Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শরতে ভ্রমণ; যে বিষয়গুলো অবশ্যই মনে রাখবেন

ফিচার ডেস্ক
২৯ আগস্ট ২০২৩ ১৬:২৩

বর্ষাশেষে এসেছে শরত। আর শরত মানেই আদিগন্তবিস্তৃত খোলা আকাশ। নীলাকাশে সাদা মেঘের স্তুপ। শরত মানেই ফুরফুরে হাওয়ায় আজ আমার কোথাও যেতে নেই মানা। সেটা জলে বা স্থলে যেখানেই হোক না কেন। একে তো সুন্দর আবহাওয়ায় ছুটে বেড়ানো যায় এদিক ওদিক। আবার বিল-ঝিল-নদীতে এখন পানি মোটামুটি কমই বলা চলে। স্রোত প্রবাহও তেমন নেই। নৌকা নিয়ে পড়ন্ত বিকেলে ঘুরে বেড়ানোটা যেন ছোট-বড় সবার জন্যই বেশ আনন্দদায়ক ও নিরাপদ। ভ্রমণপিপাসুদের কাছে শরত তাই অন্যতম প্রিয় ঋতু।

অনেকে বেরিয়েও পড়ছেন ঘুরতে। দেশের নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন পর্যটন স্পটে দেখা যাচ্ছে ভিড়। গত দুই বছরে চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞার দুঃস্বপ্ন ভুলে অনেকেই বেরিয়ে পড়েছেন – একা, বন্ধু কিংবা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। কিন্তু এই আনন্দ- হরিষে বিষাদের মতো যেন হানা দিচ্ছে দুর্ঘটনা। পিছলে পড়ে চোট, হাড়ভাঙা, পানির তোড়ে ভেসে যাওয়া এমনকি মৃত্যুর মত বিপজ্জনক দুর্ঘটনাও ঘটছে হামেশা। আনন্দের ভ্রমণের স্মৃতির সঙ্গে কেউ কেউ ফিরে আসছেন দুর্ঘটনার বিষাদ নিয়েও। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নানা রকম দুর্ঘটনা, এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে মৃত্যুর খবরও আসছে গণমাধ্যমে। তাই সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। দৈব দুর্বিপাক হয়তো এড়ানো কঠিন, কিন্তু কিছু সতর্কতা ভ্রমণের সময় একজন পর্যটককে নিরাপদ রাখতে পারে। সারাবাংলার ফিচারটি শরতে ভ্রমণের নানা সতর্কতা ও করণীয় নিয়ে সাজানো।

প্রথমেই পরিকল্পনা

কোথাও যাবার আগে সময় নিয়ে পরিকল্পনা করুন। পরিকল্পনা বলতে প্রথমেই আসবে, যেখানে যাচ্ছেন সে জায়গাটি সম্পর্কে ভালো করে রিসার্চ করুন, মানে যতটা সম্ভব জেনে নিন। দরকার হলে একটি ওয়ার্ড ফাইল বা নোটবুকে টুকে রাখুন আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা। ভ্রমণ স্থানটির যথাসম্ভব তথ্য জানুন, এবং পরিকল্পনা করে নিন। কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, দর্শনীয় জায়গা, ওইসব জায়গা যেতে আসতে কতক্ষণ লাগে ইত্যাদি। কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে কি না, এসব সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে রাখা উচিৎ। দেশের বাইরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ট্যুর অপারেটর, ট্র্যাভেল এজেন্ট, হোটেল, এয়ারলাইন্স সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখার চেষ্টা করা, প্রয়োজনে যাচাই করে নিন।

প্রয়োজনীয় কাগজ গুছিয়ে নিন

দেশে বিশেষ করে দেশের বাইরে ভ্রমণের আগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে নিন। বাস, ট্রেন বা বিমানের বুকিং টিকেট, বুকিং পেপারস একটি ফাইলে রাখুন। বৈধ পরিচয়পত্রের একটি কপি সাথে রাখুন। দেশের বাইরে গেলে পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্রের একসেট ফটোকপি আলাদা ব্যাগে রাখুন।

ব্যাগ-লাগেজ থাকবে গোছানো

ঘুরতে গেলে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় জিনিস সঙ্গে নিন। জায়গা বুঝে প্রস্তুতি নিন। অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ব্যাগ ভারি করবেন না। যাত্রাপথে আপনার সাথে ব্যাগেজ যত ছোট হবে, ভ্রমণের সময়টাতে তত সুবিধাজনক আর আরামদায়ক অবস্থায় থাকবেন আপনি। তবে খুব প্রয়োজনীয় জিনিস নিতে ভুললে চলবে না, কারণ যেখানে যাচ্ছেন সেখানে হাতের নাগালে সব কিছু নাও পেতে পারেন। তাই লাগেজ গোছানোর আগে তালিকা করে নিতে পারেন, যাতে দরকারি কোন জিনিস বাদ না পড়ে।

ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী

প্যাকিং করার আগেই প্রয়োজনীয় ওষুধ গুছিয়ে রাখুন। যাদের নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, এমন ক্ষেত্রে হিসেব করে ওষুধ নিতে হবে। এছাড়া সাধারণ জ্বর, সর্দি, মাথাব্যথা, পেট খারাপ, অ্যাসিডিটির ওষুধ, ব্যান্ডএইড, প্লাস্টার সাথে রাখা নিরাপদ। যাদের শ্বাসকষ্ট তারা অবশ্যই ইনহেলার সাথে রাখবেন। মোবাইল ফোনের চার্জার, ক্যামেরার সরঞ্জামাদি, পাওয়ার ব্যাংক ইত্যাদি ভুলবেন না।

খরচের পরিষ্কার ধারণা

আপনার ভ্রমণে ঠিক কত খরচ হবে সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। সম্ভাব্য খরচের খাত হিসেব করে ভ্রমণের বাজেট ঠিক করুন। সঠিক পরিকল্পনায় আপনার ভ্রমণ ব্যায়সাশ্রয়ী হবে। আরেকটা বিষয়, গন্তব্যে পৌঁছানোর সময়টি রাতে না হওয়াই ভালো। এর কারণ দেশে কিংবা দেশের বাইরে প্রায় সবসময় হোটেলে চেকইনের সময়টি হয় দিনের বেলায়। তাই রাতে পৌঁছুলে আবাসন নিয়ে সংকটে পড়তে হতে পারে। এছাড়া অচেনা জায়গায় রাতে নিরাপত্তার ঝুঁকিও থাকে।

পরিবহন

ভ্রমণের আগে পরিবহন এবং এর টাইমিং সম্পর্কেও একটি স্পষ্ট ধারণা নিয়ে নিন। চেষ্টা করুন ভালো পরিবহনে যাতায়াত করার। কারণ ভ্রমণে পরিবহণের মান ভালো না হলে এটি ভ্রমণের স্পৃহা নষ্ট করে ও ক্লান্তি আনে। জলপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে পানির বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে ও সতর্কাবস্থা অবলম্বন করতে হবে।

খাবারে সতর্ক থাকুন

নতুন জায়গায় অনভ্যস্ত স্বাদে বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ফুড পয়জনিং বা পেট খারাপ হয় অনেকের। ঘোরার সময়ে অতিরিক্ত খাবার খাবেন না আর বাইরের খাবারে খাওয়ায় সতর্ক হোন। অস্বাস্থ্যকর হোটেল এড়িয়ে চলুন। এছাড়া পথে অপরিচিত কারও কাছ থেকে খাবার খাবেন না।

কীট থেকে সাবধান

ঘুরতে গেলে বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে ঘুরতে গেলে কীট-পতঙ্গ এমনকি সাপের কামড়ের মতো ঘটনাও ঘটে। এছাড়া পোকার কামড়ে ত্বকে ইনফেকশন নিয়ে ফেরেন অনেকেই। পাহাড়ের মশা সমতলের চাইতে ভিন্ন প্রজাতির হয়। এই মশার কামড়ে ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই সতর্ক হোন। সঙ্গে রাখুন মসকিউটো রিপ্লান্ট অথবা যথাযোগ্য প্রতিষেধক।

সতর্ক থাকুন মানুষেও

একটু অপরিচিত হোক বা পরিচিত জায়গা, ভ্রমণে সতর্কতার বিকল্প নেই। ভ্রমণে এসেছেন মানেই আপনার ‘কমফোর্ট জোন’ থেকে বাইরে এসেছেন। অপরিচিত জায়গায় চুরি, ছিনতাই বা প্রতারণার শিকার হতে পারেন অসাবধানে। অথবা বেহিসেবী খরচ করে বাড়ি ফেরার আগেই ফতুর হয়ে যেতে পারেন কেউ। তাই ভ্রমণে চোখ-কান খোলা রাখুন সর্বদা।

সাবধানতার মার নেই

এই প্রবাদবাক্য জীবনে তো বটেও, ভ্রমণের সময়ে আরও প্রাসঙ্গিক। ভ্রমণের সময়ে সাথে দামী অলংকার বা বিভিন্ন গেজেট না রাখাই ভালো। রাতে বাস, ট্রেন ভ্রমণে অতিরিক্ত সতর্ক থাকুন। সব টাকা কখনোই একসাথে রাখবেন না। টাকা অন্তত দুইভাগে ভাগ করে রাখুন।

সারাবাংলা/এসবিডিই

বেড়ানো লাইফস্টাইল শরতে ভ্রমণ; যে বিষয়গুলো অবশ্যই মনে রাখবেন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর