Saturday 10 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বইমেলায় ভিন্ন ধারার আয়োজন


১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৩:০৭ | আপডেট: ১০ মে ২০২২ ১৫:২৩

এসএম মুন্না

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বইয়ের পাশাপাশি পোস্টার, ডাকটিকিট, প্রামাণ্যচিত্রের কদর বেশ চোখে পড়ার মতো। বরেণ্য শিল্পীদের আঁকা চিত্রকর্ম, বাংলাদেশের প্রত্ন-নিদর্শনের আলোকচিত্র নিয়ে পোস্টার, বিশেষ ঘটনার ওপর ডাক বিভাগ প্রকাশিত স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম আর ক্যাটালগ কিনতে সংগ্রাহকরা ভিড় করছেন জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর ও ডাক বিভাগের স্টলে। এ সব প্রতিষ্ঠানের স্টল মেলার বাংলা একাডেমি অংশে।

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী যুব লীগের গবেষণা শাখা কেন্দ্রের প্রকাশনা ‘যুবজাগরণ’, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ‘বঙ্গবন্ধু বারতা’, ছাত্রলীগের ‘মাতৃভূমি’র স্টল রয়েছে বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে। এসব স্টলে মিলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর কারাগারে রোজনামচা, অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা বিভিন্ন বই। এ ছাড়া পাওয়া যাচ্ছে রাজনৈতিক নেতাদের লেখা বই, পোস্টার, ক্যাটালগ, লিফলেট, পুস্তিকা ইত্যাদি।

সাধারণ বইয়ের স্টলগুলোর মতো ভিড় না হলেও এখানে আসেন বিশেষ ধরনের ক্রেতারা। তারা এসব স্মারক সংগ্রহ করেন। অনেকে ঢাকার বাইরে থেকেও এসব কিনতে এখানে আসেন। তেমনি একজন মুন্সিগঞ্জের আজিয়ার হোসেন। পেশায় স্কুল শিক্ষক আজিয়ার জানালেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানোর সময় প্রামাণ্য দলিল বা স্মারক বস্তু হাতের কাছে থাকলে বোঝানো সহজ হয়।’

চার তরুণ শিক্ষার্থী তাকসিমুল বিল্লাহ, জামাল হোসেন, শুকুর উল্লাহ ও হামিদুল আমিন। পছন্দের পোস্টার, ডাকটিকিট আর খাম সংগ্রহ করতে এসেছেন। ডাক বিভাগের স্টলে কথা হয় তাদের সঙ্গে। জানালেন, শখ থেকেই এসব সংগ্রহ করেন তারা।

বিজ্ঞাপন

ডাক বিভাগের স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধি উত্তম কুমার চন্দ সারাবাংলাকে জানান, ‘সব বয়সী মানুষই তাদের স্টলে আসেন। তবে তরুণদের সংখ্যা বেশি। তারা নতুন নতুন ডাকটিকিটের খোঁজ নেয়।

চন্দ জানান, ‘নানারকম স্মারক টিকিট ও উদ্বোধনী খাম মিলছে তাদের স্টলে। যেমন রয়েছে বঙ্গবন্ধু স্মৃতিবিজড়িত ডাকটিকিট তেমনি জাতীয় নেতাসহ বরেণ্য রাজনৈতিক নেতাদের ছবিসংবলিত উদ্বোধনী খাম ও টিকিট, রবীন্দ্র-নজরুলসহ কবি-সাহিত্যিক, জাতীয় ফুল শাপলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফুল, নৌকাসহ নানা বিষয়ের ডাকটিকিট। ডাকটিকিটের ছোট-বড়ো অ্যালবামও মিলছে। দাম হাতের নাগালেই।

এসবের পাশাপাশি ডাক বিভাগ থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন বইও মিলছে এখানে। আছে একাত্তরের গণহত্যা ও যুদ্ধপরাধ বিষয়ক প্রামাণ্য দলিল ও আলোকচিত্র অ্যালবাম। ডাক সংক্রান্ত বাংলা ও ইংরেজি বই, ডাকটিকিট দিবস উপলক্ষে বের হওয়া বিভিন্ন স্মারকগ্রন্থ ইত্যাদি।

ই-মেইল আর ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারের যুগে এই প্রজন্মের অনেকেই ডাক ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানে না। ডাক বিভাগের স্টলে তাদের জন্য একটি ডাক বাক্স রাখা হয়েছে। মেলা উপলক্ষে ‘চিঠি লিখুন, ইহা স্থায়ী’ শিরোনামে চিঠি লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে ডাক বিভাগ। দুটি বিভাগে সেরা চিঠির জন্য যথাক্রমে ১০ হাজার, ৬ হাজার ও ৪ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড পুরস্কার দেওয়া হবে।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের স্টলটি সাজানো হয়েছে বেশ নান্দনিকভাবে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রেফারেন্স সহকারী ফারুক আহমেদ সারাবাংলা ডট নেটকে বলেন, মেলার প্রথম দিন থেকেই স্টলটিতে আগ্রহি দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল। মেলা যত গড়াচ্ছে দর্শনার্থীদের সংখ্যা তত বাড়ছে। স্টলে এসে প্রত্মতত্ত্ব বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চান দর্শনার্থীরা। তার উত্তর দেই আমরা।

স্টলটিতে দেখা গেলো, ফ্রেমে বাঁধাই করা বাংলার নানা ঐতিহাসিক স্থাপনার ছবি। মোগল আমল থেকে শুরু করে এর আগে ও পরে ইংরেজ শাসকদের আমলের বিভিন্ন স্থাপনা এতে স্থান পেয়েছে। মূলত বাংলাদেশের পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহের তালিকা প্রণয়নসহ তাদের রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। বর্তমানে দেশে ৪৫২টি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি রয়েছে এর অধীনে। আর সেগুলোই মেলায় উপস্থাপন করা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে। স্টলটিতে প্রদর্শিত বিভিন্ন ছবির মধ্যে রয়েছে- লালবাগ কেল্লা, মিঠাপুকুর মসজিদ, বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘর, শালবন বিহার, জগদ্দল বিহার, কোটলা মঠ, পুটিয়া রাজবাড়ী, রবীন্দ্র কুঠবাড়ী, কুতুব মসজিদ, গোপীনাথ জোড় বাংলা মন্দির, মহাস্থানগড়, ময়নামতি, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, সীতাকোট বিহার, কান্তজীর মন্দির, ছোট সোনা মসজিদ, ষাট গম্বুজ মসজিদ, ভাসুবিহার, লালবাগ দুর্গ ইত্যাদি। এসব স্থাপনার পোস্টার মিলছে ২০ টাকায়। ভিউ কার্ড হিসেবে ঐতিহাসিক ৩০টি স্থাপনার একটি প্যাকেটের দাম রাখা হচ্ছে ৪৫ টাকা। কাঠে খোঁদাই করা ছবিগুলোর দাম ৩ হাজার টাকা। মাটির পাত্রের গায়ে ছাপানো ঐতিহাসিক স্থাপনার ছবি ১৫০ টাকা এবং সিরামিকস-এর গ্লাস ছাপানো ছবিগুলো ১৫০ টাকায় মিলছে।

চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর ও জাতীয় জাদুঘরের স্টলে বিক্রি হচ্ছে কয়েক ধরনের প্রামাণ্যচিত্র। দাম হাতের নাগালের মধ্যে হওয়ায় সংগ্রাহকরাও বেশ খুশি।

বরেণ্য শিল্পী কামরুল হাসান, মোহাম্মদ কিবরিয়া, আমিনুল ইসলাম, সফিউদ্দীন আহমদ, মুর্তজা বশীর, কাইয়ুম চৌধুরীর চিত্রকর্ম নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি প্রকাশ করেছে দৃষ্টিনন্দন ক্যাটালগ ও পোস্টার।

জাতীয় জাদুঘরের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে প্রথিতযশা শিল্পীদের শিল্পকর্ম নিয়ে ক্যাটালগ, স্মারক গ্রন্থ, পোস্টার, প্রত্মনিদর্শনের আলোকচিত্র নিয়ে ‘পিকচার পোস্টকার্ড’, গেঞ্জি, মগ ও কলম।  রয়েছে প্রায় ২০-৩০ রকম প্রকাশনা।

বইমেলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের একটি স্টল রয়েছে। যেখানে ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়ি ঘিরে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জীবনের নানা ছবি পাওয়া যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা বেশ কিছু বইও পাওয়া যাচ্ছে এই স্টলে। স্টলটিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত মগ ও শো-পিস পাওয়া যাচ্ছে নামমাত্র মূল্যে।

প্রথমবারের মতো মেলায় অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। দেশের জনগণকে আবহাওয়া সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানাতে প্রতিষ্ঠানটি মেলায় অংশ নিচ্ছে।

এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশের স্টলে মিলছে ৫০ শতাংশ ছাড়ে বাংলাপিডিয়ার বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণ। মিলছে ঢাকা সংক্রান্ত বিভিন্ন লেখকের গবেষণাগ্রন্থ যার মধ্যে ঢাকা কোষ অন্যতম।

ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের স্টলে মিলছে পুলিশ সংক্রান্ত বিভিন্ন পুস্তিকাসহ পুলিশ সদস্যদের লেখা বই। এই স্টলে দায়িত্বরত কামরুল জানান, ‘মেলায় আগতদের বিভিন্ন কৌতুহলী প্রশ্নের জবাবও দেন তারা।’

মেলায় শুধু বই না, শিল্পকর্মও বিক্রি হচ্ছে। জয়বাংলা চিত্র গ্যালারি ও স্টুডিও নামে একটি স্টলে রয়েছে একাডেমির পুকুর পাড়ের উত্তর দিকে। কথা হলো এই স্টুডিও’র সত্ত্বাধিকারী চিত্রশিল্পী মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের সঙ্গে। তিনি জানালেন, প্রথমবার তারা মেলায় অংশ নিচ্ছেন। তার স্টলে মিলছে উদীয়মান শিল্পীদের বাছাইকৃত শিল্পকর্ম। বিশেষ করে কাগজের মুখোশ, সরাচিত্র, কাগজের তৈরি পাখি ইত্যাদি।

নজর কেড়েছে মেয়র হানিফ স্মৃতি সংসদের স্টলটিও। সেখানে রয়েছে মোহাম্মদ হানিফের স্মৃতির-অ্যালবাম আর বেশ কিছু স্মারকগ্রন্থ।

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের একটি স্টলে রয়েছে। যেখানে পরমাণু সংক্রান্ত মজার মজার সব তথ্য তুলে ধরছেন কমিশনের প্রতিনিধিরা।

সারাবাংলা/পিএম

 

 

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর