রোজায় কীভাবে পর্যাপ্ত ঘুমাবেন
৩১ মার্চ ২০২৪ ০৮:৫৯
সুস্বাস্থ্যের জন্য, সারাদিনের কাজকর্ম সঠিকভাবে করার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি। আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে বায়োলজিক্যাল ক্লক নামে এক প্রাকৃতিক ঘড়ি রয়েছে যাকে আমরা দেহঘড়ি বলে থাকি। আর চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে সার্কাডিয়ান রিদম। এই সার্কাডিয়ান রিদম আমাদের ঘুমানো এবং ঘুম থেকে জেগে ওঠার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বায়োলজিক্যাল ক্লক আমাদের ঘুমের সাধারণ নিয়মের সাথে পরিচিত। যেমন আমরা রাতে একটানা সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমাই আবার সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠি। ঘুমের সাইকেলে কোন ধরনের পরিবর্তন এই সার্কাডিয়ান রিদমের উপর প্রভাব ফেলে। যার ফলে মুড সুইং মানে হঠাৎ মন ভালো হওয়া আবার হঠাৎ মন খারাপ হয়ে যাওয়া, খিটখিটে মেজাজ, মাথাব্যথা, মাইগ্রেনসহ নানা ধরনের শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। যার ফলে স্বাভাবিক জীবনব্যবস্থা এবং পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সাধারণত রোজার সময় আমাদের ঘুমের স্বাভাবিক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে।
রোজায় আমরা ভোররাতে সেহরি খাওয়ার জন্য জেগে উঠি তারপর ফজর নামাজ পড়ে ঘুমাতে যাই। এসময় দুই থেকে আড়াই ঘন্টার বেশি ঘুমানো যায় না কারণ দিনের কাজকর্ম এবং অফিসে যাবার তাড়া থাকে। অন্যদিকে আবার তারাবি নামাজ পড়ে, রাতের খাবার খেয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে গল্প আড্ডা দিয়ে অনেকেই বেশ রাত করে ঘুমাতে যাই। ফলে সাত থেকে আট ঘন্টার যে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন সেটা পূরণ হয় না। ফলে নানা ধরনের শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এতে করে রোজার সময় স্বাস্থ্য উপকারিতা বাধাগ্রস্থ হয়।
রোজায় সঠিক এবং পর্যাপ্ত ঘুমের পরিকল্পনা যেভাবে করবেন
সঠিক ঘুম আমাদের মস্তিষ্ক সংক্রান্ত কাজগুলো যেমন, চিন্তা করা, সিদ্ধান্ত নেওয়া, স্মৃতি ধরে রাখা এবং প্রয়োজনে তা পুনরায় মনে করা, মনোসংযোগ করা ইত্যাদি সুষ্ঠূভাবে পালন করতে সাহায্য করে। কিন্তু ঘুম কম হলে বা ঘুমের সাইকেলে ব্যঘাত ঘটলে আমাদের মস্তিষ্ক দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়। ফলে কাজে পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া যায় না, কোন সমস্যার সমাধান করতে অসুবিধা হয়, ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি হয়, সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, সৃষ্টিশীল কাজ করা যায় না। সব মিলিয়ে শারীরিক এবং মানসিক অসুস্থতা দেখা দেয়। জেনে নেই কিভাবে রোজার সময়েও সঠিক এবং পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে শরীর সুস্থ রাখা যায়।
১. ঘুমের নতুন সময় ঠিক করা
রোজার পরিবর্তিত সময়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ঘুমের জন্য একটি নতুন সময় তালিকা করে নিতে হবে। এই তালিকায় ঘুমের জন্য তিনটি আলাদা আলাদা সময় সেট করে নিতে হবে। এবং সে অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যেতে হবে এবং ঘুম থেকে উঠতে হবে।
২. রাতে খাবার পর ঘুমানো
তারাবি নামাজ শেষ করে রাতের খাবার খেয়ে নিতে হবে। এরপর দুই ঘন্টা সময়ের মধ্যে জরুরি কাজগুলো শেষ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে হবে। রাত এগারোটায় শুয়ে পড়তে হবে যাতে সেহরি পর্যন্ত চার ঘন্টা ঘুমানো যায়।
৩. সেহরি খেয়ে ঘুমানো
ভোররাতে তিনটা ত্রিশ মিনিটে উঠে সেহরির জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। সেহরি খেয়ে ফজরের নামাজ পড়ে ভোর পাঁচটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লে সাতটা পর্যন্ত দুইঘন্টা ঘুমানো যায়। ফলে রাতের চারঘন্টা আর ভোরের দুইঘন্টা মোট ছয় ঘন্টা ঘুম হবে।
৪. বাড়তি ঘুম এবং পাওয়ার ন্যাপ
কাজের ফাঁকে সুবিধামতো সময়ে বিশ থেকে ত্রিশ মিনিট পাওয়ার ন্যাপ নিয়ে নিলে দুই ঘন্টার সমান ঘুম পূরণ হয়। ফলে সারাদিনের ঘুমের চাহিদা সহজেই পূরণ হয়ে যায়।
রোজার সময় এভাবে তিনভাগে ঘুমের সময়কে সেট করে নিলে শরীরের সার্কাডিয়ান রিদম অর্থাৎ বায়োলজিক্যাল ক্লক ঘুমের নতুন সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এবং নতুন সেট করা সময়েও পর্যাপ্ত গভীর ঘুম হয়। ফলে শরীরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না এবং ক্লান্ত বা অসুস্থ হবার ঝুঁকি কমে যায়।
সারাবাংলা/এসবিডিই