মুজিববর্ষে শতবই পাঠ— শ্রাদ্ধবাসর
৭ অক্টোবর ২০২০ ১৫:৫২
বই: শ্রাদ্ধবাসর
লেখক: জাহিদ নেওয়াজ খান
সাতটি গল্পের একটি বই হলেও সাতটি বই-ই তো। প্রতিটি গল্পই আলাদা আলাদা, ফলে স্বাদও আলাদা। গল্পগুলোর নামেই বোঝা যায়, স্বাদের ভিন্নতা। শ্রাদ্ধবাসর, পিতা প্রয়াত, একটি রাজনৈতিক সংলাপ, ধূপছায়া, যেখানে সীমান্ত, ম্যানেজার এবং পাশের বাড়ির দীর্ঘশ্বাসেরা ছায়া ফেলে যায়। রাজনীতি শব্দটির উপস্থিতি থাকলেই যে গল্প রাজনৈতিক হবে এটা যেমন অসত্য আবার শব্দটি উপস্থিত না থাকলেও প্রবলভাবে গল্পগুলো রাজনৈতিক হতে পারে। শেষোক্ত শর্তটুকুকে পূর্ণতা দিয়েছে শ্রাদ্ধবাসর গল্পগ্রন্থটি।
জানবার জন্য লিখছি, উপন্যাসে যেমনটা হয়, নামকরণ নিয়ে। কবিতা কিংবা গল্পের বইয়ে এমনটা হতে পারে না? নামকরণের শিরোনামে কবিতা বা গল্প থাকতেই হবে? যদি ব্যাকরণ-প্রকরণের বিষয় হয় তো বলবার কিছুই নেই। এছাড়া লেখকেরা ঝুঁকি নিতে পারেন।
ম্যানেজার। দারুণ একটি গল্প। একেবারে বাস্তবতা নিগড়ে লেখা নিখুঁত গল্প ম্যানেজার। তবে ‘ম্যানেজার’ নামটি পছন্দ হয়নি বা যুতসই হয়নি বলে মনে হয়। কিংবা প্রাসঙ্গিকতা আরও জোরালোভাবে বোঝানোর জন্য ভিন্ন নাম ব্যবহার করা যেতো। অবশ্য এক অর্থে সঠিকও বটে, যে প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে গল্পটি এগিয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে নেতারাও তো ম্যানেজারই, নেতা নন, ব্যবস্থাপক। পুঁজির সৌন্দর্যে নেতা শব্দের প্রতিশব্দ হয়ত ম্যানেজারই হয়ে উঠবে কালক্রমে। পাঠক হিসেবে অনধিকার চর্চা বৈকি।
সদ্যস্বাধীন একটি দেশে একসময়ে সামরিক সরকার আসে। লোক দেখানো নানান কাজ করে, নতুন পুঁজিপতিও তৈরি করে। এই পুঁজিপতিরা নব্য, তাদের বংশকৌলীন্য নেই, যশ-খ্যাতিও নেই, কিন্তু অঢেল অর্থ আছে। আর আছে পয়সা কামানোর ধুরন্ধর সব বুদ্ধি, বিবেক-বর্জিত বুদ্ধি।
অঢেল অর্থ এবং বিবেকহীনতা নিয়ে তারা নামেন যশ-খ্যাতি-আভিজাত্য লুটতে। আর এভাবেই নীতির রাজা লালন না-করে, তারা রাজনীতিকে বানিয়ে ফেলে রাজার নীতি। কূপমণ্ডূকতা বটে।
কিন্তু এই দায় কে নেবে? গল্পকার এই প্রশ্নের উত্তর দেননি বটে, বুঝতেও কি অসুবিধা হয়? না, হয়না; রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদেরকেই এর দায় নিতে হবে। নীতির রাজা লালনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। নইলে পরিণতি কোনদিকে যাবে, এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
ম্যানেজার— ছোটগল্প হলেও ক্যানভাস বিশাল, বিস্তর, যেন সমগ্র বাংলাদেশ। আমাদের রাজনীতি এভাবেই পুঁজির কাছে পরাজিত নয় লুট হয়ে গেছে; দখল নয় ধর্ষণ হয়ে গেছে; বিক্রি নয় বিকৃত হয়ে গেছে।
গল্পটি আমার এবং আমাদের খুব চেনা, খুব জানা; এমনকি দেখাও। আমাদের রাজনীতির এক অবিশ্বাস্য সত্যতাকে এভাবে গল্পায়ন করায় গল্পকারকে কুর্নিশ জানাই।
শ্রাদ্ধবাসর— গল্পটি তুমুলভাবে আমাদের সময়েরই গল্প। অনেকটা চোখে দেখা, অনুভবে তো বটেই। ব্লগ, ব্লগার ও মৌলবাদীদের চাপাতি— এই হলো গল্প চিত্রায়নের প্রথম জমিন। গল্পকারের ইঙ্গিত স্পষ্ট এবং সোজাসাপটা প্রশ্ন— সকল সুযোগ উপেক্ষা করে, প্রলোভনকে প্রত্যাখ্যান করে দেশ-মাতৃভূমি আঁকড়ে থাকা ব্লগারটি যখন চাপাতির কোপে দেহদান করলেন, বিচারের বাণী কি নিভৃতে কাঁদবে? তদন্তের সূতা ঘুড়িতেই ঝুলবে?
আদর্শিক ছাত্ররাজনীতির একজন কর্মীর পর্যবেক্ষণে হতাশার কথাও আছে, যেমনটা লিখেছেন, “আমি তাদের মতো মেধাবী না হলেও বুঝতে পেরেছি আমাদের রাজনীতির আর তেমন ভবিষ্যৎ নেই। ভবিষ্যৎ একটা আছে যদি বামপন্থার সংজ্ঞাটাই বদল করা যায়। ক্লাসিক্যাল মার্কসিয় দর্শন থেকে যদি শুধু কল্যাণ দর্শনের রাজনীতি নিয়ে নতুন করে রণনীতি-রণকৌশল ঠিক করা যায় তাহলে আমাদের বড় বড় নেতাদেরকে সামনে রেখে কিছু একটা করা সম্ভব”। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে দেশে দেশে কম্যুনিজমে দীক্ষিত তরুণরা এভাবেই ভাবতে শুরু করেছিল, বাধ্যও হয়েছিল। আর আমাদের জাতীয় জীবনেও তখন আরও একটি ঘটনা ঘটেছিল, স্বৈরাচারের পতন। এই দুইয়ে মিলে নতুন স্বপ্ন না দেখতে পেয়ে যে কল্যাণ দর্শনের পথে এগুতে চেয়েছিল রাজনীতি ও নেতারা, শ্রাদ্ধবাসরে এটাও দেখিয়েছেন গল্পকার। তাহলে প্রশ্ন জাগে, নব্বইয়ের চেতনাবোধে ব্লগারের উপস্থিতিতি কিভাবে? নাকি নব্বইয়ের তরুণই আজকের ব্লগার?
ছাত্ররাজনীতি কিংবা মানবিক নীতিবোধের প্রেক্ষিতে অপরাজনীতি ও অসমপুঁজিকে যে কৌতুক করেও নাড়া দেওয়া যায়, এটির খুব নির্মম চিত্রায়ন করেছেন গল্পকার। তাইতো বলতে পেরেছেন, “রতন ভাইয়ের টাকা মানে কনট্রাক্টরদের কাছ থেকে পাওয়া চাঁদার টাকা, মানে জনগণের টাকা, মানে আমাদেরই টাকা, সুতরাং সেই টাকায় আমাদেরও অধিকার আছে”।
এ-যেনো চুরির কিংবা লুটপাটের সুষম-বণ্টনের কথাই বলছেন! ব্লগার ইশতিয়াকের প্রেমিকা মণিকার রুমমেট ঝুমা। গল্পের প্রয়োজনে ক্ষেত্র প্রস্তুতে আরও চরিত্র থাকলেও মূলত তিন জনকেই শেষ পর্যন্ত পাওয়া যাবে। আবার এই তিন জনকে শেষ পর্যন্ত দেখলেও মূলত গত এক দশকে মৌলবাদীর চাপাতিতে ছিন্নভিন্ন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলই প্রত্যক্ষণ হয়, দিব্যদৃষ্টিতে। শূন্য দশক কিংবা গত শতকের উড়ো চিঠিও কি একই ধারাবাহিকতায় নয়?
শ্রাদ্ধবাসর গল্পটিকে গল্প বানিয়ে তুলতে গল্পকার যেন কিছুটা গল্পই বলেছেন। এই আষাঢ় মাসে আষাঢ়ে গল্প বলছি না বটে, তবে অতখানি শরীর টেনে ক্ষতবিক্ষত না করলেও গল্পের ক্ষতিবৃদ্ধি হতো না। অশরীরী প্রেম বা প্লেটোনিক লাভের কথাও বলছি না বটে, তবে দুই রুমমেটের আলিঙ্গনের তীব্র উপস্থিতি কিসের প্রয়োজনে গল্পায়ন হয়েছে তা বুঝতে পারিনি। ধারণা করি, এই শরীরের তীব্র উপস্থিতি গল্পের মেরিট কিংবা গল্পটিকেই না প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে, হাসনাত আবদুল হাইয়ের গল্পের মতো।
পিতা প্রয়াত, অসাধারণ গল্প। গল্পকারের ভাবনার বুনন পাঠকের কল্পনাকেও হার মানায়। মনে হবে বাস্তবতা থেকে আহরিত, কিন্তু চারপাশে সত্যতা খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ নির্মমতা হলো— এমনটা হয়ত হয়েছে, হচ্ছে কিংবা ঘটবে। এরকম একটি দুর্দান্ত ডিটেকটিভ গল্প পিতা প্রয়াত। বিচারবহির্ভূত হত্যা কিংবা যেকোন হত্যাযজ্ঞ নিয়ে প্রাপ্ত তথ্য কিংবা প্রচলিত গল্পগুলোকে ছাড়িয়ে এক নতুন গল্প হাজির করেছেন গল্পকার, এটা অনন্য। অনুসন্ধানী সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সামনে হাট করে খোলা নতুন দিগন্তের একটি দুয়ার, পিতা প্রয়াত।
ছোট একটা প্রশ্ন জাগছে, প্রায় সকল কিছুকে গ্রহণীয় করে তুলবার জন্য ব্যাখ্যা বা যুক্তি দেবার চেষ্টা কেন?একটি রাজনৈতিক সংলাপ, আমাদের ক্ষয়ে যাওয়া রাজনীতির চিত্রপট। ষাটের যে অগ্নিঝরা দিন পেরিয়ে উত্তাল একাত্তরের সাগরসমান রক্তের বদলে যে বাংলাদেশ পেয়েছিলাম, সেই সাম্যের বাংলাদেশের ক্রমশ পেছনে ফেরা, সেই ন্যায়বোধের বাংলাদেশে ক্রমশ দানবীয় থাবায় রক্তাক্ত হওয়ার চালচিত্র এই গল্পটি। দৃশ্যত সবকিছুকে অবলোকন করা যায়না, কিন্তু অন্তর্দৃষ্টিতে দেখলে পরে উপলব্ধিতে আসে, শহিদুজ্জামানদের পরাজয় মানে রাজনীতির পরাজয়, শহীদুজ্জামানদের সংসদে যাবার টিকিট না পাওয়া মানে জনগণের আরেকদফা পিছুহটা, এভাবে পুরো সমাজ প্রাণহীন সমাজদেহে পরিণত হবার নিপুণ বয়ানে নির্মিত হয়েছে একটি রাজনৈতিক সংলাপ।
প্রসঙ্গত স্মরণে আসছে, এদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবার প্রবল সম্ভাবনা সত্ত্বেও একটি রাজনৈতিক দলের পরাজয়ে বাংলাদেশের পরাজিত হবার কথা, পিছিয়ে যাবার কথা। যার দরুন দলটিকে মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণ করতে হয়েছিল। আর এই নির্মম বাস্তবতায় এভাবেই আজকে শহীদুজ্জামানরা টাকার কাছে, নেতারূপী স্যারদের কাছে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে ঘরে ফিরে যায়। তবুও আরেক দল তরুণ- যুবক স্বপ্ন দেখে, এটুকুই আমাদের সাহস যোগায়। এভাবেই একটি রাজনৈতিক সংলাপ হয়ে উঠেছে আমার গল্প, আমাদের গল্প।
ধূপছায়া। এমনটা ব্যাপকভাবে ঘটেছিল একাত্তরে এবং সরকারিভাবেই ‘অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান’দেরকে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সন্তানহীন বাবা-মা দত্তক হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। সেটা ছিল মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতনের অন্ধকারচিত্র, বিজয়ী হয়ে রাষ্ট্র দায়ভার নিয়েই মোকাবিলা করেছিল। অনেকটা সমাজের স্থিতাবস্থা মজবুত করতে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে দেশেই এমনটা ঘটে থাকে। ধারণা করি, গল্পকার সেই বাস্তবতাকে আমলে নিয়েই ধূপছায়া লিখেছেন। অস্বীকার করার সুযোগ নাই, আমাদের সমাজদেহে এরকম ‘অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান’ জন্মদানের ঘটনা উপস্থিত বলেই লেখক এমন গল্প লেখার প্লট পেয়েছেন।
পেটের দায়ে শ্রম বিক্রি করতে আসা গৃহকর্মীকে দিয়ে আমাদের সমাজের অনেক উচ্চবিত্তই নিজের বিকৃত জৈবিকচাহিদা পূরণ করেন। যা কোনোভাবেই কোনোরূপ সংজ্ঞায়নে গ্রহণযোগ্য হয়নি। এরকম প্রেক্ষিতে জন্ম নেওয়া ‘অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান’ এবং সন্তানের বিদেশ থেকে নাড়ীর খুঁজে আসার নাটকীয় ঘটনার কাহিনীকেই গল্পরূপ দিয়েছেন গল্পকার। পাঠক হিসেবে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান’ কিংবা জন্মদাত্রী প্রয়াত জননী এমনকি জন্মদাতা পিতার স্ত্রী মাকসুদা বেগম, সবার প্রতিই আবেগাচ্ছন্ন হলেও শেষনাগাদ সিদ্ধান্তহীনতায়ই থাকতে হলো, দায় কার কিংবা ঘটে যাওয়া অনিবার্য এমন ঘটনাকে কোন সূত্রবলে গ্রহণ করবো?
যেখানে সীমান্ত, নিরেট প্রেমের গল্প মনে হলেও শুধু প্রেম নয়, দেশভাগের গল্প আছে, আছে দাঙ্গার গল্প। আমার জাতীয় জীবনে পাকিস্তান আমল তো বটেই, মুক্তিযুদ্ধকালে এমন কী পঁচাত্তরের ট্র্যাজেডির পরেও অনেক ধর্মীয় সংখ্যালঘু পরিবার, দেশ ছেড়েছেন। পাশের দেশে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। চলে যাওয়া একটি সচ্ছল পরিবারের বৃদ্ধার বয়ানে মাতৃভূমির টান প্রকাশ পেয়েছে, “আহারে পরথ দিনই আইতে পারলা না! তোমার শরীলে তাইলে দ্যাশের মাটি মিইশা থাকতো। আমি একটু ছুঁইয়া দিতাম”। বাংলাদেশের যুবকের কাছে দাবি করেছেন, আরেক বার বারাসাত গেলে যেন ময়মনসিংহ থেকে একটু মাটি নিয়ে যায়। সেই মাটি দিয়ে মাটিস্নান করার আকুতি প্রকাশ করেছেন বৃদ্ধা। এই যে অনুভূতি, এই যে জন্মভিটের প্রতি টান, এটা দেশে থাকলে, আপন ঘরে থাকলে উপলব্ধি করার জো নেই।
পরোক্ষে মাতৃভূমির প্রতি টানের ভিতরেও বৃদ্ধার নাতনির বাংলাদেশের যুবকের সঙ্গে হৃদয়ের লেনাদেনার আবেদনই বা কম হবে কেন! অবশ্য এরপরেও আছে ভিন্ন গল্প, মধুরেণ সমাপয়েৎ নয়। বরং দেখতে পাবো বাংলাদেশের মুসলমান যুবক শোভন, বারাসাতের হিন্দু রমণী সুদেষ্ণার বিয়ে, তাদের সুপত্র সুশোভনের আগমন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় যেন বাংলাদেশ ও ভারতের কাঁটাতারের বেড়া নয়, অদৃশ্য ও অনুভবীয় শক্তি ধর্মের বেড়া প্রকটভাবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। শোভন কিংবা সুদেষ্ণা দু’জনেই বোঝে, তারা যা চায় না এমন কী যা বলতেও চায় না, সেসবই যে কেউ একজন বলিয়ে নিচ্ছে, করিয়ে নিচ্ছে। আর এভাবে তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন থেকে বিষণ্ণতায় নিপতিত হচ্ছে। যেনো সেই গানের কথা ‘যেখানে সীমান্ত তোমার, সেখানে বসন্ত আমার’ মিথ্যা হয়ে কেবলই অ-বসন্তের হাতছানি, যেন বিচ্ছিন্নতাই অনিবার্য। ধর্মীয় বিভাজনে দেশভাগের মতোই সংসার ভাগের নিয়তিও মেনে নিতে হয়েছে। যেখানে সীমান্ত গল্পটির এভাবেই সমাপ্তি ঘটেছে।
ফুট নোট: তবে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক টিকে থাকার উদাহরণই বাস্তবে বেশি।
পাশের বাড়ির দীর্ঘশ্বাসেরা ছায়া ফেলে যায়, আদতেই ছায়া ফেলে যাওয়া গল্প। দাঙ্গার ভয়াবহতায় একজন যৌনকর্মীর মনের উপরেও যে অন্যদের মতো চাপ তৈরি হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু স্বাভাবিক ব্যাপারটি যখন অস্বাভাবিক হয়ে যায়, তখনই সংবাদ হয়, গল্প হয়, নাটক-সিনেমা কত কী হয়! মানুষে মানুষের হৃদয়ের কথা কতটুকুই-বা জানতে পারে, পারে কী উপলব্ধি করতে সকলের সবকিছু? পারেনা।
কিন্তু হৃদয়ের দহন যখন হয়, সেটা তো ব্যক্তির উচু-নিচ পরিচয়ে বিভাজিত হয়ে হয়না। সবারই হয়। এমন একটা গল্পই পাশের বাড়ির দীর্ঘশ্বাসেরা ছায়া ফেলে যায়।
শ্রাদ্ধবাসর, গল্পের বইটিও আবছা ছায়া ফেলে গেছে বলতে পারি। সাতটি গল্পের সমাহার, আমার কাছে সমাজদেহ-প্রাণের সাতটি অঙ্গের কথোপকথন মনে হয়েছে। আমাদেরই গল্প, বাংলাদেশেরই গল্প।
ফ্ল্যাপে লেখা আর্নেস্ট হেমিংওয়ের কথাটুকু উল্লেখ করে শ্রাদ্ধবাসর পাঠে সমাপ্তি টানছি, ‘সব ভালো বই এ অর্থে একরকম যে তারা সত্যিসত্যিই ঘটতে পারতো এমন ঘটনার চেয়ে বেশি সত্য, পাঠশেষে পাঠকের মনে হয় এ সবই তার সঙ্গে হয়েছে, তার ভেতর দিয়ে ঘটেছে; এর পাঠে দিনশেষে পরমানন্দ কিংবা অন্তর্গত বেদনা বা অনুশোচনা অথবা কষ্টবোধ এবং স্থান-কাল-পাত্র সবই যেন তার একান্ত নিজস্ব।’
শ্রাদ্ধবাসর প্রকাশ করেছে আবিষ্কার প্রকাশনী।