Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ধারাবাহিক অনুবাদ উপন্যাস : উড়াও শতাবতী (পর্ব-০৩)


২৬ জানুয়ারি ২০১৮ ১৩:২৫

<< আগের পর্ব

কিন্তু না! ওয়েলশের উকিলবাবু মত বদলালেন। ছাতাটিকে বগলদাবা করে আস্তে করে ঘুরলেন আর পথ ধরলেন। তবে সে হলফ করে বলতে পারে- আজ এই রাতেই আঁধারটা আরেকটু ঘনিয়ে এলে এই ব্যাটা ঠিক ঠিক কোনো একটি সস্তা দোকানে ঢুকে স্যাডি ব্ল্যাকআইজের রগরগে কাহিনী ‘হাই জিংকস ইন অ্যা প্যারিসিয়ান কনভেন্ট’র একটা কপি কিনে ফেলবে।

দরজা থেকে মুখ ঘোরালো গর্ডনও। বইয়ের তাকগুলোর দিকে এগিয়ে গেলো। লাইব্রেরি থেকে বাইরের দিকে মুখ করলে হাতের বামের তাকগুলোতে অতি নতুন আর প্রায় নতুন বইগুলো রাখা- উজ্জ্বল রঙা মলাটের বইগুলো কাচের দরজার ওপার থেকেই যে কারো নজরে পড়ে। চকচকে মলাটগুলো যেন ভেতর থেকে আহ্বান জানাতে থাকে। যেন ওরা বলতে থাকে- আমাকে কেনো, আমাকে কেনো! ছাপাখানা থেকে আনা একদম আনকোরা, কুমারি কনের মতো কাগজ কাটা ছুরির নিচে যেন সতীচ্ছেদের অপেক্ষায় ওরা। আর রিভিউ কপিগুলো কুমারিত্ব হারালেও সদ্যবিধবা যুবতীর মতো প্রস্ফুটিত যৌবন নিয়ে অপেক্ষায়। তবে এখানে ওখানে, অন্তত আধা ডজনতো হবেই, সেইসব বেচারী চিরকুমারীরা লট ধরে পড়ে আছে, উচ্ছিষ্ট হয়ে। এখনো কেউ ছোঁয়নি, কিন্তু দীর্ঘ সুরক্ষিত কুমারীত্ব বিসর্জন দিতেই যেন উন্মুখ।

এই অপয়া অবশিষ্টদের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে নিলো গর্ডন। ওগুলো তাকে দুঃসহ স্মৃতিই মনে করিয়ে দেয়। ওগুলোর মাঝে একটি বই তারও যে রয়েছে। কুৎসিত পুচকে এক পুস্তিকা। নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে প্রকাশ করেছিলো বছর দুয়েক আগে। যার গুনে গুনে একশ’ তিপান্ন কপি বিক্রি হয়েছে আর অতঃপর বাকিগুলো অবশিষ্ট’র তালিকায় স্থান পেয়েছে। সেখান থেকে বিক্রি হয়নি একটি কপিও। নতুন বইয়ের তাকটি পার হয়ে ডান দিকে কোনাকুনি বসানো তাকগুলোর সামনে একটু দাঁড়াল। এগুলোতে পুরোনো বইয়ের ভাগটাই বেশি। ডান দিকের তাকগুলোয় কবিতার বই। তার ঠিক সামনের গুলোয় গদ্য, আর নানাধর্মী বইয়ের সমাহার। উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ঝকঝকে মলাটের দামি আবার নোংরা সস্তাদরের সব বইই এখানে স্থান পেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সব বইয়ের দোকানেই সে দেখেছে আদিম ডারউইনীয় একটা যুদ্ধ চলে। যেখানে জীবিতরা দৃষ্টিসীমার মধ্যে স্থান পায় আর মৃতরা হয় উপরে নয়তো নিচে সরে যায়- নিচে মেঝ ঘেঁসে নয়তো উপরের মাচানে। তা সে যেখানেই হোক নিশ্চিতভাবেই এমন একটি স্থানে যেখানে ওগুলোতে আর কারো চোখ পড়ে না। নিচের তাকগুলোর সবচেয়ে নিচে ‘ধ্রুপদী’ সাহিত্যের বইগুলো, বিশেষ করে ভিক্টোরীয় যুগের বিলুপ্ত দৈত্যগুলো পড়ে থাকতে থাকতে পচে গেছে। স্কট, কার্লাইল, মেরেডিথ, রাসকিন, প্যাটার, স্টিভেনসন- পুরোনো ধাঁচের বইগুলোর পীঠে এইসব নাম আর পড়ারও জো নেই। উপরের তাকগুলোতে, অনেকটাই দৃষ্টির বাইরে, ডিউকদের ঢাউশ ঢাউশ আত্মজীবনীগুলো পুরোই ঘুমিয়ে। সেগুলোর নিচে, এখনো বেচাবিক্রি চলে বলে নাগালের মধ্যেই স্থান পেয়েছে ধর্মসাহিত্যকর্ম- সব সম্প্রদায়ের সব গোত্রেরই বই এখানে মিলবে একসঙ্গে বৈষম্য বিন্যাসে। স্পিরিট হ্যান্ডস হ্যাভ টাচড মি’র লেখকের দ্য ওয়ার্ল্ড বিয়ন্ড, ডিন ফারারের লাইফ অব ক্রাইস্ট। জেসাস দ্য ফার্স্ট রোটারিয়ান, ফাদার হিলায়ার চেস্টনাটের সর্ব সাম্প্রতিক বই আরসি প্রোপ্যাগান্ডা। একটু ভাবাদর্শী হলে ধর্মের বই ভালোই বিকিকিনি চলে। ওর নিচে ঠিক দৃষ্টিস্তরের সমান হয়ে বিন্যস্ত সাম্প্রতিক বইগুলো। প্রিস্টলি’র সবশেষ গ্রন্থ। পুনঃমুদ্রিত ফুটফুটে সব নতুন বই। হার্বার্ট, নক্স ও মিলনের হাস্যরসাত্মক বইগুলো। কিছু উচ্চমার্গীয় বইও রয়েছে, এগুলো উঁচকপালি পাঠককূলের জন্য। এর বাইরে হেমিংওয়ের কিংবা ভার্জিনিয়া উলফের এক-দুটি উপন্যাস, আর স্ট্র্যাচির চৌকস বানোয়াট হজমি প্রকৃতির জীবনীগুলো দেখতে পাবেন। আর রয়েছে বড় শিল্পী ও বড় কবিদের ওপর পয়সাওয়ালা তরুণ ফালতু লেখকদের লেখা ঝকঝকে ছাপা কিছু বই। যেগুলো আবার এটন থেকে ক্যামব্রিজ আর ক্যামব্রিজ থেকে সাহিত্য পর্যালোচনায়ও যায়। ফাঁকা দৃষ্টিতে এসব বইয়ের সারিতে তাকায় গর্ডন। এর প্রায় সব রকমফেরেই ঘৃণা তার। পুরোনো কি নতুন, উচ্চমার্গীয় কিংবা নিম্নরুচির, খটমট কি হাসিঠাট্টার, সব কিছুতেই। এগুলো দেখলে তার নিজের অক্ষমতাটাই বেশি করে সামনে আসে। একজন লেখক তো সে হতেই পারতো, কিন্তু সেতো এখন আর লিখতেই পারে না। ছাপা হওয়া না হওয়া নিয়ে কথা নয়, কথা এই যে, তাকে দিয়ে কোনো সৃষ্টিই যে সম্ভব হচ্ছে না। অথবা বলা চলে যা হচ্ছে তা না হওয়ারই মতো। আর এইসব ফালতু যা কিছু তাকের পর তাক ভরে থরে থরে সজ্জিত, যেমন করেই হোক এরও একটা অস্তিত্ব রয়েছে, আর তাও একটা অর্জন বা অর্জনের মতো কিছু। এমনকি ডেলস, ডিপিংসরা তাদের বার্ষিক ছাপা খরচটা তুলে আনতে পারে। তবে উন্নাসিক সংস্কৃতিমনা লেখকদের বইগুলোতে তার চরমই ঘৃণা। সমালোচনা আর সৃজনশীল সাহিত্যের নামে যেসব লেখা হয়, ক্যামব্রিজের তরুণ পাঁজিগুলো স্রেফ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ওগুলো লিখে ফেলে- নিজের গাঁটে পয়সা থাকলে গর্ডনও এমন দুই-চারটা লিখে ফেলতো।

বিজ্ঞাপন

পরের পর্ব>>

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর