৩ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের কী শেখাবেন
২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৪ | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৮
বাংলাদেশে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সাফল্য দৃশ্যমান, প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা ৩ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা। শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশে সহায়তা করা এবং তাদের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রস্তুত করাই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে খেলাধুলা, গান, নাচ, গণনা, বর্ণমালা এবং সামাজিকীকরণ শিক্ষা প্রদান করা হয়। এটি শিশুর আচরণ, দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, এবং প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি আগ্রহ তৈরি করে। এ সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তার পরিবার।
এ সময়ে শিশুর সঠিক যত্নই তার শিক্ষার শুরুর ধাপকে তার জন্য সহজ করে তুলে। প্রাক-প্রাথমিকে শিশুর সামাজিকীকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিশু ভবিষ্যতে কেমন আচরণ করবে, তার মানসিক বৃদ্ধি কেমন হবে তা নির্ধারণে এই সামাজিকীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এটি প্রথম সম্পন্ন হয় শিশুর পরিবার থেকে।
এ সময়ে একটি শিশু নানাবিধ আচরণের মাধ্যমে তার আশেপাশে যারা আছেন তাদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে। এবং পরিবারের সকল সদস্যের বিশেষ করে পিতা-মাতার পজিটিভ রেসপন্স করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। এতে শিশুর সামাজিক বিকাশ সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়। আবার পিতা-মাতা কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের অবহেলাপূর্ণ আচরণ শিশুর আচরণে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
অপরদিকে, পিতা-মাতার উচিত নিয়মিত তার শিক্ষকদের সাথে শিশুদের সম্পর্কে যোগাযোগ রাখা। একজন শিক্ষকের কাছে তার শিক্ষার্থীর আচরণিক দিক, শ্রেণি কার্যক্রমে শিশুর অংশগ্রহণ, শিশুর সবল-দুর্বল দিকগুলোর রেকর্ড সংরক্ষণ থাকে। যার ফলে সহজেই তিনি শিশুর সম্পর্কে তার পিতা-মাতাকে তথ্য দিতে পারেন। এতে কোন দিকগুলো উন্নতি প্রয়োজন সে সম্পর্কেও একজন শিক্ষক প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারেন। কাজেই শিশুর বাহ্যিক, মানসিক ও সামাজিক উন্নয়নে শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুকে এ সময়ে শেখাতে হবে বাস্তবিক কার্যকলাপ, শোনা ও বলাসহ বিভিন্ন অভিনব পন্থা অনুসরণের মাধ্যমে। যেমন: যে কোনও ধরনের গল্প ও কবিতা মজার ছলে তাকে পড়ে শোনানো। এতে শোনার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। বাড়িতে থাকা বিভিন্ন খেলাধুলার উপকরণের মাধ্যমে শেখানো।
এ সময়ে শিশুদের মনে নানা ধরনের প্রশ্নের উদ্রেক হয়। এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। প্রশ্নের উত্তরদানে কখনওই বিরক্তি প্রকাশ করবেন না এতে আপনার সন্তান প্রশ্ন করার উৎসাহ হারাবে বরং তাকে আরও প্রশ্ন করার উৎসাহ দিন। আপনিই হতে পারেন আপনার শিশুর জ্ঞান আহরণের প্রথম উৎস। এছাড়াও প্রশ্নের উত্তরদান ও শিশুর তা শোনার ফলে তার যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
শিশুকে এ সময় থেকেই মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সচেতন করে তুলুন। অভিবাদন জানানো, ভুল করলে ক্ষমা প্রার্থনা করা, বড়দের সাথে কেমন আচরণ করবে, ছোটদের সাথে কেমন আচরণ করবে ইত্যাদি নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার শিক্ষা দিন। তাকে দুইবেলা ব্রাশ করা, সময়মত খাবার গ্রহণ করা, নিয়মিত গোসল করা, নখ কাটা ইত্যাদি বিষয় শেখানোর চেষ্টা করুন। এসব বিষয় শিশুর সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বোঝার চেষ্টা করুন। শিশুর নাচ-গান, খেলাধুলা, ছবি আকা বা যে কোনও সহ-শিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমে আগ্রহী করে তুলুন। আপনিও বোঝার চেষ্টা করুন তার কোন বিষয়ে আগ্রহ বেশি। সে অনুযায়ী তাকে উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে পারদর্শী করে গড়ে তোলার চেষ্টা করুন।
মনে রাখবেন, আপনার শিশুর প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আপনি ও আপনার পরিবার। আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতাই তার শিক্ষা জীবনের প্রথম ধাপকে আরও সহজ করে তুলবে। কাজেই এ সময়ে শিশুর সঠিক যত্ন ও পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: শিক্ষা কর্মকর্তা, আশা (এনজিও)
সারাবাংলা/এসবিডিই