Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লাল কাপের ভাঙা হাতল আর স্বপ্নভূমের গল্প


১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৮:১৯

“আমি দু চোখের গহ্বরে শূন্যতা দেখি শুধু
রাত ঘুমে আমি কোন স্বপ্ন দেখি না
তাই স্বপ্ন দেখবো বলে আমি দু চোখ পেতেছি”

স্বপ্ন দেখার জন্য চোখ যে  পাতা যায়, এই বিষয়টা কখনও ভাবিনি। তবে স্বপ্নকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে স্বপ্নের রাজ্যে বিচরণের স্বভাবটা ছোটবেলা থেকেই। অনেক ইচ্ছে ছিল স্বপ্নের ভেতরে, স্বপ্নের গভীরে, স্বপ্নের উৎস বা নাভিমূলে যাব । ইচ্ছেটা কখন, কবে, কিভাবে মুদে গেছে, খেয়াল করিনি। অজান্তেই স্বপ্নচর আমি স্বপ্নহীন হয়ে গেছি । গেল ক’মাসের কিছু ঘটনা, বিশেষ করে কয়েকদিন আগের একটা ঘটনা আমাকে আবার স্বপ্নভূমে নিয়ে যায়। পড়াশোনায় নাক ডুবাচ্ছি আবার সেদিন থেকেই। শিখতে চেয়েছি—  স্বপ্ন কেন দেখি, কখন দেখি, কিভাবে দেখি, কতরকমের স্বপন দেখি, কোন বয়েস থেকে কোন বয়েস অব্দি দেখা যায়, ভিন্ন ভিন্ন বয়সে স্বপ্নের রঙ কেমন, ইত্যাদি।

বিজ্ঞাপন

স্বপ্ন নিয়ে পৌরাণিক  মতবাদ থেকে শুরু করে গ্রীক সভ্যতা, চৈনিক মতবাদসহ বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য  আর গল্প আমার পড়া হয়েছে।

চৈনিক  ইতিহাসে স্বপ্নকে পেয়েছি চমৎকার ধ্যান ধারণায়। ওখানে বলা হয়েছে , মানুষের আত্মার গুরুত্বপূর্ণ দুটি দিক। যার মধ্যে একটি আত্মা স্বপ্ন দেখার সময় শরীর থেকে মুক্তি পায় এবং অন্য আত্মাটি  দেহে অবস্থান করে।

আবার ৯০০ এবং ৫০০ খ্রিষ্টপূর্বের দিকে লিখিত ভারতীয় পাঠ উপনিষদে স্বপ্নের দুটি অর্থের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। প্রথমটি হল, স্বপ্ন হচ্ছে মনের ভাবনার একটা দৃশ্যরূপ প্রকাশ, আর দ্বিতীয়টি, একদমই চৈনিক ইতিহাসের মতো।  ঘুমের সময় আত্মা দেহ ত্যাগ করে এবং জাগ্রত হওয়ার আগ পর্যন্ত ঐটি দ্বারা দেহ পরিচালিত হয়। দ্বিতীয় তত্ত্বটি আমার দু’চোখের ঘুমকে যেন উড়িয়ে নিয়ে গেল। আত্মা দেহ ত্যাগ করে! তাহলে কি যখন স্বপ্ন দেখি, তখন আমরা মারা যাই! অনেকে তো প্রায় প্রতি রাতেই স্বপ্ন দেখেন, তার মানে কি তার প্রতিটা রাত মৃত্যু আর পুনর্জন্মের খেলা চলে! বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছিল, সেই খেলা। আচ্ছা এটা কেমন পুনর্জন্ম! পুনর্জন্ম হলে তো শিশু থেকে আবার চলা শুরু হবার কথা! কিচ্ছু মাথায় কাজ করছিল না, সবচেয়ে ভৌতিক লাগছিল শেষের কয়টা শব্দ, “জাগ্রত হওয়ার আগ পর্যন্ত ঐটি দ্বারা দেহ পরিচালিত হয়”। ইশ! এমন যদি হত, আমার পাশে কেউ ঘুমিয়েছেন, তিনি স্বপ্ন দেখছেন, তার দেহ থেকে আত্মাটা বেরিয়ে যাচ্ছে, আত্মাবিহীন দেহটা আবার তার উপর দিয়ে টাইম স্পেসের মত ঘুরছে আর নিয়ন্ত্রণ  করছে,  পুরো  দৃশ্যটা যদি দেখতে পেতাম! সারা দুনিয়ায় এত এত ফিল্ম হচ্ছে, এমন একটা ফিল্ম কেন বানানো হচ্ছে না? হয়ত হবে।

বিজ্ঞাপন

ক’দিন আগে একটা মাত্র আড়াই মিনিট দৈর্ঘ্যের সশব্দ অথচ নির্বাক মুভি দেখলাম। নাম, “দ্য ব্লাক হোল”। মুভিটিতে শব্দ আছে, কিন্তু কোন ডায়ালগ নেই, একটিই মাত্র চরিত্র। মুভিটিতে-  একজন অফিস কর্মী, যার ঘুম হত না, তিনি অফিসেই কাটাতেন দিন -রাত্রি এবং রাতের বেলা তাঁকে বাইরে থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে রাখা হত। এক গভীর  রাতে তিনি অফিসের একটা ফটো কপিয়ার মেশিনে একটা যেনতেন কাগজ ফটোকপি করতে চাইলেন। স্টার্ট বাটনে টিপ দিলেন, মেশিন স্টার্ট হচ্ছে না, বার কয়েক আরও টিপলেন, মেশিন চালু হচ্ছে না, অবশেষে যেই না মেশিনে পা দিয়ে একটা লাথি মারলেন, মেশিন চালু হয়ে গেল। বের হয়ে এলো এক তা সাদা কাগজের  মাঝখানে গাঢ় কালো এক বৃত্ত। তিনি বিস্মিত! ফটোকপিয়ার মেশিনে তো তিনি তো কোন  কাগজই দেননি , তাহলে এলো কোত্থেকে! প্রিন্টেড কাগজটা  অন্য একটা মেশিনের উপরে রেখেই তিনি এক গ্লাস জল খেলেন, খেয়েই গ্লাসটা যেই না রাখলেন, গ্লাসটা কালো বৃত্ত গলে ভিতরে চলে গেল। অবাক ব্যাপার! তিনি গ্লাসটা খুঁজতে যেই বৃত্তের উপর হাত রাখলেন, অমনি হাতটাও বৃত্ত গলে ভিতরে ঢুকে গেল এবং গ্লাসটা হাতে বেরিয়ে এলো। তবে কি এটা ভৌতিক! অফিসে একটা কাভার্ড ছিল, যার ভেতরে কিছু খাবার রাখা থাকে।তিনি  সেই কাভার্ডে কাগজটি  ঝুলিয়ে হাত ঢুকিয়ে  দিলেন, হাতে চলে এলো একটা চকোলেট। খেতে খেতে ভাবলেন, তাহলে এটা দিয়ে তো দরজাটাও খোলা যাবে, হলোও তাই, ব্ল্যাক সার্কেলটা দরজায় ঝুলিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে উলটো দিক থেকে দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন। বেরিয়েই অফিসের লকার দেখে তাকে লোভে পেয়ে বসলো। সেই ব্ল্যাক সার্কেলে হাত গলিয়ে একে একে বান্ডেল বান্ডেল টাকা বের করে আনলেন। আরও আছে কিনা দেখতে নিজের শরীরটাই গলিয়ে দিলেন লকারের ভেতরে। মুভিটা যতক্ষণ দেখছিলাম আমি আমি স্বপ্নের মধ্যেই হাঁটছিলাম, মনে হচ্ছিল মুভির মানুষটা আমিই। স্বপ্নটা তখনই ভাঙলো, যখন দেখলাম, লকারে আরও টাকা আছে কিনা খুঁজতে তিনি উঁকি দিতে দিতে নিজের শরীরটা লকারের ভেতর গলিয়ে দিলেন এবং বাইরে থেকে সেই ঝুলন্ত কাগজটা মেঝেতে পড়ে গেল এবং তিনি লকারের ভেতর আটকে গেলেন। একটা মুভি আমাকে এভাবেই স্বপ্ন আর স্বপ্ন ভাঙার দোলাচলে রাখলো সময়ের হিসেবে মাত্র আড়াই মিনিট,  কিন্তু স্বপ্ন ভাঙার পরে মনে হলো অনেক দিন ধরে স্বপ্নে ছিলাম।

এবার আমার স্বপ্ন দেখা নিয়ে ক’টা কথা বলি। যখনকার কথা বলছি, তখন আমি ঢাকায় থাকি, মা থাকেন গ্রামে। ভূতে আমার বড্ড ভয়, এটা আজো আছে। একা একা ঘুমাতাম। বেশ ক’রাত ধরে প্রায় প্রতিরাতেই স্বপ্ন দেখতাম, ভৌতিক যত স্বপ্ন, ভয়ে কুঁকড়ে থাকতাম, স্বপ্ন ভাঙার পরে রাতকে মনে হতো দ্রৌপদীর শাড়ির মত, রাত যেন আর শেষই হত না, এদিকে বাসায় কাউকে বলতেও পারতাম না লজ্জায়, ভয়ের চোটে মাঝ রাত অব্দি উচ্চ শব্দে টেলিভিশন দেখতাম, দরজা খুলে ঘুমানোরও সাহস পেতাম না, অনিদ্রায় দিনে দিনে অসুস্থ হতে থাকলাম। একদিন মা’কে ফোনে সবিস্তারে বললাম। মা হেসে আমাকে ছোট্ট একটা উপদেশ দিলেন, বলা চলে দাওয়াই।

“প্রতি রাতে ঘুমানোর সময় একটা ছোট্ট কাগজের টুকরায় ‘মা’ লিখে কাগজটা বালিশের কভারের ভিতরে রেখে ঘুমিয়ে যাবি, দেখিস, আর স্বপ্ন দেখবি না। অবিশ্বাস্য সত্য যে, যেদিন থেকে এই কাজ শুরু করলাম, ঠিক সেই রাত থেকেই আমার স্বপ্ন দেখা বন্ধ। গভীর ঘুমের পর  আলোকিত সকাল দেখি, যেন ধন্বতরী দাওয়াই। কিছুদিন পরে মা গ্রাম থেকে এলেন, আমার বিছানা সাফাই করবেন বলে যেই না বালিশের কভার খুললেন, অমনি শিউলি ফুলের মত কতগুলি টুকরো কাগজ ঝুরঝুর করে ঝরে পড়লো, যার প্রতিটিতে  ’ একটি মাত্র শব্দ লেখা ‘মা’।

স্বপ্ন নিয়ে উপনিষদের একটি অংশ— এখানে স্বপ্নের তিনটি অবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম অবস্থা হচ্ছে,  আত্মা তার জীবদ্দশায় অভিজ্ঞতা লাভ করে। অন্য দুইটি অবস্থা হচ্ছে জাগ্রত অবস্থা এবং ঘুমন্ত অবস্থা। ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্ন না হয় বুঝলাম, তাই বলে জেগে স্বপ্ন! তবে কি আমরা জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা কিংবা দিবা স্বপ্নকে যে বিদ্রূপ অর্থে ব্যাবহার করি, সেটাও মূল স্বপ্নের ভেতরের অংশই!

দিবাস্বপ্নকে আমরা   অলসতা, অ-উৎপাদনশীল চিত্তাকর্ষক হিসাবে মনে করি, তবে এটিকে  এখন সাধারণভাবে হেলাফেলা  করা হয় না বরং  স্বীকার করা হয় যে ডেড্রিমিংও কিছু কিছু প্রসঙ্গে গঠনমূলক হতে পারে। যেমন সৃষ্টিশীল লেখক, ঔপন্যাসিক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতারা দিবাস্বপ্নের মাধ্যমে অনেক সৃজনশীল বা শৈল্পিক কাজ করেছেন। এরকম ডেড্রিমিং অভ্যাস আমারও আছে বৈকি, বলবো অন্য কোনদিন।

স্বপ্নের আরেকটা রূপ হচ্ছে ‘হেলুসিনেশন’।  দৃঢ় অর্থে হেলুসিনেশন হচ্ছে সচেতন এবং জাগ্রত অবস্থার মাঝামাঝি অনুভূতি। যার মধ্যে  বহিরাগত উদ্দীপনার অনুপস্থিতি এবং বাস্তব ধারণা সংক্রান্ত গুণাবলীর উপস্থিতি রয়েছে। একটু বলি-

মিস্টার রয় যখন কর্মক্ষম ছিলেন, অফিসে সবাই বড় বাবু নামেই ডাকতো। বড় বাবুর জীবনটা অনেকগুলি চড়াই-উতরাই এর মধ্যে কেটেছে। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম না হলেও, জন্মের পর সোনায় মোড়ানো শৈশব আর সুললিত যৌবন কেটেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝাকে ঝাণ্ডা  বানিয়ে সততা- কর্ম নিষ্ঠাকে পাথেয় করে জীবনের পথ তাঁর। আজ তিনি ৯২ এ। ৭ বছর ধরে পা ভেঙে বিছানায়। যত্ন-আত্তির দিকে তিনি তার সততার ফল  পাচ্ছেন খুব। বড় বাবুর চোখের দৃষ্টিটা আগে থেকেই যেন কেমন, ঘোর লাগা চোখ। বিছানায় শুয়ে থাকলেও তাঁর শিয়রের পাশে একটা কলিং বেলের রিমোট এঁটে  দিয়েছে ছেলেরা, যেন বাবার কিছু দরকার পড়লে শুধু একটা টিপ দেয়। সাথে সাথে এক ছেলে হাজির, সেটা দিনে রাতে যখনই হোক। পাশে অবশ্য তাঁর স্ত্রীও ঘুমান। বড় বাবুর ঘরে তাঁর প্রয়াত মা-বাবার ছবি বাঁধিয়ে ঝুলানো অনেক আগে থেকেই। অফিসে যাবার সময় প্রণাম করে বের হতেন। কিন্তু এখন! একদিন মাঝ রাতে বেল বাজালেন তিনি। ছেলে হাজির, বাবার দরকার তলব করতে। সেদিনই ঘটলো ঘটনাটা। আলো জ্বালিয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বাবা- মায়ের ছবির দিকে ঘোর লাগা নিদ্রাহীন চোখে তাকিয়ে বললেন- “স্বপ্ন “দেখছিলাম। মা- বাবার সাথে কথা বলছিলাম, উনারা জিজ্ঞেস করছেন, কবে যাব?  চলে আয়।” আবার বলেন, জানালার পর্দার ইঞ্চি খানেক ফাঁকা দিয়ে নাকি এই মাত্র মা-বাবা বেরিয়ে গেলেন! ঘুমহীন চোখে স্বপ্নের বিবরণের নির্লিপ্ত অথচ অস্ফুট স্বরে স্পষ্ট প্রকাশ।

ফ্রয়েডের মতে এটা নাকি হেলুসিনেশন। এই সময়ে বেশির ভাগ প্রবীণগণ জীবন- মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে  থেকে যাপিত জীবনের হিসেব- নিকেশ করেন, সারাজীবন কি করেছেন সন্তান বা পরিবারের জন্য, কি পেয়েছেন তাদের কাছ থেকে, যদি প্রাপ্তির পরিমাণ খুব কম হয়, তবে তীব্র অভিমান জমে, অভিমানের সাথে নিজের শারীরিক অক্ষমতা মিশে গেলে ব্রেইনে  প্রতিনিয়ত ছোট- খাট স্ট্রোক হতে থাকে প্রায় প্রতিদিন। হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জড হবার দিনেও ডাক্তার একই কথা শুনিয়ে দিয়েছেন  বড় বাবুর ছেলেদেরকে। তবে কি বড় বাবুর হেলুসিনেশন পিরিয়ড চলছে? প্রাপ্তির পরিমাণ কম নয়তো? এসব ভেবে ভেবে প্রায়ই আমি আকুল হই!  কারণ ঘটনাটা যেন- আমার বাবারই, বাবাও ৯২ এ। তবে  কি হেলুসিনেশনও একধরনের স্বপ্ন!

এবার আসি দুঃস্বপ্নের কথায়। দুঃস্বপ্ন একটি অপ্রীতিকর স্বপ্ন, যা মনে একটি শক্তিশালী নেতিবাচক মানসিক প্রতিক্রিয়া হতে জন্ম দিতে পারে, আবার একটা অবচেতন মনের নিষ্ফলা প্রকাশও হতে পারে। । সাধারণত ভয় অথবা হতাশা, উদ্বেগ, দুঃখ থেকেও মানুষ দুঃস্বপ্ন দেখতে পারে। স্বপ্নে বিপদ, অস্বস্তি, মানসিক বা শারীরিক অসুস্থতার উপস্থিতি থাকতে পারে।

এটি মূলত ভালো ঘুমের বিপরীত হিসাবে পরিচিত। এটি এক ধরনের প্যারাসোমনিয়া ডিসঅর্ডার যা প্রধানত শিশুদের প্রভাবিত করে এর কারণে তারা ভয় পায়। এমন একটা স্বপ্নের গল্প শুনেই এই লেখার অবতারণা  আমার।

গল্পটা শোনার পর থেকেই মনে প্রশ্ন জাগছিল, স্বপ্ন নিয়ে নানা কিছু। স্বাভাবিক হিসেবে শিশু ভূমিষ্ঠ  হবার পর থেকেই ঘুমে স্বপ্ন দেখে। আমরা প্রায়শই দেখি ঘুমের মধ্যে শিশু হঠাৎ চিৎকার দিয়ে ওঠে কিংবা টোল পড়া গালে হাসে, তার মানে শিশুটি তখন স্বপ্ন দেখছে। স্বপ্ন মনে না রাখা বা মনে রেখে প্রকাশের কোন বয়স ভেদ না থাকলেও চমৎকার এক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। যেমন-

মূলত আমরা ঘুমের REM  বা Rapid Eye Movement স্টেজে স্বপ্ন দেখি। এই পর্যায়ে আমাদের অক্ষিগোলক শুধু নড়াচড়া করে, শরীরের বাকি অংশ স্থির থাকে। শরীরের বাকি অংশ স্থির থাকে বলেই আমরা যখন স্বপ্ন দেখি তখন আমাদের শরীর রিঅ্যাক্ট করে না। এমনটা না হলে ঘুমের মধ্যেই হয়ত আমরা বিছানা থেকে ঝাঁপ মারতাম অথবা ছুটে চলে যেতে চাইতাম সূর্যের দিকে। তবে আমরা যে সবসময় REM স্টেজেই স্বপ্ন দেখি তা নয়। REM স্টেজের মনে রাখার ক্ষমতা কম থাকে তাই আমরা এই সময়ে দেখা স্বপ্ন ভুলে যাই। কিন্তু তবে অন্য অংশে দেখা স্বপ্নও কেন মনে থাকে না? মানুষের মাথা কম্পিউটারের মতোই কাজ করে। তা নিজেই বেছে নেয় কোন তথ্য মনে রাখতে হবে আর কোন তথ্য ডিলিট করে দিলে চলবে। স্বপ্নের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়। তবে এই মনে রাখা এবং ডিলিট করে দেওয়ার বিষয়টা নির্ভর করে আলফা ওয়েভের ওপর। যারা স্বপ্ন কম মনে রাখতে পারে তাদের ওয়েভগুলো বাকিদের তুলনায় উঁচু উঁচু হয়। যারা বেশিক্ষণ পর্যন্ত মনে রাখতে পারে তাদের ওয়েভ প্রসেসিং আরও গভীর হয়। এবং এই গভীর প্রসেসিংয়ের ফলে অনেক সময় ঘুম ভেঙে যায়। আর এই ঘুম ভেঙে যাওয়ার ফলে স্বপ্ন স্টোর হয়ে যায় লং-টার্ম মেমরিতে। ফলে মানুষ পরের দিন সকালেও মনে রাখতে পারে স্বপ্ন।

এই লেখার উৎসাহের পেছনের গল্পটা রাইমার। তার আট বছরের প্রথম সপ্তম রাতের স্বপ্নের গল্প, এবং জীবনের প্রথম প্রকাশ করা গল্পটাই আমাকে স্বপ্ন নিয়ে লিখতে উদ্বুদ্ধ করল। সেদিন সকালে রাইমার ফোন

-কাকু জানো কাল রাতে আমি স্বপ্ন দেখেছি!  আমার একটা লাল রঙ এর কাপ ছিল, আমার খুব প্রিয় এটা। আমি এতে চা খাই, দুধ খাই, সব কিছু খাই, একদিন কাপটার হাতলটা ভেঙে গেছিল, আমি অনেক কষ্টে সুপার গ্লু দিয়ে জোড়া লাগিয়েছি। রাতে স্বপ্নে দেখি সেই কাপটা ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে গেছে। আমি সুপার গ্লু দিয়ে টুকরাগুলো জোড়া দিতে কত চেষ্টা করেছি! কিছুতেই জোড়া লাগছে না! আমার খুব মন খারাপ হয়েছে, ঘুম ভেঙে গেছে। ইচ্ছে করছিল কাপটা দেখে আসি, কিন্তু সবাই যে ঘুমে। আমি তো লাইট জ্বালাতে পারবো না, যদি কারো ঘুম ভেঙে যায়! ভাবতে ভাবতে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়েছি। সকালে উঠেই দৌড়ে কাপটার কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি, কাপটা ভাঙেনি, যেমন ছিল তেমনি আছে। আমার যে কী ভাল লেগেছে কাকু! পরে বুঝলাম আমি স্বপ্ন দেখছিলাম।

রাইমার সবিস্তার আর নির্ভুল বর্ণনা শুনে  আমি স্তব্ধ! আসলে এত ছোট বাচ্চার স্বপ্নের বর্ণনা আমি আগে শুনিনি। তবে কি রাইমার মস্তিষ্কের ওয়েভ প্রসেসিং খুব গভীর? তখন থেকেই স্বপ্ন নিয়ে আমার এসব ভাবনা শুরু।

আমরা মানুষ, স্বপ্ন আমরা দেখবই। যেমন আমি উল্লেখ করেছি আমার  স্বপ্ন দেখার পরে ‘মা’ নামে ধন্বন্তরি দাওয়াই এর গল্প, ৯২ বছরের বড় বাবুর জীবন- মৃত্যুর মাঝে দাঁড়িয়ে জীবনে প্রাপ্তি – অপ্রাপ্তির হিসেব মেলানোর স্বাপ্নিক গল্প, বলেছি ছোট্ট মেয়ে রাইমার প্রিয় লাল কাপটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাবার গল্প। বেশির ভাগ স্বপ্নই কি তবে বিষাদের স্বপ্ন? তাই আজ সৃষ্টি কর্তাকে বলি-  এ স্বপ্ন দু’চোখ খুলে জেগে দেখা যায় যদি, নয়ন তারায় বসো তুমি। (সমাপ্ত)

স্বপ্ন

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর