‘তালপাকা’ গরমে সুস্থ থাকবেন যেভাবে
৩১ আগস্ট ২০২৩ ১৮:৫০
ভাদ্রের গরমে তাল পাকে। তাল অনেকেরই প্রিয় ফল বটে। কিন্তু তাল পাকার এই প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরম তো কেবল তালগাছের আশেপাশেই থাকে না, নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় জীবনধারণে অভ্যস্ত মানুষের দেহেও লাগে। ভাদ্রের গরম অনেকসময়ই অসহনীয় হয়ে ওঠে। প্রকৃতিগতভাবেই এ সময় সূর্যও থাকে মাথার ওপরে। গনগনে আঁচে ঝলসে দেয় চরাচর। মাঝে যে বৃষ্টি হয় না তা কিন্তু নয়, কিন্তু এই বৃষ্টি বাড়িয়ে দেয় বাতাসের আর্দ্রতা। ফলে বাতারে ভ্যাপসাভাব বেড়েই চলে।
আর এই ভ্যাপসা গরমে নাজেহাল-নাকাল হয় মানুষ। এই গরম, ঘাম ও আর্দ্রতা সঙ্গে নিয়ে আসে নানা অসুখও। তাই এই আবহাওয়ায় সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা অনেক। সাবধান হয়ে চললে ভাদ্রের ভ্যাপসা গরমেও সুস্থ থাকতে পারবেন। সারাবাংলার পাঠকদের এই গরমে অসুস্থতার লক্ষণ, কারণ ও সুস্থ থাকার উপায়গুলো জানিয়েছেন চিকিৎসক আদনান আহমেদ।
অসুস্থতার লক্ষণ
এই ভ্যাপসা গরমে খুব বেশি ঘাম হয়। অনেকেই দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে পড়েন। যারা অসুস্থ হন তাদের শ্বাস দ্রুত হতে থাকে। এমন অবস্থায় ততক্ষনাৎ ব্যবস্থা না নিলে হিট স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এছাড়া তীব্র গরমে খেলাধুলা, অতিরিক্ত ছোটাছুটি বা ব্যায়াম করলে পেশিতে তীব্র ব্যথা হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে হিট ক্র্যাম্প বলে।
এছাড়া তীব্র গরমে হঠাৎ অজ্ঞান হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। একে হিট সিনকোপ বলে। হঠাৎ শরীরের তাপ বেড়ে যাওয়ার মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। এ সময় দেহের তাপমাত্রা বেড়ে ১০৫ ডিগ্রির ওপরও হতে পারে। তবে এটা কিন্তু জ্বর নয়।
সুস্থ থাকার উপায়
অতিরিক্ত রোদ বা গরম এড়িয়ে চলতে হবে। ভ্যাপসা গরমের তীব্র রোদে বাইরে যাওয়ার আগে আগে এক গ্লাস পানি খেয়ে নেবেন। এ ছাড়া চাহিদামাফিক পানি পান ও অন্যান্য তরল পান করতে হবে। এ সমসয়টাতে যারা সুস্থ আছেন তাদের প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করা উচিত। প্রসাবের রঙে নজর রাখবেন। রঙ হলুদ হয়ে গেলে বা প্রসাবের পরিমাণ কমে গেলে পানি খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিন।
যেহেতু ঘামের সঙ্গে পানি ও লবণ দুই-ই বের হয়ে যায়। তাই লবণযুক্ত পানীয় যেমন ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের রসও পান করতে পারেন। তবে যখন তখন ওরস্যালাইন খাবেন না। কারণ শুধুমাত্র ডায়রিয়ার জন্য এই পানীয় মিশ্রণটি তৈরি করা হয়েছে। চা ও কফি কম পান করা উচিত। কারণ এগুলো সাময়িকভাবে তৃষ্ণা মেটালেও পানির ঘাটতি পূরণ করে না। বরং অতিরিক্ত চা, কফি পান তৈরি করতে পারে পানিশূন্যতা। তাই এসব থেকে বিরত থাকুন।
গরমের এ সময় শরীর সুস্থ রাখতে প্রাধান্য দিন সাদা ভাত, ডাল, মাছ ও সবুজ শাকসবজিকে। বেশি তেল-মসলা, লাল মাংসসহ এড়িয়ে চলুন সব ধরনের ফাস্টফুড। হালকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং পেট একটু খালি রাখুন। নিত্যদিনের রুটিনে রাখুন স্যুপ, ফলের জুস, টক দই ও সালাদ। ভরপেট খেয়ে রোদে বের হবেন না।
রোদে বা গরমের মধ্যে অনেকক্ষণ টানা কাজ করবেন না। অতিরিক্ত ব্যায়াম বা প্রয়োজন ছাড়া শারীরিক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকুন। কাজের ফাঁকে ঠাণ্ডা খোলা স্থানে বিশ্রাম নিয়ে আবার কাজে যোগ দিন। দেখবেন শক্তি পাচ্ছেন। আর হঠাৎ পেশিতে ব্যথা হলে ব্যথা না কমা পর্যন্ত বিশ্রাম নিন।
অসুস্থতার লক্ষণ
ঘাম ও তীব্র রোদের কারণে ত্বকে জ্বলুনি, এলার্জি ও র্যাশ হতে পারে চামড়ায়।
সুস্থ থাকার উপায়
গরম তাপ যেমন শরীরের ক্ষতি করে, তেমনি ক্ষতি করে ত্বকের। তাই রোদে বেরোনোর আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করুন। ঢিলেঢালা, সুতি ও হালকা রঙের পোশাককে প্রাধান্য দিন। বাইরে বের হলে অবশ্যই ছাতা ও পানি সঙ্গে রাখুন। রোদের আলো থেকে চোখ সুরক্ষিত রাখতে ব্যবহার করুন রোদ চশমা। এই সময়ে এসব আপনাকে গরম থেকে সুরক্ষা দেবে।
প্রয়োজন মত গোসল করে শরীর ঘাম ও ময়লামুক্ত রাখতে হবে। নিয়মিত গোসল, সম্ভব হলে একাধিকবার গোসল আপনার শরীরকে ঠান্ডা রাখবে। তবে কারও ঠান্ডাজনিত সমস্যা থাকলে একাধিকবার গোসলে বিরত থাকুন।
ঘরকে তাপ ও তীব্র রোদের কবল থেকে মুক্ত রাখতে সূর্য রোদ ছড়ানোর আগেই জানালায় মোটা পর্দা দিয়ে দিন। এতে ঘর ঠান্ডা থাকবে। এ ছাড়া জানালায় বা ঘরে ঝুলিয়ে দিন ভেজা কাপড়। বাতাসের সংস্পর্শে এসে এটি ঠান্ডা ছড়াবে।
অসুস্থতার লক্ষণ
বাইরের গরম থেকে এসে ঘাম না শুকিয়ে ঠাণ্ডা পানি খেলে বা ঠাণ্ডা ঘরে বিশ্রাম নিলে জ্বর, সর্দি-কাশি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়। এছাড়া রান্নাবান্না শেষ করেই এসি চালিয়ে বিশ্রাম নিলেও বুকে কফ জমে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়। এ সময়ে শিশুদেরও নানা অসুখ-বিসুখ হয়।
সুস্থ থাকার উপায়
বাইরে বেরিয়ে ঘর্মাক্ত শরীরে হুট করে ঠান্ডা ঘরে ঢুকবেন না বা ঘরে ঢুকেই ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি পান করবেন না। ঘাম শুকিয়ে শরীরটা একটু শান্ত হতে দিন, তারপর শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ঢুকুন। প্রচণ্ড গরম থেকে ফিরেই গোসল করাটা ক্ষতিকর।
এই গরমেও সারাদিন হালকা গরম পানি খান। গলায় ব্যথা বা সর্দি-কাশির সম্ভাবনা দেখা দিলে তো এই রুটিন চালু করতেই হবে। আদা দিয়ে কালো চা খাওয়া বা লবঙ্গ, আদা, গোলমরিচ, তেজপাতা ফুটিয়ে নিয়ে চায়ের মতো পান করলে সর্দি-কাশিতে ভালো ফল পাবেন। সেইসঙ্গে জোর দিন ভিটামিন সি খাওয়ার উপরেও। লেবু, আমলকী, পেয়ারায় প্রচুর ভিটামিন সি মিলবে। তাজা শাক-সবজি, ফল, বাদাম রাখুন খাদ্যতালিকায়।
অসুস্থতার লক্ষণ
শরত ও হেমন্তের শুরুতে সারাদিন খুব ভ্যাপসা গরমের পর সন্ধ্যার দিকে বৃষ্টি হলে এলে হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যায়। এ সময়ে অ্যাজমা রোগীদের নিশ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে। এছাড়া তাপমাত্রার ওঠা-নামায় অ্যাজমা রোগীদের অ্যাটাক হতে পারে।
সুস্থ থাকার উপায়
এ সময় কোথাও খুব বেশি গরম অনুভূত হলে দ্রুত গরম স্থান থেকে সরে গিয়ে বিশ্রাম নিন। কোনো পানীয় পান করুন। ঘাম শুকানোর পর সম্ভব হলে হাত-মুখ ধুয়ে ফ্যান বা এসি চালিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন। হাঁপানি রোগীরা অবস্থা বুঝে এ সময় ইনহেলারের একটা পাফ নিতে পারেন। যদি মনে হয় কষ্ট শুরু হতে পারে তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সারাবাংলা/এসবিডিই