Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাদিয়া হুমায়রা’র ৫ কবিতা


১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:৫৫

শায়মা

শামদেশে অনাগত সন্তানের সুসংবাদ আসতো সারাহর নিকট। অন্যদিকে গাজার নতুন
সন্তানেরা দফের ভাঙা আওয়াজ। আমি যখন হাসপাতালের কৃত্রিম আলোয় চোখ মেললাম,
আমার মা ইতোমধ্যে জীবনের সকল স্মৃতি শেষবারের মতো রোমন্থন শেষ করেছেন।

একজন মালাক হাতের রেখায় এঁকে ফেলেছেন আমার ধূসর জীবনের সমোচ্চারিত,
সমান্তরাল গল্প। কেনানে উঁচু হচ্ছে লাশের স্তুপ। তাতে যোগ হয়েছে আমার
মায়ের শরীর যা যিশুর দেহের মতো রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত আর পবিত্র। আকাশ
থেকে আবাবিলের সাহায্য আর আসে না। আমরা মরছি; হারান থেকে হেবরন পর্যন্ত
বিজয় পতাকা গেঁথে দিচ্ছে জ্যাকব আর লাইয়্যা-রাহীলের সন্তানরা।

বিজ্ঞাপন

এক ঈশ্বরের সন্তানকে হত্যা করছে আরেক ঈশ্বরের সন্তান। মৃত মাতার জীবিত
গর্ভ নিষ্পাপ, নিরাপদ। শল্যশিল্পীরা আমার ছোট্ট দেহ শ্বাপদসংকুল কারাগারে
নিয়ে আসলেন নম্রহাতে, কিন্তু শপথ ছিল প্রতিশ্রুত ভূমি প্রাপ্তির দাবির
মতো কঠিন। মৃত্যুর উৎসবে তবু শ্বাস নেয় নবজাতক। শ্বাস নিই আমি শায়মা-
শায়মার কন্যা, জননী ও জাতির উত্তরাধিকার। আমার নরম কাঁধে যুদ্ধের ভার।
জীবনের দায়; প্রতিরোধ ছাড়া পথ নেই।

যুদ্ধের গান

পৃথিবীর চেয়েও প্রাচীন জিঘাংসা,
যুদ্ধ চলছে অবিরাম-অবিরত;
ট্রয়ের পতন বারবার ফিরে আসে,
আজও তরতাজা রাজা প্রিয়ামের ক্ষত।

আশার সূর্য ঢেকে দেয় হাকাওয়াই।
মৃত জনপদ নাগাসাকি-হিরোশিমা।
জন্ম নিচ্ছে শত বিক্ষত শিশু-
হৃদয়হীনের স্বপ্নের তর্জমা।

ঘৃণার সৈন্য করছে কুচকাওয়াজ
উত্তর থেকে দক্ষিণমেরু জুড়ে,
সাগরের জলে লালসার কালকূট
গর্জে চলেছে রণতূর্যের সুরে।

ইতিহাস বইয়ে অশ্রুর দাগ শুধু,
অনুপস্থিত হলুদ রৌদ্রতাপ,
লাশের মিছিল শক্তির পদতলে,
মানবজন্ম ক্ষমাহীন অভিশাপ।

বিজ্ঞাপন

সমুদ্রের প্রতি

প্রিয় সমুদ্র,
ঋণে নাকি আপত্তি তোমার।
যা নাও, ফিরিয়ে দাও তার সবটুকুই।
সেই কবে জলধিজলে বিসর্জন দিয়েছিলাম
ছুটির সকালে সদ্য ঘুম ভেঙে জেগে ওঠা
আরামদায়ক আলস্য, সেই সাথে
সম্মিলিত ইফতার শেষে তৈরি
চায়ের পেয়ালার নির্ভার উত্তাপ।
ফিরিয়ে দিলে না তো সমুদ্র?

যখন তোমার পানিতে গোঁড়ালি ডুবিয়ে
খুঁজছিলাম জীবন, তখনও ফিরিয়ে দাওনি।
এরপর হাঁটু অব্দি, কোমর অব্দি জলে নামলাম।
কিচ্ছু ফিরে পেলাম না।

এবার ফিরিয়ে দাও সমুদ্র।
এখন যে তোমার ঢেউ আমার নাক ছুঁইছুঁই করছে।
বেলাও পড়ে এলো। কমলা সূর্যটার মতো
আমিও ডুবে যাচ্ছি তোমার জলে।

নস্টালজিক শব

দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে,
শতাব্দী পেরিয়ে গেলো শুনি না বাড়ি ফেরার শেষ ট্রেনের হুইসেল।
ফুল তুলতে গিয়ে যেদিন পায়ে ছোবল লেগেছিল
তারপর থেকে শরীরের তাপ আর হৃদয়ের শৈত্য
কিছুই কমে না। বাড়ে না।

স্মৃতিশক্তি বিষের প্রকোপে ধূসর বর্ণ ধারণ করেছে।
তবে মাঝেমধ্যে যখন আমাকে দেখে ক্ষুধার্ত শকুনের
বুক চিরে বের হয় দীর্ঘতম দীর্ঘশ্বাস,
অদ্ভূত একটা দিনের গল্প আর কিছু চিত্রকল্প
চোখের সামনে ভাসে সেলুলয়েডে বন্দি ফ্রেমের মতো।

দেখি আধোঘুম, আধোজাগরণের নির্লিপ্ততায়,
দুধের বাটি রেখেছিলাম সাপ আর মানুষের সামনে।
চুমুক দিয়েছিল দুজনই।
ছোবল দিয়েছিল শুধু মানুষ।
তাই নিঃসঙ্গ লাশ হয়ে একলা যাত্রা করছি কলাগাছের মান্দাসে।

 

আলোকিত মিনার

(অধ্যাপক ড. মেহজাবীন হক, শ্রদ্ধাস্পদাসু)

অদৃশ্য রক্তপাত গোপনে চেষ্টারত অপলাপ আর
বাবুইয়ের পিঠে নির্বিকার মানব-মৃত্যুর চুম্বন আমি
অনুভব করেছি পবিত্রতম মঠে। মৃত সন্ধ্যায় দূষিত
সকালের আর্তনাদ শবাধারের চেয়েও নীরব। গৃহগোধিকার
টিকটিক আমি শুনেছি দেয়ালের বুকে, আর বুকের ভেতর
সেই সব অন্ধকারের প্রিয় সন্তানদের।
তারা আমার চোখে আলো দেখতে চায়।

বিয়োগপীড়িতের অনন্ত রাত্রিতে সফেদ সুবাস বিলায়
ছাতিম গাছটা; তার আগে তার শ্বাসমূল
টেনে নেয় ম্যাজেন্টা বাতাস। বিস্ময়কর এক বিমর্ষ
অসুখে আক্রান্ত যুদ্ধগ্রস্ত, ভূতগ্রস্ত হৃদয়ে হাওয়াই মিঠাই
ফিরিয়ে আনে ঘুড়ি আর লাটাইয়ের স্মৃতি।
উপাসনালয়ে উৎসব বসে কালিগাং নদীর তীরের।

বিষাক্ত সরোবর সোপানে নীল অপরাজিতার পরাজয়ের
দিনে যখন ভালোবাসার অর্থ খোঁজে ভালোবাসাহীন
সঙ্গমের ফসল; তাকে জানালা পাড়ি দিয়ে স্পর্শ করে
শৈলোৎক্ষেপ শীকর আমার আদেশে। প্রবল স্নেহে।

বারংবার যূপকাষ্ঠের আগুন নিভিয়ে দেই আমি।
আমার হাতে কবলিকা- শবল, সুখি; কোমল আলোয়।

কবিতা সাদিয়া হুমায়রা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর