এ্যালিয়েন
২৪ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:২০
– মা তোমার সাথে জরুরী কথা আছে।
মা একটু অবাক হলেন, একটু ভয়ও পেলেন। সদ্য বিবাহিত মেয়ে ফারজানার আবার হঠাৎ করে কি জরুরী কথা আছে। জামাইয়ের সাথে আবার কোনো সমস্যা হল না তো? দিব্যিতো আছে জামাইকে নিয়ে তাদের নতুন কেনা ফ্ল্যাটে।
– কি কথা?
ফারজানা এদিক ওদিক তাকাল তারপর মাকে নিয়ে গেল বারান্দায়। মা এবার সত্যি সত্যি ভয় পেলেন।
– তোমরা আমাকে এ কার সাথে বিয়ে দিয়েছ?
– কেন কি হয়েছে?
– ওতো মানুষ না।
– কি বলছিস এসব? মার বুকটা ধ্বক করে উঠল।
– ও একটা এ্যালিয়েন।
– এ্যালিয়েন??
– হ্যাঁ ভিন গ্রহ থেকে আসা এ্যালিয়েন।
– কি ক্কি বলছিস এসব!!
– ঠিকই বলেছি। তুমি জান ওর যে হাতে চারটা আঙুল ?
– চারটা আঙুল?
– হ্যাঁ দু হাতেই চারটা করে মোট আটটা আঙুল। পায়েও একই অবস্থা। একটা করে আঙুল শর্ট …
– উফ এসব কি বলছিস?
– ঠিকই বলছি। একটা এ্যালিয়েনের সঙ্গে তোমরা আমার বিয়ে দিয়েছ।
– কেন তুইতো বলেছিলি এ্যালিয়েন আর সৎ রাজনীতিবিদ পৃথিবীতে কখনও দেখা যায় না। এখন আবার এ্যালিয়েন এল কোত্থেকে? তাও আবার আমাদের জামাই এ্যালিয়েন হয়ে গেল!
– উফ মা ওটাতো একটা জোক ছিল। এ্যালিয়েন থাকবে না কেন। এরা মানুষের ছদ্মবেশে পৃথিবীতে ঘাপটি মারা শুরু করেছে। সেই রকম একজনের সঙ্গে তোমরা আমায় ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়েছ।
– ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়েছি মানে? বিয়ের আগে তোরা তো বেশ ঘুরাঘুরি করেছিলি একসাথে। তখন দেখিসনি কেন কয়টা আঙুল দশটা না পাঁচটা। মা একটু রেগেই গেলেন। আর আঙুল কম বেশী হতেই পারে। এটা একটা বায়লজিক্যাল ডিজঅর্ডার। জিনে ক্রমোসমের সংখ্যা কম বেশী হলে কারও কারও এমন হয়।
– উফ মা আমাকে সায়েন্স শিখাতে এস না। আমি এ্যালিয়েনদের নিয়ে একটা ডকুমেন্টারীতে দেখেছি এ্যালিয়েনদের আঙুল একটা করে কম থাকে। তা ছাড়া…
মা হতাশ হয়ে বারান্দার এক মাত্র চেয়ারটায় ধপ করে বসে পড়েন। তা ছাড়া কি?
– তাছাড়া ও বাসায় কিছু খায় না। যখনই বলি খেতে আস, বলে তুমি খেয়ে নাও। তার মানে বুঝতে পারছ?
– কি বুঝব?
– উফ মা জেগে ঘুমালেতো চলবে না। আমি খেয়াল করেছি বাসায় এসেই ও বাথরুমে ঢুকে যায় তারপর…
– তারপর কি?
মেয়ে গলা আরেক ধাপ নামিয়ে ফেলে। প্রায় ফিস ফিস করে বলে ‘প্রথম যখন ঐ বাসায় নতুন এলাম তখন বাথরুম ভর্তি
ছিল তেলাপোকা। এখন একটাও নেই।’
– তার মানে জামাই বাথরুমে ঢুকে কপকপ করে তেলাপোকা খায়?
– ঠিক তাই। আরেকটা ব্যাপার… ওর বাবা মা নেই। সবসময় একটা সাদা গেঞ্জি পরে থাকে। আমার ধারনা ওর নাভিও নেই। জানতো এ্যালিয়েনদের নাভি থাকে না।
ঠিক তখনই কলিংবেল বাজে। দরজা খুলে দেখা গেল জামাই এসেছে ফারজানাকে নিতে।
– তুমি হঠাৎ? ফারজানা গম্ভীর হয়ে জানতে চায়।
– অফিস থেকে ফিরছিলাম ভাবলাম তোমাকে নিয়ে যাই।
– আমি তো বলেছি মায়ের এখানে দুদিন থাকব।
– ওহ তাই আমি খেয়াল করিনি। তাহলে যাই।
– যাবে মানে বস চা দিচ্ছি। একটু নাস্তা পানি খেয়ে তারপর যাবে। শাশুড়ি বলেন,
– না মা, এখন কিছু খাব না। একটু ওয়াশরুম থেকে আসি। ফারজানা আড়চোখে মার দিকে তাকায়। ভাবটা এমন, দেখলে বলেছিলাম না বাথরুমে ঢুকে তেলাপোকা খায়। ফিস ফিস করে বলেই ফেলল ফারজানা। এবার তোমার বাথরুমের তেলাপোকাও সব পরিস্কার হয়ে যাবে।
– বাজে কথা বলিসনাতো আমাদের বাথরুমে কোনও তেলাপোকা নেই।
– একটা গোবদা টিকটিকি আছে আমি জানি।
মা খেয়াল করলেন সত্যি জামাইয়ের দু’হাতে চারটা করে আঙুল। কোনোটারই কেনি আঙুল নেই। কিন্তু চট করে বোঝার উপায় নেই, স্বাভাবিক একটা হাত। কিন্তু এটা কি খুব বড় কিছু! তার এক ভার্সিটির বান্ধবীর একহাতে ছটা আঙুল ছিল। তারা ঠাট্টা করে তাকে মিস সিক্সার ডাকত । তার মানেই কি সে এ্যালিয়েন ছিল! কি সব পাগলামী কথাবার্তা।
জামাই কিছু না খেয়েই চলে গেল। বানানো চায়ে একটা চুমুকও দিল না। একটু খটকা লাগল শাশুড়ির। তবে তখন তখনই চট করে ফারজানা ঢুকলো তাদের বাথরুমে। তারপর একটু বাদে প্রায় চিৎকার করে ছুটে এল। মা যা ভেবেছিলাম…
– কি ভেবেছিস?
– তোমার বাথরুমের গোবদা টিকটিকিটা নেই।
– উফ। মা মাথা চেপে ধরে সোফায় বসে পড়েন। মাথাটা হঠাৎ করে ধরেছে। জামাইয়ের জন্য বানানো চা-টা তিনি ঢকঢক করে পানির মত খেয়ে ফেলেন। সত্যি এই মেয়েকে নিয়ে তিনি কি করবেন।
দুদিন এর পর আরও দুদিন গেছে। মাঝখানে জামাই আরও একবার এসেছিল ফারজানাকে নিতে। ফারজানা বলেছে তার শরীরটা ভাল না। আরো কটা দিন মায়ের কাছে থাকবে। জামাই আপত্তি করেনি। যথারীতি চা না খেয়েই চলে গেছে আগের মত। জামাই কিছুই খায় না এটা শাশুড়ির কাছে কেমন একটা খটকা হয়েই থাকল।
রাত ১২টার মত বাজে। ফারজানার কেমন অস্থির লাগছে। ঠিক তখনই একটা মেসেজ এল মেসেঞ্জারে। তার এ্যালিয়েন জামাইয়ের ম্যাসেজ।
ফারজানা, বেশ বুঝতে পারছি হঠাৎ করে তুমি একটা ধাক্কা খেয়েছ। বেশ বড় ধাক্কাই মনে হচ্ছে। হ্যাঁ আমার একটা ভুল হয়েছে, বড় ভুলই করেছি। আমার ‘সিনড্যাকটিলি’ সম্পর্কে তোমাকে আগে জানিয়ে বিয়ে করা উচিৎ ছিল (আমার মধ্যমা আঙুল আর অনামিকা নিয়ে একটা আঙুল, এটাকেই syndactyly বলে)। আসলে আমার এই জন্মত্রুটিটা আমি নিজে যেন বুঝতে পারি না, মানে একবারেই মনে থাকে না যে আমি একটা ত্রুটিযুক্ত মানুষ। বাবা-মা ছিল না বলে এতিমখানায় মানুষ হয়েছি, কেউ বুঝিয়েও দেয়নি যে আমি আসলে একটা ঠিক পূর্ণাঙ্গ মানুষ না। তবে তুমি যে আমাকে এ্যালিয়েন ভাবতে শুরু করেছ এটাতে বেশ মজা পেয়েছি। তুমি হয়ত ভাবছ কিভাবে জানলাম! তোমাদের কাজের ছেলেটা ফাঁস করে দিয়েছে… হা হা হা। সে হয়ত আড়াল থেকে শুনে ফেলেছে তোমাদের মা মেয়ের আলাপ। আরেকটা ব্যাপার আমার এক ডাক্তার বন্ধুর পাল্লায় পড়ে আমি ‘কিটো ডায়েট’ করেছি একমাসের জন্য। তাই কিছু খাচ্ছিলাম না। তবে সেটা শেষ হয়েছে। এখন সব খেতে পারব। তোমাদের বাসায় তোমার মায়ের চা-ও খাব নিশ্চয়ই। অবশ্য সব যদি ঠিকঠাক হয়; নরম পেলব দশ আঙুলের অপেক্ষায় শক্ত বিশ্রি আট আঙুল! তবে জানি না এর মধ্যে তুমি কোন বড় ডিসিশন নিয়ে ফেলেছ কিনা! ইতি – আমি।
ফারজানা ধরমড় করে উঠে বসল। চিৎকার করে বলল, মা আমি যাচ্ছি।
– কোথায় যাচ্ছিস?
– কোথায় আবার, আমার বাসায়। বলে ছুটে গেল চুল ঠিক করতে বাথরুমে। চিরুনীটা ওখানে ফেলে এসেছে। তখনই দেখল আয়নার উপর গোবদা টিকটিকিটা দিব্যি ঘাপটি মেরে বসে আছে।
– এত রাতে কিভাবে যাবি?
– উবারে না হলে সিএনজিতে… গেলাম। একরকম ছুটে বের হয়ে গেল ফারজানা।
সারাবাংলা/এসবিডিই
আহসান হাবীব আহসান হাবীবের রম্যগল্প 'এ্যালিয়েন' ঈদুল ফিতর সংখ্যা ২০২৩ এ্যালিয়েন রম্য সাহিত্য