বইমেলায় তাপস বড়ুয়ার ‘চোখে তার শিশিরের ঘ্রাণ’
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৩:১৩ | আপডেট: ১০ মে ২০২২ ১৮:৩৭
অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা তাপস বড়–য়ার ছোটগল্প সংকলন ‘চোখে তার শিশিরের ঘ্রাণ’ এবারের বই মেলায় প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন স্বাদের ছোট ছোট বাইশটি গল্প নিয়ে বের হয়েছে বইটি।
সময়ের অসংখ্য ছোট ছোট ভগ্নাংশ মিলে এক একটি জীবন। বোধে ও আবেগে প্রতিটি ভগ্নাশংই স্বকীয়, অনন্য। সেসব অনন্য মুহূর্তের প্রতিচ্ছবিই যেন চিত্রায়িত হয়েছে একেকটি গল্পে। কোন কোন গল্পে উঠে এসেছে সমাজের সমসাময়িক ছোটবড় নানা অসঙ্গতি; কোন কোনটিতে ফুটে ওঠেছে একজন মানুষের ‘একান্ত নিজেকে’ খুঁজে পাওয়ার প্রচেষ্টা। প্রতিটি কাহিনীর প্লট ছোট; গল্পের কলেবরও ছোট – নয়শো থেকে পনেরোশো শব্দের মধ্যে।
কলেবরে ছোট হলেও প্রতিটি গল্পেই রয়েছে খুব সূক্ষ্ম অথচ তাৎপর্যপূর্ণ কিছু বার্তা। গল্পের বিষয়বস্তু নির্বাচন ও কাহিনীর সূচারু বিন্যাসের মধ্য দিয়ে সমাজের ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন সঙ্গতি অসঙ্গতিকে তুলে ধরা হয়েছে কতকটা সাংবাদিকসুলভ দৃষ্টিকোণ থেকে।
লেখকের বর্ণনা সাবলীল ও বাহুল্যবর্জিত; তাই বইটি সুখপাঠ্য। সেইসাথে বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য থাকায় পাঠে ক্লান্তি আসে না।
‘বিষাক্ততার বিশ্বায়ন’ গল্পে উঠে এসেছে কীভাবে সারা পৃথিবীতে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দেয়ার পিছনে বিশ্বের মোড়লদেরও ভূমিকা ছিল। ‘থাবা’ গল্পে দেখানো হয়েছে সুন্দরবনের বাঘের থাবার চেয়ে প্রভাশালীদের থাবা ঐ এলাকার মানুষের জীবনকে কতটা বিভীষিকাময় করে তোলে। ‘টমেটোর রঙ লাল’, ’প্রাইভেট প্রোপার্টি’ এসব গল্প শোষণের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সোচ্চার হওয়ার ছবি তুলে ধরে। ‘সার্ভিস চার্জ’ গল্পে দেখা যায়, সাধারণের কাছ থেকে সংগ্রহ করা টাকা কীভাবে ঠুকে যায় অপেক্ষাকৃত শক্তিশালীদের পকেটে। ‘ভাবমূর্তি’ গল্পে দেখি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি রক্ষায় প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্যের সাথে বেঈমানির প্রসঙ্গ। ‘গুপ্তধন’ গল্পটি আসলে গুপ্তধন প্রাপ্তির খবরের আড়ালে গুপ্ত উৎস থেকে প্রাপ্ত ধন লুকানোর গল্প। ‘পার্কের ভালুক’ গল্পে রয়েছে পার্কে ভালুক সেজে কাজ করতে করতে ভালুকের কিছু আচরণে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া একজন মানুষের কথা।
কতকগুলো গল্প নষ্টালজিয়ার কথা বলে। ‘যা ছিলো কিন্তু হারিয়ে গেছে’ তার জন্যে নষ্টালজিয়া; ‘যা ছিলো না কিন্তু থাকতে পারতো’ তার জন্যেও নষ্টালজিয়ায় ভোগে মানুষ। সেইসব নষ্টালজিয়া আর ফেলে আসা নিজেকে ফিরে পাওয়ার একটা আকুল বাসনা দেখা যায় ‘চোখে তার শিশিরের ঘ্রাণ’, ‘ঘূর্ণিজলে আর এক পাক’, ‘নিমন্ত্রণ’, ‘তবু সে দেখিল কোন ভূত’ ইত্যাদি গল্পে। ‘ম্যাজিক’ গল্পটি আসলে ম্যাজিক দেখতে দেখতে ক্লান্তিকর বাস্তবতা থেকে কিছুক্ষণের জন্যে বেরিয়ে অন্য এক আনন্দময় জগতে হারিয়ে যাওয়ার গল্প।
‘জয়তী’ বইটি প্রকাশ করেছে। প্রচ্ছদ এঁকেছেন শতাব্দী জাহিদ। মেলায় বইটি পাওয়া যাচ্ছে ‘জয়তী’ স্টল নম্বর ৪৫৮-৪৬০; সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। দাম ২০০ টাকা।