Wednesday 23 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শামসুর রাহমান: বাংলা কবিতার স্বতন্ত্র এক বিস্ময়

হাবীব ইমন
২৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:৪৪

এক.

শামসুর রাহমানকে বাংলা কবিতার স্বতন্ত্র এক বিস্ময় বললে ভুল হবে না, যাপিত-জীবন, শিল্পিত আয়ুরেখা এবং মহৎ কবিতার বিবেচনায় তিনি উত্তরাধুনিককালের প্রধানতম কবি—প্রেমে-অপ্রেমে, মিছিলে-প্রতিবাদে তার কবিতা আমাদের জন্য বিশেষ প্রেরণা। তার মৃত্যু দিন আজ। শামসুর রাহমান আজও প্রাসঙ্গিক—অতুলস্পর্শী মশাল।

শামসুর রাহমানের কথা মনে হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে স্নিগ্ধ হাস্যাজ্জ্বল একটি মুখ, শিশুর মতো নিষ্পাপ-সরল কৌতুহলী দুটি চোখ, হাজারও বিপর্যয়ের মধ্যেও জীবনবাদী, হার না মানতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। মৃত্যুর কাছে শেষ পর্যন্ত হারতে মানতে হলো। সবাইকে হবে। কিন্তু মৃত্যু তার মুখের সুকুমার লাবণ্য মুছে দিতে পারেনি। শুভ ও কল্যাণের প্রতি তার অবিচল আস্থা এবং বাংলাদেশের প্রকৃতি ও সংগ্রামী মানুষের জন্য তার অপরিমেয় ভালোবাসা দ্বারা তিনি আমাদের হৃদয়ে যে আসন গড়েছেন, তাতে তার মৃত্যু নেই।

প্রথম দর্শনে কবিকে দেখে মুগ্ধ হতে হয়, যেমন রূপবান, তেমনই বিদগ্ধ, বিনীত ও মৃদুভাষী। অথচ রয়েছে আদর্শে দৃঢ়তা। কোনো শাসানিতে তিনি মাথা নিচু করেননি। তার বিশাল কবিতা সংগ্রহের দিকে তাকিয়ে মনে হয় বাংলা কবিতার সমগ্র ইতিহাসে শামসুর রাহমানই সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক কবি। প্রথম কবিতা থেকে তার শেষের কবিতায় উত্তরণ একদিকে যেমন বিস্ময়কর, অন্যদিকে তেমনই অস্বাভাবিক-স্বাভাবিক, কেননা সময় চায় কণ্ঠ, সময় উচ্চরিত হতে চায়, সময়ের উচ্চারণই শামসুর রাহমানের কবিতা আমরা কান পেতে শুনি এবং বলে উঠি—তিনি আমারই কথা বলছেন, তিনি আমাদের জন্য কথা বলছেন।

১৭ বছর আগে আমরা শামসুর রাহমানকে হারিয়েছি, কিন্তু স্বাধীনতার কবি বেঁচে আছেন। জাতির আত্ম-জিজ্ঞাসার ভাষাই তো তার কাছ থেকে পাওয়া—তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে/আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়? আর ‘কতবার দেখতে হবে খান্ডবদাহন? আর স্বাধীনতার উপমান তার কলমে কতনা এমন, যার শুরু স্বাধীনতা তুমি। রবি ঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান। /স্বাধীনতা তুমি/কাজী নজরুলের ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো/মহান পুরুষ, সৃষ্টির সুখের উল্লাসে কাঁপা, কোমল জায়নামাজের উদার জমিন’ হয়ে, তার আমাদেরই যেন ‘যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।’

বিজ্ঞাপন

গত শতাব্দীর ৮০ দশকে আমরা যারা বেড়ে উঠেছি, সেই সময়টা কেমন ছিল! একটা বিরুদ্ধ সময়, একটা অস্থির সময়, যে সময়টাকে আমরা এখনও উতরে যেতে পারিনি। সেই সময়টায় রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত-জীবনানন্দের সঙ্গে আমাদেরকে বেড়ে উঠতে হয়েছে, একইভাবে শামসুর রাহমানের সঙ্গে আমরা বেড়ে উঠছি, তিনি আমাদের সেই সময়টাকে আন্দোলিত করেছেন, বিকশিত করেছেন।

দুই.

কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মৃত্যুতে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন-

‘চলচঞ্চল বাণীর দুলাল এসেছিলে পথভুলে, ওগো এই গঙ্গার কূলে
দিশেহারা মাতা দিশা পেয়ে তাই নিয়ে গেছে কোলে তুলে
ওগো ওই গঙ্গার কূলে।’

সতেন্দ্রনাথের মৃত্যু ছিল অকাল প্রয়াণ। সেদিক থেকে শামসু রাহমানের ৭৭ বছর বয়সের মৃত্যুকে পরিণত বয়সের প্রয়াণই বলা চলে। তবু তার এ মৃতু্যর খবর শুনে সেদিন শোকবিদ্ধ মনেও এই কথাটা প্রথম জেগেছে, তিনি দেশের দারুণ দুর্দিনে আর ক’টা দিন থেকে গেলে ভালো হতো। এই কথাটাই বলেছিলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত এক শোকসভায়। বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুর আগে লিখেছেন, বিদায় নেওয়ার আগেই তাই, ডাক দিয়ে যাই দানবের সঙ্গে যারা সংগ্রামের তরে, প্রস্তুত হতেছে ঘরে ঘরে।’ ৮২ বছর বয়সে বিশ্বকবির মৃত্যৃ হয়েছে বটে, তবে দানবের সঙ্গে সংগ্রামে দেশের মানুষকে প্রেরণা জোগানোর জন্য তার আর কিছুকাল বেঁচে থাকা উচিত ছিল।

শেরে বাংলার রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কিত এই কথাটা বর্তমান সময়ে শামসুর রাহমানের জন্য আরও বেশি প্রাসঙ্গিক, প্রযোজ্য। রবীন্দ্রনাথ ‘হিংসায় উন্মত্ত’ যে পৃথিবী দেখে গেছেন, তার চেয়ে বর্তমান বিশ্ব আরও ভয়াবহ হিংসায় পীড়িত। বাংলাদেশে তো চলছে অস্থির শাসন, মানুষের ভোটাধিকার হরণের শাসনের। এই শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার লড়াইয়ে শামসুর রাহমানের কবিতা অবশ্যই দেশের নিপীড়িত মানুষকে আরও বেশি প্রেরণা জাগাতো। আর কোনো কিছুর জন্য না হলেও শুধু এই কবিতা লেখার জন্য তার আরও কিছুকাল বেঁচে থাকার দরকার ছিল।

বিজ্ঞাপন

তিন.

আমি কি এখন সত্যি বেঁচে আছি? নাকি জীবন্মৃত/ পড়ে আছি বিলম্বিত মাস্তুলের মতো?— ‘চাঁদ সদাগর’ কবিতায় এভাবেই লিখেছিলেন শামসুর রাহমান। সাতচল্লিশের ভারত-পাকিস্তান ভাগের প’রে পূর্ববঙ্গ ভূখণ্ড বাংলা সাহিত্যেও একটি স্বতন্ত্র সৌধ-ভিত্ নির্মাণে আর্বিভূত হয়, একদিন সেই ভূ-খণ্ডের নয়া সাহিত্য প্রবহমানতায় পঙ্খিরাজ নাও ভাসে, তিনি নৌকোয় চেপে সাহিত্যের খেরোখাতা হাতে নিয়ে বললেন, আমি কবিতার বৈঠায় হাত রাখলাম। কবিপ্রাণ শামসুর রাহমান। তিনি আমাদের স্বপ্নের রূপকথার দুয়ার খুলে দিয়ে জাতিকে দিয়েছিলেন আত্মআবিস্কারের গৌরব।

বহুল সমারোহে কবিতার স্বর্ণডালিকে যে কবি সাজিয়েছেন তিনি শামসুর রাহমান। বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকের এই কবি ছুটেছেন সময়ের সঙ্গে, ইতিহাসের চত্বরে গড়ে তুলেছেন কবিতার মঞ্চ। কেবল বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে, জীবনানন্দ ও সুধীন দত্তের প্রভাব থেকে বেরিয়েই আসেননি, তিরিশোত্তর বাংলা কবিতাকে উত্তরণের পথে নিয়ে গেছেন। তার হাতে উত্তোলিত হয়েছে প্রতিরোধের শামিয়ানা। অথচ তার আরম্ভ ছিল বিষণ্ণ ও দুঃস্বপ্নের চাদরে মোড়া। কবিতার সৌন্দর্যে ডুব দিয়ে ১৯৬০ সালে শামসুর রাহমান প্রকাশ করেছেন প্রথম গ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’। অভাবিত সব চিত্রকল্পের বিন্যাসে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন আত্মমগ্ন তরুণের দিনলিপি। তার কবিতায় গভীরভাবে যুক্ত হয়ে গেল স্থান-কাল ও ইতিহাসের চিহ্ন, যদিও তার প্রথম কবিতার বই ছিল প্রধানত এক নান্দনিক ভূমি। ধীরে ধীরে এই ভূমির গর্ভ ছেড়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে পূর্ববঙ্গ ও বাংলাদেশ।

তার নিজের কালের সার্থক রূপকারদের পুরোধা হিসেবে এ কীর্তিত কবিকে নিয়ে গর্ব আর অহংকারে সীমা নেই আমাদের। তিনি এমন একটি স্থানে নিজেকে উদ্ভাসিত করেছেন যেখানে তার সমকালে তার প্রতিদ্বন্ধী বা তার সমশ্রেণীর কবি আর কাউকে দেখা যায় না। এটা আমাদের বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবাংলার কবিই মাত্র এ বিবেচনায় স্বীকার করবেন নিশ্চয়। বাংলা কবিতা কত বিচিত্র ও পাশ্চাত্যের কবিদেরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে যেতে পারে তার প্রমাণ মেলে শামসুর রাহমানের বিভিন্ন কবিতা।

১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবরে ঢাকার মাহুতটুলিকে জন্ম নেওয়া শামসুর রাহমান তার যাত্রা শুরু করেছেন বাংলা সাহিত্যের প্রভাবশালী সাহিত্য পত্রিকা দিয়ে। ১৯৪৯ সাল, পুরান ঢাকার মাহুতটুলি লেনের এক সদ্য যুবার মন ডানা মেলেছিল কল্পনায়, ভাবাবেগ প্রকাশিত হয়েছিল ছন্দবন্ধনে। ভয়ে ভয়ে সেই রচনাকে পাঠিয়ে দিলেন তিনি, সোনার বাংলা নামের সাপ্তাহিকে। সম্পাদক নলিনী কিশোর গুহ বেশিদিন অপেক্ষায় রাখেননি। অজ্ঞাত পরিচয়ে কবির লেখা ছাপিয়ে দিলেন পরের সংখ্যাতেই। প্রসঙ্গক্রমে শিাবিদ, প্রাবন্ধিক মুস্তফা নুরউল ইসলাম জনকন্ঠে ‘প্রথম দেখার দিনগুলি’ স্মৃতিচারণে লিখেছেন, “… আমাদের চাপাচাপিতে লাজুক গলায় কবি আবৃত্তি করে শুনিয়েছিলেন-‘দান্তের নরক তুমি দেখেছে কখনো’। তারপর আউয়ে গেলেন সবটা। পর পরই তার অপর কবিতা কলকাতার নতুন সাহিত্যে মাসিক পত্রিকায় ‘কয়েকটি দিন ওয়াগনে’।’’

তার কবিতা দিয়েই শুরু হয়েছে পূর্ব্বাশা, সেই ১৯৫১ সালেই। পূর্ব্বাশার সম্পাদক সঞ্জয় ভট্টাচার্য কবি ও ঔপন্যাসিক হিসেবে তখন খ্যাত। শামসুর রাহমানের বয়স তখন বাইশ বছর। আর ১৯৫৩ সালে কবি বুদ্ধদেব বসু কবিতা পত্রিকা শুরু করেন শামসুর রাহমানের মনে মনে ও তার শয্যার পাশে কবিতা দিয়ে। এভাবেই তিনি ছয় দশকের অধিক কালব্যাপি কাব্যচর্চায় নিজেকে সুসংহত করে রেখেছিলেন।

চার.

৩১ বছর বয়সে প্রথম কাব্যগ্রন্থের কবিতা ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’, তাতে তিনি লিখেছিলেন গ্রীক পুরাণকথিত ল্যাজারাস পুর্নজন্ম পেয়ে এসেছে এই পৃথিবীতে। তাকিয়ে দেখছে ‘এই সেই পৃথিবী সাবেকী’। অনুমান করা চলে এই কবিতার জন্মসময়ই বাংলা কবিতার আধুনিকতার জন্মসময়। বেশ কয়েক বছর আগে অধ্যাপক কবীর চৌধুরী যুগান্তরে ‘নিজস্ব উচ্চতায়’ লিখেছেন—তিনি তার কবিতায় গ্রিক পুরাণের অনুষঙ্গ অসাধারণ দতার সঙ্গে প্রকাশ করেছেন। অ্যাগামেমনন, ইলেকট্রা এরকম গ্রিক পুরাণের নানা কাাহিনী তিনি আশ্চর্য কুশলতার সঙ্গে, আমাদের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে একটি সমান্তরলতা নির্মাণ করেছেন। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন প্রাচীন ধ্রুপদী গ্রিক নাটক পড়াই-তখন আমি শামসুর রাহমানের এসব কবিতা উল্লেখ করেছি। মাঝে মাঝে তার কবিতার চরণ পর্যন্ত পড়ে শুনেছি।

পাশ্চাত্য ঢঙ্গে মিথভিত্তিক কবিতার বই লিখেছিলেন শামসুর রাহমান, ইকারুসের আকাশ, যার নাম। সেই বইয়ে শামসুর রাহমানের হস্তার দিয়ে প্রচ্ছদ এঁকে দিয়েছিলেন সরদার ফজলুল করীম। মলাটের পেছনে বইয়ের বিষয়ে নামহীন জ্ঞাপন লেখাটিতে তিনি লিখেছেন ‘শামসুর রাহমান সম্ভবত আমাদের শেষ ইয়োরোপমনস্ক কবি।’

আসাদের শার্টর মতো রক্তে ঝাঁকুনি-তোলা কবিতা যেমন স্বাধীনতা পূর্ববর্তী বাঙলার গণজাগরণে মন্ত্রের মতো কাজ করেছে সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগঠনে। বন্দি শিবির থেকে, ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা এই দুটি কাব্যগ্রন্থ পুরোটা মুক্তিযুদ্ধেরই রক্তাত্ব দিনগুলোর দর্পণ। এখানে এমন কিছু কিছু কবিতা রয়েছে, যা মুখে মুখে ফিরেছে বাঙালির। তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা, স্বাধীনতা তুমি, দুঃসময়ের মুখোমুখি, ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা ইত্যাদি বহু কবিতা কন্ঠস্থ হয়ে গেছে বাঙালির। স্বাধীন দেশে প্রতিক্রিয়াশীলদের পুনবার্সনকালে তার কবিতা ‘একটি মোনাজাতের খসড়া’ চাবুকের মতো নেমে এলো। ধর্মীয় উগ্রতার সংক্রমণে ছড়াতে থাকলে তিনি লিখলেন—উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ। এরশাদের স্বৈরচারী সরকারের গুলিতে নূর হোসেনের মৃত্যু হলে লিখলেন, ‘তিনি বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়’। তার অসংখ্য কবিতা লিফলেট হয়ে মানুষের হাতে হাতে গিয়েছে, উঠে এসেছে পোস্টার, দেয়াললিখনে। স্লোগানে পরিণত হয়েছে মিছিলে।

পাঁচ.

মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকায়, শামসুর রাহমানের ৬০তম জন্মদিন উপলক্ষে কবি আল মাহমুদের একটা চিঠি প্রকাশিত হয় বিশেষ সংখ্যায়। চিঠিটা ১৯৬৮ সালে লেখা। সেখানে আল মাহমুদ লিখেছেন শামসুর রাহমানকে: ‘আমার পরিষ্কার রাজনৈতিক মতামত ও আদর্শ রয়েছে। সমাজ বিশ্বাস আমার কাছে যেমন বড় কথা, সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংগ্রাম করাকে আমি তারও চেয়ে মূল্য দিয়ে থাকি। এর জন্যে নিশান নিয়ে রাস্তায় নামতে আমার আর কোনো দ্বিধা নেই। দরকার হলে পার্টি সংগঠনের মধ্যে থেকে কাজ করব, রাস্তায় রাস্তায় পোস্টার সাঁটব। কবিতা লেখার মতোই এসব কাজ আমার জীবনের সাথে যুক্ত।’ এর সঙ্গে যুক্ত করতে হয়, ‘মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়।’ মুনীর চৌধুরীর ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ নাটকের সংলাপ। আল মাহমুদও বদলেছেন।

শামসুর রাহমান বলতেন, তিনি ছিলেন বুদ্ধদেব বসুর মতানুসারী, অনেকটাই কলাকৈবল্যবাদী। তার বন্ধু হাসান হাফিজুর রহমান ছিলেন রাজনীতিসচেতন এবং রাজনীতি-সক্রিয়। হাসান হাফিজুর রহমান বামপন্থী ছিলেন। শামসুর রাহমান তার সঙ্গে একমত হতেন না, ভাবতেন, কবিদের রাজনীতি থেকে দূরে থাকা উচিত। পরে, ১৯৮৭ সালে জাতীয় কবিতা উৎসব করার সময় তিনি লিখলেন, তিনি এই মত থেকে দূরে সরে এসেছেন। রাজনীতি মানুষের জীবনকে অনেকটাই প্রভাবিত করে। দেশ বা মানুষের বাঁচা-মরার প্রশ্নে শামসুর রাহমান সবসময়ই গৌণ, কিন্তু স্বদেশের সংকটে শামসুর রাহমান গুরুত্বপূর্ণ; কবিতায় দেশকাল-সমাজ ও দায়বদ্ধতা, একই সঙ্গে কবিতায় প্রাতিস্বিকতার নিরিখে শামসুর রাহমানের অপরিহার্যতা ও প্রাসঙ্গিকতা আজও দাবি করে।

সারাবাংলা/এসবিডিই

শামসুর রাহমান: বাংলা কবিতার স্বতন্ত্র এক বিস্ময় সারাবাংলা সাহিত্য হাবীব ইমন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর