কবিতাগুচ্ছ
২৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:২৬
মায়াবী পর্দা দুলে ওঠার পরে
সেক্যুলার কারিকুলাম আমাকে বাঙালি মুসলমান সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। এখান থেকে সেই কওমের আর্তনাদ শোনা যায় না।
মার্কসের নিরাকার ছাড়া আমার আর কোনো ভাষা নাই! এবে আমি ভাষা-নিঃস্ব। এখন কোন নামে আমি তার জিকির করি!
সাফা মারওয়ার মাঝে আমি দৌড়াদৌড়ি করি। আসর নামাজের পর আজ কোথাও গাস্ত হয়নি। দাওয়াতিরা বৈঠক করতে গেছেন সদরে। ঈদের পর এবার কাকে অমুসলিম ঘোষণা করা যায়?
তোমার রজ্জু আমি কীভাবে ধরি! পাঁচবার জমায়েতে ঠোঁটস্থ করেছি বিচ্ছিন্নতার পাট।
মায়াবী পর্দা দুলে ওঠার পর মনে হলো, মুসলমানদের হাত থেকেও ইসলাম রক্ষা করা দরকার। এখন, কোনভাবে আমি এই জিহাদ করি!
কাকিমাপুরাণ
আমরা তিনজন বড় কম ভাড়াতে থাকি
যুবতী কাকিমা নুনধরা ছাতে হেঁটে বেড়ায়
প্রতিদিন মেলে দেয় ছাদের রোদ্দুরের বাসি আর বিষন্ন ব্রা
বইখাতা খুলিনি, আজ বাতাসে লোডশেডিং
নিজের ঘরটি শরীরের সঙ্গে বহন করে
গলিটার মোড় থেকে ফিরে আসি।
সন্ধ্যা নেমে এলে
অভিমন্যুর মতো আমরা তিনজন ঢুকে যাই
কাকিমার মৃত অন্তর্বাসে।
জয়নুলের অভিভাষণ
ও কুফার জনতা, তোমরা আমাকে চিনতে পারছ? আমি হোসেন ইবনে আলির পোলা। কারবালায় আমার বাপের লুট হয়ে গেছে সব। নবী পরিবারের সবাইকে তারা এক দড়িতে বাইন্ধা নাজাফের গলিগুলারে কান্দাইছে। এজিদ সেনাদের বর্শায় সারি সারি শহীদের মাথা। আওলাদে রাসুলকে তারা বেরহম খুন করছে ফোরাতের তীরে।
ও কুফার লোকেরা, চোখের সামনে দিন বেহাত হয়ে গেল, তোমরা খাড়ায়া দেখলা! সেইদিন নবীর সামনে তোমরা কোন মুখে দাঁড়াবা? দুনিয়ার সব নদীর পানি মুহম্মদের রক্তধারা নিয়ে হাজির হবে। এই জলাঙ্গীর মাটি তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।
খুন মাখা হাত নিয়ে তোমরা তার কাছে হাউজে কাউসারের পানি চাইবা। তিনি পেয়ালাভরা অশ্রু তোমাদের ঠোঁটে তুলে ধরবেন, কীভাবে পান করবা সেই পিপাসা।
তোমরা দাঁড়াবা কোথায়। তিনি যখন বলবেন, ‘তোমরা আমার হাওয়ারিদের এভাবে হত্যা করেছ! আমার মর্যাদার কসুর করোনি। উম্মতের খাতা থেকে তোমাদের নাম আমি খারিজ করে দিলাম’।
সম্পর্কশাস্ত্র
মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পর্কশাস্ত্র বহন করে হামেশা নারীর অবমাননা করেছে ন্যায়বিদেরা। বিশেষের নিরাকার প্রণালিতে আছে এক মায়াগহ্বর, নির্বিশেষের ব্যূহ। সমর্পণ মাত্রই স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেপ্তার হয় সম্বন্ধরা। প্রেমের একনিষ্ঠতায় এন্তার প্রাণের মৃত্যু।
পশ্চিমের কলি দিয়েছে এলান, সর্বভাব মিলনসম্পর্কের। দিল ডাক সম্পর্কের দেনা থেকে রুহের মুক্তির। নারীকে বলল তুমি মিয়া খলিফা হও, কামকোহলিক। ধর্মকে সরাতে হত্যা করল পরমের বোধ। মানুষের সাথে মানুষের যোগের বদলে কষে দিল অনিরাময় ব্যাধি।
দেখেন, আমরা তাহলে নির্ভুলভাবে সম্পর্ক স্থাপনের তালাশ এখনও করতে পারি! আমরা সঙ্গমের বাইরে সম্পর্ক না খুঁজলেও পারতাম। যেহেতু ভালোবাসাহীন দেহেও অপূর্ব আনন্দ থাকে। আর এই এলাকায় মানুষের সম্পর্ক আসে ছেদের পরোয়ানা নিয়ে। তারপরও আমরা কেন অধিকতর কোনো সত্য আছে কি না, খুঁজতে চাইলাম!
মানুষের পঙ্গুত্ব জেনে আমরা দুই দার্শনিক ফানা হয়ে গেলাম।
ইশতেহার
তোমরা গরুর ওলান থেকে দোয়ানো দুধের কাছে ফিরে যাও। পাস্তুরিত-গুঁড়া দুধের বিতর্কে যেয়ো না। মেশিনে চোলাই সব খাবার দেহের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তোমরা খাদ্য আর দেহকে কখনও পণ্য ও প্রক্রিয়াজাত কোরো না।
২
রাষ্ট্র সম্পর্কে তোমাদের আগে সতর্ক করা হয়েছে। দমন ও শোষণের বৈধ ব্যবস্থাকে বলা হয় রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের ধর্মই অবিচার। সবচেয়ে হানাহানির রক্তপাতের ইতিহাস রাষ্ট্রের। আর, তোমরা নিজ ভূগোলের সর্বত্র যাতায়াত করতে পারো না। যতদিন দেশ থাকবে, তত দিন তোমরা উদ্বাস্তু হবে। যারা রাষ্ট্রের আচার বদলাতে চায়, তারা সোনার পাথরবাটির ফেরিওয়ালা। পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানের নাম রাষ্ট্র।
৩
আত্মম্ভরি ও হঠকারীরা মনে করে, জনগণ অথবা বন্দুকের নল থেকে ক্ষমতা পয়দা হয়। কিন্তু সকল ক্ষমতার উৎস রাজনীতি। দেশে দেশে যাদের রক্ত ঝরছে, তারা রাজনীতি হারাবার ফল ভোগ করছে। কেননা মানুষ রাজনীতির জীব। ভুলে যেয়ো না, নিজেদের রাজনীতি খুঁজে পাওয়ার জন্যই তোমাদের প্রেরণ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এসবিডিই
আলমগীর নিষাদ আলমগীর নিষাদের 'কবিতাগুচ্ছ' ঈদুল ফিতর সংখ্যা ২০২৩ কবিতা কবিতাগুচ্ছ সাহিত্য