Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যে প্রদর্শনী ভিন্ন বার্তা দেয়


১২ এপ্রিল ২০২০ ১৮:৩১

ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ, ভয়, সংকোচ, ঘৃণা— শব্দগুলো যখন একই প্রেক্ষাপটে মিশে থাকে, তখন এর সত্ত্বাগুলোকে আলাদা করে দাঁড় করানো কিছুটা হলেও কঠিন হয়ে পরে। ঠিক যেমন রাজনীতি, স্বার্থ, ধর্ম, পৃষ্ঠপোষকতা যখন একই সুতোয় জড়িয়ে থাকে!

জলভিত্তিক সেরিগ্রাফির মাধ্যমে করা, ৮৩” X৮৬” X30″ আয়তনের ‘আমাদের গন্তব্য কোথায়’ (Where is our destination) শীর্ষক কাজটির মাধ্যমে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপচিত্র বিভাগের শিক্ষক, শিল্পী জয়ন্ত নস্কর একটি সামাজিক বার্তা সবার কাছে পৌঁছানোর প্রয়াস রেখেছেন।

বিজ্ঞাপন

শিল্পীর শিল্প সৃষ্টির মাধ্যমে, দর্শক এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন এবং কিছু প্রশ্ন উত্তর তৈরি— আর এখানেই শিল্পীর স্বার্থকতা। গত ৩ মার্চ এই কাজটি কলকাতার বিড়লা একাডেমি অফ আর্ট এন্ড কালচার গ্যালারীর একটি গ্রুপের প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয়। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে দেখা যায় শুধুমাত্র নিজেদের আখের গোছাবে বলেই রাজনীতিতে আসা (গুটিকয়েক বাদে)। কিন্তু অতীতে রাজনীতি কিংবা রাজনীতিবিদ তথা জ্ঞানী মানুষের সঙ্গে অন্যদের সান্নিধ্য হতো পরোপকার তথা সমাজের জনহিতকর কার্যাবলী সম্পন্ন করার জন্য। সেই রাজনীতিবিদদের সঙ্গেও সাধারণ মানুষ যুক্ত হতো নিঃস্বার্থভাবে।

তেমনি প্রায় ২৩ জন ব্যক্তির মুখাবয়ব ব্যবহার করেছেন শিল্পী তার কাজে। তারা হলেন- এন্টোনিও গ্রামসি, চার্লস ডি গল, চে গুয়েভারা, এনভার হোক্সা, ফিদেল কাস্ত্রো, মহাত্মা গান্ধী, গুস্তভ হুসাক, হো চি মিন, জন স্টাইনবেক, জোসিপ ব্রজ টিটো, হোসে সারামাগো, কিম ইল-সাং, মাও সে তুং, মার্টিন লুথার কিং, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক, নেলসন ম্যান্ডেলা, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, নিকোলি সিউয়েস্কু, পাবলো নেরুদা; ভ্লাদিমির লেনিন এবং ডব্লিউ. ই. বি. ডু বইস।

বিজ্ঞাপন

সারা পৃথিবীর যত ধর্ম আছে সবগুলো ধর্মের মোটামুটি কিছু সংখ্যক প্রতিকায়ন করা হয়েছে প্রদর্শনীতে। ‘কোন ধর্ম বা ধর্মের মানুষকে অশ্রদ্ধা করা উচিত না’ বিষয়টি তুলে ধরতে শিল্পী ব্যবহার করেন আফ্রিকা-আমেরিকান এবং আফ্রিকান উৎসযুক্ত ধর্ম হিসেবে পরিচিত আফ্রিকান ডায়াস্পোরা ধর্ম, নিরীশ্বরবাদ, বাহাই, ইসলাম ধর্ম, হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, খ্রিস্টধর্ম, কনফিউশনিজম, ইহুদিধর্ম, জৈনধর্ম, ইহুদি ধর্মমত, রাস্তাফারিয়ানিজম, শিন্তো, শিখ, আফ্রিকার ঐতিহ্যগত ধর্ম, জরইস্ত্রিয়ানিজিম।

অন্যায়ের প্রতিবাদ স্বরূপ একতাবদ্ধ হয়ে শেকল ভাঙা আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে পুরো কাজের টাইলসের প্রান্তে। আবার একইভাবে শ্রদ্ধা এবং সামাজিকতার জায়গা থেকে কালো রং এর ইউরিন টাব’কে শিল্পী দেয়ালের বাইরে করতে পারছেন না, যেহেতু এর অবস্থান এবং ব্যবহারগত একটি দিক রয়েছে। আবার ভয়ের জায়গা থেকে ভিতরেও করতে পারছেন না। যে ভয় আমাদের সবকিছুতে,স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ থেকে শুরু করে পথ চলার প্রতিটি পর্যায়ে। তারই প্রতিকায়ন হিসেবে ইউরিন টাব’ এর স্থানে দেয়া হয়েছে বর্ণবাদী আগ্রাসন, লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ হারানো, পরিকল্পনামাফিক ইহুদি হত্যা, অর্থাৎ ইতিহাসের হলোকস্ট অধ্যায়ের অন্য নাম -হিটলারের মুখাবয়বকে। এ যেন শোকের কঠিন সময়কে মানিয়ে নিয়েও আলোকিত সময়ের বিনির্মাণের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।

আমাদের গন্তব্য কোথায়! আমরা কোথায় যাচ্ছি! আমাদের পথ কারো প্ররোচনায় তৈরি হচ্ছে না তো! নাকি নিজেরাই নিজেদের সময় আর পথ তৈরি করে নিতে পারছি। শেকল-বেড়িতে আটকা পড়ছে নাতো আমাদের স্বাধীন মতামত প্রকাশের অধিকার? আমরা কী নিজেরা ঐক্যবদ্ধ আছি সেই সময়গুলোর জন্য, যেসময় সবাইকে হাতে হাত মিলিয়ে দেশের জন্য, পরোপকারের জন্য কাজ করতে হবে? নাকি নিজের স্বার্থ হাসিলের খেলায় ডুবে আছি এখনো? যদি তাই হয়, তাহলে কী আমরা অস্বীকার করছি না সেই সব মানুষদের, যারা নিজেদের সবকিছু বিসর্জন দিয়ে আজকের আমাদের এই সময়কে আমাদের জন্য তৈরি করে দিয়ে গেছেন?

লেখক- শিক্ষার্থী, শিল্প ইতিহাস বিভাগ, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা।

বিজ্ঞাপন

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আজ
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫০

আরো

সম্পর্কিত খবর