কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:০০
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। খুব বেশি গল্প-উপন্যাস না লিখলেও গুণগত বিচারে তার লেখনি বাংলা সাহিত্যের চিরকালীন রত্ন। উপন্যাস, গল্প রচনায় হয়েছেন অনন্যসাধারণ, পেয়েছেন ভূয়সী প্রশংসা।
সমাজবাস্তবতার অনন্যসাধারণ এই রূপকার তার লেখায় বাস্তবতাকে নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন। স্বল্পপ্রজ এই লেখকের জন্ম ১৯৪৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধার গেটিয়া গ্রামে। তার ডাক নাম মঞ্জু। পৈত্রিক বাড়ি বগুড়া জেলায়। বগুড়া জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ও ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় ভর্তি হন তিনি।
শিক্ষাজীবন শেষ করে জগন্নাথ কলেজে প্রভাষক পদে যোগ দেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। তিনি মিউজিক কলেজের উপাধ্যক্ষ, প্রাইমারি শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরিচালক, ঢাকা কলেজের বাংলার অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মফিজউদ্দিন শিক্ষা কমিশনেরও সদস্য ছিলেন তিনি।
চিলেকোঠার সেপাই ও খোয়াবনামা, মাত্র এই দুটি উপন্যাস লিখেই তিনি তার সময়ের কথাসাহিত্যিকদের ছাড়িয়ে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধপরবর্তী রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা উঠে এসেছে তার বেশ কয়েকটি লেখায়। তার মধ্যে অন্যতম হলো প্রতিশোধ, অন্য ঘরে অন্য স্বর, খোঁয়ারি, মিলির হাতে স্টেনগান, অপঘাত, জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল, রেইনকোট।
দুই বাংলার অনেক সাহিত্যিকের কাছে তার সাহিত্য পেয়েছে শ্রেষ্ঠ লেখনির মর্যাদা। ১৯৮৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৯৯ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। ১৯৯৬ সালে পান আনন্দ পুরস্কার। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস।
হাসান আজিজুল হক বলেছিলেন ইলিয়াসের উপন্যাস প্রকৃতপক্ষেই বিশ্বমানের, নোবেল পুরস্কার পেয়ে থাকেন যে সব কথাসাহিত্যিক, তিনি ছিলেন সেই মাপেরই লেখক। মানুষকে তিনি গভীরভাবে ভালোবাসতেন, তার রচনায় এই বিষয়টি সুস্পষ্ট। ব্যক্তির জীবনপরিসরকে কিংবদন্তী, ইতিহাস আর সমকালের এমন অভাবনীয় পটে মেলে ধরেছেন যে তার প্রতিটি রচনাই হয়ে উঠেছে আমাদের জীবনের অস্তিত্বগাথা, একই সঙ্গে বর্তমান ও ভবিষ্যতের মহাকাব্যিক ডিসকোর্স। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের স্থান যে শীর্ষে অধিষ্ঠিত থাকবে, আমার অন্তত তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস নিঃসন্দেহে আমাদের সেই ঔপন্যাসিকদের একজন, যিনি তার লেখনির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আর এটি সংখ্যার বিচারেই নয়, তার লিখনশৈলী স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যের ও বিশ্বসাহিত্য সভায় যা আসন গেড়ে নিতে পারে আপন মহিমায়। তরুণ সভায় তার সম্পর্কে নিবেদন করা যায়, আমাদের কর্তব্য হবে তাকে যথার্থ মূল্যায়ন করা। তার সাহিত্যচিন্তাকে মানুষের মাঝে সঞ্চারিত করা।
সারাবাংলা/এসবিডিই
কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মৃত্যুবার্ষিকী আজ সাম্প্রতিক সাহিত্য