মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কোন কোন খাবার রাখতে হবে-
ডিম
ডিমের কোলেস্টরল নিয়ে অনেকেরই উদ্বেগ থাকে। এ উদ্বেগ ঝেড়ে ফেলে দিন। প্রতিদিন একটি ডিম আপনি নিশ্চিন্তে খেতে পারবেন। আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনের ২০১৭ সালের এক গবেষনায় দেখা গেছে ডিম মস্তিষ্কের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। গবেষকরা ২২ বছর ধরে ২ হাজার ৫০০ পুরুষের ডায়েট পর্যবেক্ষন করে দেখেছেন যে নিয়মিত ডিম খাওয়ার কারণে তাদের ডিমেনশিয়া বা আলঝাইমার হওয়ার সম্ভাবনা কম ছিল। সেই সঙ্গে তাদের আইকিউ পরীক্ষার পারফরম্যান্স অনেক ভালো ছিল।
শস্যদানা
শস্যদানাতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা। আমাদের ব্রেইন এর খাবার হচ্ছে গ্লুকোজ যা আসে শর্করা থেকে। তাই কিটো ডায়েটের মতো এমন কোনও ডায়েট করা উচিত নয় যেখানে শর্করা থাকবেনা। তাতে ব্রেনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
দুধ
দুধ মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান কোলিন আসে দুধ থেকে। গর্ভবতী নারীদের জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ, এটি প্রথম দিকে শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশে ভুমিকা রাখে। এছাড়াও কয়েকটি মুখ্য গবেষনায় দেখা গেছে উচ্চতর কোলিন গ্রহণ করলে প্রাপ্তবয়স্কদের জ্ঞানভিত্তিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।
কুমড়োর বীজ
অনেকে এ খাবারটি ফেলে দেয়, কিন্তু এটি মস্তিষ্কের জন্য দুর্দান্ত। এতে রয়েছে ALA ওমেগা-৩, ম্যাগনেশিয়াম ও জিংক যা স্বাস্থ্যকর মস্তিষ্কের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
হলুদ
হলুদে রয়েছে কার্কুউমিন নামক উপাদান যা মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এছাড়াও একে অ্যান্টি ইনফ্লেমটরির পাওয়ার হাউস বলে মনে করা হয়। ব্রিটিশ জার্নাল অফ নিউট্রিশন ২০১৬ সালের সমীক্ষায় প্রকাশ করে যে একদল প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি যারা কার্কুউমির পরিপূরক নিতেন, তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়নি। হলুদে থাকা কার্কুউমিন স্মৃতি রক্ষায় কাজ করে।
ডাল
নিয়মিত ডাল খেলে আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে। মসুর ডালের ভিটামিন-বি মস্তিষ্কের জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ডালের ভিটামিন অ্যামাইনো এসিড ও হোমোসিস্টিনের মাত্রা হ্রাস করে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এগুলো বেশি মাত্রায় থাকলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ব্যাহত হয়। তবে কিডনি ও ডায়ালাইসিসের রোগী ডাল খাওয়ার ক্ষেত্রে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেবেন।
আখরোট
আখরোটে রয়েছে ওমেগা-৩ ফেটি অ্যাসিড, কপার, ম্যাগনেশসিয়াম, ভিটামিন ও ফাইবার যা মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। জার্নাল অফ নিউট্রিশন হেলথ্ এন্ড এজিং এ ২০১৫ সালে প্রকাশিত এক গবেষনায় দেখা গেছে ২০ থেকে ৫৯ বছর বয়স্কদের জ্ঞানভিত্তিক কার্যক্ষমতা বেশ ভালো ছিল। তারা নিয়মিত আখরোট গ্রহণ করতেন।
টমেটো
অল্প দামে অতি পুষ্টি দেয় টমেটো। এর ক্যারটেনয়েড মস্তিষ্ককে শক্তিশালী করে তোলে।
ব্রকোলি
এতে রয়েছে সালফোরাফেন যা সেরিব্রোভাস্কুলার ডিজিজ ও স্ট্রোক থেকে মস্তিষ্ককে সুরক্ষা দেয়। এ তথ্যটি ২০১৭ সালের জার্নাল অফ সেরিব্রোভাসকুলার ডিজিজ এবং স্ট্রোকে প্রকাশিত হয়। ব্রকোলিতে থাকা ভিটামিন কে মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখা ছাড়াও আলঝেইমার থেকে রক্ষা করে।
পালংশাক
সস্তা একটি খাবার তবে বুদ্ধিকে শানিত করা এর কোন তুলনা নেই। পালংশাকে বিদ্যমান ভিটামিন কে, ফলেট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং লুটেইন ব্রেনের কার্যক্ষমতা বাড়াতে দারুণ সাহায্য করে। তবে শাকের ক্ষেত্রে পুষ্টিমূল্য বজায় রাখতে তেল দিয়ে ভেজে খেতে হবে। শুধু সিদ্ধ করে খাওয়া যাবেনা।
তুলসী
আ্যডভান্স ইন নিউট্রিশন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে তুলসী পাতার নির্যাস এবং এর Essential Oil স্মৃতিশক্তির পাশাপাশি মেজাজ ভালো রাখে ও মনোযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
তৈলাক্ত মাছ
সুস্থ থাকতে প্রচুর পরিমান ওমেগা ৩ প্রয়োজন হয়। কারণ মস্তিষ্কের জ্বালানী হিসেবে কাজ করে ওমেগা ৩। তৈলাক্ত মাছে তা রয়েছে অনেক বেশি। বিশেষ করে স্যালমন, সামুদ্রিক পোনা ও মিঠা পানির বড় মাছ। ২০১৭ সালের আলঝেইমার ডিজিজের জার্নালে প্রকাশিত এক পরীক্ষা অনুযায়ী ওমেগা ৩ এর ঘাটতিতে নিউরোডিজেনারেটিভ ডিসঅর্ডার যুক্ত হয়েছে।
স্ট্রবেরী, ব্লুবেরী, ব্ল্যাকবেরী (জাম)
এইগুলোতে রয়েছে আ্যন্টিঅক্সিডেন্ট যা ব্রেনের সেল যাতে শুকিয়ে না যায় সেদিকে সাহায্য করে। প্রতিদিন এদের যে কোনও একটি আধ কাপ করে খেলে মস্তিষ্ক ভালো থাকবে।
অলিভ অয়েল/জলপাই
এতে রয়েছে পলিফেনল। ২০১৬ সালের কারেন্ট মেডিসিনাল কেমিস্ট্রি জার্নালে বলা হয়, পলিফেনল কিছুটা নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ যেমন- আলঝাইমার, পারকিনস এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
কাজু বাদাম
প্রচুর পরিমাণে রাইবোফ্ল্যাবিন এবং এল কারনিটাইন রয়েছে যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে সুদৃঢ় করে।
তেল
নারকেল তেল, মায়ের দুধের পর সবচেয়ে বেশি মাত্রায় মাঝারি মাপের ট্রাইগ্লিসারাইড বা এম সি টি পাওয়া যায়। এম সি টি বিক্রিয়ার মাধ্যমে কিটোনে রুপান্তরিত এবং সহজেই মস্তিষ্কে পৌছায়। নারকেলের তেল আলঝাইমার, পারকিনসন, স্ট্রোক ইত্যাদি রোধে সহায়তা করে।
এছাড়াও আঙ্গুরের রস, বিট, আ্যাভোকেডো, লেটুস ইত্যাদি পরিমাণমত খেতে পারেন। বড়রা কফি খেতে পারবে তবে পরিমাণমতো।
সারাবাংলা/এসবিডিই