আগুনে পুড়ল তেলভর্তি ট্যাঙ্কার, অল্পের জন্য বড় বিপদ থেকে রক্ষা
১৮ জুন ২০১৯ ২২:১৫
ঢাকা: ‘আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই যদি ড্রাইভার ঝুঁকি নিয়ে ট্যাঙ্কারটি আরও পেছনে না সরাতেন তাহলে সব শেষ হয়ে যেত। যে জায়গায় ট্যাঙ্কারটিতে আগুন লাগে ঠিক সেই জায়গায় অবস্থিত তেলের গভীর ট্যাঙ্ক। আবার তার পাশেই গ্যাসের রিজার্ভার ট্যাঙ্ক। তেলের ডিপ ট্যাঙ্কে সে সময় ট্যাঙ্কার থেকে তেল ভরা হচ্ছিল। যদি কোনোভাবে আগুন তেলের ট্যাঙ্ক ও গ্যাসের ট্যাঙ্কে ছড়াত তাহলে পাশেই ১৬ তলা বিশিষ্ট বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটালের অসংখ্য রোগী পড়তেন বিপদে। আবার পাশে ১৫ তলার দুটি আবাসিক ভবনের বাসিন্দারাও ছিলেন ঝুঁকিতে। কী যে হতো আল্লাহ জানে। বড় বিপদ থেকে আল্লাহ বাঁচিয়েছে।’
রাজধানীর শ্যামলীর মের্সাস এরা ফিলিং অ্যান্ড সার্ভিস স্টেশনের (সিএনজি) প্রজেক্ট ম্যানেজার শাহীনুর রহমান খলিল এভাবে বলছিলেন তার আশঙ্কার কথা।
সারাবাংলাকে শাহীনুর রহমান খলিল বলেন, ‘বিকেল ৫টা ১০ মিনিটের দিকে আমাদের এক কর্মচারী দৌড়ে এসে বললেন, স্যার শাহিলের পাম্পে (এরার পাশের পাম্প শাহিল ফিলিং স্টেশন) তেলের গাড়িতে (যমুনা অয়েল) আগুন লাগছে। এটা শুনে দৌড়ে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিই। এদিকে আমরাও ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। শেষপর্যন্ত ট্যাঙ্কারটি ছাড়া আর তেমন ক্ষতি হয়নি। বড় বাঁচা বেঁচে গেলাম আমরা।’
আরও পড়ুন: কল্যাণপুরে পেট্রোল পাম্পের আগুন নিয়ন্ত্রণে
ফিলিং স্টেশনের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘কীভাবে আগুন লাগল জানি না। হয়ত গরম ইঞ্জিনের ওপর তেল পড়ায় আগুন লেগেছে। ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বললে হয়ত বিস্তারিত জানা যাবে। তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে।’
শ্যামলীর স্থানীয় এক বাসিন্দা মো. সজল শুরু থেকেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাম্পের বিপরীত পাশে চায়ের দোকানে দুই বন্ধু মিলে চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি আগুন দাউ দাউ করে উপরের দিকে উঠছে। দৌড়ে ঘটনাস্থলে আসার চেষ্টা করি। কিন্তু আগুনের তাপে কাছে যাওয়া যাচ্ছিল না।’
ওই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘হাসপাতালের লোকেরা ফায়ার এক্সটিংগুইশার ও হোসপাইপ নিয়ে এগিয়ে আসে। তারা না এলে হাসপাতালসহ পাশের দুটো আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়ে যেত। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসা পর্যন্ত আগুন তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পরে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট এসে আগুন নেভায়।’
আগুনের ভয়াবহতার বর্ণনা দিয়ে অপর প্রত্যক্ষদর্শী তাকরিম হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগুনের উত্তাপ অনেক বেশি ছিল। আশেপাশের এলাকা থেকেও আগুনের শিখা দেখা গেছে। ঘটনা কী বোঝার জন্য আমি আদাবর থেকে চলে আসি।’
এদিকে আগুন নেভানোর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ স্পেশালাইডজ হসপিটাল লিমিটেডের (বিএসএইচএল) অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স বিভাগের ইউনিট সেক্রেটারি মো. গোলাম মোস্তফা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগুন লাগার এক মিনিটের মধ্যে আমরা অর্ধশতাধিক এক্সটিংশার নিয়ে চলে আসি। ভাবছিলাম, যদি আগুন ছড়িয়ে পড়ে তাহলে হাসপাতালে থাকা শতাধিক রোগী ও কয়েকশ স্বজনের কী হবে? এতে তো চুড়িহাট্টার মতো আরেকটা ভয়াবহ ট্র্যাজেডি ঘটবে। তাই যে যেখানে ছিলাম আমরা দৌড়ে চলে আসি। হাসপাতালের হোসপাইপ চালু করে আমরা পানি ছিটিয়েছি। যে কারণে আগুন ভয়াবহ হলেও তা ছড়িয়ে পড়েনি।’
হাসপাতালের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস আসার আগে আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার চেষ্টা করেছি। ফায়ার সার্ভিস আমাদের অগ্নিনির্বাপণের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। আমরা সেই প্রশিক্ষণ এবার কাজে লাগাতে পেরেছি।’
সরেজমিনে দেখা যায়, আগুনে পুড়ে যাওয়া গাড়িটি ছিল যমুনা অয়েল লিমিটেড কোম্পানির। গাড়িটি ৯ হাজার লিটার ডিজেল নিয়ে ওই পাম্পে তেল দিতে গিয়েছিল। কিন্তু তেল সরবরাহ করার এক থেকে দুইমিনিটের মাথায় গাড়ির সামনের ইঞ্জিনের নিচ থেকে হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে বলে জানান পাম্পের প্রত্যক্ষদর্শী কর্মীরা। এরপরই তেল ভর্তি গাড়িটি দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। এরপর খবর পেয়ে আগুন নেভাতে মোহাম্মদুপরসহ আশপাশের ফায়ার স্টেশন থেকে সাতটি ইউনিট যোগ দেয়। এ সময় আরও তিনটি ইউনিট সদর দফতর থেকে রওয়ানা দেয়। প্রায় আধাঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন সম্পূর্ণভাবে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে আসে।
মোহাম্মদপুর ফায়ার অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. কাজল মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘কী কারণে বা কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত তা এখনও জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, গাড়িটির ইঞ্জিন গরম ছিল কিংবা কেউ গাড়ির কাছে গিয়ে সিগারেট জ্বালিয়েছিল। এ সব কারণে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। আবার অল্প তাপমাত্রাতেও মেটাল বডিতে কোনো ঘর্ষণ লাগলে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।’
ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘পাম্প হাউজটিতে অগ্নিনির্বাপণের জন্য কয়েকটি এক্সটিংগুইশার ছাড়া আর কিছুই নেই। যে কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে দেরি হয়েছিল। কিন্তু পাম্প হাউজে সেফটির জন্য ফোম ভর্তি ছোট ছোট গাড়ি রাখার কথা। যেগুলো এ পাম্পে নেই। তাই যদি আগুন আরেকটু সামনে গ্যাসের ট্যাঙ্কে ছড়িয়ে পড়ত তবে নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ত।’
চুড়ি হাট্টার ট্র্যাজেডির কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার সতর্ক করার পরও তারা সেফটির জন্য নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেন না। এ পাম্প হাউজকেও সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু আমলে নেয়নি।
সারাবাংলা/এসএইচ/একে