Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পিউ পিশাচিনী


২৫ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৩১

– আমাকে দেখে দেখে ক্ষয় করবে না কি?
আমি পিউ এর কথা না শোনার অভিনয় করলাম। অপলক চোখে ওকে দেখতেই থাকলাম। বই-এ ওর রুপের যে বর্ণনা আছে ও তারচেয়েও সুন্দর। মানুষ এত সুন্দর হয় কী করে!
– কী হলো? আবার জিজ্ঞেস করে ও।
আমি বলি, কিছু না। তুমি কি ক্ষয় হওয়ার জিনিস না কি?
– না। আমি কিন্তু ক্ষয় না হলেও হাওয়া হয়ে যাওয়ার মতো মানুষ।
– আমাকে ছেড়ে হাওয়া হয়ে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলে যেও।
– তোমাকে ছেড়ে একেবারে হাওয়া হয়ে যাওয়ার ইচ্ছে নেই। কারণ, তোমাকে আমি ছাড়ছি না।
পিউ এর এই কথা শেষ হতেই বাইরে দরজার দিকে পায়ের শব্দ পাওয়া গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজায় এসে কেউ হয়তো কড়া নাড়বে। পিউকে বললাম, জলদি করো। কেউ আসছে।
পিউ দ্রুত গতিতে বইটার কাছে চলে গেল। ধীরে ধীরে ছোট হতে থাকল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বইয়ের সাথে মিশে গেল। আমি বইটা বন্ধ করে ফেললাম।
দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো। আমি দরজা খুললাম। দেখি রুপা হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রুপা আমার ফুপাত বোন। আমার প্রথম ভাললাগা। ও বলল, এই বিকেল বেলায় দরজা লাগিয়ে আছিস কেন?
বললাম- এমনিতেই।
– চল, একটু বাইরে যাব।
– বাইরে কোথায়?
– রংপুরে। ঠিকাদারপাড়ায় জয়াদের বাসায়।
– তুই রাজিনার সাথে গল্প কর। আমি তৈরি হয়ে আসতেছি। এ কথা বলার সাথে রুপা চলে গেল রাজিনার রুমে। রাজিনা আমার ছোট বোন।
রুপা আমার প্রথম ভাললাগা হলেও ওকে কখনও আই লাভ ইউ কিংবা ভালবাসি কথাটা বলা হয় নাই। রুপার পরে আমি আরও অনেকের প্রেমে পড়েছি। কিন্তু ডুবে যাই নি। ডুবে যেতে নিজেকে দেই নি। নিজের ভাললাগা নিজের কাছেই রেখেছি সবসময়। অপরপক্ষ এতে বুঝে নিলে, নিয়েছে। এই বুঝে নেওয়ার বিষযটা যাতে প্রকাশ না করে সে ব্যাপারেও এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি। শুধু পিউ এর বেলায় এসে আটকে গেলাম। এবার পিউ এর প্রেমে পড়েছি। পিউ এর প্রেমে ডুবেও গেছি। প্রেমে পড়াটা আর পড়ার মধ্যে থাকল না।
পিউ এর নাম কিভাবে প্রথম জানা হলো সেটা বলি। একদিন রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে বসে আছি। রংপুর এক্সপ্রেসে ঢাকা থেকে আয়শা খালা আসতেছে। খালাকে রিসিভ করার জন্য। ট্রেনের অপেক্ষা করছি। ট্রেনটা দুই ঘন্টা লেটে চলছে। তা তো আর আমি জানতাম না। স্টেশনে এসে জানলাম। অগত্যা ট্রেনের জন্য প্লাটফর্মে বসে পড়তে হলো। কোথাও গেলে আমার একটা ব্যাগ পিঠে ঝুলানো থাকে। সেই ব্যাগে কোনও না কোনও বই থাকে। একটু ফাঁক পেলেই বই পড়ি। ব্যাগ থেকে আনিসুল হকের লেখা জেনারেল ও নারীরা বইটি বের করে পড়তে শুরু করেছি। পড়া শুরু করার মিনিট বিশেক পড়ে আমার পাশে একজন এসে বসলেন। ভদ্রলোক কিছুক্ষণ নীরব রইলেন। আমি বই পড়ায় ভীষণ মনোযোগী। হঠাৎ ভদ্রলোক বললেন, আপনি মনে হয় খুব বই পড়েন?
অপরিচিত বলে জবাব দেওয়ার আগ্রহ দেখালাম না। বইয়ের মধ্যেই ডুবে রইলাম।
খানিক পরে তিনি বললেন, আপনি কী লেখক?
একবার ভাবলাম উত্তর দেব না। আর একবার ভাবলাম দেই। বললাম, না।
তিনি এবার বললেন, না, এখন তো লেখকরাই বই পড়ে। পাঠকের সংখ্যা খুবই কম। তাই ভাবলাম আপনি হয়তো লেখক। আমি আর কোনও জবাব দিলাম না। ভদ্রলোক আমার কথা বলায় অনাগ্রহ আর মুখের এক্সপ্রেশন দেখে হয়তো একটু মন খারাপ করলেন। তিনি উঠে চলে যেতে ধরলেন। কি ভেবে আবার বসে গেলেন। বললেন, আমার খুব ভাল লাগল আপনার বইয়ের প্রতি ভালবাসা দেখে। আপনাকে ধন্যবাদ।
এ কথা শুনে কেন জানি এবার লোকটার প্রতি আগ্রহী হলাম। কেন জানি মনে হলো তিনি একজন লেখক। বললাম, আপনি কী লেখক?
ভদ্রলোক একটু কাচুমাচু করলেন। বললেন, লেখক কিনা জানিনা। ভাল লাগা থেকে একটু আধটু লিখি আর কি। বললাম, ভাল তো। আমি লেখক নই। আমি একজন পড়ুয়া। বই পড়তে ভাল লাগে তাই পড়ি।
ভদ্রলোক আর কথা বাড়ালেন না। নিজের ব্যাগে হাত দিয়ে একটা বই বের করলেন। বললেন, এই বইটা রাখেন। পড়বেন। এটা আমার লেখা।
হাত বাড়িয়ে বইটা নিলাম। বইয়ের কভারের দিকে চোখ দিলাম। বইয়ের নাম, “মিউ মিউ প্রিয় পিউ। ” বইয়ের নাম দেখে লেখকের দিকে তাকানোর জন্য চোখ ঘুরিয়ে নিলাম। দেখি লেখক ভদ্রলোক আর কথা না বাড়িয়ে অনেক দূরে চলে গেছেন। একবার ডাকার চেষ্টা করলাম। ব্যর্থ চেষ্টা আরকি। বইয়ের দিকে তাকিয়ে লেখকের নাম পড়লাম। এম এ ফেরদৌস।
সেদিনই পিউ এর নাম আমি প্রথম উচ্চারণ করি বই থেকে। পিউ এর সাথে দেখা হওয়ার কথা বললে আপনারা আমাকে নির্ঘাৎ পাগল ভাবতে পারেন। তাতে আমি কিছু মনে করব না। চলুন পিউ এর সাথে প্রথম দেখা হওয়ার কথা বলি।
মিউ মিউ প্রিয় পিউ একটা কিশোর প্রেমের উপন্যাস। বই হাতে পাওয়ার দুদিন পর আমি বইটা পড়তে শুরু করলাম। এত মনোমুগ্ধকর যা বলে বোঝানো সম্ভব না। এম এ ফেরদৌস নামে কোন লেখক বাংলাদেশে আছে তা পাঠক বা বাংলাদেশের অন্য লেখকরা জানে কিনা আমার জানা নাই। তার লেখা আমাকে চুম্বুকের মতো আকর্ষন করল। মিউ মিউ প্রিয় পিউ বইয়ে কিশোরী নায়িকা হচ্ছে পিউ। লেখকের মতে পিউ এর মতো অপরুপা আর রুপবতী এই পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। হরিণীর মতো চোখ। গোলাপের মতো ঠোঁট। আপেলের মতো টসটসে গাল। ধবধবে ফর্সা গায়ের রং। এই বর্ণনা যে লেখক কতবার দিয়েছেন তা গুনে দেখিনি। আমি মুগ্ধতার সহিত পড়তে পড়তে নায়িকা পিউকে কল্পনার রংতুলি আঁকতে চেষ্টা করলাম। কল্পনার আঁকা যেন মাঝে মাঝে চোখের সামনে দৃশ্যমান হয়। আবার লুকিয়ে যায়। মিউ মিউ প্রিয় পিউ পড়তে পড়তে আমি পিউ এর প্রেমে পড়ে গেলাম। বইয়ের নায়িকার প্রেমে অনেকে পড়ে। আমিও পড়ে গেলাম। বইটা পড়া শুরু করার দ্বিতীয় দিন রাতের ঘটনা। বইটা পড়তে পড়তে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখলাম। কল্পনায় আঁকা পিউ এর ছবি যেন বাস্তবে রুপ নিয়ে এসেছে। আমার বিছানায় বসে আমার চুলে বিলি কাটছে। আমি মুগ্ধ নয়নে পিউ এর রুপের সুধা পান করছি। হঠাৎ বাইরে কোন একটা শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেল। চোখ খুলে দেখি স্বপ্ন এখনও শেষ হয় নাই। কারণ পিউ আমার বিছানায় এখনও বসে আছে। আমি চটজলদি উঠে বিছানায় বসি। তবুও পিউ চোখের সামনেই থাকে। বুদ্ধি করে গোপনে নিজের হাতে অন্য হাত দিয়ে চিমটি কাটি। ওমা! একি করে সম্ভব! আমি স্বপ্ন দেখছি না। বাস্তব। একটু আতংকিত হলাম। কিন্তু সেই আতংকের খাতা ইরেজার চালাল পিউ।
পিউ বলল, কী সমস্যা? ভয় পেয়েছো?
– কে তুমি? জিজ্ঞেস করি আমি।
– কে আমি মানে? তুমি যাকে মনের মাধুরী দিয়ে আঁকলে। আমি তো সেই আমি। তোমার পিউ।
– বইয়ের পিউ?
– হুম।
– কেমনে সম্ভব? নিশ্চয়ই তুমি অন্য কেউ।
– উহু! আমি তোমার পিউ। বিশ্বাস করছো না তো! আচ্ছা দেখাচ্ছি – – -।
বলেই পিউ উঠে দাঁড়ালো। ধীরে ধীরে ছোট হতে থাকল। ছোট হতে হতে খোলা বইয়ের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়াল। আর মিশে গেল বইয়ের সাথে। আমি থ হয়ে দেখলাম। কিছুক্ষণ পর আবার পিউ বই থেকে বের হয়ে এসে আমার সামনে দৃশ্যমান হলো। আমি নিজেকে বিশ্বাস করাতে না পারালেও কেন জানি খুব স্বাভাবিক হয়ে গেলাম। ভয় আতংক কোনটাই কাজ করছে না। পিউ এর দিকে তাকালাম। লেখক এম এ ফেরদৌস বইয়ে পিউ এর রুপের যে বর্নণা দিয়েছেন পিউ তার চেয়েও অনেক সুন্দর। যা আমিও বর্ণনা করে বলতে পারব না।
পিউ বলল, কী এবার কিছু বলবে?
আমি নীরবে না সূচক মাথা দোলাই। ও বলল, আমি তোমার পিউ। ছন্দ মিলিয়ে চাইলে বলতে পারো আই লাভ ইউ।
আমি কিছুই বলি না। এভাবেই আমার পিউ এর সাথে প্রথম সাক্ষাত হয়।
ঐ দিন পিউ ওর সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য দিলো। যেমন ও যখন তখন বইয়ের ভিতর থেকে ঢুকতে পারবে আবার বের হতে পারবে। তবে শর্ত হলো বইটা খোলা থাকতে হবে। অথবা যে পৃষ্ঠায় পিউ এর নাম আছে। সেই পৃষ্ঠা ভাঁজ করে রেখে বই বন্ধ করলেও সে অনায়াসে বের হতে এবং ঢুকতে পারবে।
এরপর প্রায় প্রতিদিনই পিউ এর সাথে আমার কথা হয়। পিউ চাইলে আমার সাথে বাইরেও যায়। তবে তা খুব গোপনে। কয়েকদিন আগের কথা। পিউ গোপনে নয় প্রকাশ্যে আমার সাথে ভার্সিটিতে যেতে চাইলো। কি আর করা। বই ব্যাগের ভেতরে নিয়ে বাইরে এসে আবার বের করে তাকে বের হতে বললাম। ভার্সিটিতে পিউ আমার সাথে গেল। সাথে নিয়ে গিয়ে বুঝলাম কাজটা মোটেও ঠিক হয় নাই। কারণ বন্ধুরা সবাই হা হয়ে তাকিয়ে থাকল। তৌফিক তো মুখ ফসকে বলেই ফেলল, এত সুন্দর মাল কই থেকে আমদানি করলি। ওর এ কথায় আমি একদম মাইন্ড করিনি। কারণ জানি ও লাগাম ছাড়া কথা বলে। আমরা বন্ধুরা ওর এরকম কথা শুনে শুনে অভ্যস্ত। মনের ভিতরটা ওর খুব সুন্দর। ধনীর ছেলে হলেও কোন অহংকার ছিল না। কিন্তু পিউ খুব মাইন্ড করল। আমাকে ভার্সিটিতে আর থাকতেই দিল না।
এই ঘটনার দুদিন পর তৌফিক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেল। তৌফিক এর অসময়ে চলে যাওয়াটা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। তৌফিক এর পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার খবর আমার মুখ থেকেই শুনেছিল পিউ। শুনে একটু মুচকি হেসেও ছিল ও।
তৌফিক মারা যাওয়ার তিন সপ্তাহ পর আবার পিউ আমার ভার্সিটিতে গেল। তবে এবার গোপনে। না আমি গোপন করেনিয়ে আসিনি। পিউ আমাকে না বলেই গোপনে চলে এসেছে। বইয়ের একটা পৃষ্টা ভাঁজ করাই আছে। কাজেই চাইলেই ও যখন তখন বাইরে বেড়িয়ে আসতে পারে। এসেই একটা সিনক্রিয়েট করল। সবার সামনে আমাকে অপমান করে নয়। আলাদা করে হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে সকলের আড়ালে। ও কাঁদতে থাকল। কোনভাবেই ওকে থামানো যাচ্ছিল না।
ঘটনা হলো আমরা বন্ধু-বান্ধবরা তো খুব খোলামেলা। জেন্ডার বৈষম্য নেই আমাদের মাঝে। আমাদের বান্ধবী রাকা আমার পিঠে হেলান দিয়ে বসে গল্প করছিল। পাশে তন্ময়, হেলাল, সূজয়, কেয়া মানে অন্য বন্ধুরাও বসেছিল। হঠাৎ ওদের সামনে চলে এল পিউ। আমার হাত ধরে টেনে তুললো। আমাকে নয়। অন্যদেরকে বলল, ওর সাথে আমার একটু কথা আছে। ওকে নিয়ে যাচ্ছি। তারপরই আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে সেই কান্নার সিনক্রিয়েট। কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করেছিল, রাকা আমাকে ভালবাসে কি না। আমি বলেছিলাম, আমরা সবাই শুধু বন্ধু। এর বাইরে কিছু নয়। ও বলেছিল, রাকাকে সে খুন করে ফেলবে। কেন সে অন্যের প্রেমিকের পিঠে হেলান দেবে। শুনে আমি হেসেছিলাম।
কিন্তু দুঃখের বিষয় এই ঘটনার তিনদিনের মাথায় রাকা সুসাইড করে মারা গেল। আমরা বন্ধুরা খুবই মর্মাহত হলাম। রাকা কেন সুসাইড করবে। হেলালের সাথেও কোন ঝগড়াঝাঁটি হয়নি। কোন কারণ খুঁজে পেলাম না।
টানা তিনদিন আমি ঘর থেকে বের হলাম না। পিউ এর সাথেও কথা বলিনি। আমার মুড অফ দেখে পিউ আর বইয়ের ভিতর থেকে বাইরে আসেনি।
রুপা আমাকে নিয়ে জয়াদের বাসা গেল। ফিরে এলাম সন্ধ্যার আগে আগে। ফিরে এসে ও মিউ মিউ প্রিয় পিউ বইটা হাতে নিয়ে বলল, আচ্ছা তোর এই বইয়ে কী আছে। তোর তো একটা বই পড়তে এক মাস লাগে না। গত একমাস থেকে দেখতেছি বইটা সেলফে যায় না। সেলফে যায় না মানে তোর পড়া শেষ হয় নাই। কী ঘটনা!
আমি কি জবাব দিব বুঝে ওঠার আগে ও আবার বলে, আমাকে পড়তে হবে বইটা। বলেই ও বইটা একটু থেব্বা দিয়ে রেখে চলে গেল।
রাতে পিউ এর সাথে এ নিয়ে আমার সাথে একটু কথা কাটাকাটি হলো।
পিউ বলল, তোমার রুপার সাথে এত মাখামাখি কেন?
আমি বললাম, কই মাখামাখি।
– রুপা তোমার কাছে এত আসে কেন?
– ও আমার ফুপাত বোন। আমার কাছে আসবে না। ভাই বোনের তো কত দরকারই থাকতে পারে।
– দরকার কী হাত ধরে টানাটানি করা? পিউ এর কন্ঠে অনেক ঝাঁঝ।
আমি চুপ করে থাকি। রুপা যে আমার প্রথম ভাল লাগা সেটা পিউকে বলা হয় নাই। আমার মনেহয় পিউ সেটা বুঝতে পেরেছে। নইলে ও কথা বলবে কেন। পিউ বলল, রুপার সাথে তোমার মনে হয় কিছু একটা আছে। যদিও জানি তোমার দিক থেকে মনে হয় কিছু নাই। কিন্তু যতি রুপার দিক থেকে কিছু থাকে তবে পরিণতি ভাল হবে না।
পিউ এর সাথে কথা বাড়ালাম না। ঘুমাতে চলে গেলাম।
গভীর রাতে খস্খস্ শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি জানালার কাছে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। মেয়ে মানুষ। একটু ভয় পেলাম। আমার ঘরে মেয়ে মানুষ বলতে পিউ ছাড়া আর কে হবে। কিন্তু পিউ তো এ সময় বই হতে বের হয়ে আসার কথা না। গভীর রাতে পিউ কখনও বের হয়ে এসে আমার ঘুম ভাঙায়নি। কম্বল আস্তে করে একটু সরিয়ে ভাল করে দেখার চেষ্টা করলাম। হুম্ মেয়েটা পিউই। চুপ করে রইলাম। দেখি পিউ কী করে। পিউ এর চোখ এর দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম। চোখের সাথে চোখ যেন মিলিয়ে না যায় সেটাও খেয়াল রাখছি। দেখলাম পিউ এর চোখ দুটো জ¦ল জ¦ল করে উঠল। আমি দেখে ভীষণ চমকে গেলাম। চোখ অন্যদিকে সরিয়ে নিলাম। ভাবলাম আর ওর মুখের দিকে তাকাবো না। এমনিতেই দেখি কী করে পিউ। কিন্তু চোখ সরিয়ে নিয়ে কতক্ষণ আর ধৈর্য ধরে রাখা যায়। আমি আবার তাকালাম। তাকানোর সাথে সাথে আমার শরীর মন কাঁটা দিয়ে উঠল। পিউ চোখ দুটোতে কেমন ঘোলাটে ছাপ পড়েছে। যে কেউ দেখলে বলবে এই চোখ দুটো মানুষের নয়। চোখ দুটো কোন এক অশরীরী প্রাণীর। চেনা চোখ দুটো একেবারে অচেনা লাগছে। শরীরের কম্বলটা গায়ে আর একটু ভাল করে জড়িয়ে নিলাম। পিউ এর চোখের দিকে তাকাচ্ছি ঠিক আছে। সেই চোখ এখনও আমার দিকে তাকায়নি। আমি জেগে আছি পিউ তা না বুঝলেই ভাল। কম্বলের ফাঁক দিয়ে পিউ এর সুন্দর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। কিন্তু একি! সুন্দর মুখটা ধীরে ধীরে কেমন বিকৃত রুপ ধারণ করছে। রুপবতী পিউ এর রুপ যেন নিমিষেই উধাও হয়ে পিশাচের রুপ নিয়েছে। আমি এবার একটু আতংকিত হলাম। যা যা দেখতেছি নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছি না। পিউ এর মুখ থেকে জিবটা একটু বের হয়ে আবার ঢুকিয়ে নেওয়ার দৃশ্য দেখলাম। এবার বিদ্যুৎ চমকানোর মতো ভয় পেলাম। কারণ যে জিবটা পিউ বের করেছিল সেটা মানুষের জিব নয়। আবার দেখার চেষ্টা করলাম। পিউ আবার ওর জিব বের করেছে। বের করে ডানে বায়ে নড়াতে থাকল। জিবটা নড়ছে। সেটা দেখতে একদম সাপের জিব এর মতো লকলকে। পিউ হঠাৎ জিব ঢুকে নিয়ে সন্দেহের চোখে ডানে বায়ে তাকাল। আমি সাথে সাথে কম্বল দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নিলাম। এরপর কম্বল যখন আস্তে আস্তে সরাতে শুরু করলাম দেখলাম পিউ ধীরে ধীরে ছোট হতে শুরু করেছে। বুঝলাম ও বইয়ের ভিতর ঢুকে যাবে। কিন্তু একি! পিউ ছোট আকার ধারণ করে জানালায় উঠে লাফ দিলো। বাইরে কোথায় গেল ও? বিছানা থেকে নেমে জানালা দিয়ে বাইরে তাকানোর চেষ্টা করলাম। না পিউকে আর দেখতে পেলাম না।
বাকি রাতটা আমার আর ঘুম ধরলোই না। আমি বিছানায় শুয়ে অপেক্ষা করে থাকলাম পিউ কখন আসে। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে তবুও পিউ আসে না। ভোরের আলো দেখতে দেখতে আমার চোখে ঘুম ভর করল। ঘুম ভাঙলো ফোনের শব্দে। ফোন বাজতে বাজতে মিসড্ কল হয়ে গেল। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি সকাল নয়টা পনের। তন্ময় ফোন দিয়েছে। কল ব্যাক করেই খারাপ খবর শুনলাম। তন্ময় বলল, হেলাল আর নেই। আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। সুস্থ সবল মানুষ। হঠাৎ করে নাই হয়ে যাওয়া খবর মেনে নেওয়া যায়! ফ্রেস হয়ে ছুটলাম হেলালদের বাসার উদ্দেশ্যে।
হেলালকে শেষ বিদায় জানিয়ে ফিরে আসলাম বিকেলে। এসেই ঘরে বসে নানান জল্পনা-কল্পনা করছি। হেলালের সাথে রাকার সম্পর্ক ছিল। কী এমন হলো রাকা চলে যাওয়ার কয়েকদিনের মাথায় হেলালকেও চলে যেতে হলো। আমার কেন জানি মনে হলো এই যাওয়া স্বাভাবিক যাওয়া নয়। রাকাকে মারার হুমকি দিয়েছিল পিউ। আর পিউ এর পিশাচিনী রুপ এখন আমার কাছে দৃশ্যমান। গতরাতে তো পিউকে পিশাচিনীর রুপে দেখিছি। তাহলে কি পিউ এই কাজ করছে। না কোন কিছুই ভাল লাগছে না। হঠাৎ আমার মনে হলো মিউ মিউ প্রিয় পিউ বইয়ের পৃষ্ঠার ভাঁজটা খুলে দিয়ে বইটা বন্ধ করে রাখা দরকার।
বিছানা থেকে নেমে বইটা খুঁজতে শুরু করেছি। কিন্তু বই কই! কোথাও বই খুঁজে পেলাম না। রাজিনাকে ডাকলাম উচ্চস্বরে। রাজিনা দৌড়ে এল আমার ঘরে। বলল, কী হয়েছে ভাইয়া?
– এখানে মিউ মিউ প্রিয় পিউ নামে একটা বই ছিল। সেটা খুঁজে পাচ্ছি না।
– এগারোটার দিকে রুপা আপু আসছিল তোমার খোঁজে। রুপা আপু বইটা নিয়ে গেছে।
রাজিনার এ কথা শুনে যেন ইলেকট্রিকের শক্ খেলাম। পিউ পিশাচিনী গতরাতেই হুমকি দিয়েছে রুপাকে নিয়ে। এখন কী হবে। আমি মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে বের হয়ে রুপাদের বাসার উদ্দেশ্যে ছুটতে শুরু করলাম। রাস্তার মধ্যে ফুপু আম্মার ফোন। ফোনে ফুপু আম্মা কাঁদতে কাঁদতে বলল, রুপা নাকি ছাদ থেকে নিচে পড়ে গেছে। ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবিডিই

ঈদুল ফিতর সংখ্যা ২০২৩ গল্প পিউ পিশাচিনী মোকাদ্দেস এ রাব্বী মোকাদ্দেস এ রাব্বীর রহস্য গল্প 'পিউ পিশাচিনী' রহস্য গল্প সাহিত্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর