Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কুকুরের দখলে আমাদের গলিটা [তৃতীয় পর্ব]


২২ এপ্রিল ২০২৩ ১৮:৪৬

[তৃতীয় পর্ব]

আমপুরার গলিটার ভেতরের দিকে, তিন মাথার ডান পাশে মি. আগা খানের প্রাসাদের মতো ছয়তলা বাড়ি। মি. আগা খানের চার স্ত্রী। চারজনই বর্তমান। তিনি চমৎকার একটা নিয়ম তৈরী করেছেন। মিসেস শাকিলা পারভীন প্রথম স্ত্রী। তিনি থাকেন দ্বিতীয় তলায়। মিসেস করুণা বিধি দ্বিতীয় স্ত্রী, তিনি থাকেন তৃতীয় তলায়। মিসেস জয়নাব লতা তৃতীয় স্ত্রী। থাকেন সিরিয়াল অনুসারে চতুর্থ তলায়। আর চতুর্থ স্ত্রী মিসেস দিলরুবা ছন্দা। দিলরুবা ছন্দা সিনেমার নায়িকা। সিনেমা প্রযোজনা করতে গিয়ে ছন্দার সঙ্গে পরিচয়। পরিচয় থেকে সম্পর্ক। বাজারে গুঞ্জন ছিল, বিয়ের আগেই মিসেস দিলরুবা ছন্দা প্রেগনেন্ট হয়েছিল। এবং বাচ্চাসহই বিয়ে করেছে মি. আগা খান। সর্বশেষ খবর অনুসারে মিসেস দিলরুবা ছন্দার গর্ভে একটা ছেলে বাচ্চার জন্ম হয়েছে।
আমাদের ঘটনা আগা খানের চার-চারটি বিয়ের প্রসঙ্গ নয়। প্রসঙ্গ আমপুরার এই বাড়ি। বাড়ির নাম খান ভিলা। আমপুরা এলাকাটা ঠাডা শহরের নিন্মবিত্তদের এলাকা। আগা খানদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থের যে বিরাট প্রতিপত্তি, সেই অনুপাতে আমপুরা এলাকায় বাড়ি করা বিরাট রহস্য। আগা খানদের বাড়ি হবে ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী এলাকায়। কোনো রহস্যে মি. আগা খান আমপুরার এই গলিতে বাড়ি করেছে!
দুপুরের খাবার খেয়ে আগা খান চতুর্থ স্ত্রী দিলরুবা ছন্দার সঙ্গে পঞ্চম তলায় বিশেষ ছিনেমা দেখছে। ছন্দাকে পাশে নিয়ে বিশেষ ছিনেমা দেখতে খুব পছন্দ করে আগা খান। হঠাৎ পঞ্চম তলার জানালা দরজা ভেঙ্গে বাড়ির মধ্যে শত শত কুকুর প্রবেশ করে। এবং নিমিষের মধ্যে আগা খানের বেডরুমে প্রবেশ করে দেখতে পায়, দেওয়াল বিশাল স্কিনে চলছে বিশেষ ধরনের ছবি আর সেই কায়দায় রমন করছে আগা খান নিজের স্ত্রী দিলরুবা ছন্দাকে।
রুমের হঠাৎ অনেকগুলো কুকুর দাঁড়িয়ে লেজ নাড়ছে দেখে, দিলরুবা ছন্দা স্বামী থেকে বিযুক্ত হয়ে দৌড়ে বাথরুমে ঢোকেন। দিলরুবা ছন্দার পিছনে পিছনে ঢোকে আগা খানও। কুকুরগুলো বাকি তিনতলার স্ত্রীদের ডেকে এনেছে। সবাই রুমের মধ্যে বসা। ভীত সন্ত্রস্ত মনে হচ্ছে স্ত্রীদের―
কিন্তু অভয় দিচ্ছে গলায় রূপার চেইন পরা ছাইরঙের কুকুর― আপনারা ভয় পাচ্ছেন কেনো? আমরা আপনাদের কোনোও ক্ষতি করবো না।
তাহলে ডেকে এনে আটকে রাখছো কেনো? প্রশ্ন করে আগা খানের তৃতীয় স্ত্রী মিসেস জয়নাব লতা। মিসেস জয়নাব লতার আগের স্বামীর বাড়িতে এ্যালশেসিয়ান কুকুর ছিল তিনটা। স্বামী মি. শওকত মজুমদারের অসম্ভব কুকুরপ্রীতিই ডির্ভোসের অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি। কুকুরগুলো বাড়ির মধ্যে শিকল দিয়ে বাঁধা থাকত যখন মি. শওকত মজুমদার বাড়ি থাকতেন না। যখন বাড়ি থাকত কুকুরদুটি শওকত মজুমদারের পিছনে পিছনে ঘুরত। আর পা চাটত।
শিউরে উঠতো জয়নাব লতা। খাবার টেবিলের পাশে দুটি কুকুর গলা উঁচু করে বসে থাকে, খাবার শেষ হওয়ার সঙ্গে কুকুর দুটি থালা দুটি চেটে চেটে খেত। ঘৃণায় শরীর শিউরে ওঠে জয়নাব লতার। লোকটা কি কুকুরের.…! হ্যাঁ অনেকের কুকুরপ্রীতি আছে, তাই বলে!
অনেকবার সাবধান করে দিয়েছে শওকত মজুমদারকে, কুকুর নিয়ে তুমি এতো বাড়াবাড়ি করছ কেনো?
কুকুর কি তোমার শরীর চাটছে? চাটছে আমার শরীর, মৃদু গলায় বলে শওকত মজুমদার।
কিন্তু রাতে তো তোমাকে চাটতে বাধ্য করো আমাকে―
সেটা তো তোমার আমার- দুজনের শরীরের সর্ম্পক!
কিন্তু আমার ঘৃণা লাগে।
কেনো?
কুকুরকে এতো প্রশ্রয় দাও কেনো?
কারণ, কুকুর মানুষের চেয়ে উত্তম।
মানে কী?
শোন লতা, বারান্দার চেয়ারে বসে শওকত মজুমদার। পাশের চেয়ারে বসে জয়নাব লতা। বিকেলের আলো চারদিকে ছায়া ফেলছে। শওকত মজুমদার গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। গার্মেন্টেসের মধ্য পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জয়নাব লতার নিকটাত্মীয় চাকরি করে। মেয়েটি দেখতে দারুণ সুন্দরী। গ্রামের দরিদ্র বাবার মেয়ে শিউলি আখতার। ওর চারটে ভাইবোন। সেই ভাইবোনদের মুখে খাবার তুলে দিতে নবম শ্রেনী পাশ শিউলি আখতারের শরীরও মজবুত। জয়নাব লতার সুপারিশেই চাকরি হয়েছে শিউলি আখতারের।
শিউলি আখতার চাকরিতে যোগদানের তিন মাস পর, ফোন করে জয়নাব লতাকে, আপা কেমন আছেন?
ভালো। তুমি কেমন?
আমিও ভালো। আপা, গ্রামের বাড়িতো যান না, অনেক বছর।
হ্যাঁ সময় হয় তোমার দুলাভাইয়ের। আমি একলা যেতে চাই না।
তা ঠিক…।
তুমি একটা কিছু বলতে চাইছ আমাকে শিউলি?
না মানে…।
তুমি বলো। আমি কিছু মনে করবো না।
দুলাভাইকে তো আপনাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন!
হ্যাঁ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার সময়ে ওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক। আবার আমরা ছিলাম একই ডিপার্টমেন্টের। মানে, এনথ্রোপোলজির… কেনো বলতো শিউলি!
আপা!
হ্যাঁ, বলো।
না থাক…।
শিউলি! কৌশলের আশ্রয় নেয় জয়নাব লতা। তুমি আমার বোন না? আমার কোনোও সমস্যা দেখলে আমাকে জানাবে না?
আপা, দুলাভাই আপনাকে আদর করে তো?
কয়েক মুহুর্ত ঝুলে থাকে জয়নাব লতা। কি বলবে, কি উত্তর দিলে সম্মান বজায় থাকবে? নিশ্চয়ই এমন কোনোও ঘটনা ঘটেছে…।
হাসে জয়নাব লতা, আরে মেয়ে বলে কি! আদর করবে না কেনো? তোর দুলাভাই খুবই আদর করে আমাকে। কিন্তু তুমি যা বলতে চেয়েছো বলো।
আপা, দুলাভাই প্রতিদিন অফিসে এসে নিজের রুমে ঢোকার আগে সাততলা গার্মেন্টিসের এক একটা তলা পরিদর্শন করেন।
সেটা স্বাভাবিক না শিউলি? শওকতের অফিস, গার্মেন্টস, ঘুরে ঘুরে দেখবে না― কে কি কাজ করছে? নাকি কেউ ফাঁকি দিচ্ছে?
নিশ্চয়ই আপা কিন্তু দুলাভাই ফ্লোরের পর ফ্লোরে গিয়ে করে অন্য কাজ।
মানে কি? খুলে বলো আমাকে।
দুলাভাই গার্মেন্টসের ফ্লোর ঘুরে ঘুরে নির্বাচন করেন নতুন কোনোও মেয়েকে। রুমে গিয়ে কাজ শেষ করে পছন্দের মেয়েটিকে রুমে ডাকেন। রুমে ঢুকলেই দরজা আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়।
থেমে যায় শিউলি আখতার। ফোনের এপারে বসে থাকে জয়নাব লতা। আর কতটা বলতে হবে? জয়নাব লতা সবই জানে, বোঝে। কিন্তু কি করবে?
শিউলি? আমি বুঝতে পারছি। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। ফোন কেটে দেয় জয়নাব লতা।
প্রতিরাতে বাসায় ফেরে মাতাল হয়ে। মাতাল হওয়া খারাপ কিছু না। বাসায় নিজেও মাঝে মাঝে পান করে। পান করলে ভালো লাগে। মনে হয়, শরীর হালকা হয়ে বাতাসে উড়ছে। মানুষতো উড়তেই চায়। শরীরে অন্য নারীর গন্ধ পাওয়ার আগেই শওকত মজমুদার বাথরুমে ঢোকে। অনেক্ষণ বাথরুম থেকে সাফ সুতরো হয়ে ফিরে আসে বেডরুমে। রুমে এসেই জড়িয়ে ধরে জয়নাব লতাকে, মাই ডার্লিং!
জয়নাব লতাও জড়িয়ে ধরে প্রিয় স্বামীকে। কিন্তু গোটা শরীর জুড়ে নেমে আসে ঘৃণা। এই ঘৃণার মুমূর্ষু সময়ে দেখা হয় আগা খানের সঙ্গে, হোটেল এরিনায় এক পার্টিতে। আগা খানের গার্মেন্টস ব্যবসা আছে। লোকটা কথা বলে কম, হাসে মিটি মিটি। কিন্তু প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। সিগারেটের শলা হাতে রাখে কিন্তু ধরায় না, আগুন ধরিয়ে টানে না, ছাড়ে না ধোঁয়া। আগা খানের এই অবাক ঘটনা দারুণ মনে হয়েছে জয়নাব লতার কাছে। রাতে বাসায় এসে ফোনে প্রথম কথা বলে জয়নাব লতা।
কথা বলার তিন মাসের মাথায় প্রিয় প্রেমিক, স্বামী শওকত মজুমদারকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায় আগা খানের সঙ্গে। আগা খান জানিয়েছিল আমার একজন স্ত্রী আছে। কিন্তু সে পক্ষাঘাতগ্রস্ত। দুটি ছেলেমেয়ে বিদেশে পড়াশুনা করে। সুতরাং আমার সংসারে তোমার রাজত্ব চালাতে কোনোও সমস্যা হবে না। বিয়ের প্রথম এক মাস ছিল হোটেলে। দারুণ কাটছিল সময়। হোটেল থেকে আগা খান নিয়ে এসেছে গুলশানে এক বন্ধুর বাড়ি। সেখানে মাস তিনেক থাকার পর নিয়ে আসে আমপুরার বাড়িতে, খান ভিলায়। খান ভিলায় আরও দুজন স্ত্রী থাকায়, জয়নাব লতা হলো আগা খানের তৃতীয় স্ত্রী।
তুমি কেনো এমন করলে?
রাতে বেডরুমে বসে প্রশ্ন করলে আগা খান খুব স্বাভাবিক ভাবে গ্লাসে পানীয় ঢালতে ঢালতে বলেছিল, দুটি কারণে তোমাকে আমি মিথ্যা বলে বিয়ে করেছি। প্রথম কারণ, তোমাকে দেখেই আমি তোমার প্রেমে পড়েছিলাম। তোমার ফিগার আমাকে ফিদা করেছে। দ্বিতীয় কারণ, প্রতিশোধ।
কিসের প্রতিশোধ!
তোমার আগের স্বামী, আমার বিশিষ্ট বন্ধু শওকত মজুমদার আমার পছন্দের একটি মেয়েকে ভাগিয়ে নিয়ে গেছে। ভাগিয়ে নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি― মেয়েটিকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে। তোমাকে বিয়ে করে সেই প্রতিশোধ নিলাম। কিন্তু তোমাকে আমি ভালোবাসি।
তৃতীয় বৌ বানালে কেনো? বলেছিলে, একমাত্র বৌ পক্ষাঘাত―
হাসে আগা খান। আগা খানের হাসিতে কোনোও শব্দ হয় না। নিঃশব্দ হাসি, মুখের গহব্বর দেখা যায়। ভয় লাগে। জবাব দেয়, বিয়ের প্রেমের আর সেক্সের ক্ষেত্রে মিথ্যা না বললে খেলা জমে না। আর খেলা না জমলে কোনোও কিছুই ভালো লাগে না আমার।
জয়নাব লতা আটকে যায় আগা খানের সংসারে, তৃতীয় পৃষ্ঠায়।
কিন্তু শওকত মজুমদারের কুকুরপ্রীতির ঘটনাটা মাথা থেকে যায় না। কুকুর প্রকৃতপক্ষে, মানুষের চেয়েও উন্নতমানের কৃতজ্ঞ প্রাণী। মানুষ হচ্ছে, কঠিন মোনাফেক। বিশেষ করে পুরুষ। আবার ঘটনা দেখো― পুরুষের মোনাফেকি ছাড়া দুনিয়া অচল।
আমার মাকে বাবা ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। আমার বাবা ছিল খুব নিষ্ঠাবান একজন মানুষ। কলেজের অধ্যাপক নেছারউদ্দিন পড়াতেন সাইকোলজি। পিরোজপুরে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়ে আমার নানার বাড়ি লজিং থাকতেন। মা পড়তেন ইন্টারমিডিয়েট। বাবার সঙ্গে একটা সম্পর্ক হলে, আমার নানা নিজেই কথা বলেন বাবার সঙ্গে।
তিনি ছিলেন হাজী আহমদ হোসেন। প্রশ্ন করলেন বাড়ির কাছারী বাড়িতে, তুমি কি আমার মেয়ে শিপ্রাকে পছন্দ কর?
বাবাও সরাসরি উত্তর দিয়েছিলেন, হ্যাঁ করি।
তাহলে বিয়েব ব্যবস্থা করি?
খুব সরলভাবে বাবা মাথা নাড়েন, আমার কোনোও আপত্তি নেই।
পিরোজপুরের গণ্যমান্য লোকজনের উপস্থিতিতে দুজনার বিয়ে হয়ে যায়। বাবা কলেজে প্রভাষক থেকে পদোন্নতি পেয়ে সহকারি অধ্যপক হলেন। আয় রোজগার বাড়ছে। বাবা নেছার উদ্দিন পিরোজপুরে আট কাঠা জমি রাখেন। আমার জন্ম হয়েছে। বাবা মা সুখী দম্পতি। এই সময়ে কলেজের একটা প্রশিক্ষণের জন্য ঠাডা শহরে আসেন। ছয় মাস থাকলেন। ছয় মাসের মধ্যে বেশ কয়েকবার পিরোজপুর আসা যাওয়াও করলেন। কারণ, মাকে ছেড়ে বাবা থাকতে পারতেন না। আর আমাকে খুব মিস করতেন। ছয় মাসের প্রশিক্ষণের পর বাবা নেছার উদ্দিন ফিরে এলে অনুভব করতে পারলেন, সংসারের কোথাও একটা ঝামেলা হয়ে গেছে। কিন্ত কি ঝামেলা, বুঝতে পারছেন না। বাবা মূলত সংসারের সকল ভার মায়ের উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে আমার একটা বোনেরও জন্ম হয়। বাবা ওর নাম রেখেছিলেন বিপাশা।
বাবা ধীরে ধীরে আবিষ্কার করলেন, পাশের বাড়ির এক তরুণ অধ্যাপক গোবিন্দকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধায়ের সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক। বাবার ঘুম ভীষণ গভীর। ঘুমিয়ে গেলে দুনিয়ার কোনোও খেয়াল থাকে না। মা সেই সুযোগে গোবিন্দকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধায়ের সঙ্গে অভিসারে যেতেন, বাড়ির পিছনের পুকুরঘাটে। পুকুরঘাটে একটা ছোট গোয়াল ঘর ছিল। বাবা সব দেখলেন, জানলেন, বুঝলেন। কিন্তু মাকে কিছুই বুঝতে দিলেন না। তিনি রাস্তা থেকে একটা কুকুর কুড়িয়ে আনলেন বাড়িতে। বাড়িতে কুকুর আসায় মা খুব চেঁচামেচি করলেন। আমি ছোট বোন বিপাশা কুকুরটাকে পোষ মানিয়ে ফেললাম।
বাবা সন্ধ্যার পর কুকুরটাকে নিয়ে উঠোনে বসতেন। কথা বলতেন কুকুরটার সঙ্গে।
কুকুরটার সঙ্গে কথা কথা বলতো তোমার বাবা!
হ্যাঁ, শওকত মজুমদার ফিরে আসেন নিজের তন্ময়তার জগত থেকে। তাকায় জয়নাব লতার দিকে, বাধা দিও না― শুনে যাও। আমি পড়তে বসতাম ঘরে আর বাবা বসতেন কুকুরের সঙ্গে। মা গজ গজ করতেন। আমি বুঝতে পারছিলাম, কোথাও মস্তবড় একটা সর্বনাশের দোলনা ঝুলছে। কিন্তু কি সর্বনাশ বুঝতে পারতাম না। তো এক রাতে আমার ঘুম ভাঙ্গলো একজন মানুষের মরণ চিৎকারে।
ঘুম ভেঙ্গে গেলে দৌড়ে চিৎকার অনুসরন করে বাড়ির পেছনে যাই। দেখি, মা একবারে নাংটো দাঁড়িয়ে আছে রাতের পূর্ণিমায় আধো জোছনার অন্ধকারে, পুকুরের ঘাটে। আর গোবিন্দকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধায়ের ন্যাংটো শরীরের উপর দাঁড়িয়ে বাবার কুকুরটা গলা চেপে ধরেছে। লোকটা গোঁ গোঁ করছে আর দুই পা নাচাচ্ছে। বাবা নেছার উদ্দিন সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে গোটা ঘটনাটা দেখছে পরিপূর্ণ তৃপ্তির সঙ্গে। বাবার সেই চোখ আমার মধ্যে আমিও দেখতে পাই। মানুষ হারলেও কতো সুখী হয়, বাবা নেছার উদ্দিনের দৃষ্টিতে সেই রাতে আমি দেখেছিলাম সেই কৌতুকমাখা সুখ!
তুমি? তুমি কি করলে?
আমি! হাসে শওকত মজুমদার― সেই একরাতেই আমি বুঝে গেছি, মানুষের চেয়ে কুকুর অনেক উত্তম প্রাণী। এবং সেই থেকে কুকুর আমি ভালোবাসি। প্রাণীদের ইতিহাসে তুমি জয়নাব লতা, দেখাতে পারবে না কুকুর কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। বিশ্বাসঘাতকতা করার ইতিহাস মানুষের…। সেই কারণেই আমি কুকুর ভালোবাসি, কুকুর পালন করি।
ঠিক আছে, কিন্তু একটা পর্যায় তো থাকবে! তুমি যখন আমাকে আদর কর, দরজার ফাঁক দিয়ে ওরা দেখে…।
দেখুক না, ওদেরও রমন করতে ইচ্ছে হয়।
মানে? ওরা কাকে রমন করবে?
মুখে ক্লান্তির হাসি নিয়ে তাকায় জয়নাব লতার দিকে শওকত মজুমদার, আমি মাঝে মধ্যে ভাবি মানুষের দুনিয়ায় মানুষ এতো অমানুষ হয়ে গেছে, এখন যদি মানুষ বিদায় করে কুকুরদের দুনিয়া প্রতিষ্ঠা করা যায়, কেমন হতো?
জয়নাব লতা বিস্ফোরিত চোখে দেখে প্রিয় স্বামী, বিশিষ্ট গার্মেন্টস ব্যবসায়ী শওকত মজুমদারকে। কতো বছর ধরে চেনে, জানে মানুষটাকে। কিন্ত কতো অচেনা। বুকের মধ্যে মা ও বাবার সর্ম্পকের সূত্র ধরে একটা পাশবিক ক্রোধের আগুন নিয়ে বসে আছে! যে কেনো সময়ে ও আমাকে ভিন্নভাবে ব্যবহার করতে পারে! তাকিয়ে আছে সন্ধ্যার অন্ধকার আকাশের দিকে শওকত মজুমদার, হাতে জ্বলছে সিগারেট, কিন্তু চিন্তার মধ্যে জ্বলছে অন্য মানচিত্র! আচ্ছা ঘোড়া আর গাধার মিলনে হয় খচ্চর। কিন্তু মানুষ আর কুকুরের মিলনে…। মানুষ আর কুকুরের মিলন হওয়া সম্ভব?
শওকত মজুমদার তাকায় বিবাহিত স্ত্রী জয়নাব লতার দিকে, খুব দ্রুতই মনে মনে একটা প্ল্যান করে। কিন্তু কেমন করে টের পায় জয়নাব লতা, সর্বনাশের নিগূঢ় সার্কিট! চলে আসে আগা খানের সংসারে, সুযোগ পেয়ে, সর্বনাশের আগে।

বিজ্ঞাপন

মনি হায়দারের উপন্যাস ‘কুকুরের দখলে আমাদের গলিটা’ [প্রথম পর্ব]

মনি হায়দারের উপন্যাস ‘কুকুরের দখলে আমাদের গলিটা’ [দ্বিতীয় পর্ব]

সারাবাংলা/এসবিডিই

ঈদুল ফিতর সংখ্যা ২০২৩ উপন্যাস কুকুরের দখলে আমাদের গলিটা মনি হায়দার মনি হায়দারের উপন্যাস ‘কুকুরের দখলে আমাদের গলিটা’ সাহিত্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর