ব্রেডে লাগানো অভিমানের মাখন-পদ্ম পদ্য
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:০০
“তুমি সাধু,
আমি পাপী!
লাভ কি মানুষ হয়ে
প্রেমে যদি
নাই কাঁপি?”
কবিতার ফুল এভাবে ধীরে ধীরে পাপড়ি মেলেছে আফসানা কিশোয়ারের তেরোতম কাব্যগ্রন্থ ও আঠারোতম প্রকাশিত বই ‘পদ্ম পদ্য’ তে।
মখমলের মতো স্পর্শের বাক্য যেমন আছে তেমনি আছে সমসাময়িক বিবিধ বিষয়ের উপর আলোকপাত। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গৃহী মানুষ যখন একা হয়ে যান, নানা ধরনের পার্থিব সংকট ও অসুস্থতা তাকে বিদ্ধ করে, সাথে থাকে প্যান্ডেমিকের অসহায়ত্ব তখন একজন ক্যান্সার আক্রান্ত মহসিন যে আত্মহত্যাই করবেন সে সত্য ঘটনা কবি নির্মোহভাবে বলে ফেলেন। সড়ক দুর্ঘটনা তো ডালভাত। সে এক্সিডেন্টে মৃত মায়ের দেহের পাশে স্কুল গোয়িং কন্যা রাস্তায় বসে আছে এমন দৃশ্য করুণভাবে আমরা দেখতে পাই কবির কলমের কল্যাণে।
এত এত বাস্তবতার চাপে পিষ্ট আত্মা যখন অভিমানে বলে বসে ‘আমি ওল্ড টেস্টামেন্টের সেই নিষিদ্ধ নগরী/ যেখানে চব্বিশ ঘণ্টায় একবারও তুমি প্রদক্ষিণ করো না’ তখন মনে হয় অভিবাসী কবি তার প্রিয়জনকে হাজার হাজার মাইলের দূরত্বে রেখে কিভাবে বেঁচে আছেন, অভিমানের এমন শ্যাওলা অনুভব নিয়ে?
মাশা আমিনি হিজাব সঠিকভাবে না পরার অজুহাতে ইরানে নিহত হলে সমগ্র ইরান ও বিশ্ব যখন কাঁপছে তখন কবি খুব আলতো করে বলেন-‘রব উঠেছে/জিন জিয়ান আজাদী/বুঝছো তোমরা যারা ধর্মের গবাদী?’ এ বাক্যগুলো পড়লেই আমরা বুঝি প্রচ্ছদে কিভাবে নারীর কেশের পাশ দিয়ে অক্ষরেরা জীবন পাচ্ছে।
বইয়ের কাব্যিক পত্র যেন প্রত্যেকের নিজের সাথের নিজের আলাপ। বিরোধীদলের দশ দফার ব্যবচ্ছেদ যেমন আমরা পড়ি, আবার তার প্রিয় কেউ কোথাও বেড়াতে গিয়েছে সে মুহূর্তের যোগাযোগহীনতাকে কিভাবে পত্র আকারে আলাপে নিয়ে গিয়েছেন লেখনীর মুন্সিয়ানায় সে অনুভব আমাদের ছুঁয়ে যায়।
ষোলো হাজার দিন আসলে কত বছর? প্রেমাবতারকে লেখা পত্রের শুরুই হলো ‘ষোলো হাজার দিন পৃথিবীর পথে আমারও হাঁটা হইছে’ বাক্যবন্ধ দিয়ে। পরোক্ষে কি কবি তার অদেখা প্রেমাস্পদকে এভাবে তার বয়স বলেন?
জরুরতের সাথে চাহাত যুক্ত না হইলে সে সম্পর্ক নদী পারাপারের নৌকা ও মাঝির লাহান; আমার এই দীর্ঘশ্বাস আপনারে স্পর্শ না করুক এটুকুই প্রার্থনা। এত ভালোবাসা, প্রেম, শব্দের লেনদেন অথচ শেষ হয় প্রত্যাখ্যানের এক বুমেরাং বুকে নিয়ে।
এ বইতে প্রেম, অপ্রেম, রাজনীতি, দর্শন, দেশ, আপনজনের বিচ্ছেদের হাহাকার আছে হাত ধরাধরি করে।
কবির আঠারোতম বই কাকতালীয়ভাবে সাড়ে আঠারো ফর্মার।
বইয়ের মুদ্রিত মূল্য ৩৫০ টাকা।
কুরিয়ারের মাধ্যমে নিতে চাইলে ৩৫০+৫০=৪০০ টাকা বিকাশ (আবু-০১৭১১০১৪৪৪৮-পার্সোনাল) করে সম্পূর্ণ ঠিকানা জানাতে হবে।
বইমেলা শেষে বইটই থেকে ই-বুক প্রকাশ করা হবে।
আবু হাসানের করা প্রচ্ছদে বইটি পাওয়া যাবে বইমেলায় ‘বাংলানামা’র ২১৪ নং স্টলে।
সারাবাংলা/এজেডএস