খুলনা: নিউজের বক্তব্য নিতে গিয়ে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার খুলনা ব্যুরো প্রধান এহতেশামুল হক শাওন ও স্টাফ রিপোর্টার কামরুল হোসেন মনির ওপর হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
শনিবার (৮ নভেম্বর) বেলা সোয়া ৩টার দিকে নগরীর শিববাড়ি মোড়ের সুলতান ডাইন রেস্টুরেন্টের নিচে এ ঘটনা ঘটে। আহত দুই সাংবাদিককে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এহতেশামুল হক শাওন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-এর সহকারী মহাসচিব, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার সহ-সভাপতি ও খুলনা প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য। কামরুল হোসেন মনি মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনা ও খুলনা প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য।
ঘটনার বর্ণনায় শাওন বলেন, “একটি নিউজের বক্তব্য নেওয়ার জন্য আমি ০১৭১১-৮৯৩৩০৯ নম্বরে কল করি। কথার একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি (জনৈক বিপ্লব আবির) অশালীন ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। পরে শান্ত হলে আমি জানতে চাই তিনি কোথায় আছেন। জানান, শিববাড়ি মোড়ের সুলতান ডাইন রেস্টুরেন্টের নিচে। আমি বলি, সামনাসামনি কথা বললে ভুল বোঝাবুঝি মিটে যাবে। তিনি বলেন, আসেন চা খাই। আমি ও স্টাফ রিপোর্টার মনি মোটরসাইকেলে সেখানে যাই। গিয়ে দেখি ৭–৮ জন অপেক্ষা করছে। হঠাৎ তারা জানতে চায়— ‘ব্যুরো চিফ কে?’ আমি এগিয়ে যেতেই তারা এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারে। আমি দৌড়ে পাশের টাইগার গার্ডেনে আশ্রয় নিই, আর মনিকে তারা মারতে থাকে।”
পরে সাংবাদিকরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শাওন ও মনিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এসময় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করা হলেও ৪৫ মিনিট পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, যা নিয়ে সাংবাদিকদের ক্ষোভ দেখা দেয়।
সোনাডাঙ্গা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, “সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। হামলাকারীদের শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।”
এ ঘটনায় সাংবাদিক সমাজের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে।
বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন ও মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার সভাপতি মো. আনিসুজ্জামান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হিমালয়সহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এক যৌথ বিবৃতিতে হামলার তীব্র নিন্দা ও জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, “মুক্ত গণমাধ্যম বিরোধী যে কোনো অপতৎপরতা রুখতে সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ। অতীতেও কোনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিস্ট শক্তি সাংবাদিকদের সত্য প্রকাশ থেকে বিরত রাখতে পারেনি— আগামীতেও পারবে না।”
নেতৃবৃন্দ বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে। এতে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারও সংকটে পড়বে।
তারা আরও বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের ওপর একের পর এক হামলা হচ্ছে। এসব ঘটনা মুক্ত সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন আঘাত।”