Tuesday 19 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পলাশানন্দপাঠ ও তার লজিক লাবু সিরিজ


১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১২:৪৮

এই পাঠের একটা নাম দিয়েছি… পলাশানন্দপাঠ। দায়িত্ব নিয়ে বলছি- যথার্থই দিতে পেরেছি। আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে এক্ঝস্টেড থাকেন, খানিকটা পলাশ পড়ুন, দেখবেন ভালো লাগবে। কোনও দুঃখবোধে ডুবে আছেন, বের হতে চান, পলাশপাঠ আপনাকে বের করে আনবেই।

বইমেলায় পলাশের বই আসবেই। বাচ্চাদের জন্য কিনছি সে প্রায় কুড়ি বছর ধরে। বাচ্চাদের পড়ার আগে নিজেই পড়ি, আর খুক খুক করে হাসি। শুধু বই কেনো… আঙ্গুলের ছোঁয়াতেও পলাশকে পড়া যায়। ফেসবুকে ঢুকুন www.facebook.com/palashmahbub82 প্রোফাইল থেকে পলাশের লেখাগুলো পড়ুন। ছোট ছোট স্ট্যাটাস, কবিতাংশ কিংবা লেখাংশ পড়ে নিজেকে রিচার্জড করে নিতে পারেন।

বিজ্ঞাপন

আবারও দায়িত্ব নিয়ে বলছি, এই শর্ট স্প্যান অব অ্যাটেনশনের যুগে পলাশে আপনি ডুবে থাকতে পারবেন বেশ কিছুটা সময়। তবে এই যে আনন্দপাঠ বলছি, তা-ই কিন্তু একমাত্র নয়, পলাশপাঠ আপনাকে সম্মৃদ্ধও করবে। উদাহরণ দিতে চাই-না ঢুকুন এখানে https://www.facebook.com/palashmahbub82

তবে এতকিছু বলতে কিংবা পাঠককে ফেসবুকে টেনে নিতে নয়, পলাশের এবারের বই মেলায় আসা একটি বই নিয়ে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হওয়ায় এই লেখার অবতারণা। তাই উপক্রণমিকা না বাড়িয়ে ‘গুপ্তবাবুর গুপ্তধন’ এ কনসেন্ট্রেড করছি।

এটি লজিক লাবু সিরিজের চতূর্থ বই। চারনম্বর বইটি হাতে আসে দিন চারেক আগে। যখন হাতে এলো, ভাবলাম আরে বাহ! সিরিজের চতূর্থ বই! পড়তেই হবে। তবে তখনই পড়তে শুরু না করে সাইড র‌্যাকে রেখে দিলাম। কাজের চাপ আছে। পলাশে ডুবে গেলে ভেস্তে যাবে অনেক কিছু। সুতরাং থাক লজিক লাবু- থাক গুপ্তবাবু দিন কয়েক পড়ে। পরে পড়া যাবে খন।

এরপর সুযোগ পেয়ে যখন পড়তে শুরু করলাম. শুরুর পাতায় ‘আগ্রহী পোকা’ বেশ আগ্রহী করে তুললো। সেই সাথে পল্টন পর্যন্ত শিকড় চলে যাওয়ার প্রসঙ্গতো আছেই। তো এসব নিয়ে আগ্রহ মিটতে না মিটতেই ১১ নম্বর পৃষ্ঠায় আটকে গেলাম ‘আহাম্মকের মিউচুয়াল ফ্রেন্ড’এ। আর একটু পড়েই পৃষ্ঠা-১৩তে ‘সংবর্ধনার আবদার নিয়ে আসবেন না’ লেখা ব্যানারের প্রসঙ্গ।

বিজ্ঞাপন

বুঝতেই পারছেন, এই বইয়ের শেষ লাইনটিই তখন হয়ে উঠবে পাঠকের গন্তব্য। সুতরাং প্রথম ১৫ পৃষ্ঠা পর্যন্ত লজিক লাবুর চতূর্থ সিরিজে গুপ্তবাবুর গুপ্তধন নামকরণের সামান্য ছোঁয়া না পেয়েও পাঠ এগিয়ে যাবে। আর কুড়ি পাতায় পড়তে না পড়তেই লাফিং মাস্টার প্রসঙ্গে ডুবে গিয়ে গুপ্তবাবুর কথা ফের ভুলে যেতে হবে। গল্পে লাবুর দেখা মেলে ২১ পৃষ্ঠায় গিয়ে। সঙ্গে লেবুরও। সে নাকি স্কুলের কুকুর লাল্লুর কেয়ারটেকার। যাহ! চরিত্র বানাতেও পারেন পলাশ মাহবুব! ২৩ পৃষ্ঠায় গিয়ে ১১ পৃষ্ঠায় পড়ে আসা বিষয়টি আরেকবার মনে করালো একটি বাক্য- এত দেখছি আহাম্মকের মিউচুয়াল ফ্রেন্ড না, রীতিমতো ক্লোজ ফ্রেন্ড। এই যে, কাহিনী এগিয়ে নিয়ে হঠাৎ পিছনের কাহিনীকে, কথাকে কিংবা বক্তব্যকে আবারও সামনে নিয়ে আসা, কিংবা মনে করিয়ে দেওয়া সেটাই একটি সহজ ও সুন্দর লেখার স্বার্থকতা।

একটু থিওরি কপচিয়ে রাখি। যোগাযোগের ছাত্র হিসেবে ফোর্থ-আর থিওরিটি পড়তে হয়েছিলো। পড়াতেন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সে থিওরিতে বলা হচ্ছিলো- মানুষকে তিনটি আর’ অবশ্যই জানতে হয়। রিডিং, রাইটিং ও অ্যারিথমেটিক। তবে যে যদি ফোর্থ আর টি না জানে তাহলে এই তিনটি আর জানার কোনও মানেই হয় না। এই চতূর্থ আর টি হচ্ছে রিলেট করা। অর্থাৎ আপনি যদি আপনার জ্ঞানকে, জানা বিষয়গুলোকে যে কোনও প্রসঙ্গে সঠিকভাবে রিলেট করতে না পারেন, তো সে জ্ঞানের কোনও মানে হয় না। আর রিলেট যখন করতে পারবেন তো সেটি হবে সবচেয়ে সফল যোগাযোগ।

লেখক, উপন্যাসিক, কবি, সাহিত্যিকরা যা কিছু লেখেন, তার সবটাই মূলত পাঠকের সাথে একটি সফল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য। আমি বলতে চাই- ফোর্থ আর’র দারুণ প্রয়োগ সবসময়ই পাওয়া যায় পলাশ মাহবুবের লেখায়। আর লজিক লাবু সিরিজে তার অনন্য প্রয়োগ পেয়েছি। সমাজ থেকে পাওয়া, জীবন থেকে পাওয়া নানা শিক্ষার, নানা উপকরণের সঠিক সংযোগ এই সিরিজের সব কটি বইয়ে রয়েছে। গুপ্তবাবুর গুপ্তধনও তার ব্যতিক্রম নয়। একটি স্কুল, তার কয়েকজন শিক্ষক আর কতিপয় শিক্ষার্থীকে গল্পের চরিত্রে টেনে এনে একটি আনন্দময় শিক্ষায়তনকে তুলে ধরেছেন পলাশ তার লজিক লাবু সিরিজে। এই বইয়ে যার ইতি হয়েছে গুপ্তধন প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তির ইতিবৃত্ত দিয়ে।

যাক কাহিনীর বিত্তান্ত পাঠক বই পড়েই জানবেন। আমি স্রেফ পলাশানন্দপাঠ কথাটির যথার্থতাই তুলে ধরতে চাই, যা এই বইয়েও দারুণভাবে বর্তমান।

২৬তম পৃষ্ঠায় হাসির ধরন পড়ে আপনিও হাসবেন। লুতু হাসি, পুতু হাসি… হা হা হা। তখনও কিন্তু গুপ্তবাবুর প্রসঙ্গ নেই বইয়ে। গুপ্তধনতো দূরের কথা। আর পাতায় পাতায় এমন প্রসঙ্গ আর ফোর্থ-আর এর ছড়াছড়ি কতই আর লেখা যায়। কিন্তু এসএমস-আর ট্রাঙ্ককল শব্দদুটোর একসঙ্গে ব্যবহার যে এযুগে মিলবে তা ভাবনায় ছিলো না। এরপরপরই সেলি সামাদ, ছোটদের হাসির বিশ্বকোষ প্রসঙ্গের ঘোর কাটতে না কাটতেই মাঘ মাসে জৈষ্ঠ্যের কাঁঠাল এসে আপনাকে ঠিক আঁঠার মতোই আটকে রাখবে উপন্যাসে। কারণ কাঁঠালের পরেই রসগোল্লা প্রসঙ্গ। আর সেও নাকি যাবে নোটিশের সাথে!! এতকিছু হচ্ছে একটি হাস্যোচ্ছ্বল স্কুলের প্রত্যাশায়। সে নিয়ে কাহিনী গড়িয়ে হেড স্যারকে যখন হাসিবন্ধু পদক দেওয়া কথা আসে- তখন কিন্তু ‘ছিঁদহাসুনে (!!)’ পাঠকের জন্য হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। তবে এভাবে পৃষ্ঠা পৃষ্ঠা ধরে লিখতে গেলে হাসির খতিয়ানের কলেবর বাড়বে, আর পাঠক তার পড়ার কাজ এই লেখা থেকেই সেরে ফেলতে পারেন। সুতরাং থামছি। শুধুমাত্র বজলু ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন কিংবা গায়েবি ফেয়ারওয়েল, পুরোনো হাসিতে নতুন প্রলেপ, মেধাশূন্য কাউডাং, মিকচার হাসি, একান্ত চামচা-১ কিংবা ২, মুখের চওড়া হাসির প্রসঙ্গের আরও কিছু ক্লু দিয়ে গেলাম।

আর জানিয়ে রাখি ৫৫ পৃষ্ঠায় গুপ্তধন আর গুপ্তবাবু দুইয়েরই দেখা মেলে কাহিনীর টানটান ব্যাঞ্জনায়। ফলে সেখানে পাঠকমাত্রই নড়েচড়ে বসবে। তবে গুপ্তধনের খোঁজ কিভাবে কি হয়? তাতে কত্ত কাহিনী ঘটে তা পাঠক নিজেই জেনে নেবেন বইয়ের ৯৫তম পৃষ্ঠাটি পর্যন্ত পড়ে। শুধু বলে রাখি, এ নিয়ে কথা হচ্ছিলো পলাশ মাহবুবেরর সাথে। তিনি বেশ দৃঢ়তার সাথে দাবি করে একটি কথাই বললেন, বইটি কেউ পড়া শুরু করলে শেষ না করে পারবেন না। আরও জানালেন, লজিক লাবুর সিরিজ শুরু হয় শুধুই লজিক লাবু দিয়ে, এরপর সিন্দুকের সন্ধানে ছিলো সিরিজের দ্বিতীয় বই আর বাবুদের বাজিমাত ছিলো তৃতীয় বই। এবার এলো গুপ্তবাবুর গুপ্তধন। এখানেই শেষ নয়, গুপ্তবাবুর গুপ্তধনের পর আরও নতুন কিছু নিয়ে হাজির হবেন পলাশ মাহবুব।

একটি স্কুল, যার নাম কিসমতপুর সরকারি হাইস্কুল, সেখানে কত কী ঘটনাই না ঘটে বা ঘটতে পারে তা লেখকের কল্পনায় পাঠকের সামনে আসছে ঠিকেই। কিন্তু এই কাহিনী যে অনেকের স্কুলের ছোটখাটো কাহিনীর সাথে মিলে যায়, কিংবা এর চরিত্রগুলোরও যে অনেকের স্কুলের শিক্ষক কিংবা ছাত্রের চরিত্রের সাথে দারুণ মিল, তা পাঠক নিজেই পড়বেন ও মিলিয়ে নেবেন সেটাই কাম্য। বইমেলায় পাঞ্জেরীর প্যাভিলিয়নে বইটি পাওয়া যাচ্ছে।

ও আচ্ছা, লজিক লাবু সিরিজ ছাড়াও মেলায় প্রকাশিত হয়েছে পলাশ মাহবুবের ‘ইচ্ছেবুড়ি’ সিরিজের নতুন বই ‘ইচ্ছেবুড়ির উপস্থিত বুদ্ধি’। প্রকাশিত হয়েছে ছড়ার বই ‘কুক্কুরু কু’ এবং অ্যাডভেঞ্চারের বই ‘চলতি পথে অ্যাডভেঞ্চার’। এগুলোর কনটেন্টেও পলাশানন্দপাঠ ঘটবে যে কোনও পাঠকের। বইমেলায় পাঞ্জেরীর ১৯ নম্বর প্যাভিলিয়নে গেলে পাওয়া যাবে নতুন পুরনো মিলিয়ে পলাশ মাহবুবের ১৮টি বই। এছাড়া কথাপ্রকাশ, অন্বেষা প্রকাশন, অন্যপ্রকাশ, তাম্রলিপি, অনিন্দ্য প্রকাশনের প্যাভিলয়নে পলাশ মাহবুবের বেশকিছু বই পাওয়া যাবে। যান, খুঁজে নিন পলাশানন্দপাঠ।

সারবাংলা/এমএম

টপ নিউজ পলাশ মাহবুব পলাশানন্দপাঠ প্রাণের মেলা বইমেলা লজিক লাবু

বিজ্ঞাপন

ইসলামী দলগুলোর জোট কোন পথে
১৯ নভেম্বর ২০২৪ ২১:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর